লাফাতে লাফাতে ট্রেনে উঠি। অল্পের জন্য মিস করছিলাম। রাতের স্টেশনে কত রকম যে হুজ্জত। একেকটা রেল তো নয়, অন্ধগলি। কোনটা যে কার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে! নানা রকম ঘ্রাণে বিহ্বল বোধ করি। আরে! এ কী? ট্রেন ছেড়ে দিচ্ছে! যানজটের চক্করে স্টেশনে আসতেই দেরি হয়েছে। নতুন ট্রেন চালু হওয়া উপলক্ষে এক সপ্তাহ সব যাত্রীর ফ্রি আসা-যাওয়া! জায়গা পেলে হয়! আমাকে যেতেই হবে। একটা ছেলেকে কথা দিয়েছি। আজই গিয়ে তার পত্রিকায় সাক্ষাৎকার দেব। নইলে সে পাতা ধরাতে পারবে না। এরপর ধাতস্থ হয়ে চারপাশে তাকাই। সব সিটভর্তি মানুষ। হ্যান্ডেল চেপে নাচতে নাচতে এগোচ্ছি। ট্রেনের ঝিমঝিম শব্দে ঘুম পায়। পা ভেঙে পড়তে চায়। অসহায়ের মতো চারপাশে তাকিয়ে দেখি, আরে, সিট ফাঁকা! সবাই ট্রেনের মেঝেতে গোল হয়ে কার্ড খেলতে শুরু করেছে।
আনন্দ দেখে কে! রীতিমতো ঘুমাতে ঘুমাতে সমুদ্রের পাড়ের স্টেশনে এসে থামি।
ট্রেন থেকে স্টেশনে নেমে পরমানন্দ হয়। ঘুম থেকে উঠিয়ে কত রকম খাবার খেতে দিল—ভাত, চায়নিজ, কাচ্চি—যার যা ইচ্ছা। মধ্যরাতের ডিনার! ভোরের অপূর্বসুন্দর স্টেশন। সমুদ্রের শব্দে কেমন ঘোর লাগতে থাকে।
‘নাসরীন’, ধেয়ে আসে কণ্ঠ। বাসা থেকে ফোন আসে। বলি, ঠিকঠাক পৌঁছেছি।
হাত নাড়াতে নাড়াতে ছুটে আসে একটা ছেলে, ‘আসুন আপা...’
ভিড় ঠেলে টমটমে উঠি। এবড়োখেবড়ো পথ ধরে টমটম লাফিয়ে চলছে। সমুদ্র হাতছানি দিচ্ছে অনুভব করে রোমাঞ্চিত বোধ করি। ধীরে ধীরে হোটেলের সামনে পা রাখি। লবিতে দাঁড়িয়ে ছেলেটা বলে, ‘আপনি আমাদের পত্রিকার গুরুত্ব বুঝেছেন, এটা যে কত বড় প্রাপ্তি আমার!’
‘সবাই বুঝছে’, আমি বলি, ‘বিভিন্ন মফস্সলে পত্রিকা বের করার হিড়িক লেগেছে না? কেউ নিজেকে কম মনে করে নাকি?’
‘তার মানে ঢাকার ভবিষ্যৎ শেষ, সবাই বুঝতে পারছে?’
হায় আমার ঢাকা! আমার প্রাণের শহর রাজ্যের মানুষ নিয়ে আমারই প্রাণের সুতো থেকে আলগা হয়ে যাচ্ছে ক্রমেই। সবাই পত্রিকা পড়ছে, কিন্তু মাথার ওপর সরাসরি পাহাড় না ভেঙে পড়লে আমাদের মানুষ নিজের জায়গা থেকে সরার কথা ভাবতেও পারে?
বিকেলের সমুদ্র একেবারে ফাঁকা! এত বড় একটা সৈকত, কিন্তু একজন মানুষও নেই! ফিনফিনে সাদা স্রোত ধাই ধাই করে এসে আমার পা ভিজিয়ে দিয়ে চলে যাচ্ছে। আজ কি কোনো কারণে কারফিউ?
চিন্তার বিলোড়ন স্তব্ধ সমুদ্রের সৈকতটাকে মুহূর্তেই একটা শ্মশানভূমি বানিয়ে ফেলে! মনে হয়, একটা কালো চাদর এসে সৈকতের সব মানুষকে উঠিয়ে নিয়ে গেছে; অথবা হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার পিছু পিছু এই এলাকা থেকে দূর পাহাড়ের ওইপারে চলে গেছে। ধু ধু শূন্য চরে নিজেকে অন্য কোনো গ্রহের প্রাণী মনে হয়।
এর মধ্যেই ঝাঁপিয়ে বৃষ্টি নামে। ভিজে জবজবে হয়ে রুমে ফিরে আসি।
ছেলেটা রাতে এলে ব্যালকনিতে দাঁড়াই। সমুদ্র এখন মানুষে গিজগিজ। আমার সঙ্গে এসব কী হচ্ছে?
‘আপা, শুরু করি?’
‘বলছি।’
ছেলেটা বলে, ‘আমি মোবাইলে সেভ করে নিচ্ছি।’
অদ্ভুত ঠান্ডা বাতাসের ছটায় আচ্ছন্ন হয়েই গলা বাড়াই, ‘সিরিয়াসলি সম্ভব? কক্সবাজার থেকে বাংলাদেশের প্রধানতম দৈনিক বের করা?’
‘আপা, সব কেমন বদলে যাচ্ছে দেখছেন না! রাজধানী এসে মফস্সলের কোলে বসতে বাধ্য। আপনি মিলিয়ে নেবেন।’
‘আমি জানি, এ জন্যই তো ঢাকার নিজের বাড়ি বিক্রি করে এখানে স্থায়ী হওয়ার প্ল্যান করছি। ভালো জায়গার খোঁজ অলরেডি পেয়ে গেছি।’
‘বলেন কী আপা? সিরিয়াসলি?’
‘হুম, এ নিয়েই মূলত আমাদের দাম্পত্যে দ্বন্দ্ব, প্রতিদিন পৃথিবী বদলাচ্ছে, ও মানতেই চায় না। আমি খোঁজ নিয়েছি, ঢাকার আশপাশের কারখানায় বিশাল বিশাল লঞ্চ তৈরির কাজ চলছে, যখন ঢাকার ওপর দিয়ে লঞ্চ চলবে, তখন কারও কিছু করারই থাকবে না!’
‘জলবায়ুর বিপজ্জনক পরিবর্তনের কারণে...আপনি আপা জানেন?’
‘শোনো, বিজ্ঞান কিন্তু বর্তমান সৃষ্টির পরিপ্রেক্ষিতে ভালোই ভবিষ্যৎ বলতে পারে। এ কিন্তু সায়েন্স ফিকশন নয়, কড়া সত্য কথা। তোমরা পত্রিকার লোকই সব খবর রাখো? আর কেউ জানে না? কেবল ওর জন্য আমি সবকিছু গোপনেই গুছিয়ে নিচ্ছি। জানো, বছরখানেক পরে ঢাকার ভবিষ্যৎ কী হবে, তা আন্দাজ করে গোপনে আমার মেয়ে ফ্রান্সে চলে গেছে? আমি যখন বলেছি, তুই আগে সেটেল্ড হ, এরপর তোর আব্বুকে নিয়ে আমি আসছি, তখনই যেতে রাজি হয়েছে।’
‘আমি দারুণ উত্তেজনা ফিল করছি, আপা!’
‘এসব নিয়েই আজ জোরালো কথা হবে।’
ছেলেটার বাড়িয়ে দেওয়া মুঠোফোনের হাত যেন বা আমার নিশ্বাসের সামনে চক্রাকারে পাক খেতে থাকে। আমি শৈশব–কৈশোরের সেই সব কথা বলি, যা এর আগে সেভাবে কাউকে বলা হয়নি। এরপর ঢাকার প্রতি নস্টালজিয়া, ঢাকার বিপন্নতা—এসব বলতে বলতে প্রহর গড়িয়ে মধ্যরাতের দিকে ধাবিত হতে থাকে।
কথোপকথনের একপর্যায়ে কেমন বিমূঢ় হয়ে পড়ি। বলি, ‘সবই তো বলে ফেলেছি। আমার মনে হয়, এবার আমরা শেষ করতে পারি। অনেক রাত হয়ে গেছে।’
তীব্র বেগে বাতাস আসছে। জানালার পর্দা উড়ছে, সমুদ্রের শব্দ যেন আফিম, কেমন নেশা লেগে যেতে থাকে।
‘আপা, আরেকটু...’
‘উফ! অসহ্য করে ফেলছ, জীবনের স্মরণীয় স্মৃতি শোনার জন্য। এতক্ষণ এত কথা বললাম, কোনোটাই স্মরণীয় মনে হলো না।’
‘আপা, আপনি বলেছিলেন, আপনার এমন একটা জাঁদরেল স্মৃতি আছে, যা কাউকে বলেননি, যেহেতু গোপন করার মতো কিছু নয়, প্লিজ আমাকে বলুন।’
‘বলেছিলাম বুঝি? দাঁড়াও, এক মিনিট,’ বলে কিছুক্ষণ ঝিম মেরে থাকি। ‘ভাবছি, আসলে তুমি কতটা গুরুত্বের সঙ্গে অনুভব করবে, নাকি আশরাফের মতো তাচ্ছিল্য করে উড়িয়ে দেবে?’
‘আরে না আপা, আমি আপনাকে চিনি না? ফালতু কথা বলার মানুষ আপনি? আপনার ব্যক্তিত্ব একেবারেই আলাদা।’
ছেলেটা কফি বানিয়ে আনে। পাকিয়ে ওঠা ধোঁয়ায় ক্রমেই চাঙা বোধ করি।
বলি, ‘যতক্ষণ বলব, তুমি একটা শব্দও কোরো না।’
‘ঠিক আছে আপা।’
সামনে মুঠোফোনের মুখ। আমি যেন একটা গহ্বরের মধ্যে ঢুকে যেতে থাকি। ‘এই ধরো, তিরিশ বছর আগের ঘটনা। তখন পঁচিশের ঘরে আমার বয়স লাফাচ্ছে। ভূতের গলি ছেড়ে একটা যেন বা আদিভৌতিক একটা এলাকায় এসে পড়েছি। চারপাশে জলাভূমি। নতুন বিল্ডিং উঠছে। সন্ধ্যার পরে চারপাশ অন্ধকার হয়ে যায়। হাওয়া দিলেই আমাদের বাড়িতে যেন মটমট করে শব্দ হয়। একরাতে ঘুমুচ্ছি। বৃষ্টি হয়ে গেছে বলে চারপাশ ঠান্ডা। ঘরে আলো ছড়াচ্ছে টিমটিমে মোমবাতি। বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় বিশাল মোমবাতি জ্বালিয়ে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি! ঘুমের মধ্যে তীব্র ধারোলো কিছু স্বপ্ন আসছে আর যাচ্ছে। স্বপ্নের মধ্যে খণ্ড খণ্ড মানুষের আর্তনাদে কেঁপে কেঁপে উঠছিলাম আমি।
‘একসময় প্রচণ্ড ঘুমের মধ্যে কেমন যেন শিউরে উঠলাম। এক অশরীরী ভয় রাক্ষসের মতো গিলে খেতে থাকে আমাকে। ছটফট করে ঘুম ভেঙে যায়। সঙ্গে সঙ্গে জমে একেবারে পাথর হয়ে যাই আমি। অনুভব করি, পায়ের নিচ থেকে কোমর অব্দি ভয়াবহ শীতল কিছু একটা কষে জড়িয়ে ধরে আছে। ওপরতলায় নিজের ঘরে অর্চি। আর আমি ঝগড়া করে আশরাফের পাশ থেকে সন্তর্পণে সরে নিচতলায় এসে ক্রোধে ছটফট করতে করতে একপর্যায়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।’
‘পা মস্তভাবে পেঁচিয়ে ধরেছে?’
‘হ্যাঁ, কল্পনা করতে পারো, অমন একটা পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে আমার অবস্থা কী হতে পারে?’
‘আপা, কী বলছেন? কী ছিল ওটা?’
‘দাঁড়াও না, বলছি। এমন একটা জলাভূমি ভরা এলাকায় আসার পর থেকে আমি ঠিক এই ভয়টাই পেতাম। কিন্তু বাস্তবেই এর খপ্পরে পড়ব, কল্পনাও করতে পারিনি! আমার গলা ফেটে গোঙানি বের হতে গিয়েও থেমে যায়। সাপ! আলো–অন্ধকারময় ঘরের মধ্যে নিজেকে চূড়ান্ত বিপন্ন ভাবতেই বাঁচার ভয়াবহ শক্তি শরীরে ভর করে। গায়ের সব শক্তি দিয়ে সাপটাকে খাবলা দিয়ে ধরে ছুড়ে ফেলে উন্মাদের মতো গেট খুলি। স্পষ্ট অনুভব করেছি, ইয়া মোটা সাপ ছিল।’
‘রাসেলস ভাইপার?’
‘চুপ করো। এরপর ছুটতে ছুটতে গলি পেরিয়ে রাস্তায় এসে দাঁড়াই। বিশাল রাজপথ ধরে সাঁই সাঁই করে গাড়ি আসছে, যাচ্ছে। বিশ্বাস করো, তখন বাড়িতে অর্চি আছে, আশরাফ আছে, বিষয়টা ওদের জানানো দরকার—এসব কিচ্ছু মাথায় কাজ করেনি। কেবলই মনে হচ্ছিল, সাপটা আমাকে তাড়া করছে, অত সহজে আমাকে ছাড়বে না। পেছনের জল সাঁতরে আমার শরীরের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়বে। আমার অবস্থা এতটাই ভূতগ্রস্ত হয়েছিল যে বিষদাঁত দিয়ে সাপটি আমার শরীরে কামড় দিয়েছে কি দেয়নি, কোনো হুঁশ ছিল না। একটা সিএনজি দেখে হাত তুলি। ব্যাটা অদ্ভুত চোখে আমার দিকে তাকায়। খেয়াল হয়, ম্যাক্সি পরে আছি। চালক জিজ্ঞেস করে,
“কই যাইবেন?”
“সামনে, লয়া যান, ভাড়া বলবেন, দিয়া দেব।”
‘সিএনজি চলতে থাকে হু হু রাস্তা ধরে। চারপাশ বৃষ্টিস্নাত, ভেজা। কিছুক্ষণ পরপরই মনে হতে থাকে, আবার কিছু একটা পেঁচিয়ে ধরেছে আমাকে। সিএনজির মধ্যেই হাত ছোড়াছুড়ি শুরু করলে চালক জিজ্ঞেস করে, “কী হইছে আপা?”
“কিছু না, সামনে যান।”
‘একটু একটু হুঁশ আসতে থাকে যেন, লোকটা কি আমাকে প্রস্টিটিউট ভাবছে?
‘বাতাসের ঝাপটা মুখে এসে লাগতেই চালক বলে,“আপনের ব্যাপারস্যাপার তো ভালো মনে হইতাছে না।”
‘চালকের এই কথা শুনে পিত্তি জ্বলে যায়। কিন্তু ভেতরে সাহস সঞ্চয় করি। কানে হাত দিয়ে ভান করি কারও সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলছি, ‘হ্যাঁ হ্যাঁ কাল দুপুরের নিউজ আমিই পড়ব। আজ আমি বিশেষ একটা কারণে ডিস্টার্বড আছি। এর মধ্যেও কয়েক জায়গায় পুলিশকে টহল দিতে দেখেছি, বারবার মনে হচ্ছিল, সিএনজি থামালে কী বলব? কিন্তু মাথায় তখন সাপ! সিএনজিচালককে ‘বলি, “এই এই বাঁয়ে দাঁড়ান।” এরাম নামের বার আজ খোলা আছে! এত রাতে!
‘ঝগড়া হলেই পাজামার সঙ্গে টাকার থলে আটকে রাখি আমি। হাতে ব্যাগ দেখলে ওরা যদি বেরোতে না দেয়! যখনই ভাড়া মেটাচ্ছি, চালক ট্যারা চোখে তাকিয়ে বলে, “এইখানে নামবেন, কইলেই হইত।”
“তুমি আমার সোয়ামি?” ভনভন রাগে ভেতরে ঢুকে যাই। বলি, “আমার কাছে লাইসেন্স আছে, বেশি তেড়িবেড়ি করলে...”
‘দারোয়ান প্রশ্ন করে, “আপা, আইজ এত রাইতে?” এরামের দোতলায় বার।
‘আমি নিচতলায় পাহারাদারকে বেশ কিছু টাকা খসিয়ে দিয়ে বলি, “পরে বলব সব, আগে একটা বোতল দিন,” বলতে বলতে লোকটার ছাপরাঘরে গিয়ে বসি। আমি আগেও এখান থেকে বোতল নিয়ে গেছি। বিশেষ দিনে উপহার দিয়েছি আশরাফকে।
‘ভালো বকশিশ দিই বলে দারোয়ান মহা আপ্যায়ন করে প্রশ্ন করে, “আপা কোনো প্রব্লেম?” ওপর থেকে বহুবর্ণিল শব্দ ধেয়ে আসছে। আমার করোটিজুড়ে কেবল সাপের প্রচ্ছায়া! উত্তর না পেয়ে কিছু একটা অনুভব করে সে হুইস্কির বোতল নিয়ে আসে। আমি সঙ্গে সঙ্গে ছিপি খুলে গলায় ঢেলে দিই।
“আপা, পানি নেন পানি।”
‘আঁধার ফুঁড়ে হাত বাড়ায় সে। আসলেই গলা জ্বলে যাচ্ছিল। ঢকঢক পানি গিলে আরও কয়েক পেগ খাওয়ার পরে মাথায় একটা অদ্ভুত ঝিমুনি দিয়ে বিন্যস্ততা ফিরে আসে আমার। ধীরে ধীরে অর্চির কথা মনে হতে থাকে। মনে হয়, ওকে জড়িয়ে ধরে কাঁদি।’
‘আপা, বাসায় যে সাপ ফেলে এলেন, আসলেই সেটা সাপ ছিল?’
‘ছিল। নইলে মদ্যপানের গল্প করার জন্য তোমাকে ইন্টারভিউ দিচ্ছি? হাত দিয়ে মুঠো করে ধরলে একটা প্রাণীর অস্তিত্ব, অবয়ব সম্পর্কে আন্দাজ হবে না?’
‘তারপর?’
‘আমার শরীর এলিয়ে পড়ছিল। ছাপরাঘরটায় মনে হচ্ছিল শুয়ে পড়ি।
‘ছেলেটা এসে বলে, “আমাদের গেট বন্ধ করার সময় হয়ে যাচ্ছে। আপনি যাবেন না?”
‘হঠাৎ হুড়মুড় করে মনে হয়, সাপটা যদি সিঁড়ি বেয়ে ওপরে যায়? হায় হায়! আমি এখন কোত্থেকে বাসায় ফোন করি? কীভাবে সাবধান করি?’
‘তারপর?’
‘আমি দারোয়ানের মুঠোফোন নিয়ে কেবলই নম্বর স্মরণ করতে চাই আর ভুলে যাই। আমার মধ্যে কেবলই সন্ধ্যার ঝগড়ার দৃশ্য প্রস্ফুটিত হতে থাকে। কেবলই মনে হতে থাকে পরস্পরকে দেওয়া অসভ্য গালিগুলো।
‘আসলে শুরু সব সময় ও করে। আমাকে তেতিয়ে তুলে অদ্ভুত এক আনন্দ পায়। ঘোড়ার ডিমের সংসার আর করব না। চোখের সামনে হলুদ–কমলার বিচ্ছুরণ। আমার ভেতর থেকে পানীয়ের প্রভাবে যখন ভয় কেটে যাচ্ছে, তখন শুধুই মনে হতে থাকে, আমি অসহ্য যাতনার ভার বয়ে বেড়াচ্ছি। পাজামার ভেতর জগতের অসীম ভার। পুরো অস্তিত্বের গিঁটে গিঁটে সেই ভার ভয়ানক যন্ত্রণা হয়ে আমার পুরো অস্তিত্বকে গিলে খাচ্ছে।
‘হঠাৎ কী দেখে চিৎকার করে ওঠে দারোয়ান। তার চিৎকারে আমি মুহ্যমান হয়ে পড়ি।’
‘আপা, সাপটার কী হলো?’
‘সেটাই তো বলছি, সাপটা আমার পাজামার ভেতর পা জড়িয়ে ছিল।’