
পমপম ছুটিতে নানাবাড়ি এসেছে। পিলপিল ওর ছোট বোন। টুকটুকি ওদের মামাতো বোন। তিনজনের দারুণ সময় কাটছে!
পড়া নেই। হাতের লেখাও নেই। বাবা পমপমকে সকালে শুধু খবরের কাগজ পড়তে বলেন। ঘড়ি ধরে আধা ঘণ্টা খবর পড়া। মজার খবরটা রোদে পিঠ দিয়ে শুধু মা-বাবাকে শোনাতে হয়। পিলপিল আর টুকটুকির কী মজা, ওদের সেটাও করতে হয় না।
পমপমের ঘুম ভাঙে রোজ ভোরে। জানালাটা খুলে দিতেই ওর গায়ে লাগে মিষ্টি হাওয়া। জানালার বাইরে লাল টুকটুকে সূর্যটা হাসতে থাকে। পমপমের মনে হয়, সূর্যের লাল গাল ধরে ও যদি আদর করতে পারত। ওদিকে উঠোনের এক পাশে রাখা সাদা-কালো ফুটবলটা ওকে ডাকতে থাকে। পমপম এবার দৌড়ে যায় কলপাড়ে। মুখ ধোয়, হাত ধোয়, দাঁত মাজে। ছুটে যায় নানুর কাছে।
মা-বাবা আর পিলপিলের ঘুম ভাঙে দেরিতে। টুকটুকির ঘুম ভেঙে যায়। ও অপেক্ষা করতে থাকে পিলপিলের জন্য। পমপম নানুর তৈরি নাশতা নিয়ে ব্যস্ত। নানুর হাতের খাবার নাকি পৃথিবীর সবচেয়ে মজার। নাশতা শেষ করেই পমপম ছুটে যায় নানার টেবিলে। খবরের কাগজ হাতে পড়তে বসে ও।
প্রথম খবরটা পড়েই আঁতকে ওঠে আজ। পমপম চোখ বন্ধ করে ফেলে। খুব খারাপ লাগে ওর। মাত্র তিন বছরের ছোট ছেলে আগুনে পুড়ে গেছে। টুকটুকি আর পিলপিলের কথা ভাবে পমপম। ওদের বয়সও তিন কি চার হবে।
দ্বিতীয় খবরটি পড়ে পমপম। কারা যেন সবজিভর্তি একটি ট্রাকে আগুন দিয়েছে। গরিব কৃষক তার পাশে বসে কাঁদছে।
তৃতীয় খবরটি মন দিয়ে পড়ে পমপম। কাশিমপুর হাইস্কুলের ছেলেমেয়েরা টিফিনের পয়সা বাঁচিয়ে ওদের স্কুলে যাদের গরম কাপড় নেই, তাদের গরম কাপড় কিনে দিয়েছে।
মা-বাবাকে আজ মজার খবর বলার মতো মনের অবস্থা তার নেই। পুড়ে যাওয়া শিশুটির ছবি মনে ভেসে উঠতে লাগল বারবার। বৃদ্ধ কৃষকের কান্নার ছবি ভেসে উঠল বারবার। ভেসে উঠল কাশিমপুর উচ্চবিদ্যালয়ের কথা। শত কষ্টের মাঝেও ছেলেমেয়েরা তাদের সহপাঠীদের কথা ভেবেছে। তীব্র শীতে ওদের মধ্যে গরম কাপড় বিতরণ করেছে।
পমপম ঠিক করে, আজ শুধু মা-বাবাকে নয়, নানাবাড়ির সবাইকে ডেকে এসব খবরের কথা বলবে ও। বলবে মানুষ হয়ে মানুষের জন্য ভালো কাজ করার কথা; মানুষ হয়ে দৈত্যদানবের মতো কাউকে পুড়িয়ে মারার কথা নয়।
পমপম গল্পেও পড়েছে, পুড়িয়ে মারে দৈত্যদানবেরা, পুড়িয়ে মারা কি মানুষের কাজ?
হঠাৎ পমপমের কানে এল ছোট দুই বোনের হাসির শব্দ। ওই তো ওরা এদিকেই আসছে। পমপম এক পাশে কাগজ রেখে দৌড়ে যায় ওদের কাছে। আদর করে জড়িয়ে ধরে ছোট দুই বোনকে।