হকের প্রশ্ন, হুমায়ূনের জবাব
>কবি–লেখক–সাহিত্যিকদের জীবন নানা ঘটনায় ভরপুর। তার মধ্যে যেমন হাস্যরস ও আনন্দদায়ক অভিজ্ঞতা আছে, রয়েছে বিষাদমুখর ঘটনাও। আবার অপ্রত্যাশিত, চমকে দেওয়ার মতো ঘটনাও কম নেই তাঁদের জীবনে। এই নতুন বিভাগে আমরা প্রকাশ করব কবি–লেখকদের জীবন থেকে নেওয়া নানা ঘটনা।
প্রথম বই নন্দিত নরকে প্রকাশ করতে গিয়েই হুমায়ূন আহমেদ ফর্মা মেলানোর এক প্যাঁচে পড়লেন। প্রকাশক বললেন, উপন্যাস ফর্মা হিসাব করে লিখতে হয়। তিনি তাঁকে ফর্মার হিসাব বুঝিয়ে দিয়ে সেখানেই ফর্মা মেলাতে বললেন। সাত পৃষ্ঠা কম ছিল, সেখানে বসেই পৃষ্ঠাগুলো ভরতে হলো। এই ফর্মা মেলানোর চক্কর থেকে হুমায়ূন বের হতে পেরেছিলেন কি না, জানা নেই, তবে সৈয়দ শামসুল হক এক সাক্ষাৎকারে হুমায়ূনকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘হুমায়ূন, বলুন তো, আপনার লেখাগুলি সব সময় ফর্মা হিসেবে বের হয় কেন? এর চেয়ে বড়ও হয় না, কমও হয় না। এর কারণটা কী?’
প্রশ্নের উত্তরে হুমায়ূন আহমেদ কী জবাব দিয়েছিলেন সেটি বলার আগে এই দুই লেখকের সাক্ষাৎ হওয়ার গল্পটাও বলে নিতে হবে।
তখন পিএইচডি করে দেশে এসে ধুমসে লিখছেন হুমায়ূন আহমেদ। বই বের হচ্ছে। প্রবল আগ্রহে অপেক্ষা করছেন তিনি। কিসের অপেক্ষা? হুমায়ূনের ভাষায়, ‘অনেকগুলি বই বের হয়ে গেছে। পত্রপত্রিকায় ইন্টারভ্যু দিতে আগ্রহী। কেউ ইন্টারভ্যু নিতে আসে না।’
অবশেষে ইন্টারভিউর ডাক এল। ডেকেছে সাপ্তাহিক বিচিত্রা পত্রিকা। তারা হুমায়ূন ও সৈয়দ হককে নিয়ে প্রচ্ছদকাহিনি করতে চায়। তাই করা হলো হকের সঙ্গে হুমায়ূনের কথোপকথনের আয়োজন। এ আয়োজনের সঞ্চালক ছিলেন আরেক কথাসাহিত্যিক মঈনুল আহসান সাবের। বিচিত্রা সম্পাদক শাহাদত চৌধুরীও উপস্থিত সেখানে। সেখানেই অকস্মাৎ সৈয়দ হক প্রশ্ন ছুড়ে দেন হুমায়ূনকে, ‘...আপনার লেখাগুলি সব সময় ফর্মা হিসেবে বের হয় কেন?’
এহেন প্রশ্নে সেদিনের তরুণ হুমায়ূন তো কঠিন প্যাঁচে পড়লেন। তাকিয়ে দেখেন, শাহাদত চৌধুরী তাঁর এই প্যাঁচে পড়া দেখে মাথা নাড়ছেন। খুব মজাই পাচ্ছেন তিনি।
প্যাঁচে পড়া থেকে বের হতেই হুমায়ূন সৈয়দ হককে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন, ‘হক ভাই, আপনি তো সনেট লেখেন। সনেটগুলো ১৪ লাইনে শেষ করতে হয়। আপনি যদি আপনার ভাবনা নির্দিষ্ট ১৪ লাইনে শেষ করতে পারেন, আমি কেন আমার ভাবনা ফর্মা হিসেবে শেষ করতে পারব না?’
হকচকিয়ে গেলেন সৈয়দ হক। হুমায়ূন আহমেদ দেখতে পান, শাহাদত চৌধুরীর মাথা নাড়া আগের চেয়েও দ্রুততর হয়েছে।
সূত্র: হুমায়ূন আহমেদের বলপয়েন্ট
গ্রন্থনা: রাসেল রায়হান