লুইজ গ্লিকের কবিতা

অ্যাকিলিসের বিজয়

প্যাট্রোক্ল্যাসের গল্পে

কেউই বাঁচে না, এমনকি অ্যাকিলিসও নয়,

যে প্রায় দেবতা একজন।

প্যাট্রোক্ল্যাস তারই মতো; তারা পরতেন

একই রকম বর্ম।

এ রকম বন্ধুত্বে সব সময়

একজন সেবা করে অন্যজনের,

একজন আরেকজনের চেয়ে একটু কম;

এ বৈষম্য

সর্বদাই স্পষ্ট, যদিও কিংবদন্তিকে

বিশ্বাস করা যায় না

যারা বেঁচে যায়, তারাই এর উৎস,

এমন একজন যাকে পরিত্যাগ করা হয়েছে।

গ্রিসের অগ্নিদগ্ধ কোনো জাহাজের সঙ্গে

এ ক্ষতির তুলনা করবে তুমি?

তার তাঁবুতে, অ্যাকিলিসের

শোক ছিল সমস্ত সত্তাজুড়ে

এবং দেবতারা দেখেছেন

ইতিমধ্যেই সে এক মৃত লোক, একজন শিকার

সেই অংশের যা ভালোবেসেছে,

সেই অংশ যা নশ্বর।

সুখ

এক নারী ও এক পুরুষ শুয়ে আছে সাদা বিছানায়।

ভোরবেলা। আমি ভাবি

শিগগির জেগে উঠবে তারা।

বিছানার পাশের টেবিলে ফুলদানি

লিলি ফুলের; এক চিলতে সূর্যালোক চুইয়ে পড়েছে তাদের গলায়।

আমি তাকে মেয়েটির দিকে পাশ ফিরতে দেখি

যেন তার নাম ধরে ডাকবে এখনই

তবে তা নিঃশব্দে, মেয়েটির মুখের গভীরে

জানালার কার্নিশে তখন

পাখি ডাকে,

একবার, দুইবার।

এবং তখন সেই নারী কেঁপে ওঠে; তার দেহ

ভরে ওঠে লোকটার নিশ্বাসে।

আমি চোখ খুলি, আমাকে দেখছ তুমি।

এ ঘরের একটু ওপরে

গড়িয়ে যাচ্ছে সূর্য।

তোমার মুখের দিকে দেখো, তুমি বললে,

একটা আয়না বানাতে আমার মুখের কাছে

তুলে ধরে তোমার নিজের মুখ।

কতো শান্ত তুমি। আর এক জ্বলন্ত চাকা

আমাদের ওপর দিয়ে আলতোভাবে গড়িয়ে চলেছে।

একটি উপকথা

দুই নারী একই দাবি নিয়ে

এলেন প্রাজ্ঞ এক

নৃপতির কাছে।

নারী দুইজন বটে,

শিশু একটাই।

নৃপতি জানেন—

মিথ্যা বলছে একজন। তিনি

আদেশ দিলেন,

কেটে ভাগ করা হোক শিশুটিকে,

তাহলে শূন্য হাতে

ফিরতে হবে না কাউকেই।

তরবারি ওঠালেন তিনি।

এ সময়, দুজন নারীর মধ্যে একজন

ছেড়ে দিল তার দাবি:

এ গল্পের ইশারা এটাই, আর

এর থেকে আছে কিছু শিখবার।

ধরো,

তোমার মাকেই তুমি

ছিন্ন হতে দেখলে দুই কন্যার ভেতর:

তাকে রক্ষা করতে গিয়ে

কী তুমি করতে পারো

নিজেকে বিনাশ করা ছাড়া!

তিনি জানবেন

কে তার আসল কন্যা

ভাগ হতে দেয়নি যে

নিজ জননীকে।

ক্যাপশন:

অলংকরণ: সব্যসাচী মিস্ত্র

২০০৫ সালের মার্চ মাসে প্রথম আলোর সাহিত্য সাময়িকীতে প্রকাশিত লুইজ গ্লিকের কবিতা