ইচ্ছে পূরণ

অলংকরণ: মাসুক হেলাল
অলংকরণ: মাসুক হেলাল

অনেকগুলো বইয়ের মাঝে দাঁড়িয়ে আছে তন্ময়। বুকশেলফটা ধুলোয় ভরে গেছে। মা বাসা থেকে বের হওয়ার আগে বলে গেছেন তন্ময়কে ধুলো পরিষ্কার করতে। গল্পের বইয়ের সংগ্রহ বাড়লেও বইগুলোর যত্ন নেওয়া হয় না খুব একটা। তাই তন্ময় বইয়ের স্তূপ নিয়ে বসে আছে।

বুকশেলফ গোছাতে গিয়ে একটা সুবিধেই হয়েছে তন্ময়ের। পুরোনো কতগুলো বই আবার পড়ার জন্য আলাদা করে রাখছে সে। পুরোনো বইগুলোর মধ্য থেকে আলাদিনের গল্প বইটা বের করল। এটাও পড়া হয়নি। সে বইটার কভার খুলে জোরে একটা ফুঁ দিয়ে ধুলো ওড়াল।

ফুঁ দেওয়ার আগ পর্যন্ত সব ঠিক ছিল। ধুলায় ফুঁ দিলে তা উড়বে, সেটাও স্বাভাবিক। কিন্তু এই ধুলা উড়ে উড়ে কেমন ঘূর্ণিঝড়ের মতো হলো। আস্তে আস্তে তা একটা মাঝারি আকারের দৈত্যে রূপ নিল।

তন্ময় পুরো অপ্রস্তুত হয়ে গেছে। ঝেড়ে একটা দৌড় দিয়ে তার বাসা থেকে বের হয়ে যাওয়া উচিত কি না সেটা যখন সে ভাবছে, তখন দৈত্যটা বলে উঠল, ‘আদেশ করুন। আমি আপনার চারটি ইচ্ছা পূরণ করব।’

তাসফিয়া তাবাসসুম
তাসফিয়া তাবাসসুম

তন্ময় তখনো হাঁ করে বিশালাকার বস্তুটার দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে ঘটনাটা আসলে কী? ভয়ে-ভয়ে বলল, ‘আপনি কে?’
‘আমি আলাদিনের দৈত্য। আপনার চারটি ইচ্ছা পূরণ করতে এসেছি।’
তন্ময় ততক্ষণে মোটামুটি সামলে নিয়েছে। বিস্মিত হয়ে বলল, ‘সব সময় শুনি তিনটা ইচ্ছা পূরণ হয়। আপনি চারটা করবেন কেন?’}
দৈত্য বলল, ‘আমি ডিজিটাল যুগের দৈত্য। ডিজিটাল যুগের মানুষের চাহিদা বেশি। তাই আমিও ইচ্ছাপূরণের সুযোগ বাড়িয়ে নিয়েছি।’
তন্ময় সব বুঝে ফেলার ভঙ্গিতে মাথা নাড়ল। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকায় তন্ময়ের পা ব্যথা হয়ে গেছে। কিন্তু এত বইয়ের স্তূপের মাঝে বসার জায়গা পাচ্ছে না। হঠাৎ তাঁর বসার মতো একটা ফাঁকা জায়গা তৈরি হয়ে গেল। এটা কার কারসাজি, সেটা বুঝতে তার বাকি রইল না। সে কথা না বাড়িয়ে বসে পড়ল।

তন্ময়কে হাত দিয়ে কপালের ঘাম মুছতে দেখে দৈত্য জিজ্ঞেস করল, ‘আপনি কি ক্লান্ত?’

‘অনেকগুলো বই গুছিয়েছি তো। তাই ক্লান্ত লাগছে। মনে হচ্ছে কেউ যদি গুছিয়ে দিত।’

তন্ময় দেখল, বইগুলোর ধুলা পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে, নিজে নিজেই সেগুলো শেলফে উঠে যাচ্ছে। যাক! দৈত্যটা আসলেই কাজের। একে বন্ধুদের সামনে নিয়ে যেতে পারলে ভালো হতো। বন্ধুদের কথা ভাবতেই মনে পড়ল, আগামীকাল তার বন্ধু পলাশের জন্মদিন। কিন্তু তার গিফট এখনো ঠিক করা হয়নি। কী দেওয়া যায়? তন্ময়কে ভাবতে দেখে দৈত্য বলল, ‘আপনি কি কোনো কারণে চিন্তিত?’

তন্ময় বলল, ‘আমার বন্ধুকে জন্মদিনে কী গিফট দেব ভাবছি।’

দৈত্য বলল, ‘আমার একটা পরামর্শ আছে। তিনি তো বই ভালোবাসেন। বই দিতে পারেন।’

দৈত্য তার বন্ধুদের সম্পর্কেও জানে দেখে তন্ময় খুশি হলো। হঠাৎ খেয়াল করল, দৈত্য তার ইচ্ছে পূরণ করতে এসেছে, কিন্তু কোনো ইচ্ছার কথাই বলা হয়নি। কী চাওয়া যায়? একটা সাইকেল, নাকি অনেকগুলো গল্পের বই? পড়ালেখাটা উঠিয়ে দিতে বললেও খারাপ হয় না। দৈত্যটা বলল, ‘আপনার ইচ্ছাপূরণ...’

তন্ময় তাড়াতাড়ি বলল, ‘হ্যাঁ হ্যাঁ, বলছি। ভাবতে দাও।’

‘বেশ। আপনাকে ভাবার জন্য অফুরন্ত সময় দিয়ে যাচ্ছি। আমার দায়িত্ব শেষ।’

তন্ময় অবাক হয়ে বলল, ‘দায়িত্ব শেষ মানে? এখনো তো একটাও ইচ্ছা পূরণ হলো না।’

দৈত্য বলল, ‘বসার জায়গা করে দিলাম, বই গুছিয়ে দিলাম, গিফটের পরামর্শ দিলাম, আর এই যে এখন ভাবার জন্য সময় দিলাম। চারটা ইচ্ছা পূরণ হয়ে গেল। আমার দায়িত্ব শেষ। আমি এবার যাই।’

তন্ময়কে কিছু না বলার সুযোগ দিয়েই দৈত্যটা উধাও। তন্ময় তো পুরো অবাক! এটা কী হলো?

এ ঘটনার পর তন্ময় কোনো জায়গায় ধুলা দেখলেই ফুঁ দিয়ে দেখে। যদি আবার দৈত্যটাকে পাওয়া যায়, তাহলে একটা উচিত শিক্ষা দিতে হবে!

নবম শ্রেণি, ওয়াইডব্লিউসিএ উচ্চমাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, ঢাকা