ফিলিস্তিনের গল্প
রং
লীয়ানা বেদের (জন্ম ১৯৫০, জেরুজালেম) ফিলিস্তিনি ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, কবি ও চলচ্চিত্র নির্মাতা। পড়াশোনা করেছেন বেইরুত ও বেরসাইত বিশ্ববিদ্যালয়ে। যুদ্ধ, নির্বাসন ও প্রত্যাবর্তনের অভিজ্ঞতা তাঁর লেখার মূল প্রতিপাদ্য। উপন্যাস, গল্প, কাব্যগ্রন্থ ও তথ্যচিত্রে তিনি ফিলিস্তিনি জীবনের স্মৃতি, সংগ্রাম, ভালোবাসা ও নারীর অভিজ্ঞতাকে শক্তিশালী কণ্ঠে তুলে ধরেছেন।
● অনুবাদ: সোহরাব সুমন
মায়ের আঙুলগুলোয় ধরে থাকা রংতুলি থেকে ধীরে ধীরে ছোপ ছোপ রং বেয়ে বেয়ে পড়ছে, তা দেখে শিশুটা মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে। ছোট্ট সেই খামারঘেরা মফস্সল শহরে খুব সকালে চিকিৎসকের বউয়ের ঘুম ভাঙে। পাম আর কমলালেবুর ঝাঁজালো পরাগ উড়ে এসে সকাল সকাল তার চোখে জ্বালা ধরায়, সেই অ্যালার্জির বিরক্তিতে তার ঘুম ভেঙে যায়। আকাশে অন্ধকারের আঁচ থাকতে থাকতে খুব ভোরে সে বিছানা ছাড়ে। তারপর সকালের কফি না খেয়ে, পরিবারের ঘুমন্ত অন্য সদস্যদের দিকে খুব একটা নজর না দিয়ে, সোজা চলে যান কোনার দিকে ছবি আঁকার ইজেল আর ক্যানভাস দিয়ে ঘিরে আলাদা করা ঘরের অন্য প্রান্তে। ওখানে রোগীরা অপেক্ষায় রয়েছে। ওই দিকে যে জানালা রয়েছে, ওটা দিয়ে গোলাপি রঙের প্রকাণ্ড খাড়া পাহাড়টা দেখতে পাওয়া যায়। নিজের জায়গায় গিয়ে বসে মনোরম দৃশ্যটুকু নিজের আঁটসাঁট ক্যানভাসটার সঙ্গে সে মিলিয়ে নিতে থাকে। সেই চাহনিতে এমন এক সহিষ্ণুতা, যেন ঠিক সেই রোগীর মতো যে কিনা জেনে গেছে, তার শরীরে বাসা বাঁধা প্রাণঘাতী এই অসুখের কারণে শিগগিরই তার জীবনের ইতি ঘটতে চলেছে।
শিশুটাও তার মায়ের এই রং নিয়ে খেলা দেখে অবাক হয়। কেমন করে ওরা ক্যানভাসটার ওপর ছড়িয়ে পড়ছে আর পাহাড়ের নিচে আস্ত একটা শহর জায়গা করে নেওয়ার আগপর্যন্ত একের পর এক ধীরে ধীরে একেকটা আকার ধারণ করছে, সেটা দেখেও সে যারপরনাই বিস্মিত হয়। সেই শহরে রয়েছে কাদা আর রোদে পোড়া লাল লাল ইটের ঘর, কাঠের মেঝে আর টালির ছাদ। বাড়িগুলো ফুল আর ফলের বাগান দিয়ে ঘেরা। সেই শহরের সবুজ প্রান্তরজুড়ে ঢেউ খেলে যাচ্ছে প্রাণচঞ্চল মুক্ত বাতাস। তারই ভেতর দিয়ে বয়ে গেছে টলটলে জলে ভরপুর একটা নদী। সেই নদীর দুপাশে এখানে–ওখানে বুনো ঝোপঝাড়ে ফুটে থাকা অজানা ফুলের সুবাস ভেসে বেড়াচ্ছে। সকালে স্কুলের জন্য তৈরি হওয়ার সময় অনিচ্ছাসত্ত্বেও দুধ খেতে খেতে সে আরও বেশি অবাক হয়ে ভাবতে থাকে, জানালাটার বেশ অনেকখানি কাচের খণ্ড দিয়ে আড়াআড়ি আড়াল হয়ে থাকার পরও কেমন করে তার মা নিজের আঁকা ছবিতে শহরটাকে এমন জীবন্ত ফুটিয়ে তুলেছেন?
সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে, প্রতিদিনের মতো ক্লিনিকে প্রথম রোগী আসার পর থেকে, মায়ের দুর্বল ধীরস্থির চলাফেরা শুরু হয়। তারপর ওই জায়গা ছেড়ে উঠে আসার আগপর্যন্ত, ইজেল, রঙের টিউব আর তারপিন মাখানো ব্রাশ আর ক্যানভাস সবকিছু কেমন অসহায়ভাবে পেছনে পড়ে থাকে। বাইরের উঠোনে নিজের ভারে ঝুঁকে পড়া একটা রাবারগাছ, ওর পাশেই দাঁড়িয়ে রয়েছে মর্মর শব্দ করতে থাকা লম্বা একটা পামগাছ, যেটা বেয়ে উঠতে আস্ত দুটো মই দরকার হবে। এবং কাছেই মসজিদের উঠোনে অবিরাম কিচিরমিচির শব্দ করতে করতে অজুর জলে নানা ধরনের পাখি গোসল করে চলেছে।
শিশুটি একসময় তার থলে বগলদাবা করে স্কুলের দিকে রওনা দেয়। আর সারাটা পথ সে অবাক হয়ে শুধু মায়ের কথা ভাবে। ক্লাসে, যখন শিক্ষক তাকে হাতি আঁকার জন্য বলে, তখনই তার আঙুলগুলোয় খিল ধরে যায়। কেননা কালচে রক্তরঙা সুডৌল কোর্ট আর সবুজ টুপি দেখে সে বিরক্তি অনুভব করে এবং কয়লা দিয়ে কাগজের ওপর বৃত্ত আঁকতে থাকে। তখন মায়ের আঁকার প্রতি আরও একবার তার আকর্ষণ বাড়তে থাকে, সেই ছবি তার চোখে ভাসে, যেখানে একের পর এক রক্তিম ছোপ আঁকা রয়েছে, ঠিক বাইরের মাউন্ট টেম্পটেশনের মতো শৃঙ্গময় খাড়া চেহারা। টানা চল্লিশ দিন ধরে শয়তান এই সব গুহায় থেকে, তরুণ যিশুকে পরীক্ষা করেছে, তারপর ব্যর্থ হয়ে সমতলে গড়িয়ে পড়ে লবণে পরিণত হয়েছে। ‘সম্ভবত মায়েরও জেরিকোর ছবিটা শেষ করতে চল্লিশ দিনের মতো লেগেছে অথবা তার চেয়ে কম বা বেশি, তবে ঠিক কত দিন, আমার তা জানা নেই।’
১৯৬৭ সালের কথা। তখন আমার মা, অর্থাৎ সেই চিকিৎসকের বউকে ছোট্ট ওই খামারঘেরা শহরতলি ছেড়ে চলে আসতে হয়েছিল। তবে সেতু পেরিয়ে নদীর পুবতীরে গাড়ির ভেতর গাদাগাদি করে অন্য যাত্রীদের ভিড়ে তাকে বসে থাকতে হয়নি। সংকটের সময় একদিন চিকিৎসক সেবা দিতে আকুল হয়ে হাসপাতালে ছুটে যান, কিন্তু সারি সারি শূন্য বিছানা আর ফাঁকা করিডর দেখে বিমূঢ় হয়ে তাঁকে ফিরে আসতে হয়েছিল। সে সময় অ্যাম্বুলেন্সের চালক তাঁর পরিবারকে তুলে নেয়। নিজের জন্য আগ্নেয়াস্ত্র চাইতে নিকটস্থ পুলিশ স্টেশনে গিয়ে, সেখানকার কয়েদখানার কক্ষগুলো পরিত্যক্ত আর দরজায় শেকল ঝোলানো অবস্থায় দেখতে পেয়েছিলেন তিনি। তারপর যুদ্ধক্ষেত্র থেকে দ্রুতবেগে ছুটে আসা একসারি ট্যাংকের দিকে পতাকা দেখিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণে ব্যর্থ হন। শেষে বন্ধুদের মুখে শোনা ভবিষ্যদ্বাণী সত্যে পরিণত হয়েছে বুঝতে পেরে, ধূসর রঙের ছোট্ট একটি গাড়িতে ছেলেমেয়ে আর পাড়াপ্রতিবেশীদের কয়েকজনকে তুলে নিয়ে সেতু পেরিয়ে পুবতীরে চলে আসেন।
ছোট্ট ওই সেতুর ওপার থেকে গলন্ত এসফাল্টের ঘ্রাণের মতো নাপামের কটু গন্ধ ভেসে আসতে থাকে। জেরিকোর চারদিকের ক্যাম্পগুলো ফেলে হাজার হাজার শরণার্থী ছুটে পালাচ্ছে। রাস্তার দুপাশে মৃতদেহের ছড়াছড়ি। ওদের সবাই তখন মরিয়া হয়ে নিরাপদে অন্য কোথাও পালাতে ব্যস্ত। হানাদারেরা হাতের কাছে যাকে পাবে, তাকেই একই অবস্থা করে ছাড়বে, এমন একটা গুজব গণ–হিস্টিরিয়ার মতো চারদিকে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। নাপাম! এই নাপামের গন্ধ কারও পক্ষে কল্পনা করাও সম্ভব নয়।
মানুষের মুখ, হাত-পাজুড়ে ফুটন্ত আলকাতরার মতো ফোসকায় দেহের চামড়া কালো হয়ে আছে। এই তো এখানেই, আশপাশে, চারদিকে। এখন আর কাছে বা দূরে বলে কোনো কথা নেই। সবকিছুর ওই একই দশা।
খুব সহজ হিসাব। এখন আর ফেরা চলবে না। এই একই কথা হানাদারেরাও বলছে।
এক বছর। দুবছর। দশ বছর।...
স্মৃতি অনেকটা ঘোলা হয়ে আসার পরও, সে বছরের সেই ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর থেকে সেসব কথা মেয়েটা আজও অবাক হয়ে ভাবে, সেই সব বৃক্ষহীন প্রান্তর আর নিজ দেশের চেয়ে আলাদা এক আকাশের দিকে সে তাকিয়ে থাকে। তারও অনেক দিন পর অবশেষে সে একটা অপরিচিত শহরে এসে পৌঁছায়। শহরটা বড় বড় দালান দিয়ে ঘেরা, সেই সব দালানে স্বচ্ছ কাচ আঁটা। শহরের পথঘাট সুশোভিত বাগানে ছাওয়া। শহরটার নাম বৈরুত।
বৈরুতে এসে তরল এই ফিরোজা রঙের সাগর দেখতে দেখতে সে একসময় বেড়ে উঠতে থাকে। এখানকার সব অদলবদল একে একে সে তার স্মৃতিতে গেঁথে নেয়। কিন্তু সে সময় ভালো কিছু করা ছিল প্রায় অসম্ভব। রাতে চারিধার তীব্র আলোয় বারবার আলোকিত হয়ে ওঠা আর দিনের বেলায় শেলের আঘাতে ঘরের দেয়াল ভেঙে পড়ার সেই তীক্ষ্ণ শব্দের ভেতর একা একা বসে থাকা ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না। এমনকি নতুন বছরের শুরুতেও চারদিক থেকে বৃষ্টির মতো শেল ঝরত, মিলিশিয়ারা নতুন বছরকে তাদের মর্টারের গোলা দিয়ে বরণ করে নিত, সেই আলোয় তখন রাতের আকাশটা ঝলসে উঠত।
কেবল বালুকাবেলার ওপর জমে থাকা ধোঁয়াশার মেঘে ভেসে আসা সাগরের ঘ্রাণে অথবা জাফ্ফা ও হাইফার মধ্যকার রেলপথের পাথরের গন্ধে খানিকটা হলেও স্বস্তি মিলত। রকপাখি বা ডায়নোসরের ডিম অথবা আর্টিলারি শেল অথবা আরও কোনো অত্যাধুনিক মূর্তির মতো দেখতে পাথরগুলোকে লাখ লাখ বছর ধরে এই একইভাবে প্রকৃতি ওদের এখানটায় এভাবে সাজিয়ে রেখেছে।
একদিন দখল হয়ে যাওয়া এলাকা থেকে তার এক চাচাতো ভাই আসে তাদের সবার সঙ্গে দেখা করতে, সে তখন ম্যাগাজিন আর্কাইভের চাকরির ডিউটি শেষে নিরাপদ এলাকা হয়ে বাড়িতে ফিরছিল। পাশেই শুরু হয় অবিরাম শেলবর্ষণ। তার ভাই এসেই রান্নাঘরে ঢুকে পড়ে। তারপর তরতাজা ফেভা বিনের খাবার বানাতে শুরু করে দেয়। ‘তোমার কি এই খাবারের কথা এখনো মনে আছে?’ সে জিজ্ঞাসা করে। তার বোন তখন বাষ্প ওঠা শিমের দিকে তাকায়। ‘এখানে আসার পর থেকে ওটার কথা তো একপ্রকার ভুলেই ছিলাম,’ জবাবে সে বলে। তার কেবলই মনে পড়তে থাকে, এখানে আসার পর থেকে বাড়িতে রান্না করা খাবারের স্বাদ কেমন করে যেন সে ভুলে আছে। ব্যস্ত এই শহরের সবাই যেন তাড়াহুড়া করে হালকা খাবার বা স্যান্ডউইচ খেয়ে ঘরের বাইরে বেরিয়ে পড়তে অভ্যস্ত হয়ে গেছে।
‘আমার কাছ থেকে তুমি এবার কী উপহার চাও, বলো তো দেখি।’ সে জানতে চায়। বৈরুতে আসার পর এমন ভঙ্গিতে এ পর্যন্ত তার সঙ্গে কেউ আর কথা বলেনি। নিজের দেশ থেকে আসা আত্মীয়ের কাছ থেকে পছন্দমতো উপহার চেয়ে নেওয়া তাদের বহুদিনের রীতি। সে খুব সময় নিয়ে কষ্ট করে ভেবেচিন্তে বলে, ‘এবার আমি একটা পাখি চাই, একটা সোনালি হলদে কেনারি পাখি।’
সারা রাত শেলের শব্দে আতঙ্কে রাত জেগে জড়সড় হয়ে শুয়ে থেকে ভোর হলে পরে পাখির কিচিরমিচির শুরু হলে, চোখজুড়ে ওর রাজ্যের ঘুম নেমে আসে। সে সময় জেরিকোর কাছের নিজ শহরটাকে ওর কাছে বিশাল একটা ওকগাছ বলে মনে হতে থাকে। সেই গাছে অসংখ্য পাখির বসবাস। নিঃশব্দে বসে থাকায় তাদের উপস্থিতি আগে থেকে টের পাওয়া যায় না। ভোরে সূর্যের প্রথম আলো উঁকি দেওয়ার এই সময়ই কেবল বৈরুতে এমন মিষ্টি একটা নীরবতা বিরাজ করে।
জেরিকোয় ফেলে আসা মায়ের আঁকা ছবিটা পাঠিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ওর চাচাতো ভাই ফিরে যায়। কিন্তু প্রতিদিন ভোরে সেই কেনারির গানে ঘরটা ভরপুর হয়ে থাকে। সকালের রুপালি আলোয় পাখিটা দোল খেতে খেতে গান ধরে, সেই আলোকরশ্মিতে পশমি সুতোর মতো সোনালি রং ধরার আগপর্যন্ত পাখিটা আপন সুরের ভেতর ডুবে থাকে।
কিছুদিন বাদেই, কেনারিটার নিজের ঘর বাঁধার সময় হয়। ওর জন্য কমলা রঙের পালকওয়ালা একটা মেয়ে পাখি আনা হয় আর তার পরপরই সেই পাখি পাঁচ-পাঁচটা ডিম পেড়ে তাতে তা দিতে বসে যায়।
চারটা। পাঁচটা। এভাবে ঘুরেফিরে পরপর সব কটা ডিমে তা দেওয়া চলতে থাকে।
কিন্তু ডিমগুলো আর কখনোই ফোটেনি!
কথাটা জিজ্ঞাসা করতেই, আশপাশের লোকজন তাকে জানায় যে সে বছর, ১৯৮১ সালে, বৈরুতে শত শত কেনারি ডিম ফোটাতে ব্যর্থ হয়েছে, অবিরাম শেলপতনই এর কারণ বলে সবার ধারণা। চারদিকে যুদ্ধের দামামা, তারই ভয়ানক শব্দ এখন এখানকার নিত্যদিনের অংশে পরিণত হয়েছে। তাদের যাতায়াতের পথের ওপর এসে পড়ার আগপর্যন্ত কেউ এখন আর সেই শেলের আকার, আয়তন বা রং নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলাপ পর্যন্ত করে না। যেন এই বোমাই এখন তাদের শহরে এসে স্থায়ী আবাস গড়েছে, এখানকার নারী–পুরুষের চেয়ে তারা অনেক বেশি জীবন্ত, সবাই এখানে দৈবের ওপর ভর করে বেঁচে আছে। হঠাৎ হঠাৎ পথেঘাটে যখন–তখন বোমার আঘাতে অক্কা পাওয়াটা এখন খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাস্তাঘাট এখন যেন মরণফাঁদ। চলন্ত গাড়িগুলো হঠাৎই বোমার বৃষ্টিতে ব্যাঙের ছাতার মতো উবে যায়।
অনিঃশেষ এক দুঃস্বপ্ন ছাড়া কোনো কিছুই এখন আর অবশিষ্ট নেই। অফিস-আদালত, অ্যাপার্টমেন্ট ও ঘরদোর—সবকিছুই নিমেষের মধ্যে লোকজনের মাথার ওপর ভেঙে পড়ছে। শিশুটা যখন ভবনের নিচে মিষ্টির দোকানের পাশে বাঁধানো পথে সাইকেল চালানোর জন্য বাইরে বের হতে পারে না, তখন সে বসে বসে আপনমনে তার কেনারি পরিবারটার কথা ভাবতে থাকে। সম্ভবত ওদের ডিমগুলো ফুটলে সবাই খুব সামান্য হলেও আনন্দ পেত।
পুবদিকে বোমা পড়া শুরু হলে কেনারি পরিবারটাকে পাশের দালানের এক ভদ্রলোকের বাসায় সরিয়ে নেওয়া হয়, সেই লোক আবার পায়রা পোষেন। সে সময় সিঁড়িঘরে জড়ো হওয়া সবার সঙ্গে তিনি এটা নিয়ে আলাপ জুড়ে দিয়েছিলেন। লোকটার পাখি বিষয়ে অনেক জানাশোনা। তাঁর কাছ থেকে অনেক কিছু শেখা হয়। কেনারি পরিবারটা নতুন করে আবার ডিম ফোটানোর আগেই, ফিলিস্তিন থেকে তাদের এক আত্মীয় আসেন। সঙ্গে করে সেই ছবিও নিয়ে আসেন, যে ছবির সঙ্গে টানা পনেরো বছর তার দেখা হয়নি। জেরিকোর আকাশে অসংখ্য পাখি ভেসে বেড়াচ্ছে, পথের দুপাশে আঙুরলতা ছেয়ে আছে। হাতপাখার মতো অলস ভঙ্গিতে দোল খাওয়া গমের শিষ আর বৃক্ষের কাণ্ডের নিচ দিয়ে পিপীলিকারা বাহিনীসমেত কুচকাওয়াজ করতে করতে এগিয়ে যাচ্ছে। গাছের ডালপালা বাতাসে দুলতে দুলতে একটার সঙ্গে আরেকটা জুড়ে যাচ্ছে। ভূগর্ভস্থ জলধারা চুইয়ে এসে বাগানের মাটিতে জল মিশছে, বাতাসে সেই আর্দ্রতার ঘ্রাণ ভেসে বেড়াচ্ছে।
প্রতিদিন ভোরে, দিনের আর সব কাজকর্ম শুরু হওয়ার আগে এই সব দৃশ্য দেখতে দেখতে, রাতের অনিঃশেষ অন্ধকার থেকে জন্ম নেওয়া দুঃস্বপ্নগুলো নিয়ে নতুন করে ভাবতে বসে সে। দূর থেকে ভেসে আসা শেলপতনের অবিরাম প্রতিধ্বনিও এ সময় তার কানে আসে। শহরের বিভিন্ন অংশের ওপর দিয়ে সশব্দ জঙ্গি বিমানের ধেয়ে আসার শব্দ তার কানে বাজতে থাকে। পথে ফেরিওয়ালারা গান গেয়ে শাকসবজি ফেরি করে বেড়ায়। গান–অয়েল আর ময়লা–আবর্জনার দুর্গন্ধসহ ব্যালকনি দিয়ে সবজির সেই সতেজ ঘ্রাণ ভেসে আসে। শহরের আবর্জনাকর্মীদের অব্যাহত ধর্মঘটের কারণে ময়লা-আবর্জনা পথের পাশে স্তূপ আকারে পড়ে আছে। একসময় ক্রমেই ক্ষীণ হয়ে আসা একটা আলোর দিকে সে মনোনিবেশ করে, সেই ছবির একটা অংশের ভেতর তার চেতনা আকণ্ঠ ডুবে যায়। চোখ বুজে সে ছবির কাঁটাগাছের ঝোপটাকে স্পর্শ করে, শৈশবে যেটার কাছে যাওয়া তার বারণ ছিল। তারপর শ্বাসের সঙ্গে কল্পনায় শহরের সীমানাপাঁচিল বেয়ে বেড়ে ওঠা গুল্মলতার ঘ্রাণ নিতে নিতে একসময় নিজেকে আবারও সেই আগের জায়গাতেই সে আবিষ্কার করে।
কেনারি পরিবারটা যেদিন আবারও বাড়িতে ফিরে আসে ওদের সঙ্গে, তখন ডিম ফুটে বের হওয়া নতুন কোনো ছানা আসে না। আগের মতো ওদের কেউ তেমন একটা দেখতেও আসে না। সেই জুলাইতে ইসরায়েলের ফাইটার জেটগুলো দালানের বিশেষ ওই সারিতে হামলা চালায়। শুরু হয় বিধবা নারী আর শিশুদের ভয়ানক আর্তচিৎকার, কান্না আর শোকের মাতম। তাদের অনেকেই পক্ষাঘাতগ্রস্ত অবস্থায় হামাগুড়ি দিয়ে চলাফেরা করার চেষ্টা করে। বিহ্বল হয়ে লোকেরা তাদের হারিয়ে যাওয়া বাপ-ভাই আর বন্ধু ও স্বজনদের খুঁজতে থাকে। এত সব দেখে সেও আতঙ্কিত হয়ে পড়ে, কেবল বুঝে উঠতে পারে না যে এই সব শিশুর সঙ্গে কেমন করে সে তাদের ডিমে তা দেওয়া কেনারি পাখির গল্প করবে, সে যে এখন কেনারি পরিবারের আসন্ন সদস্যদের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। কেমন করে সে ওই সব শিশুকে বোঝাবে যে এয়ার রেইডের সময় জঙ্গি বিমানের আক্রমণে কেনারি পাখিগুলো পর্যন্ত মারা পড়তে পারত? এখান থেকে আকাশের খুব কম অংশই এখন দেখতে পাওয়া যায়। শেল থেকে বাঁচার জন্য খোলা চত্বরের চারদিকে জড়ো করে রাখা বালুর বস্তা আর মাটির ঢিবিতে ওর অনেকটাই ঢাকা পড়ে গেছে। দালানের ভেতর আর প্রবেশপথজুড়ে কালো ধোঁয়ার মতো আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। শহরটা এখন সাগরের তীর বরাবর সংকুচিত হয়ে গেছে, ফাঁকা কার্নিশ ছাড়া চারদিকে কোনো কিছুরই দেখা মেলে না। কার্নিশগুলোর কিনারাজুড়েই গ্রীষ্মের সুশীতল বাতাসের আশায় আর শীতকালে উষ্ণ হাওয়ার ছোঁয়া পেতে লোকেরা একসময় ভিড় জমাত। চারদিকের অস্থায়ী তাঁবুগুলোয় সাম্প্রতিক কালের নামীদামি আর বিখ্যাত গায়ক-গায়িকাদের গানগুলো টেপরেকর্ডারে উচ্চনাদে অনবরত বাজছে। অর্থহীন সেই সব গান শোনার এখন আর কোনো মানে হয় না। একজন লেবানিজ বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে ও সেই সব তাঁবুর একটা দোকানে যায়, সেখানে আইশ্যাডোসহ সব ধরনের জিনিস কিনতে পাওয়া যায়। ‘কোনটা ভালো দেখাচ্ছে?’ বন্ধুর কাছে সে জানতে চায়, ‘বাদামি নাকি রুপালিটা?’ ‘বাদামিটাতে তোমার চোখ দুটো অনেক বেশি গভীর বলে মনে হবে,’ জবাবে তার সেই বন্ধু বলে, ‘কিন্তু রুপালিটাতে ওগুলো দেখতে খুব উজ্জ্বল দেখাবে। রুপালিতে তোমাকে দেখতে ভীষণ সুখী বলে মনে হবে।’ এ কথা শোনার পর ওই দুটো থেকে কোনো একটাকে বেছে নেওয়ার সুযোগটা সে আর কাজে লাগায় না। তখনই একটা অগ্নিনির্বাপক ইঞ্জিন কাছের সড়কে কোথাও বোমা খুঁজে পাওয়ার কথা ঘোষণা করতে করতে চলে যায়। জায়গাটা কালো ধোঁয়ায় ঢেকে যাওয়ার আগেই ওরা সেখান থেকে কোনোরকমে দৌড়ে পালিয়ে বাঁচে।
১৯৮২ সালের দিকে ইসরায়েল হানা দেওয়ার পর, আরবের আরও একটা শহরের ধুলাবালুর শূন্যতার মধ্যে আবারও তার দম বন্ধ হয়ে আসতে থাকে। সে খুব বুঝতে পারে যে এবার তাকে চিরদিনের জন্য লেবানন ছাড়তে হবে। এত দিনের পরিচিত সবকিছু ছেড়ে আসার পর নিজের কাছে কেমন লাগছে, সেটা নিয়ে সে ভাবতে শুরু করে। পরিচিত লোকজন, প্রতিবেশীদের হাঁকডাক, পথের বাঁক, মনের গভীরে গেঁথে থাকা চত্বরের ফাটলগুলো, বাতাসের আলাদা একটা স্বাদ, পরিচিত ঘ্রাণ, দিনের আলো...। একসময় ফেলে আসা কিছু জিনিসপত্র তার কাছে পাঠিয়ে দেওয়ার জন্য তার লেবানিজ বন্ধুদের কাছে সে চিঠি লেখে, ওগুলোর মধ্যে তার মায়ের আঁকা সেই ছবিও রয়েছে। বোমার আঘাতে পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যাওয়া মেঝের পাশেই তাদের সেই ঘরের দেয়ালে ছবিটা এখনো ঝুলছে এবং তারও প্রায় মাস ছয়েক পর বন্ধুটি জায়গাটার কিছু আলোকচিত্র জোগাড় করে, সঙ্গে বার্ডস অব প্যারাডাইসের নকশা আঁকা শাল ও মায়ের সেই ছবি তাদের কাছে পাঠায়।
নিজের জিনিসগুলো ফিরে পাওয়ার আশায় মেয়েটা খুব ধৈর্যের সঙ্গে অপেক্ষা করেছে এবং সবকিছু আবার হাতের মুঠোয় ফিরে পেয়ে সে খুবই অবাক হয়। শুধু মায়ের আঁকা ছবিটা আর কখনোই সে ফিরে পায়নি। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারে, জিনিসগুলো যে গাড়িতে করে আসছিল, তার চালক বাক্কা ভেলির কাছে একটা অফিসে বিলির কাজে কিছু সময়ের জন্য যাত্রাবিরতি নিয়েছিল। হতে পারে, সেখানকার কোনো অফিসারকে খুশি করার জন্য চিত্রকর্মটা সে তাকে দিয়ে থাকতে পারে অথবা তাদের কেউ সেটা তার কাছ থেকে এমনিই কেড়ে নিয়েছে! ঠিক তার সেই বন্ধুর সোনালি রাজহাঁসের ছবিটার মতো, প্রতিবেশীদের কাছে আশ্রয় নিতে যাওয়ার সময় যেটা তাদের কাছ থেকে এক বন্দুকধারী জোর করে কেড়ে নিয়েছিল। এমনও কি হতে পারে না যে সীমান্তের কড়াকড়ির কারণে তারা এটাকে চোরাচালানের মালামাল সন্দেহে আটকে দিয়েছে? সে শুনেছে, যেসব লোকের কাছ থেকে সীমান্তের অফিসাররা উপহার পায়, তাদের ওপর তারা কড়াকড়ি শিথিল করে। সম্ভবত মায়ের ছবিটা উপহার দিয়ে গাড়িচালক কোনো সীমান্তরক্ষীর মন জয় করার চেষ্টা করেছিল!
সেই চালক বা ছবির খোঁজে সংবাদপত্রে একটা বিজ্ঞাপন ছাপার কথা ভাবতে থাকে সে। সেখানে মৃত মায়ের স্মৃতির কথা বলে সেটার বিশেষ মূল্যের দিকটা তুলে ধরে অতিসত্বর তার কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার অনুনয় জানানো হবে। কিন্তু এর পরপরই তার মাথায় আরও একটা চিন্তা খেলে যায়। যে লোক সেই ছবি নিয়ে গেছে, সে কি কাগজে ছাপা ওই বিজ্ঞাপন আদৌ দেখতে পাবে? আর এমন অকালের সময় কে–ই বা আগ বাড়িয়ে তাদের ওই খোয়া যাওয়া জিনিস নিয়ে খোলামেলা কথা বলার সাহস দেখাতে আসবে?
দ্বিতীয়বার লেবানন ছেড়ে আসার আগপর্যন্ত সেই ছবির খোঁজ আর পাওয়া যায়নি। জাহাজে করে তারা দক্ষিণ আফ্রিকার উপকূল বরাবর নতুন এক দেশে পাড়ি জমায়। সাগরের নীল আর ধূসরতা কতটা নিরস হতে পারে, সেই যাত্রায় সেটা সে খুব ভালো করে টের পেয়েছে। রাতের ঝাপসা অন্ধকারে ঘন তেলতেলে জলের ওপর দিয়ে জাহাজটা যখন এগিয়ে চলেছে, তখন ফ্ল্যাশলাইটের আলোর দ্যুতিতে এশিয়ার সীমান্ত বরাবর কর্ডমাছের ব্লেডগুলো দেখতে তার কাছে ধারালো ছুরির মতো মনে হয়েছিল। সেই ছুরির স্মৃতি তাকে এশিয়ার সঙ্গে কী এক বাঁধনে বেঁধে রেখেছে! তার প্রিয় এশিয়া, আজ যত দূরেই হোক না কেন, সে তার কাছে নিজের বাড়ির মতো। জাহাজের কাঠামোজুড়ে জলতরঙ্গের মৃদু আলোড়ন আজও তার কানে বাজে। আজও সাগর পেরোনোর সময়কার প্রচণ্ড দুলুনিজনিত অসুস্থতা তার স্মৃতিকে নাড়া দেয়। যেন কোনো এক মরূদ্যান ফেলে এসে অসীম এক বালিয়াড়ি পাড়ি দিতে নেমেছিল তারা। সেই বালুর সমুদ্রের ওপারে ওর তখন এমন কী আর করার ছিল?
নতুন সেই দেশে পৌঁছে তার অপেক্ষাগুলো আরও গভীর, আরও তীক্ষ্ণ হয়ে ওঠে, যেন স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নিতেও তার কষ্ট হচ্ছে, বাতাসে এখন আর সেই পরিচিত ঘ্রাণের দেখা মেলে না। প্রকাণ্ড সব প্রজাপতির মতো ছায়ারা রোদের আলোর ভেতর দিয়ে যাতায়াত করছে। দীর্ঘ এই সময় কেমন করে কাটানো যায়, সে সম্বন্ধে কোনো ধারণাই তার নেই। দাদির মতো সুচিকর্মও তার জানা নেই। বছরের পর বছর ধরে দাদি তাদের গাউনের ওপর ফসল তোলা আর আঙুরখেতের ছবি ফুটিয়ে তুলত। এ ধরনের কাজ তার পক্ষে করা সম্ভব নয়। শৈশবে একবার বিদঘুটে বেগুনগাছ বা কলা আঁকার জন্য শিক্ষক তার কান মলে দিয়েছিলেন। তার সেই হাত জোড়া এখন অলসভাবে দুপাশে ঝুলে আছে। চোখের সামনে পথঘাট সব ফাঁকা পড়ে আছে, কেবল দু-চারজন চাকুরে কাজের সময়টায় বাইরে বের হয়। এখানে বিমান আক্রমণের সময় সিঁড়ির নিচে কুয়ায় আশ্রয় দেওয়ার মতো কোনো প্রতিবেশী তাদের নেই। অভাবের সময় রেশনের চা, চিনি, রুটি বা মাখন ভাগ করে খাওয়ার মতো কোনো গৃহবধূও নেই আশপাশে। এখানকার সবকিছুই যেন বড় বেশি নীরব ও নিশ্চুপ। কাজ শেষে এখন সে কী করবে, তখন কি সেই প্রচণ্ড নীরবতা তাকে বধ করার জন্য ছুটে আসবে না? পাখি! আবারও সে তার সেই শিশুকালের মতো পাখি নিয়ে আসে এবং পাখিগুলোকে কখনোই বিস্ফোরণের ধোঁয়ার ভেতর হারিয়ে যাওয়া আগেকার পাখিগুলোর মতো মনে হয় না। এখন সে কী করবে? পুরোটা ঘর তন্ন তন্ন করে খুঁজে সে রংপেনসিল আর স্কুলের ছবি আঁকার খাতাটা বের করে আনে। তারপর সেখান থেকে একটা পাতা ছিঁড়ে নিয়ে জানালার পাশে এসে দাঁড়ায়। আন্দালুসিয়ান প্যাটার্নে কাচের খণ্ড সাঁটা রয়েছে ওটাতে। অবাক হয়ে সে ভাবতে থাকে, তার সামনে থাকা সেই কাচের খণ্ডসহ, নাকি সেটা বাদ দিয়ে এই ছবিই সে আঁকবে? বিপরীত দিকের বাড়িটায় রয়েছে জাফরিকাটা কাঠের ব্যালকনি, সঙ্গে নীল রঙের পরিপাটি জানালাগুলোর পাশে সাদা রঙের দেয়াল। মেয়েটা ওর চোখের সামনে সাদা কাগজখানা ধরে অবাক হয়ে ভাবতে থাকে, এখন তার এই কাঁপনলাগা আঙুল নিয়ে সে কী করবে। তার হাঁ হয়ে থাকা মুখ দেখে মনে হচ্ছে, সে এখন নিজেই নিজেকে গিলে খাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে। এই হাতে সে কেমন করে চোখের সামনের এই রোমাঞ্চকর ছবি আঁকবে? তারপরও সে একের পর এক এঁকেই চলেছে। তার এই হাতে কী করা সম্ভব, সেটা দেখার আশায়। যে ছবি সে আঁকতে শুরু করেছে, সেটা শেষ করার জন্য এবার সে পুরোদমে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
নিজের চোখকেই যেন সে এখন আর বিশ্বাস করতে পারছে না। অবিরাম গোলাগুলির আঘাতে ক্ষয়ে যাওয়া কাঠের সেতু পেরিয়ে স্বদেশ ছেড়ে আসা সেই ছোট্ট শিশু অথবা সম্ভবত সেই মহিলা যে কিনা সাগর পেরিয়ে জাহাজের প্রচণ্ড দুলুনি সহ্য করে এক মহাদেশ ছেড়ে অন্য মহাদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। উন্মোচিত রংগুলোর সাহায্যে কত কিছু যে প্রকাশ করা সম্ভব, সেটা সে নিজেই এখন আর বিশ্বাস করতে পারছে না। আঁকাটা শেষ হওয়ার পর হাতের মুঠোয় থাকা রংগুলো থেকে আরও কী কী বেরিয়ে আসবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়। গাছগাছালিতে ঘেরা ছোট্ট একটা কৃষিনির্ভর মফস্সল শহর জেগে উঠছে সেখানে। সেখানকার ঘরদোর সব কাদা আর রোদে পোড়ানো ইটের, মেঝেগুলো কাঠের আর সারি সারি টালির ছাদ। জায়গাটা ফুল আর ফলের বাগান দিয়ে ঘেরা, দূরে লালচে মাটির ওপর দিয়ে বাতাসের লাঙল বইছে। চারদিক থেকে ভেসে আসছে গাছগাছালির সুতীব্র এক ঘ্রাণ, এমন জায়গা সে এর আগে কোথাও দেখেনি।