সচরাচর ইন্টারনেটে খুঁজলে এমিলি ডিকিনসনের একরঙা পোশাক পরা, গলায় রিবন বাঁধা, পরিপাটি চুলের সাদামাটা যে ছবি পাওয়া যায়, তার সঙ্গে তুলনা করলে অ্যামহার্স্টে এমিলির মিউজিয়াম হয়ে যাওয়া বাড়ির বৈপরীত্যটুকুই চোখে পড়ে সবার আগে। বাড়িটা উজ্জ্বল রঙের, মূল ভবন হলুদ, জানালার শাটারগুলো ঘন সবুজ। চারপাশে গাছগাছালি, ফুলের বাগান এবং দুপুরের আলোয় চকচক করা লনের সবুজ ঘাস। এমিলির অন্তর্মুখী জীবনযাপন ও গোপন কাব্যচর্চার বিপরীতে এই রঙিন, খোলামেলা পরিবেশ একধরনের প্রশ্ন তৈরি করে মনে।
এমিলি ডিকিনসনের মিউজিয়াম আসলে দুটি বাড়ির সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে—‘হোমস্টেড’ ও ‘এভারগ্রিনস’। ২০০৩ সালে দুটি বাড়িকে এক করা হয়, কিন্তু এর পেছনে আছে প্রজন্মব্যাপী পারিবারিক দ্বন্দ্বের ইতিহাস, যা ‘the war between the houses’ নামে পরিচিত।
এমিলির মিউজিয়াম দেখতে পৌঁছে গিয়েছিলাম সময়ের আগেই। আমাদের গাইডেড ট্যুর শুরু হতে তখনো মিনিট বিশেক বাকি। হাতের সময়টা কাজে লাগাতে ‘হোমস্টেড’ আর ‘এভারগ্রিনস’ নামের দুটি বাড়ির চারপাশে হাঁটতে শুরু করেছিলাম। ঠিক তখনই মনে হলো, প্রায় তিন একর জায়গাজুড়ে ছড়িয়ে থাকা এই বাড়ি ও আশপাশের পরিবেশে, কবি এমিলির যাপনরীতি, আত্মনিবিষ্টতা ও সামাজিক সীমারেখার প্রতিরোধের সঙ্গে কোথায় যেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটা সূক্ষ্ম মিল রয়েছে। মিলটা ঠিক কোথায়, সেটা বোঝা মুশকিল। হতে পারে এটা তাঁদের সাহিত্যচর্চার স্থাননির্ভরতা। স্বচ্ছলতার ভেতরে থাকা নির্জন একাকিত্ব কিংবা নিজস্ব একধরনের নিভৃত শৃঙ্খলা, যা তাঁদের সাহিত্যসত্তাকে ভেতর থেকে গড়ে তুলেছিল।
এমিলির বাড়ির দিকে তাকিয়ে মনে পড়ল, প্রায় আঠারো শ কবিতা এই বাড়িটার কোনো এক ঘরে চুপচাপ লুকিয়ে ছিল বছরের পর বছর। জীবদ্দশায় মাত্র ১০টি কবিতা নাম-পরিচয় গোপন রেখে প্রকাশ করেছিলেন তিনি। মৃত্যুর আগে ছোট বোন লাভিনিয়াকে বলেছিলেন তাঁর সব লেখা পুড়িয়ে ফেলতে। যেমনটা অনুরোধ করেছিলেন ফ্রানৎস কাফকা তাঁর বন্ধু ম্যাক্স ব্রডকে; এমনকি ভার্জিনিয়া উলফও চেয়েছিলেন এমন কিছু। কিন্তু, তাঁর স্বামী লিওনার্ড উলফের কারণে সেটা সম্ভব হয়নি। অথচ পরবর্তী সময়ে লেখকদের এই ব্যক্তিগত ও অপ্রকাশিত লেখা, যা তাঁরা হয়তো নিজের চোখে প্রকাশিত দেখতে চাননি; গবেষণা, পাঠ ও সাহিত্য ইতিহাসে অমূল্য হয়ে উঠেছে।
এমিলি যে সময়ে লিখেছেন, তখন নারীর কাব্যচর্চা একদিকে যেমন ছিল বিলাসিতা, অন্যদিকে ছিল স্পর্ধা। শিক্ষিত হলেও কোনো নারী যখন নিজের চিন্তা, স্বাধীনতা, স্বপ্ন বা রাজনৈতিক মতামত ব্যক্ত করতেন, তখন তা প্রায়ই সামাজিক সীমানার লঙ্ঘন বলে বিবেচিত হতো। এমিলির চিন্তার যে স্বাধীনতা ছিল, তার পেছনে ভূমিকা রেখেছিল তাঁর পারিবারিক শিক্ষার ঐতিহ্য, বাড়ির পাশে অ্যামহার্স্ট কলেজের অবস্থান এবং পারিবারিক আর্থিক সচ্ছলতা যা সে সময় বেশির ভাগ নারীর ভাগ্যে ছিল না।
এমিলির বাড়িটি মিউজিয়াম হিসেবে সংরক্ষণ ও পুনর্গঠন করার প্রক্রিয়ায় একাধিকবার সংস্কার করা হয়েছে। সাম্প্রতিকতম সংস্কার পর্বে পুরোনো অলংকরণ, আবার তৈরি করা ওয়ালপেপার এবং আধা সাইকেডেলিক ফুলে ভরা রঙিন কার্পেট যুক্ত হয়েছে। ঘরজুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে ডিকিনসন পরিবারের আসবাব এবং অ্যাপল টিভির জনপ্রিয়তা পাওয়া ‘ডিকিনসন’ সিরিজ থেকে দান করা প্রপসের নিখুঁত সংমিশ্রণ। এখানে-সেখানে ফুলদানিতে গোলাপি পিয়নি ফুল, কার্পেটে গাঢ় মেরুন ও সোনালি রঙের গাঁথুনি এবং প্রায় প্রতিটি ঘরের দেয়ালে ঐতিহাসিক সময়ের রুচি অনুযায়ী ওয়ালপেপার।
মূল দরজার ঠিক পরেই লম্বা বাঁকানো কাঠের সিঁড়ি উঠে গেছে দোতলায়। নিচতলায় রয়েছে লাইব্রেরি, পারলার ও ট্যুর সেন্টার। শোনা যায়, জীবনের একটা পর্যায়ে এমিলি চেনা-অচেনা মানুষের সামনে আসাই বন্ধ করে দিয়েছিলেন এবং চিঠি লিখে বা দরজার ফাঁক দিয়ে কথাবার্তা চালিয়ে নিতেন।
আমাদের গাইড মেলিসা সিবুলস্কি, এমিলিকে নিয়ে কথা বলতে শুরু করতেই বোঝা গেল, মেলিসা শুধু একজন গাইডই নন বরং আরও বেশি কিছু। কারণ, তাঁর কণ্ঠ, চোখের দৃষ্টি আর বোঝানোর সময়কার হাতের ভঙ্গি বলে দিচ্ছিল যে কবিসত্তার পাশাপাশি ব্যক্তি এমিলিকেও তিনি ধারণ করে আছেন আন্তরিক শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায়।
এই ট্যুরে আমরা বাদেও ছিল দুটি এশিয়ান ও একটি আমেরিকান জুটি। বিরতির সময় পরিচয় পর্বে জানা গেল, মেলিসা মিউজিয়াম গাইডের পাশাপাশি একজন শিশুসাহিত্যিকও। আমিও লিখি, সে কথা শুনে পাশে দাঁড়ানো আমেরিকান জুটির স্ত্রী হেসে বললেন, তাহলে আজকের ট্যুরে বেশ কয়েকজন লেখক একসঙ্গে! তারপর জানালেন, তাঁর স্বামী ডেভিড কুইন মার্ভেলের ডক্টর স্ট্রেঞ্জ কমিকসের সহলেখক। তাঁরা দ্বিতীয়বারের মতো এলেন মিউজিয়ামটিতে।
মেলিসা সঙ্গে সঙ্গেই বললেন, এমিলি যদি এসব জানতে পারতেন, হয়তো খুশি হতেন। আদৌ নিভৃতচারী এমিলি আমাদের উপস্থিতিতে খুশি হতেন কি না, সেই সংশয় নিয়েই বাকি ঘরগুলো দেখতে থাকলাম কৌতূহলী হয়ে। পরিচয় পর্বের কারণে এবার ট্যুরের সব সহযাত্রী পরস্পরের সঙ্গে বেশ সহজ হয়ে উঠেছিলেন।
এরপর আমরা গেলাম একটি দেয়ালে ঝোলানো ফ্রেমের সামনে, যেখানে ডিকিনসন পরিবারের তিন ভাইবোনের ছবি আঁকা। মেলিসা আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘বলতে পারেন, এমিলি কোনটা?’ ছবির দিকে কিছুক্ষণ মনোযোগ দিয়ে তাকিয়ে আমি বললাম, হাতের বাঁয়ের মেয়েটি।
মেলিসা জিজ্ঞেস করলেন, ‘এই ছবির মধ্যে নতুন কিছু দেখছেন?’
প্রশ্ন শুনে কিছুটা দ্বিধা কাজ করল। দেয়ালে টাঙানো ছবিতে এমিলির বয়স কম। সম্ভবত তিনি তখন স্কুলপড়ুয়া। পাশে বাকি দুই ভাই–বোন। ছবিটা যে হাতে আঁকা, তা পরিষ্কার বোঝা যায়। কিন্তু ইন্টারনেটের পরিচিত, প্রাপ্তবয়স্ক এমিলির ছবির সঙ্গে একে মেলানো কঠিন। তারপরই চোখে পড়ল তাঁর চুলের রঙের দিকে, চুলগুলো কালো বা বাদামি নয়, লালচে গাজর–রঙা বলা যায়।
বলে ফেলতেই মেলিসা উচ্ছ্বসিত হয়ে বললেন, ‘ঠিক! প্রথম যখন আমিও এটা আবিষ্কার করেছিলাম, তখন বেশ চমকে উঠেছিলাম। অনেকেই এই তথ্য জানে না।’
এরপর আমরা ঘুরে ঘুরে দেখতে থাকলাম বাড়ির অন্য ঘরগুলো। যেমন বসার জায়গা, বিশাল পিয়ানো, ভারী তেলরঙা পেইন্টিংস, ডিকিনসন সিরিজের পেপার কাটিং শিল্পকর্মসহ নানা কিছু। তারপর সিঁড়ি বেয়ে উঠে গেলাম দোতলায়। এক পাশে এমিলির অসুস্থ মায়ের ঘর, অন্য পাশে এমিলির ঘর। যে ঘরে তিনি পৃথিবী ছাড়ার আগমুহূর্ত পর্যন্ত থেকেছেন। দুটি ঘরের মধ্যে রয়েছে একটি গোপন দরজা।
মেলিসা বললেন, ‘আমার মনে হয় আমরা সবাই জানি, অসুস্থ মায়ের দেখাশোনা করা সন্তানের ঘর কেন পাশেই থাকে। মায়ের একটা ডাকেই ছুটে আসার জন্য।’
এই একটি বাক্যেই উঠে আসে এমিলির জীবনের ভার, দায়িত্ব ও আত্মত্যাগের বিষয়গুলো। আমার চোখে ভেসে এঠে লম্বা সাদা পোশাক পরা এমিলির আবছা অবয়ব, যাঁর লেখা ‘হোপ’ কবিতাটা আমি পড়েছি সহস্রবার। যাঁর সাহিত্যে নিবেদিত যাপন অনুভব করতে ও রহস্যে অনুরণিত স্বকীয়তার খোঁজে ছুটে এসেছি অন্য এক শহর থেকে।
অনেকেই এমিলিকে নিয়ে বলে থাকেন, তাঁর মৃগীরোগ ছিল, এ জন্য তিনি ঘর ছেড়ে বের হতে চাইতেন না। সব সময় পরে থাকতেন সাদা পোশাক, কোনো দিন বিয়ে করেননি, কারও সঙ্গে মিশতেনও না, সারাক্ষণ মৃত্যু ও অনন্ত জীবনের চিন্তায় ডুবে থাকতেন। কিন্তু এসব নিয়ে মেলিসার ব্যাখ্যা ছিল একেবারে ভিন্ন:
‘ভাবো তো, এমিলির “কারল” নামের একটা কুকুর ছিল, সে বাগানে সময় কাটাত। গাছদের যত্ন নিত, বেকিং করত, পড়তে ভালোবাসত। আর ভালোবাসত প্রকৃতি। যার জগৎ এত রঙিন, তাঁকে কেউ অস্বাভাবিক কীভাবে বলে?’
দোতলা ঘুরে আসার শেষ পর্যায়ে এমিলির ঘরে ঢুকলাম আমরা। ঘরটি মাঝারি আকারের, ২০১৫ সালে পুনর্নির্মাণ করা। পুরো ঘরটাতেই একটা শান্ত ভাব। ওয়ালপেপারে সাদার ওপর গোলাপি গোলাপ, দেয়ালে ঝোলানো বইয়ের তাক, এমিলির সাদাকালো ছবি, আয়না, জানালার ধারে ছোট লেখার টেবিল (আসল টেবিলটি হার্ভার্ডে সংরক্ষিত), সাদা পোশাকের প্রতিলিপি, রঙিন শাল, বিছানা ও সবুজ-খয়েরি চেয়ার। এমিলির লিখতে বসার জানালা দিয়ে দেখা যায় বাড়ির সামনের রাস্তা চলে গেছে বহুদূরে। এসব বাদে ঘরে ছিল একটা ফায়ারপ্লেস। শোনা যায়, অ্যামহার্স্টের কনকনে ঠান্ডায় এই ফায়ারপ্লেস সারা রাত জ্বলত। কারণ, এমিলি বেশির ভাগ কবিতাই লিখতেন রাতে। সারা দিন অসুস্থ মা ও সংসারের দায়িত্ব সামলে, নিভৃত সময়টা পেতেন রাতে। সেই একাকী, শব্দহীন সময়ে জন্ম নিত তাঁর কবিতারা।
এমিলি প্রায় ক্লান্তিহীনভাবে কবিতা লিখে যেতে পারতেন। নিজের হাতে সেলাই করে বানানো ছোট পুস্তিকাগুলো (ফ্যাসিকল) তাঁর কবিতার খণ্ড সংরক্ষণের উপায় ছিল। এসব কবিতায় ছন্দ, চিহ্ন ও ভাষার যে ধরনের ব্যবহার ছিল, তা সে সময়ের ইংরেজি কবিতার তৎকালীন মূলধারার বাইরে। প্রায় কোনো কবিতায়ই শিরোনাম দেননি তিনি।
শিরোনামহীন, বিচ্ছিন্নতাসূচক ড্যাশের আধিক্য, ছন্দ ও ব্যাকরণে নেওয়া নিজস্ব স্বাধীনতা—একই সঙ্গে স্পষ্ট ও রহস্যময়। এ ছাড়াও এমিলির প্রচুর কবিতায় বিকল্প শব্দের উপস্থিতি পাওয়া যায়। হাতে লেখা কবিতাগুলোর লাইন বরাবর মার্জিনজুড়ে লেখা থাকে সেই সব শব্দ। গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারটা হলো, শব্দগুলোর সব সময় সমার্থক থাকে না। হয়তো ‘Chilly Winter’–এর বিকল্প হিসেবে এমিলি ‘Lonesome Winter’ লিখে রেখেছেন। শব্দ বদলে দিলেই কবিতার অর্থও বদলে যায় নিমেষে। এভাবেই এমিলি একটা কবিতায়ই অনেকগুলো আলাদা অনুভূতিকে একসুতোয় একই সময়ে গাঁথতে চেয়েছেন। কিন্তু, পাঠকদের বোঝার সুবিধার জন্য পরবর্তীকালে সম্পাদকেরা সমার্থক বা বিপরীত শব্দগুলো থেকে নিজেদের মতো করে বাছাইকৃত শব্দ চূড়ান্ত করে কবিতাগুলো প্রকাশ করেছেন। অনেক সমালোচক বলেন, এমিলির কবিতাগুলো ছিল ‘কনসেপচুয়ালি অ্যাডভান্সড’ অর্থাৎ সময়ের চেয়ে অনেক এগিয়ে। তাঁর কবিতার ভাষা একই সঙ্গে যুক্তিপূর্ণ ও আবেগপূর্ণ যাকে একধরনের প্রোটো–মডার্নিজম বা প্রাক–আধুনিকতাবাদ বলা যায়।
এমিলির লেখা কিছু কবিতা লেমিনেটিং করে রাখা ছিল একটা ঝুড়িতে। আমরা ছুঁয়ে দেখলাম। ঘরটায় থাকা বইয়ের তাকের বইগুলো দেখে মনে পড়ে গেল, সম্ভবত ইতিহাস, ধর্ম, গণিত, সাহিত্যসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ভাবনাকে কবিতায় রূপান্তর ঘটানোর প্রবণতা এই রহস্যময় নারীকে সময়ের চেয়ে অনেক এগিয়ে রেখেছিল।
তবে এমিলির পাঠকদের মনে প্রশ্ন থেকে যায়, তিনি এমন কেন ছিলেন? উত্তর খুঁজতে গেলে দেখতে হয়, একের পর এক নিকট আত্মীয়ের মৃত্যু, মায়ের দীর্ঘ অসুস্থতা, বাবার অনুপস্থিতি ও পারিবারিক সংরক্ষণশীলতা তাঁকে একটি সহনশীল, কিন্তু ভীষণ অন্তর্মুখী ও সংবেদনশীল চরিত্রে পাল্টে দিয়েছিল। সব মিলিয়ে এমিলি যেন হয়ে ওঠেন নিজ পরিবারের এক ছায়াবৃক্ষ। যাঁর ওপর নির্ভর করতেন সবাই। যার অস্তিত্ব ছিল দৃঢ়, কিন্তু ভেতরটা ছিল নিঃসঙ্গ। তাঁর কবিতা ও ব্যক্তিজীবনের স্তরগুলো তাই কখনো সরল নয়, বরং একেকটি ড্যাশ চিহ্নের মতোই; যার ভেতর দিয়ে আলো যায়, আবার ছায়াও পড়ে, যা হয়তো কেউ বুঝত না। অনেকেই ভাবে, এমিলির সাদা পোশাক ছিল মৃত্যুচিন্তার প্রতীক। কিন্তু আরও যুক্তিসংগত ব্যাখ্যা হতে পারে, ব্লিচ ব্যবহার করে পরিষ্কার রাখা সহজ বলেই তিনি সাদা পোশাক বেছে নিয়েছিলেন।
অনেকেই জানে না, এমিলির সবচেয়ে বেশি কবিতা ও চিঠি যাঁকে উদ্দেশ করে লেখা, তিনি এমিলির ভাই অস্টিনের স্ত্রী সুজান গিলবার্ট ডিকিনসন। সাহিত্য, দর্শন ও জীবন নিয়ে দুজনের নিবিড় আলাপ হতো। সবচেয়ে বেশি চিঠি ও কবিতা লিখে তাঁকেই পাঠিয়েছিলেন এমিলি।
মৃত্যুর পর, এমিলির কবিতার পাণ্ডুলিপি প্রথমে লিভিনিয়ার মাধ্যমে সুজানের কাছে গেলেও পরে মেবেল লুমিস টডের হাতে যায়, যাঁর মাধ্যমে প্রথম প্রকাশিত হয় এমিলি ডিকিনসনের কবিতা। তিনি ছিলেন অস্টিনের প্রেমিকা। তিনিই প্রথম এমিলির কবিতা সম্পাদনা ও প্রকাশ করেন। তবে মেবেলের সম্পাদনা নিয়ে পরিবারে দীর্ঘ বিবাদ আছে, আছে নানা বিতর্ক। অনেকেই বলেন, মেবেলের সম্পাদনার কারণে মূল রচনার নির্যাস কিছুটা হারিয়ে যায়। আবার এটাও সত্য, তিনি না থাকলে হয়তো এমিলির লেখাগুলো এতদূর পৌঁছাত না। কারণ, ধারণা করা হয় যে মেবেলের মতো সে সময় একই সঙ্গে সাহিত্য ও মার্কেটিং নিয়ে পারদর্শী খুব কম মানুষ ছিলেন।
এখন, ‘হোমস্টেড’ ও ‘এভারগ্রিনস’ বাড়ি দুটির রূপ সম্পূর্ণ ভিন্ন। হোমস্টেড পুনর্নির্মিত ও দর্শনার্থীবান্ধব; এভারগ্রিনস এখনো ধ্বংসের মুখে আটকে থাকা অতীতের রেশ। হোমস্টেড সাজানো হয়েছে ১৮৫৫ সালের আদলে, যখন এমিলির সৃজনশীল সময়ের শুরু। ট্যুর শেষে দর্শকদের বের হতে হয় সেই দরজা দিয়ে, যেদিক দিয়ে ১৮৮৬ সালে এমিলির কফিন বের হয়েছিল। কবরের ফলকে লেখা: ‘Called back’.
মৃত্যুর প্রায় ১৩৯ বছর পর, আজও অজস্র মানুষ এসে দাঁড়ায় এমিলি ডিকিনসনের বাড়িতে। এক কবির নিভৃত জগতে ঢুকে তাঁর কবিতার ছায়ায় নিজস্ব সৃজনশীলতার আভাস খোঁজে। তাঁর কবিতার মতোই অন্তর্মুখী, গভীর এবং সময় অতিক্রম করে আজও মানুষ জড়ো হয় এক জীবন্ত অধ্যায় খুঁজতে। যেমন এমিলি নিজেই লিখেছিলেন:
This was a Poet—
It is That—
Distills amazing sense
From Ordinary Meanings—