আমাদের নতুন বস লোকটা একটা আস্ত খবিশ। আপনিই বলুন, যে লোক অফিসে এসে এসব কাজ করে, তাকে আপনি কী বলবেন? খবিশ, না খাটাশ?
১. অফিসে এসে জুতা খোলেন। মোজা খোলেন। সেই মোজা নিজের টেবিলের ওপরে শুকাতে দেন।
২. মোবাইল ফোনে স্টার জলসার সিরিয়াল দেখেন।
কিন্তু তিনিই এখন আমাদের দণ্ডমুণ্ডের কর্তা। আমাদের মালিক কাম বস ছিলেন এস চৌধুরী, অসাধারণ মানুষ ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে এমএ পাস করেছিলেন, কিন্তু ভক্ত তিনি জীবনানন্দ দাশের। অফিসের সবার সঙ্গে হেসে কথা বলতেন, এমনভাবে আমাদের প্রশংসা করতেন যে আমরা অফিসের কাজ করতাম দ্বিগুণ–তিন গুণ উৎসাহে। আমাদের অফিস বছর শেষে ভালো লাভ করত। বস আমাদের ভালো বোনাস দিতেন।
সেই ভালো মানুষ বসের হার্টে প্রবলেম দেখা দিল। ডাক্তার তাঁকে রেস্টে থাকতে বলেছেন। তিনি তাঁর শ্যালক আবুল কাশেমকে আমাদের বস করে পাঠালেন।
আমাদের নতুন বসকে আমরা আড়ালে ডাকি ম্যাঙ্গো সেলসম্যান। এর কারণ তিনি আমাদের অফিসের জানালা দিয়ে আমওয়ালাকে ডেকেছিলেন ‘ম্যাঙ্গো, এই ম্যাঙ্গো’ বলে।
আমাদের অফিস দোতলায়। জুলাই মাসের সেদিন ছিল গুমোট, গরম; আর লোডশেডিংয়ে জর্জরিত। এসি চলছিল না। জানালা খুলে দেওয়া হয়েছে। সেই জানালায় দাঁড়িয়ে আমাদের নতুন বস আবুল কাশেম রাস্তার সৌন্দর্য নিরীক্ষণ করছেন। হঠাৎ তিনি ডেকে উঠলেন,‘ ম্যাঙ্গো, ম্যাঙ্গো, এই ম্যাঙ্গো।’
তারপর তিনি অফিসের পিয়ন আলাউদ্দিনকে বললেন, ‘এই এই দেখো তো এই ম্যাঙ্গো সেলসম্যান আমার কথা শুনছে না কেন?’
আলাউদ্দিন হাঁ করে তাকিয়ে রইল।
‘এই যাও না, ডেকে আনো না ওকে?’
‘কারে স্যার?’
‘ওই যে ম্যাঙ্গো সেলসম্যানটাকে!’
‘মানে কী স্যার? ওই আমওয়ালারে ডাকুম?’
‘হ্যাঁ। ম্যাঙ্গো সেলসম্যান। আমার মনে হয় ওর ম্যাঙ্গোগুলো ল্যাংড়া।’
আলাউদ্দিন ডাকতে লাগল, ‘ওই আম, ওই আম, খাড়ান। আহেন। দোতলায় আহেন...খাড়ান। ওই যে সিঁড়ি...’
তো সেদিন থেকে আমাদের নতুন বসকে আমরা ম্যাঙ্গো সেলসম্যান বলে ডাকি।
আমার নাম শান্ত। আমি এমবিএ। আইইউবি থেকে কমপ্লিট করেছি। আগামী শীতে বয়স ২৮ হবে। আমাদের একজন নতুন কলিগ এসেছেন। নাম শান্তা।
আমার নাম শান্ত।
তাঁর নাম শান্তা।
ব্যাপারটা নিয়ে আরেকটু এগোনো দরকার কি না বলেন!
শান্তা যোগ দিয়েছেন অ্যাকাউন্টস সেকশনে। তিনি বসবেন ম্যানেজার অ্যাকাউন্টসের পাশে।
ম্যাঙ্গো সেলসম্যান বললেন, ‘শান্তা, আপনি আমার পাশের টেবিলে বসবেন। অ্যাকাউন্টস সেকশনে কী হচ্ছে না হচ্ছে আমাকে রোজ সকালবেলা ব্রিফ করবেন।’
এই নিয়ে গোটা অফিস তোলপাড়। অ্যাকাউন্টস বিভাগের এমপ্লয়ি কেন বসের পাশে বসবেন!
আমাদের অফিসটা অবশ্য বড় নয়। মাঝারি আকারের অফিস। গোটা বিশেক কর্মচারী। আমরা করপোরেট সেল করি। কী বিক্রি করি, শুনলে অবাক হবেন। আমরা অফিসে অফিসে, হোটেলে হোটেলে পেইন্টিংস বিক্রি করি। একেবারে হাতে আঁকা চিত্রকর্ম। এখন যেমন আমার সঙ্গে কথা চলছে ঢাকার একটা বড় হাসপাতালের। ওদের কমপক্ষে ৩০০টা পেইন্টিংস দরকার—প্রতিটি কেবিনে, ওয়ার্ডে, বারান্দায়, ডাক্তারদের রুমে।
অফিসের প্রবীণ অ্যাকাউন্টস ম্যানেজার মনোরঞ্জনবাবু গেলেন ম্যাঙ্গো সেলসম্যানের সামনে।
‘বস, একটা কথা!’
‘বলেন। বসে বলেন।’ ম্যাঙ্গো মুখের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে দাঁতে আটকে থাকা মাংসের টুকরা বের করতে করতে বললেন।
‘শান্তা করিম তো অ্যাকাউন্ট সেকশনে জয়েন করেছেন। উনি যদি আমাদের সেকশনে বসেন, আমার কাজের সুবিধা হতো!’
‘আপনার সুবিধার জন্য তো অফিস নয়। অফিস হলো আমার সুবিধার জন্য।’
‘চৌধুরী স্যার বলতেন, আমরা সবাই মিলে একটা পরিবার। সবাই ভালো থাকলেই অফিস ভালো করবে।’
‘আর আমি হলাম সেই পরিবারের মাথা। মাথা ভালো না থাকলে কেউ ভালো থাকবে না।’
‘তা ঠিক।’
ম্যাঙ্গো সেলসম্যান আমাকে ডাকলেন। আমি তো একটু দূরে বসে সবই শুনছিলাম। তিনি ডাকলেন, ‘শান্ত!’
‘ইয়েস বস।’
‘তুমি কী মনে করো! শান্তা করিমের কোথায় বসা উচিত?’
‘আপনি যা ভালো মনে করেন, বস।’
‘আমার মনে যা আছে তা তো আছেই। আমি তোমার মত জানতে চাই। এটা একটা ডেমোক্রেটিক প্রতিষ্ঠান। সবার মত শুনতে হবে। ঠিক কি না?’
‘ইয়েস বস।’
‘তো শান্তা করিম কোথায় বসলে ভালো হয় বলে তুমি মনে করো?’
‘ইয়েস বস।’
‘ইয়েস ইয়েস করছ কেন। প্রশ্ন করেছি। জবাব দাও।’
‘আপনার পাশেই তো সিটটা পড়ে আছে, বস। ওটাতে বসালেই সবচেয়ে ভালো হয়, বস।’
ম্যাঙ্গো হেসে ফেললেন, ‘মনোরঞ্জনবাবু, দেখলেন। এরা হলো আজকালকার এমবিএ। মাথা ক্লিয়ার। ভিশন ট্রান্সপারেন্ট। আমি চলি গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে। ডেমোক্রেসি ইজ দ্য বেস্ট পলিসি। শান্তা করিম এখানেই বসবে।’
আমি নিজের টেবিলে বসে পায়ের নিচের ময়লা ফেলা ঝুড়িটাকে লাথি কষালাম। তারপর টেবিলের ওপরে দেয়ালে লাগানো আমার অফিসজীবনের সাফল্যের সূত্রটা আবার পড়লাম।
অফিসজীবনে সাফল্যের সূত্র—
রুল নম্বর ১: দ্য বস ইজ অলওয়েজ রাইট।
রুল নম্বর ২: ইফ দ্য বস ইজ রং, সি রুল নম্বর ১।
বস আমাদের ডেকেছেন। আমরা হাসপাতালের পেইন্টিংসের অর্ডার পেয়ে গেছি। তিমি মাছের ছবি দিতে হবে।
বস বললেন, ‘বাংলাদেশের আর্টিস্টদের কাছ থেকে ছবি কিনলে দাম কেমন পড়বে? এরা কি তিমি মাছ আঁকতে পারবে?’
আমি বললাম, ‘বস, উফফ। বস, আপনি এত স্মার্ট কেন? কী সুন্দর প্রশ্ন করলেন। আসলেই তো আমাদের দেশের আর্টিস্টরা জীবনেও তিমি মাছ দেখেনি। তারা কী তিমি আঁকবে? আমরা চীনে অর্ডার দিই। ৩০০ পিস হাতে আঁকা ছবি সুন্দর ফ্রেমে পাঠিয়ে দেবে। দাম পড়বে কম। লাভ করব বেশি।’
বস বললেন, ‘তিমি মাছের রং কিন্তু নানা রকমের হতে পারে, লাল, নীল... তিমি মাছের ফুলকা কিন্তু খেতেও খুব ভালো। হার্টের জন্য উপকারী।’
আমাদের মধ্যে গালিব একটু গোঁয়ার প্রকৃতির। সে বলল, ‘তিমিকে মাছ বলা হলেও এটা মাছ নয়। এটা হলো স্তন্যপায়ী প্রাণী! আর তিমি মাছের কোনো ফুলকা থাকে না।’
বস বললেন, ‘গালিব, তুমি একটা কাজ করো তো। ছাদে যাও। ছাদে গিয়ে সূর্যের ১০ ছবি তুলে আনো। তোমার মোবাইল ফোনের ক্যামেরা কাজ করে তো!’
সবাই অবাক। এই দুপুরের রোদে গালিবকে ছাদে পাঠানো হচ্ছে কেন?
আমি জানি কেন! তিমি যে মাছ নয়, এটা নিয়ে গালিব বসকে জ্ঞান দিয়েছে।
দুপুরের রোদে ছাদে গিয়ে গালিব ১০টার জায়গায় ২০টা ফটো তুলল। ফটোর ছাতামাথা কিছুই উঠল না। সূর্যের ছবি তুলতে গেলেই কি তোলা যায়! ছবি তোলার কসরত শেষে ঘেমে-নেয়ে গালিব একেবারে পোড়ানো বেগুনের মতো হয়ে এল।
আমি গালিবের টেবিলে আরেকটা ফর্মুলা লিখে কাচের নিচে রেখে দিলাম—
ফর্মুলা ওয়ান: নলেজ ইজ পাওয়ার।
ফর্মুলা টু: পাওয়ার ইজ নলেজ। ইফ ইউ নিড নলেজ, গো টু পাওয়ার।
সেদিন ছুটির পর ম্যাঙ্গো যাচ্ছেন না। শান্তাকেও ছাড়ছেন না। অথচ আমাদের একসঙ্গে সিনেপ্লেক্সে যাওয়ার কথা। ইংরেজি সিনেমার দুটি টিকিট আমি কিনে রেখেছি।
আমি দূরে টেবিলে বসে আছি। কান খাড়া করে।
শান্তা বলল, ‘বস, মাকে নিয়ে একটু ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। ৭টায় অ্যাপয়েন্টমেন্ট।
‘কোন ডাক্তার?’
আমার মুখের দিকে তাকিয়ে শান্তা বলল, ‘ডাক্তার আমিনুল।’
‘ডাক্তার আমিনুল। ও তো আমার ক্লাসমেট ছিল। আমি ফোন করে বলে দিচ্ছি। ফোন নম্বরটা দাও।’
‘আমার কাছে তো ফোন নম্বর নেই।’
‘আচ্ছা আমি করছি। কোথায় বসছে আমিনুল ইদানীং?’
‘জি?’
‘তোমার ডাক্তার বসে কোথায়?’
‘ল্যাব এইডে।’
‘আমি ল্যাবএইডে ফোন করে বলে দিচ্ছি।’
‘লাগবে না, বস। আপনি শুধু একটু তাড়াতাড়ি আমাকে ছুটি দেন।’
‘দেব। শান্ত! শান্ত।’
ম্যাঙ্গোর ডাকে সাড়া দিলাম আমি, ‘ইয়েস বস।’
‘তুমি যাও। তুমি অফিসে কী করো ছুটির পর?’
‘শান্তার জন্য ওয়েট করতেসি বস। ওকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাব।’
ওকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাবে মানে? ওর অসুখ, তোমার অসুখ, নাকি ওর মায়ের অসুখ?’
‘ওর মায়েরই তো বলল আমাকে।’
‘এর মধ্যে তুমি ঢুকছ কেন? দেখো, আমাদের অফিসের রুল আছে। কোনো নারী এমপ্লয়ির সঙ্গে কোনো রকমের অ্যাফেয়ার করা যাবে না।’
‘ইয়েস বস।’
‘তুমি চলে যাও।’
‘ইয়েস বস। বস, আমাদের অফিসে বস সিসি ক্যামেরাগুলো কাজ করছে কি না, আজকেই চেক করেছি। এস চৌধুরী স্যারই ফোন করে বললেন চেক করতে। উনি তাঁর ঘরে বসে সব দেখতে পান। সবকিছুর রেকর্ড থাকে।’
‘এটা তুমি এখন হঠাৎ বললে কেন?’
‘না বস। আপনাকে না জানিয়ে এস চৌধুরী স্যারের সঙ্গে কথা বলেছি। এটা তো ঠিক নয়। আপনিই হলেন বস।’
‘ঠিক। সবকিছু আমার সঙ্গে কনসাল্ট করবে। শান্তা করিম, তুমি যাও। শান্ত, তুমি থাকো। তোমার সঙ্গে জরুরি একটা কাজ আছে।’
শান্তা উঠল। ও বাইরে অপেক্ষা করবে। আমার মোটরবাইকে ওকে তুলব। এর মধ্যে ম্যাঙ্গো সেলসম্যান এটা কী শুরু করলেন?
‘আচ্ছা বলো তো তিমি মাছ নাকি প্রাণী!’
‘মাছ স্যার।’
‘তাহলে গালিব গাধাটাকে ফোন করো।’
আমি মোবাইল হাতে তুলে ফোন করলাম, ‘গালিব, বস কথা বলবেন।’
‘এই গর্দভ, তিমি মাছ নাকি প্রাণী?’
‘দুগ্ধপায়ী প্রাণী।’ (ম্যাঙ্গো স্পিকার অন করেছেন, শোনা যাচ্ছে)
‘তাহলে তুমি সাত দিনের মধ্যে তিমির দুধ জোগাড় করে দেবে।’
আমি বললাম, ‘বস, আমি একটু বের হই। আমার বাবা ফোন করতেছেন। নিচে দাঁড়িয়ে আছেন।’
‘নিচে দাঁড়িয়ে থাকবেন কেন! ওনাকে ওপরে উঠতে বলো।’
‘উনি ওপরে উঠতে পারবেন না। সিঁড়ি বাওয়া নিষেধ।’
ফোন বাজছে। শান্তার কল। তার নাম আমার এখানে সেভ করা এ দিয়ে।
‘কার ফোন?’
‘আব্বার।’
‘দাও। আমি ওনার সঙ্গে কথা বলি।’
আমি বলি, ‘আমার বোনের সঙ্গে কথা বলেন। আব্বা, মিতুকে ফোনটা দেন। আমার বস কথা বলবেন। খুব ভালো মানুষ। বল, কথা বল।’
বস শান্তার সঙ্গে কথা বলছেন। ফোন স্পিকারেই।
‘আপনার নাম মিতু?’
‘জি স্যার। আসসালামু আলাইকুম।’
‘আচ্ছা আচ্ছা অফিসে আসুন।’
আজকে না স্যার। আব্বা তো বিছানা থেকে উঠতে পারেন না।’
‘উনি নাকি নিচে...’
‘হ্যাঁ। নিচে।’
‘তাহলে বিছানা...’
শান্তা ফোন কেটে দিল।
আমি ফোন নিলাম, ‘মিতু, আব্বা নিচে কি অ্যাম্বুলেন্সে শোয়া?’
আমি আর পেছনে তাকালাম না। বললাম, ‘বস, আর্জেন্ট। আর্জেন্ট।’ বলেই আমি নিচে দৌড়ে গেলাম।
আমার পেছনে শান্তা। আমার মোটরসাইকেল পঙ্খিরাজের মতো ছুটছে। হঠাৎ ব্রেক কষতে হলো। সামনের গাড়ি এভাবে আমার গায়ে উঠে পড়ছে কেন? শান্তা আমাকে জড়িয়ে ধরল। আমার ভালোই লাগছে।
মাথার হেলমেট নামালাম। গালি বের হলো, ‘এই গন্ডারের বাচ্চা...’
গাড়ির কাচ নামিয়ে মুখ বের করলেন ম্যাঙ্গো সেলসম্যান। কী বুঝে যে হেলমেটটা খুলেছিলাম।
ম্যাঙ্গো বললেন, ‘এই শান্ত, এখুনি তো মরতা।’
আমি বললাম, ‘মিতুকে নিয়ে আব্বার অ্যাম্বুলেন্সের পেছনে পেছনে ছুটছি। তাই মাথা ঠিক নাই, বস। কালকে দেখা হবে।’
অন্ধকারে সিনেমা হলে ঢুকলাম। কষ্ট করে সিট খুঁজে বের করলাম।
একটু পরে টের পেলাম, আমার পাশেই বসে আছেন ম্যাঙ্গো...
ম্যাঙ্গো সিনেপ্লেক্সে সিনেমা দেখতে আসতে পারেন, আমার কোনো ধারণাই ছিল না।
ম্যাঙ্গোর ওপাশে একজন নারী। জিনস পরা, কটকটে লাল লিপস্টিক।
এই গরমে ওই লাল লিপস্টিকটা কে?
বিরতির সময় আলো জ্বলে উঠল।
আমার ডান পাশে ম্যাঙ্গো। তার পাশে লিপস্টিক। আমার বাঁ পাশে শান্তা—কিয়েক্টাবস্থা!
ম্যাঙ্গো বললেন, ‘না। জরুরি কাজ আছে। সিনেমাটা আর দেখা হলো না। যাই।’
লাল লিপস্টিক মহিলা তাঁর হাত ধরে বললেন, ‘কই যাইবেন। আজকা না আমরা একলগে থাকুম। না থাকলেও টাকা দিয়া যাইতে হইব...’
বস এখন আমাদের দুজনের সঙ্গেই ভালো ব্যবহার করেন। আমাদের দুজনেরই প্রমোশন হয়েছে।
গালিব আমার কাছে এসেছে, ‘তিমির দুধ কই পাব?’
‘আরে, পাউডার মিল্ক গুলিয়ে আনো। ঘন বানাতে হবে। টুথপেস্টের মতো।’ গুগলের জ্ঞান ফলালাম।
আমি আর গালিব বসের কাছে গেছি, ‘বস, তিমির দুধ।’
‘কই পাইলা।’
‘চায়না থেকে আনিয়েছি। ওদের নিজেদের সমুদ্রে পালা তিমির দুধ। এই দেখেন, অনলাইনে অর্ডার দেওয়া যায়।’
আমরা ফেসবুকে একটা পেজ খুলে রেখেছিলাম। চাইনিজ হোয়েল মিল্ক। বসকে দেখালাম।
বস বললেন, ‘দুধটা ভালো দিয়েছে। সত্যিকারের তিমির দুধ। এক্সেলেন্ট। তিমির দুধ খেলে হেলথ ভালো থাকে। জানো তো।’
‘ইয়েস বস।’
‘শান্ত, শান্তা কেমন আছে?’
‘ভালো, বস।’
‘তোমরা কবে বিয়ে করছ?’
‘বিয়ের কথা তো ভাবিনি, বস।’
‘ভাবো।’
‘ইয়েস বস।’
একদিন শান্তা ফিসফিস করে বলল, ‘চাইনিজ পেইন্টিংস পড়েছে দুই হাজার টাকা পার পিস। ম্যাঙ্গো ফলস হিসাব দেখাচ্ছে ১০ হাজার। পুরো টাকাটা মেরে দিচ্ছে।’
আমি বললাম, পুরো জিনিসটা ফটোকপি করো। এস চৌধুরী স্যারকে পাঠাব।
একদিন সুযোগ মিলল। ম্যাঙ্গো আমাকে বললেন, ‘আমাদের সিসি ক্যামেরাগুলো তো সব নষ্ট। তাই না?’
‘ইয়েস বস।’
‘ওগুলো তো দুলাভাই দেখেন না? তাই তো?’
‘ইয়েস বস।’
নষ্ট ক্যামেরা দিয়ে দুলাভাই আমাদের ভয় দেখান। হা হা হা।’
‘ইয়েস বস।’
শান্তা বলল, ‘তুমি মিথ্যা বললে কেন?’
আমি বললাম, ‘বস ইজ অলওয়েজ রাইট।’
আসলে সিসি ক্যামেরা অন। আমি এস চৌধুরী স্যারকে ফোন করলাম। স্যার, অফিসের সিসি ক্যামেরার ছবি দেখতে থাকুন। সিনেমা দেখতে পাবেন।
লাল লিপস্টিক অফিসে ঢুকেছিলেন। এস চৌধুরী স্যার অফিসে এসে হাতেনাতে ধরে ফেললেন। ম্যাঙ্গোর চাকরি চলে গেছে।
আমি আর শান্তা বিয়ে করে ফেলেছি। হানিমুনে যাচ্ছি। এখনো ডেস্টিনেশন নাগরকোট, নেপাল। তবে শান্তা যদি বলে কলকাতা, তো কলকাতা। আমার জীবনের বস শান্তা। সে যা বলবে, তা–ই হবে।
ফর্মুলা ১: বস ইজ অলওয়েজ রাইট। ফর্মুলা ২: ইফ বস ইজ রং, সি ফর্মুলা নম্বর ১। এটা অফিসে সত্য, ঘরেও সত্য। ঘরের বস হলো বউ।