রঙিন পৃথিবী

আজকের দিনটা অনেক রঙিন। চারদিকে কত রং। আকাশটা রঙিন। মাটিটা রঙিন, পাখিগুলো রঙিন, প্রজাপতি, ঘাসফড়িং সবই রঙিন। শুধু আজকের দিনটা নয়, আমার কাছে প্রতিটা দিনই খুব রঙিন লাগে। কারণ আমি রং। আমার নাম গোলাপি। আমার হাত, পা, মাথা, মুখ সবই গোলাপি রঙের।
আমি থাকি একটা রঙের বাক্সে। সেখানে সব রংই আমার বন্ধু। একটা মেয়ে প্রতিদিন বাক্সটা খোলে আর রংগুলো দিয়ে রং করে। মেয়েটার নাম মিথিলা। যখন ও রং করে, তখন একেবারে রঙে রঙে রঙিন হয়ে যায়। তাই আমি ওর নাম দিয়েছি ‘রঙ্গিলা’। মেয়েটার প্রিয় রং নাকি আমি, মানে গোলাপি।
রঙের বাক্সটায় আমার মা হলুদ রং, আমার বাবা নীল রং, আমার আপু কমলা রং আর আমার ভাইয়া বেগুনি রং থাকে আমার সঙ্গে। আমার আপু আর ভাইয়া একটা স্কুলে পড়ে। আমি একবার স্কুলটায় গিয়েছিলাম। কিন্তু সেখানে কালো রঙের রাগী প্রিন্সিপাল স্যারকে দেখে আমার পড়ালেখা করার শখ মিটে গেছে।
আমাদের রংদের একটা মজার ব্যাপার আছে। সেটা হলো আমরা রঙেরা যখন কান্না করি, তখন আমাদের গায়ের রংগুলো গলে গলে পড়ে। আবার তখন যদি আমরা হাসি তাহলে আমাদের গায়ের রংগুলো জমাট বেঁধে গায়ে লেগে যায়।

আমার ভাগ্য ভালো, কারণ আমি রং। তা না হলে আমি যদি মানুষ হতাম, তাহলে খুবই বোকা আর দুষ্টু হতাম। যেমন আমার রঙের বাক্সটার মালিক (যেটা আসলে আমার বাড়ি) সেই রঙ্গিলা মেয়েটার একটা বাগান ছিল। আমি প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে জানালার কাছে দাঁড়াতাম (আমরা রঙেরাও কিন্তু হাঁটতে পারি)। তখন দেখতাম রঙ্গিলা মেয়েটা ওর বাগানে কত রকম গাছ লাগাচ্ছে। গাছগুলোতে পাখিরা বসছে, গান গাইছে। আমার যে কী ভালো লাগত!
কিন্তু একদিন রঙ্গিলা মেয়েটার বাবা সব গাছ কেটে ফেলল। সেদিন মেয়েটা যে কী কেঁদেছিল। আমি তাই মেয়েটার দুঃখ পাওয়া মনটাকে রঙে রঙিন করে দিয়েছিলাম, যাতে মেয়েটা আর না কাঁদে।
আমাদের রংদের একটা বিশেষ ক্ষমতা আছে। আমরা যখনই যেটা ছুঁই, তখনই সেটা রঙিন হয়ে যায়। খুব মজার ব্যাপার না!
আমরা রঙেরা আসলেই রঙিন। আমাদের পৃথিবীটা রঙিন, মনটা রঙিন। রঙ্গিলা মেয়েটা না আমার কথা তার ডায়েরিতে লিখে রেখেছে। আমি সেই ডায়েরিটা ছুঁয়ে রঙিন করে দিয়েছি। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে একটাই, মানুষেরা বোকার মতো যেভাবে গাছ কাটছে, তাতে পৃথিবীটা রঙিন থাকবে কী করে? পৃথিবীটা এখন ধূসর রঙের দৈত্যপুরীতে পরিণত হয়েছে (আসলে ধূসর রং আমাদের দৈত্য)। এসব দেখলে আমি আগের পৃথিবীটাকে মিস করি। তাই আমি যখন বড় হব, তখন পৃথিবীটাকে রঙিন করে তুলব। তখন পৃথিবীটার নাম হবে ‘রঙিন পৃথিবী’।
অষ্টম শ্রেণি, বাংলাদেশ নৌবাহিনী স্কুল ও কলেজ, চট্টগ্রাম।