টেড হিউজেসকে লেখা সিলভিয়া প্লাথের চিঠি
‘বহু পা-বিশিষ্ট বিশাল একটা ঘাসফড়িং ঘরের ভেতর চলে এসেছে’
● ভূমিকা ও টীকাসহ অনুবাদ: রাজিয়া সুলতানা
ভূমিকা
দারুণ মেধাবী ছাত্রী ছিলেন মার্কিন কবি সিলভিয়া প্লাথ। ফুলব্রাইট স্কলারশিপ নিয়ে ইংল্যান্ডের কেমব্রিজ ইউনিভার্সিতে পড়তে এসেছিলেন তিনি। সেখানেই টেড হিউজেসের সঙ্গে তাঁর পরিচয়। দিনটি ছিল ১৯৫৬ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি। ফ্যালকন ইন পান্থশালা। সাহিত্যের অনুষ্ঠান। কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি থেকে লেখাপড়া শেষ করে টেড হিউজেস তখন লন্ডনে একটা চাকরি করছিলেন। কিন্তু মাঝেমধ্যেই বিভিন্ন কাজে ও বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে দেখা করতে কেমব্রিজে আসতেন। অনুষ্ঠানে সিলভিয়া প্লাথ বন্ধুদের জানান যে তিনি টেড হিউজেসের কবিতা পড়েছেন এবং তাঁর কবিতার ভক্তও বটে। কেউ তাঁর কথা জানেন কি না, জিজ্ঞেস করলে সেই অনুষ্ঠানেই তাঁর দেখা হয়ে যায় টেড হিউজেসের সঙ্গে। প্রথম দর্শনেই দুজন দুজনার প্রেমে পড়ে যান। এর দুই দিন পরই ‘পারস্যুট’ নামে একটা কবিতায় সিলভিয়া প্রেমের সেই অনুভূতির প্রকাশ ঘটান এই বলে, ‘There is a panther stalks me down:\ One day I’ll have my death of him.’
সিলভিয়া প্লাথ বন্ধুদের জানান যে তিনি টেড হিউজেসের কবিতা পড়েছেন এবং তাঁর কবিতার ভক্তও বটে। কেউ তাঁর কথা জানেন কি না, জিজ্ঞেস করলে সেই অনুষ্ঠানেই তাঁর দেখা হয়ে যায় টেড হিউজেসের সঙ্গে। প্রথম দর্শনেই দুজন দুজনার প্রেমে পড়ে যান।
এর চার মাস পরেই তাঁরা লন্ডনে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। এরপর প্যারিসে হানিমুন কাটিয়ে এসে টেড হিউজেসের পরিবারের সঙ্গে সেপ্টেম্বর মাস কাটান সিলভিয়া। অক্টোবরের ১ তারিখে ফিরে আসেন কেমব্রিজের নিউহেম কলেজে এবং দ্বিতীয় বর্ষে পড়াশোনা শুরু করেন। সিলভিয়া যখন কেমব্রিজে, টেড তখন বাবা–মায়ের সঙ্গে ইয়র্কশায়ারে। বিয়ের পরপরই দুজন দুইখানে। শুরু হয় বিরহকাল। টেডকে ভীষণ মিস করতে থাকেন সিলভিয়া। এই সময় থেকে শুরু করে পরবর্তী বাইশ দিন পর্যন্ত সিলভিয়া টেডকে মোট ষোলোটি চিঠি লেখেন। এই চিঠিগুলো ২০১৭ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়। সে–ও দীর্ঘ আট বছর আগে। এর মধ্যে কেউ সেগুলোর বাংলা করেছেন বলে আমার জানা নেই। বিভিন্ন সময়ে আমি এই চিঠিগুলো বাংলায় অনুবাদ করেছি; এখন মলাটবদ্ধ হয়ে আসার অপেক্ষায়। তিন নম্বর চিঠিটার অনুবাদ সবার আগে প্রকাশ করা হলো। এই চিঠিতে সিলভিয়া প্লাথ একটি কবিতা লিখেছেন, যেটি স্বতন্ত্র একটি কবিতা।
চিঠি
প্রিয়তম টেডি পংক…
এখনো বেশ সকাল বলা চলে, ভোরের সেই ধূসর আর ঠান্ডা ঠান্ডা ভাবটা এখনো আছে; এখন বহু পা-বিশিষ্ট বিশাল একটা ঘাসফড়িং ঘরের ভেতর চলে এসেছে। তুরস্কের তিক্ত আর বিস্বাদ কফিসংক্রান্ত চিঠিগুলো খুব একঘেয়ে। যার অর্থ হচ্ছে নতুন কিছু নেই, কেউ নেয়নি, বর্জনও করেনি, ফলে বড় ধরনের কোনো চেকও আসেনি। এলি বাড়ি ফিরেছে, আমাকে মিষ্টি ভাষায় একটা চিঠি লিখেছে। বলেছে শিগগিরই টিভি স্ক্রিপ্টরাইটার প্যাডি চিয়াস্কির নাটকের বই পাঠাবে;১ আমেরিকা আসলে কীভাবে নাটকগুলো দেখাতে চায়, তা বোঝার জন্য বেশ সুবিধে হবে তাহলে আমার। নাট্যকার এই ছেলেটার মাথাভর্তি সাদা চুল; ওর সব নাটক ব্রডওয়ে আর মুভিতে দেখানো হয়। আমার চিঠির উত্তরে তোমার দাঁতের ডাক্তার ক্যাপলান হাতে লিখে সুন্দর একটা চিঠি পাঠিয়েছেন। উনি পরম যত্নে আমার দাঁতের একটা ছিদ্র ঠিক করে দিয়েছিলেন। সেই ফি পাওনা বাবদ একটা চেকসহ তাঁকে ধন্যবাদ জানিয়ে লিখেছিলাম; তুমি লন্ডনে এলে উনি তোমাকেও ডেকেছেন। তোমার দাঁতের কী অবস্থা এখন তা দেখার জন্য এবং পরবর্তী সময়ে এ বিষয়ে কী করণীয়, তা জানাবেন। ‘পরবর্তীতে কী করণীয়’—কেমন যেন কথাটা—কৌশলী, চাপা আর মৃত্যুগন্ধী মনে হচ্ছে, তাই না? টেরি২ নামে এক মহিলা কার্ডে করে চিঠি লিখে পাঠিয়েছেন—সেই কার্ডে রয়েছে জিরাফ, হাতি আর নিগ্রোদের চিঠি আর ডাকবাক্স বহন করে নিয়ে যাওয়ার ছবি। আমি কিন্তু চুপ মেরে আছি। কোনো আমেরিকান বা অন্য কেউ এই টেরি মহিলাকে বুঝিয়েছে যে চা, ক্ষুধাবর্ধক মদ শেরি আর কফি সম্পর্কে ওর লক্ষ লক্ষ প্রশ্নের উত্তর আমার জানা। ও আমাকে আবার চয়েস দিয়েছে। আমি এসবের উত্তর দেব না, দেব না, দেব না। অগ্রাহ্য করব, ফেলে রাখব একদম। ফুলব্রাইট স্কলারশিপ নিয়ে নতুন একজন আমেরিকান মেয়ে এসেছে, নাম ডিনা ফেরান৩। গতকাল আরেকজন এসে পৌঁছেছে, খুবই মিষ্টি চেহারার। সোনালি রঙের চুল ওর। প্রত্নতত্ত্ব নিয়ে পড়ছে, এর পরের আগস্টে বিয়ে। গত রাতে ওকে নিয়ে খেতে গেলাম। বললাম চকমকি পাথর কী ব্যাখ্যা করতে। আজ সকালে ওকে নিয়ে শপিংয়ে যাব। আমারও কিছু প্রয়োজনীয় কেনাকাটা আছে। সেগুলো সেরে ওকে মার্কেটে রেখেই লেখালেখির জন্য দ্রুত বাসায় ফিরব। পুরোনো পাহারাদারটা ফিরে না আসা পর্যন্ত আর অপেক্ষা করতে পারছি না। যদি কিছু ভারতীয়, দক্ষিণ আফ্রিকান ছাত্রছাত্রী বা অন্য কারও জন্য আমাকে অতিথি সেবিকা হতে হয়, তাহলে আমি শেষ। মিসেস মেল ওদেরকে আমার ডেরায় নিয়ে আসেন, আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে ওদেরকে স্বাগত জানাতে হয়। আমি যেন পার্ল মিস্তা৪। গড! আমি লোকজন একদম পছন্দ করি না। ওরা চমৎকার মানুষ, কিন্তু সেইটা কথা না। আমি চাই না, একদম চাই না কেউ আসুক আমার কাছে।
যদি কিছু ভারতীয়, দক্ষিণ আফ্রিকান ছাত্রছাত্রী বা অন্য কারও জন্য আমাকে অতিথি সেবিকা হতে হয়, তাহলে আমি শেষ। মিসেস মেল ওদেরকে আমার ডেরায় নিয়ে আসেন। ওরা চমৎকার মানুষ, কিন্তু সেইটা কথা না। আমি চাই না, একদম চাই না কেউ আসুক আমার কাছে।টেড হিউজেসকে লেখা চিঠিতে সিলভিয়া প্লাথ
শোনো, গতকাল কী হয়েছে! আমি দরজির কাছে গিয়েছিলাম। তোমার স্যুট আর জ্যাকেটের কাপড় এত সুন্দর হয়েছে না! আমি হাত দিয়ে সেগুলো ছুঁয়ে দেখছিলাম আর চোখে পানি এসে গিয়েছিল। ওগুলো তোমার অনুপস্থিতি আর শূন্যতার কথাই মনে করিয়ে দিয়েছিল। কাপড়ের মূল্যটা শোধ করে দিলাম। এত পয়সা আমি কোথাও খরচ করিনি আগে। মোট ৩৭.১৩ পাউন্ড লাগল! উনি আজকেই ওগুলো ইয়র্কশায়ারে পাঠিয়ে দেবেন। এই নিয়ে তিন দিনে আমার খরচ হলো ৭০ পাউন্ড। কিন্তু আমাদের বিল দেওয়া হয়ে গেছে; ব্যাংকে মাত্র ১০ পাউন্ড আছে। হাতেও মোটে ১০ পাউন্ড—এই দিয়ে নভেম্বরের ২০ তারিখ পর্যন্ত চালিয়ে নিতে হবে (আমার পরবর্তী চেক নিউনেম এ অক্টোবরে পাব)। দেখো দেখি। এখন এই ১০ পাউন্ড দিয়ে ৭০ পাউন্ডের কাজ চালিয়ে নিতে হবে। তোমার দুটো বড় দেনা শোধ করেছি। খরচ হয়েছে স্টাম্পের জন্য, বাইক মেরামত আর সাবান আর এটা–ওটা কেনার জন্য। আজ লন্ড্রিম্যাটের সেই মহিলা আমাকে জড়িয়ে ধরে স্বাগত জানাল—আমি বললাম—‘কে এইটা? চিনি কি আপনাকে? এত দিন কোথায় ছিলেন?’ তাঁর স্মৃতিতে আমি সেই ছোট্ট মেয়েটি, যার কথা তিনি ভুলতে পারেন না, গত বছর দুর্ঘটনাবশত যে তার কাপড় কমলা আর বেগুনি রং করেছিল, যেগুলো ঘষে কি মেজে ওঠানোই যাচ্ছিল না কারণ, রংগুলো ছিল স্থায়ী।
আমার একটা অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে যে নিউইয়র্কার পত্রিকাটি লুকের কিছু কবিতা কিনবে; আমাকে জানিয়ো কিন্তু, ওগুলো ইয়র্কশায়ারের ঠিকানায় যাবে। নিউইয়র্কারের লেখাগুলোকে আমি ভয়ই পাই, ওগুলো কেমন যেন অসুস্থ করে তোলে আমাকে। অনুচ্ছেদগুলো ভারি সুন্দর আর দীর্ঘ; সতর্কতার সঙ্গে ইতিহাসের খুঁটিনাটি, ঘটনা দিয়ে ঠাসা একেবারে। আর্টিকেলগুলোর নামও অবাক করার মতো: জয়পুর থেকে দীর্ঘ চিঠি৫ (আসল কথা হচ্ছে এমন এক জায়গায় যাও, যেখানে এর আগে কেউ যায়নি আর সেই অভিজ্ঞতার কথা দূরে যারা থাকে, তাদের জন্য লেখো, লেখো ‘আওয়ার ফার-ফ্লাং করেস্পন্ডেন্ট’–এর জন্য। অনেক মায়া দিয়ে সুন্দর করে ব্যাখ্যা করো বারমুডায়৬ কেন দারুগাছগুলো মরে যায়; এলিজাবেথ বিশপ৭ ছয় স্তবকের বিশেষ কবিতায় (সেস্টিনা লিখেছেন আমি আগে তার ‘ফিশ’ আর ‘রুস্টারস’ কবিতা দুটোর প্রশংসা করেছিলাম। ওনার সেই বিশেষ নিয়মের কবিতার পঙ্ক্তিগুলোর শেষের শব্দগুলো ছিল চাইল্ড, হাউস, আলমানাক, গ্রান্ডমাদার, টিয়ার্স আর স্টোভ। জানো কি কী ধরনের সেস্টিনা ছিল সেটা? কী হতে পারে বলে তোমার ধারণা? টেডি, যে কবিতাগুলোর ব্যাপারে আমি গা করিনি কারণ, আমি দেখেছি, সেগুলোর সব শব্দই ছিল দুর্বল। এর মানে হচ্ছে কবিতায় শব্দগুলো দুর্বল হলেও সমস্যা নেই, শুধু যদি সেটা হয় নরম, কমনীয় কবিতা। আমি কিন্তু পাখিগুলোর নাম নিয়ে ফাজলামো করছি না। সর্বশেষ যেটা প্রকাশিত হলো, সেটাতে সোনালি আর কালো রঙের ডানার ওরিয়ল পাখির৮, গায়ক পাখির৯ নাম আছে। আরও আছে সমুদ্রচিল ভাল্গার স্টারলিং১০–এর নাম, যেগুলো চেরি ফলের রস খেয়ে মাতাল বনে যায় বলে লিখেছে। তোমাকে একটা স্যাম্পল১১ পাঠিয়েছিলাম, যেখানে পত্রিকাটি গল্পগুলোর নমুনার সম্প্রচার করছে; বাক্সের মধ্যে কার্টুনের মাথাটা বের করে রাখা; বেশ লাগছে দেখতে। একটা অদ্ভুত গল্প প্রায় তোমার গল্পের মতোই, তুমি যেভাবে বর্ণনা করেছ, পুরোটাই সে রকম, গ্রীষ্মের শেষ দিনটিতে ছোট্ট ছেলেটা সমুদ্র দেখছিল১২ এমন খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে যথাযথ বর্ণনা দিয়েছে। আমার মনে হয়, যত্ন করে লিখলে আমার লেখাও যাবে ওতে। থার্বারের রূপকথার গল্পগুলো যা তা। গোঁজামিল দেওয়া একঘেয়ে সুরের আবৃত্তে একরকম গদ্যছন্দ; বেচারা হাসপাতালের বিল শোধ করতে পারছে না। সে মারা যাচ্ছে, এই জন্যে লোকে ভালো দাম দিয়ে ওগুলো কিনছে; এ ছাড়া আমি আর তো কোনো কারণ দেখি না।
বিশেষ নিয়মের কবিতার পঙ্ক্তিগুলোর শেষের শব্দগুলো ছিল চাইল্ড, হাউস, আলমানাক, গ্রান্ডমাদার, টিয়ার্স আর স্টোভ। টেডি, যে কবিতাগুলোর ব্যাপারে আমি গা করিনি কারণ, আমি দেখেছি, সেগুলোর সব শব্দই ছিল দুর্বল। এর মানে হচ্ছে কবিতায় শব্দগুলো দুর্বল হলেও সমস্যা নেই, শুধু যদি সেটা হয় নরম, কমনীয় কবিতা।টেড হিউজেসকে লেখা চিঠিতে সিলভিয়া প্লাথ
গত রাতে যে কী যন্ত্রণায় ভুগেছি; তোমার থেকে এভাবে দূরে নিজেকে সম্পূর্ণ পঙ্গু মনে হয়, পেটে খিদে থেকে যায়, ঘুমোতে পারি না, খেতে পারি না, ভাবতে পারি না। ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু এভাবে তোমাকে মিস করা থেকে সেরে ওঠা তো সম্ভব নয়। সুস্থ হতে শিখতে হবে কিন্তু সেই শেখাটা কি চাট্টিখানি কথা! শিখতে হবে অনেক আমাকে। আমার মনে এই যে গভীর শূন্যতা, এই যে বিরাট একটা গর্ত, তা নিয়েই আমাকে বাঁচতে শিখতে হবে। ঈশ্বর, আমি কত যে মজার মজার, মধুর ছোট্ট ছোট্ট উষ্ণ বিষয়, আমার ভাবনা, খাবার, বিছানা শেয়ার করা মিস করি। গত রাতে ক্রো র্যানসমের কবিতা পড়ছিলাম; বিশেষ করে ‘টেন পুওর ইডিয়ট ফিঙ্গারস’১২–এর সেই কবিতাটা। রাত তিনটা পর্যন্ত জেগে ছিলাম। রাতে ঘুমোতে যাবার আগে আবার আমাকে হাঁটতে হবে; ঘুমোতে যাওয়া রীতিমতো আতঙ্কের বিষয় এখন আমার জন্য। কী একটা অবস্থা। একই সঙ্গে দুর্বিষহ আর বিস্ময়কর এক অনুভূতি। যেন বিরাট এক অপারেশনের পর (যে অপারেশন থেকে বেঁচে উঠব বলে কেউ বিশ্বাস করতে পারেনি) যান্ত্রিক একটা অন্ত্র নিয়ে হাত-পা ছাড়াই বাঁচতে শিখছি। আমি এই অবিশ্বাস্য রকম প্রচণ্ড শূন্যতার অনুভূতিকে স্তব্ধ করে দিতে চাই না। একটার পর একটা বিশাল শূন্যঘরের চারপাশে শুধু দেয়াল গড়তে শিখে নেব আমি যেখানে যখন নিঃসঙ্গ, একাকী কেবল তখন প্রবেশ করব, আর বাকি সব ক্ষয়ে ক্ষয়ে যাবে। আর পড়তে গিয়ে যে অবস্থা, পড়তে আরও সময় লাগবে—একটু পরপরই শব্দগুলোর অর্থ উদ্ধারের জন্য তোমার শরণাপন্ন হতে হয়, তোমাকে আমার বিরক্ত করতে হয়। তা করতেও চাই, কিন্তু জমা করে রাখছি সেগুলো। জানি, এভাবেই যে আমাকে বাঁচতে শিখতে হবে। ওহ্! গত রাতে চৌদ্দ লাইনের একটা বাজে কবিতা লিখেছি; মনে হয় আরও অনেক লিখব এ রকম। বাজে বলছি এই কারণে যে কী বলছি প্রাধান্য না পেয়ে কীভাবে বলছি এই বিষয়টার দিকে নজর দিতে কৌশলগত যে পরিমার্জন, যত্ন দেওয়া দরকার, তা দিতে পারিনি; তুমি কিন্তু নির্মম সমালোচনা করবে যদিও তুমি জানো এই কবিতা তোমাকে নিয়ে লেখা আর তা লেখা হয়েছে সাধারণ ভাষায়: নাম দিয়েছি ‘মনোলগ ভোর তিনটায়’১৩।
ভোর তিনটায় মনোলগ
শরীর হয় যদি কেবলি অস্থিসার
ক্রোধ যদি ডেকে আনে ধ্বংস
সোফা, কার্পেট আর মেঝের জমিনে
বয় যদি রক্তের বন্যা
সাপের দেহভঙ্গিমাধারী আলমানাক
নিশ্চিত করে যদি বলে
সবুজ শ্যামলিমা থেকে তুমি
রয়েছ যোজন যোজন ফারাক
বরং সেই ভালো।
মিটমিট তারাদের নিচে
চোখ যদি করে পিটপিট
অভিশাপে দৃষ্টি অনড়
কালশিটে পাথর সময়
বিদায় বলে যদি ট্রেন চলে যায়
বসে থাকি স্তব্ধবাক।
এভাবেই মহা গর্দভ আমি
নিজেকে সরিয়ে ফেলি
নিজেরই রাজ্য থেকে হঠাৎ।
ভালোবাসি, ভালোবাসি, ভালোবাসি তোমাকে
তোমারই সিলভিয়া
টীকা
১. প্যাডি চিয়াস্কি, টিভি নাটক (নিউইয়র্ক সাইমন অ্যান্ড সুস্টার, ১৯৫৫); সিলভিয়া প্লাথের এই কপি লিলি লাইব্রেরিতে সংরক্ষিত আছে।
২. সিলভিয়া প্লাথের ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ডিক ওয়ার্টজের বন্ধু টেরির সঙ্গে ১৯৫৬ সালের ৯ অক্টোবর তিনি সাক্ষাৎ করেন।
৩. ডক্টর ডিনা ডিনকাওজ (১৯৩৪–২০১৬); ফুলব্রাইট স্কলার, প্রাগৈতিহাসিক প্রত্নতত্ত্ব ১৯৫৬–৭; নিউনেম কলেজ, কেমব্রিজ; পিএইচডি ১৯৬৭, হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি।
৪. আমেরিকান সোশালাইট অ্যান্ড পলিটিক্যাল হোস্টেস পার্ল মিস্তা (১৮৮৯–১৯৭৫)
৫. ক্রিস্টোফার র্যান্ড, ‘লেটার ফ্রম জয়পুর,নিউইয়র্কার, ১৫ সেপ্টেম্বর সংখ্যা, ১৯৫৬,
পৃষ্ঠা ১১৮–৩২।
৬. ই জে খান, ‘লেটার ফ্রম বারমুডা’, নিউইয়র্কার। ১৬ জুন সংখ্যা ১৯৫৬, পৃষ্ঠা ১১৭–২০
৭. এলিজাবেথ বিশপ। ‘সেস্টিনা’, নিউইয়র্কার ১৫ সেপ্টেম্বর সংখ্যা ১৯৫৬, পৃষ্ঠা ৪৬
৮. সিলভিয়া প্লাথ জন হল হুইলক এর প্রসঙ্গ টেনেছেন, আবেড, নিউইয়র্কার ৩০ জুন সংখ্যা ১৯৬২, পৃষ্ঠা ২৩।
৯. জেমস এল মনটাগিউ, ‘চোকবেরিজ’, নিউইয়র্কার, ১৫ সেপ্টেম্বর সংখ্যা ১৯৫৬, পৃষ্ঠা ১৫২
১০. চিঠির সঙ্গে এই এনক্লোজারটা ছিল না।
১১. উইলিয়াম ওয়ারেন বেকার, ‘দ্য লাস্ট দে অব সামার’, নিউইয়র্কার, ১৫ সেপ্টেম্বর সংখ্যা ১৯৫৬ পৃষ্ঠা ১১১–১২, ১১৫–১৭।
১২. জন ক্রো র্যান্সম, ‘উইন্টার রিমেম্বার্ড’।
১৩. সিলভিয়া প্লাথের কালেক্টেড পোয়েমস গ্রন্থে প্রথম পঙ্ক্তিটি ছাড়া প্রত্যেক পঙ্ক্তির প্রথম অক্ষরটি ছোট হাতের অক্ষরে লেখা।