গত শতকের সবচেয়ে জনপ্রিয় কবিতা ‘যদি’

কোলাজমনিরুল ইসলাম
নোবেলজয়ী লেখক রুডইয়ার্ড কিপলিংয়ের কবিতা ‘যদি’ গত শতকের সবচেয়ে জনপ্রিয় কবিতা হিসেবে গণ্য। এটা কবি ১৮৯৫ সালে লিখেছিলেন। আর প্রথম প্রকাশ করেছিলেন ১৯১০ সালে। কবিতাটি তিনি লিখেছিলেন নিজের ছেলের জন্য। একজন মানুষকে জীবনের উত্থান-পতনে কী করতে হবে না-হবে, তার একটা সুন্দর তালিকা দেওয়া আছে এই কবিতায়। চমকপ্রদ বিষয় হলো, পুরো কবিতাটা একটা বাক্যে লেখা। এই পরামর্শ আমি আমার সন্তানকে দিতে চাই, সন্তানতুল্যদের দিতে চাই, সবচেয়ে বড় কথা, আমি আমার নিজেকে দিতে চাই। সমালোচকদের সমালোচনায় বিচলিত হওয়া যাবে না, পাল্টা সমালোচনায় মত্ত হওয়া যাবে না, কিন্তু সমালোচনা করতে দিতে হবে। জয়-পরাজয় দুটোতেই অবিচল থাকতে হবে। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত হার না-মানা লড়াই করে যেতে হবে। কিন্তু সবচেয়ে জরুরি কথাটা বোধ হয় এই: একটা মিনিটে আছে ৬০টা সেকেন্ড। ৬০ সেকেন্ডের প্রতিটা সেকেন্ড দৌড়াচ্ছে। ৬০ সেকেন্ডে দৌড়ে বহু দূর যাওয়া যায়। আবার একটা সেকেন্ডও আমার জন্য অপেক্ষা করে না। চলে যায়। মহামূল্যবান একটা করে সেকেন্ড। আমি যেন সময় অপচয় না করি। আমি যেন কাজ করি। সময় ক্ষমাহীন।
রুডইয়ার্ড কিপলিং

যদি
যদি তুমি মাথা ঠান্ডা রাখতে পারো তখন
যখন সবাই মাথা গরম করে দোষারোপ করছে তোমাকেই,

যদি তুমি নিজের ওপরে আস্থা রাখতে পারো তখন, যখন সবাই তোমার ব্যাপারে সন্দিহান, আবার অন্যদের সন্দেহ করার জায়গাটাও দাও;
যদি তুমি অপেক্ষা করতে পারো, আর অপেক্ষা করতে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে না পড়ো;
যদি তোমাকে নিয়ে যখন মিথ্যা কথা বলা হচ্ছে, তখন নিজে মিথ্যা কথা না বলো,
যখন তোমাকে ঘৃণা করা হচ্ছে, তখনো তুমি ঘৃণার পথ বেছে না নাও;
অবশ্য তখনো তোমাকে অতিরিক্ত ভালো সাজতে হবে না, খুব জ্ঞানীর মতো কথা বলতে হবে না:

যদি তুমি স্বপ্ন দেখতে পারো, কিন্তু স্বপ্নকে তোমার প্রভু বানিয়ে না ফেলো,
যদি তুমি চিন্তা করতে পারো, কিন্তু চিন্তাকেই তোমার লক্ষ্য বানিয়ে না ফেলো,
যদি তুমি ‘বিজয়’ আর ‘বিপর্যয়’—এই দুইয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারো,
আর যদি তুমি এই দুই প্রতারককেই একইভাবে গ্রহণ করতে পারো;

যদি তুমি সহ্য করতে পারো তখন, যখন তোমার বলা সত্য কথাকে বিকৃত করে অসাধু লোকেরা বোকা মানুষদের জন্য ফাঁদ বানায়;
অথবা তুমি যে জিনিসগুলোর জন্য জীবন দিয়ে দিয়েছ, সেগুলোকে যদি তুমি ভেঙে যেতে দেখো, আর যদি তুমি সামনে-পেছনে ঝুঁকে পড়ে ক্ষয়ে যাওয়া হাতিয়ার দিয়ে আবার সেগুলোকে গড়ে তুলতে পারো:

যদি তুমি তোমার বিজয়গুলোকে এলোমেলো করে রাখতে পারো
আর সেসব নিয়ে বাজি খেলে সব হারিয়ে আবারও নতুন করে শুরু করতে পারো,
আর হারটা নিয়ে একটা কথাও ব্যয় না করো,
যদি তুমি তোমার হৃৎপিণ্ড, স্নায়ু আর পেশিকে তোমার পালা চলে যাওয়ার অনেক পরেও কাজ করতে বাধ্য করতে পারো, তখনো...
যখন তোমার ভেতরে আর কিছুই অবশিষ্ট নেই কেবল ইচ্ছাশক্তি ছাড়া, যা বলছে ‌‘লেগে থাকো’:

যদি তুমি সাধারণ মানুষের সঙ্গে চলার সময়ও তোমার বিনয় ধরে রাখতে পারো
আর রাজাধিরাজের সঙ্গে চলার সময়ও সাদাসিধে ভাবটা হারিয়ে না ফেলো,
যদি শত্রু কিংবা সহৃদয় বন্ধুও তোমাকে আঘাত দিতে না পারে,
যদি সব মানুষ তোমার ওপরে নির্ভর করে, কিন্তু কেউই খুব বেশি নির্ভরশীল হয়ে না পড়ে,
যদি তুমি ক্ষমাহীন একটা মিনিটকে ভরে তুলতে পারো ষাট সেকেন্ডের দৌড়ের সমান মর্যাদায়,
তাহলে
তাহলে এই পৃথিবী তোমার, এই পৃথিবীতে যা কিছু আছে সব তোমার;
এবং তারও চেয়ে বড় কথা, তুমি হয়ে উঠবে একজন মানুষ, পুত্র আমার।

লেখক: রুডইয়ার্ড কিপলিং

অন্য আলো ডটকমে লেখা পাঠানোর ঠিকানা: [email protected]