রুকনাবাদ নদীর তীরে কবি হাফিজ শিরাজির মাজার

গ্রাফিকস: প্রথম আলো

‘কভু মরে না সে জন, প্রেম যার পরানে বাঁচে—বিশ্বের পাতায় চিরস্থায়ী আমাদের এই অমরত্বের প্রেম লেখা রবে’—জাতীয় কবি কাজী নজরুলের অনুবাদে এভাবেই আমরা পারস্য কবি হাফিজ শিরাজির সঙ্গে আত্মার মেলবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছি। পারস্যের এই মহান কবি প্রেম-ভালোবাসার অফুরন্ত বন্ধনে পুরো বিশ্বকে জাগিয়ে তোলার নিরন্তর চেষ্টা করে গেছেন। যদিও জীবদ্দশায় প্রেমিকা শখে নাবাতকে হাফিজ পেয়েছিলেন কি না আমরা জানি না; এ ছাড়া শখে নাবাত নামে কোনো নারীর অস্তিত্ব আদৌ হাফিজ শিরাজির জীবনে ছিল কি না, তা-ও আমাদের অজানা।

পারস্য সাহিত্যে হাফিজই একমাত্র কবি, যিনি তাঁর প্রেমিকা শখে নাবাতকে উৎসর্গ করে রুকনাবাদ নদীর তীরে বসে অসংখ্য পঙ্‌ক্তি রচনা করেছেন? বলা হয়ে থাকে, হাফিজ রূপসী শখে নাবাতের প্রেমে মোহাচ্ছন্ন হয়ে পড়েন। এ প্রেম তাঁর মধ্যে কবিত্ব জাগিয়ে তোলে এবং প্রেমের মোহে অন্ধ হয়েই তিনি কবিতার দ্বারস্থ হন। অসংখ্য গবেষকের মত, এ ধরনের প্রমাণহীন কেচ্ছার শেষ পরিণতি হলো অহেতুক সময়ক্ষেপণ।

প্রিয় কবির সমাধিতে প্রতিদিন এভাবেই ভিড় করেন হাজারো তরুণী
ছবি: লেখক

পারস্য সাহিত্যে হাফিজ প্রথম কবি, যাঁর কবিতায় পার্থিব ও ঐশ্বরিক ভাবার্থ একই সঙ্গে দীপ্যমান হয়ে উঠেছিল। ওপেন এন্ডেড ধরনের এসব কবিতায় পাঠক নিজ নিজ অর্থ স্থাপন করে নিতে পারেন! যেমন, বিশেষত প্রেমিক-প্রেমিকারা এখনো হাফিজের কাব্যে সব সময় তাঁদের মনের কথাগুলো খুঁজে পান। তাঁরা এটাও বিশ্বাস করেন, হাফিজ তাদের মনের অব্যক্ত বেদনাগুলো মুছে দেবেন, মিলনের অন্তরায়গুলো দূর করে দেবেন!

রাজধানী তেহরান থেকে প্রায় ৯৩০ কিলোমিটার দূরে দক্ষিণের পারস্য উপসাগরের নিকটবর্তী নগরী শিরাজ। সেখানেই কবি হাফিজ শিরাজির সমাধির পাশে বসে একাগ্রচিত্তে অসংখ্য প্রেমিক-প্রেমিকার সিক্ত চোখ দেখে হতবাক হতে হয়! তাদের আজও শুভ পরিণয়ের মধ্যস্থতায় কবির নিকট কাকুতি-মিনতি করতে দেখা যায়! তারা বলে, হাফিজের কবিতায় তারা নিজেদের অস্তিত্বের মুখোমুখি হয়! হাফিজ ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে তাদের পাঁশে দাঁড়ান! যেহেতু হাফিজ সমাজ-সংসারের যাবতীয় দুঃখ-কষ্ট ভুলে নিজের মনকে অনুসরণ করে এগিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন।

কবি, কথাসাহিত্যিক ও নাট্যকার সৈয়দ শামসুল হকের অনুবাদে হাফিজ শিরাজির দুটি গজলে চোখ বোলানো যাক:

‘চোখের পানি দেখেন তিনি, রচনা যার এ সংসার; তার কাছে তো অজানা নয়—চোখের পানি ফেলো না আর’ (সরাই শরাব সাকি: তৃষিতের ঠোঁট, ২০১৯: ১৪)।

‘চলে গেছে প্রাণবন্ধু পলকে, ফেলে গেছে তার ছাপ, রেখে গেছে চোখে অশ্রু আমার এবং মনস্তাপ’ (সরাই শরাব সাকি: তৃষিতের ঠোঁট, ২০১৯: ১৮)। 

হাফিজের মাজারে নববর্ষ উৎসবের উপচে পড়া ভিড়
ছবি: লেখক

নিজেদের অব্যক্ত কান্না কবিকে শোনানোর ইচ্ছা নিয়ে অনেকেই ছুটে যান কবির প্রিয় রুকনাবাদ নদীর তীরে। কিন্তু নদী কোথায়! এ তো ঝিরঝির শব্দে বয়ে চলা পাহাড়ি ছড়া! সেই ছড়ার জলে প্রেমিক-প্রেমিকা নিজেদের প্রতিবিম্বে কবিকে খুঁজে পাওয়ার বৃথা চেষ্টা করেন! এখানে বসেই কবি লিখেছিলেন বিখ্যাত সেই পঙ্‌ক্তি—‘প্রাণে যদি দেয় ধরা মোর শিরাজের ঐ তুর্কি তন্বী মনচোরা; প্রিয়ার কালো তিলের তরে—দেই বিলিয়ে সমরখন্দ ও এই বোখারা’। 

এ পঙ্‌ক্তিটি নিয়ে ফারসি গবেষকদের মধ্যে রয়েছে নানা রকম মতানৈক্য! একদলের মতে, কবি ওই সময়ের শৌর্যে-বীর্যে দেদীপ্যমান মধ্যযুগীয় স্থাপত্যকলার উৎকৃষ্ট দৃষ্টান্ত হিসেবে সমরখন্দ শহরকে বুঝিয়েছেন; যা পক্ষান্তরে বাহ্যিক পৃথিবীর সৌন্দর্য। অন্যদিকে, বোখারা ছিল ইমাম বুখারির কল্যাণে ধর্মীয় গবেষণার প্রাণকেন্দ্র, ফলে আরেক দলের মত, এর দ্বারা কবি মূলত মৃত্যু-পরবর্তী দুনিয়ার দিকেই ইঙ্গিত করেছেন। তবে লাখো প্রেমিক-প্রেমিকার অন্তরে হাফিজ শিরাজি জেগে আছেন স্বমহিমায়। কাছে এসব ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ তাদের কাছে নিরর্থক। কারণ, তারা কেবলই আজন্ম প্রেমিক হওয়ার বাসনায় হাফিজের কাছে এসে প্রতিনিয়ত ধরনা দেন।

কবির জন্ম ও বেড়ে ওঠা শিরাজ নগরীতে। শৈশবেই কোরআন শরিফ মুখস্থ করেছিলেন। এ কারণেই মূল নাম খাজা শামসুদ্দিন মুহাম্মাদ ঢাকা পড়ে যায়। পরিচিত হন ‘হাফিজ’ নামে। তিনি বেড়ে উঠেছেন চতুর্দশ শতকে (১৩১৫-১৩৯০) পারস্য উপসাগরের নিকটবর্তী দক্ষিণের নগরী ফার্স প্রদেশে। 

হাফিজের সমাধিতে লেখক
ছবি: লেখকের সৌজন্যে

হাফিজের কবিতায় দেশকাল ভেদ করে সমাজের বাস্তব চিত্র দৃশ্যমান। বিশেষ করে তিনি ভণ্ড, বিধার্মিক, ওয়াদা ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে সরাসরি কলম ধরেছেন। দ্ব্যর্থকতা-সমান্তরলতাকে হাফিজ তাঁর নিজস্ব এক অননুকরণীয় শৈলীতে রূপান্তরিত করেছিলেন। তবে সবকিছু ছাপিয়ে তাঁর কবিতায় প্রেমিক-প্রেমিকার আহাজারি-রোনাজারি ও জীবনবোধের বাস্তব চিত্র তুলে ধরার প্রয়াস দেখা যায়। হাফিজের কবিতা যেন বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা লাখো প্রেমিক-প্রেমিকার মনের অজানা ভয়, সংশয়, দ্বিধা ও হতাশা ছাপিয়ে ইতিবাচক পথের সন্ধানদানে ব্রত! প্রেমিকার জন্য অন্তরের অন্তস্তল থেকে উঠে আসা হাহাকার প্রতিধ্বনিত হয়! প্রেমিকার সঙ্গে মিলনের আকুল কাকুতি-মিনতি ভেসে আসে। এ কারণেই হাফিজের কবিতায় আমরা পার্থিব প্রেমের বিমূর্ত চিত্র দেখতে পাই; পরে যে প্রেম স্রষ্টার সঙ্গে মিলনের আধ্যাত্মিকতায় রূপান্তরিত হয়েছে। কথিত আছে, হাফিজ প্রথমে পার্থিব প্রেমকে অবলম্বন করেই রুকনাবাদ নদীর তীরে বসে তাঁর প্রেমিকা শখে নাবাতের জন্য হাহাকার করেছেন। প্রতিটি কবিতায় তিনি প্রেমের আকাঙ্ক্ষাই ব্যক্ত করেছেন। কাজী আকরম হোসেনের অনুবাদে সেটি আরও প্রাণ পেয়েছে—‘সাকী ওগো! ঢালো শরাব, বিলাও সবায় ভরপেয়ালা, পেয়ার আগে লাগ্ল ভালো ঠেকছে এবে বিষম জ্বালা’।

শিরাজী শহরে হাফিজের মাজার
ছবি: সংগৃহীত

ইরানের বিখ্যাত ধ্রুপদি গায়ক মোহাম্মাদ রেজা শাজারিয়ান ও তাঁর পুত্র হুমায়ন শাজারিয়ান অথবা শাহরাম নাজেরি হাফিজের কবিতাগুলোকে অসামান্য দক্ষতায় নিজেদের কণ্ঠে ধারণ করেছেন। আলোচিত পপতারকা হামিদ নিকপাইয়ের ‘সাকি সাকি, মোতরেব মোতরেব’ গানটি আধুনিক ঢঙে গেয়ে পুরো বিশ্বের ফারসিভাষী কোটি প্রেমিক-প্রেমিকাকে জাগিয়ে তুলেছেন। তাজিকিস্তান আরও এক ধাপ এগিয়ে আধুনিক ঢং এবং নাচের সঙ্গে অসাধারণ কম্পোজিশন করে তাক লাগিয়ে দিয়েছে! ইউনেসকো কনফারেন্সে হাফিজ শিরাজির ৭০০তম জন্মজয়ন্তীতে সিনা সেরলেক, মাহদিয়ে মোহাম্মাদ খানি, সেতারে কেরামত উল্লাহকে সঙ্গে নিয়ে অরাশ ফুলাদভান্দ তিন শতাধিক শিল্পীর পশ্চিমা বাদ্যযন্ত্র পিয়ানো, অর্কেস্ট্রা, গিটার, বেহালা, সেলো, বেস, হার্প, ম্যান্ডোলিন, স্যাক্সোফোনের সঙ্গে প্রাচ্য ঘরানার বিশেষত মধ্য এশিয়ার বাদ্যযন্ত্র দাফ, বাঁশি, রুবাব, সেতার, চাঙের সমন্বয়ে নান্দনিক পরিবেশনায় হাফিজের গজলে দুনিয়া মাত করে দিয়েছেন। 

পাহাড় আর মরুভূমিবেষ্টিত ইরানের ছোট-বড় শহরে, পথে-প্রান্তরে, উৎসবে, শহরের বড় বড় চৌরাস্তার মোড়ে, মেট্রোরেল বা বিআরটি বাসের ভেতরে বা অলিতে-গলিতে বেহালা বা সেতার হাতে নিয়ে হাফিজের গজল সুরে সুরে গাইতে দেখা গেলে অবাক হওয়ার কিছুই নেই। পুরো ইরানই আসলে হাফিজে মোহাচ্ছন্ন!

রাতের হাফিজ প্রাঙ্গণ
ছবি: লেখক

হাফিজের সমাধি রাত-দিন ২৪ ঘণ্টা উন্মুক্ত। এ সমাধি প্রাঙ্গণে দেশ-বিদেশের অসংখ্য পর্যটকের সঙ্গে প্রতিদিন অগণিত প্রেমিক-প্রেমিকা হাফিজের মাজারের চারপাশে বসে থাকেন অজানা এক রহস্য সন্ধানে। হাফিজের গজল থেকে নিজেদের ভাগ্য জেনে নেওয়ার চেষ্টা করেন। হাফিজ ও তাঁর গজল ইরানি সংস্কৃতির একটি অংশ হয়ে গেছে। ইরানি জাতির ঘরে ঘরে পবিত্র গ্রন্থ কোরআনের পাশাপাশি হাফিজ শিরাজির গজলের উপস্থিতি সেই প্রমাণই দেয়! ইরানে খুব কমসংখ্যক লোক পাওয়া যাবে, যার ঘরে হাফিজের কাব্যগ্রন্থ নেই বা যিনি হাফিজ সম্পর্কে ধারণা রাখেন না। জনপ্রিয় মত, হাফিজ শিরাজি তাঁর একমাত্র কাব্যগ্রন্থটি রচনার পর ৭৯ বারের অধিক সংশোধন, সংযোজন ও বিয়োজন করেছেন। বর্তমান ইরানে হাফিজ কাব্যের দুটি সংকলন পাওয়া যায়। একটি হচ্ছে মূল কাব্যগ্রন্থ, অন্যটি ফাল বা ভাগ্যগণনার জন্য বিশেষ ব্যাখ্যা-সংবলিত গ্রন্থ। ইরানের প্রতিটি জাঁকজমকপূর্ণ ঐতিহ্যবাহী উৎসবে হাফিজের গজল থেকে নিজেদের ফাল বা ভাগ্য গণনা করা অথবা জমজমাট কোনো আড্ডায় হাফিজের কাব্যসংকলন থেকে নিজেদের ভাগ্যের ইতিবাচক দিকগুলো খুঁজে নেওয়া এ জাতির প্রাচীন ঐতিহ্যের একটি আধুনিক রূপায়ণ বলা যেতে পারে। প্রতিদিন হাফিজের সমাধিতটে বসে অসংখ্য প্রেমিক-প্রেমিকা নিভৃতে মনে হাফিজের কবিতা আবৃত্তি করছে। কারও দিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই! উপরন্তু চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। অশ্রুকণাগুলো হয়তো হাফিজের গজলের কোনো পঙ্‌ক্তির ওপরে সমুদ্রের উত্তাল তরঙ্গের ফেনা হয়ে আছড়ে পড়ছে। প্রেমিক-প্রেমিকার অন্তরকে প্রশমিত করার চেষ্টা করছে। হয়তো কোনো তরুণী কবির কাব্যসংকলন মেলে ধরতেই হাফিজ বলে উঠছেন—‘চোখের পানি ফেলো না ফের—ফিরবে ফুলের ফাগুন মাস; আবার তুমি দেখতে পাবে বিরান মাঠে সবুজ ঘাস’।

তরুণীদের মধ্যে হাফিজকে নিয়ে উচ্ছ্বাসের মাত্রাটা একটু বেশি
ছবি: লেখক

তরুণীদের মধ্যেই হাফিজকে নিয়ে উচ্ছ্বাসের মাত্রাটা একটু বেশি। হাফিজের মাজারে পেছনেই বহমান রুকনাবাদ নদী। যদিও কালপরিক্রমায় নদীটি শুকিয়ে গেছে। শখে নাবাতের গ্রামের নামটিও নদীরই নামে—রুকনাবাদ। সমাধি থেকে কাছেই গ্রামটির অবস্থান। বর্তমানে এটি একটি বর্ধিষ্ণু মফস্‌সল শহর। হাফিজ-উন্মাদনা শুধু যে শিরাজ নগরীতেই, তা নয়; ইরানজুড়েই হঠাৎ রাস্তার মোড়ে গাড়ি থামামাত্রই ছোট ছোট বাচ্চা ছুটে এসে কবি হাফিজ শিরাজির কাব্যসংকলন থেকে সংগৃহীত পঙ্‌ক্তিগুলো লেখা খাম আপনাকে দিতে চাইবে। এ ছাড়া বিভিন্ন সড়ক, বিনোদন পার্ক, বিক্রয়কেন্দ্র বা সিনেমা হলের সামনে টিয়া, ময়নাসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখিরাও হাফিজের কবিতার একেকটি পঙ্‌ক্তি-সংবলিত খাম নিয়ে ভাগ্যগণনাকারী হিসেবে বসে থাকে! ইদানীং বিভিন্ন অনলাইন অ্যাপসেও হাফিজের মাধ্যমে ভাগ্যগণনার প্রচলন শুরু হয়েছে। 

২১ ডিসেম্বর বছরের দীর্ঘতম রাতে ইরানি জাতির অন্যতম বৃহৎ উৎসব ‘শাবে ইয়ালদা’ বা সূর্যের জন্মোৎসব রাত। এ রাতে হাফিজের কাব্যসংকলন থেকে ফাল বা ভাগ্যগণনা বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। কবি হাফিজ শিরাজির কাব্যসংকলনের প্রতিটি গজলের রয়েছে আলাদা তাৎপর্য। যেকোনো ভাগ্যগণনা অনুষ্ঠানে তাঁর কাব্যসংকলনটি সামনে রেখে পরিবারের বয়স্ক ব্যক্তি শুরু করেন ভাগ্যগণনা। যার ভাগ্যগণনা করা হবে তিনি পবিত্র হয়ে চোখ বন্ধ করে তিনবার সুরা এখলাস পড়ে মনে মনে কিছু একটা চাইবেন! অতঃপর বয়স্ক ব্যক্তি কাব্যসংকলনটি তাঁর সামনে খুলে বলবেন, ডান পৃষ্ঠা বা বাঁ পৃষ্ঠায় হাত রাখো। ভাগ্যগণনায় ইচ্ছুক ব্যক্তি চোখ বন্ধ রাখা অবস্থাতেই কোনো এক পৃষ্ঠায় নিজের ডান হাতটি রাখবেন। বয়স্ক ব্যক্তি ওই পৃষ্ঠার কবিতা ও তাঁর তাৎপর্য ব্যাখ্যা করবেন।

হাফিজের মাজারে আন্তর্জাতিক হাফিজ সম্মেলন
ছবি: সংগৃহীত

হাফিজের দিওয়ান থেকে ফাল গণনায় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সাফাভি রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা শাহ ইসমাইল, আরেক শাসক শাহ তাহমাস্প, মোগল বাদশাহ জাহাঙ্গীর, ভারতবর্ষের অন্যান্য রাজা-বাদশাহসহ অনেকেই আছেন। এমনকি শিরাজ নগরীর কট্টর মৌলবাদী গোষ্ঠী হাফিজের মৃত্যুর পর তাঁর জানাজা পড়া জায়েজ হবে কি না, সেটিও ফাল গণনা করে বিচার করতে চেয়েছিলেন!

কবিকে যখন শিরাজ নগরীতে দাফন করা হবে, তখন স্বল্পসংখ্যক কট্টরপন্থী সেখানে উপস্থিত হয়ে চরম বিরোধিতা করলেন। তাঁদের যুক্তি হাফিজ মদ্যপ ছিলেন, শরাব নিয়ে কবিতা লিখেছেন, পরহেজগারদের ব্যঙ্গবিদ্রূপ করেছেন। সেখানে উপস্থিত কিছু সমালোচক বললেন, এসো হাফিজের কাব্যসংকলন দিয়েই ওর অদৃষ্টের ভাগ্যগণনা করি। এই বলে একজন হাফিজের দিওয়ান হাতে তুলে নিলেন। চোখ বন্ধ করে একটি পৃষ্ঠা খুলতেই প্রথম যে কবিতা উঠে এল, সেটি ছিল—‘হাফিজের আত্মাকে শান্তিতে ঘুমাতে দাও, যদি হাফিজ পাপাচারে লিপ্তও থাকে, তথাপি হাফিজ বেহেশতেই যাবে’। কিন্তু এটি তাঁদের পছন্দ হলো না। পুনরায় দিওয়ান থেকে ভাগ্যগণনা করতে বলা হলো। এবারের কবিতাটি দেখে সবার চক্ষু ছানাবড়া! এ কবিতাটির অনুবাদ করেছেন কাজী নজরুল ইসলাম—‘আমার গোরের পার্শ্ব দিয়ে যেতে চেয়ো আশিস তুমি, এ গোর হবে ধর্ম-স্বাধীন নিখিল প্রেমিক তীর্থভূমি’।