এই হেমন্তের সকালে যখন পুরান ঢাকার সরু গলিপথে সূর্য মৃদু উত্তাপ ছড়াচ্ছে, আমি তখন পা বাড়ালাম আরমানিটোলার পথে। এই এলাকা এমন এক ঐতিহাসিক স্থান, যা সময়ের আবর্তে হারিয়ে যেতে বসেছে, অথচ এখানে বসবাসকারী আর্মেনিয়ান সম্প্রদায়ের গৌরবগাথা আমাদের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। আকস্মিক এই ভ্রমণে আমার উদ্দেশ্য শুধু দেখা নয়, বরং অনুভব করা—সেই সময়ের মানুষদের জীবনযাত্রা। ধানমন্ডি থেকে রিকশাওয়ালা মামা যখন জিজ্ঞেস করলেন, ‘আরমানিটোলা যাইবেন? ওইখানে তো পুরান গির্জা আছে আর স্কুল আছে, আপনি কোনটায় যাইবেন?’ তখন বুঝলাম যে এই র্গিজার কথা তাহলে সবারই জানা! হ্যাঁ, সেই গির্জাই আমার গন্তব্য—যে গির্জা দাঁড়িয়ে আছে তিন শতাব্দীর বেশি সময় ধরে, সময়ের এক নীরব সাক্ষী হয়ে এই শহরের উত্থান-পতনের সঙ্গে।
পুরান ঢাকার রাস্তায় চলতে চলতে মনে হলো, এই শহরের প্রতিটি ইট-পাথরে জড়িয়ে আছে অসংখ্য মানুষের জীবনের গল্প। এখানে যেমন রয়েছে বাঙালি সংস্কৃতির শিকড়, তেমনি আছে বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীর মিলনমেলার ইতিহাস। আর্মেনিয়ানরাও এই মিলনমেলার অংশ ছিলেন—তাঁদের স্থাপত্য, শিল্প আর সংস্কৃতির ছাপ আজও এই শহরে খুঁজে পাওয়া যায়।
যখন প্রথম চোখ পড়ল ‘চার্চ অব দ্য হোলি রেজারেকশন’-এর ওপর, মনে হলো যেন সময় থমকে দাঁড়িয়েছে। এই গির্জা ও তার পাশের বিস্তৃত সমাধিক্ষেত্র যেন একটি নিঃশব্দ ইতিহাসের জীবন্ত কবিতা, যা আমাকে নিয়ে গেল সেই দিনগুলোতে—যখন এই মাটিতে বেঁচে ছিলেন দূর আর্মেনিয়া থেকে আসা স্বপ্নদর্শী মানুষেরা।
সম্ভবত ষোড়শ থেকে ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে, যখন এই অঞ্চল মোগল সাম্রাজ্যের প্রাচুর্য আর ব্রিটিশ বাণিজ্যের আলো-ছায়ায় স্পন্দিত হচ্ছিল, তখন দূর আর্মেনিয়া থেকে এসে পৌঁছেছিলেন একদল বণিক। পারস্য ও ভারতের মধ্যবর্তী সেই প্রাচীন বাণিজ্যপথ ধরে তাঁরা এসেছিলেন ঠিকই, কিন্তু শুধু ব্যবসার খাতিরে নয়—সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন নিজেদের হৃদয়ের সম্পদ: সংস্কৃতি, বিশ্বাস আর শিল্পের অনুপম সৌন্দর্য।
এই শহরের প্রতিটি ইট-পাথরে যেমনি জড়িয়ে রয়েছে বাঙালি সংস্কৃতির শিকড়, তেমনি আছে বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীর মিলনমেলার ইতিহাস। আর্মেনিয়ানরাও এই মিলনমেলার অংশ ছিলেন—তাঁদের স্থাপত্য, শিল্প আর সংস্কৃতির ছাপ আজও এই শহরে খুঁজে পাওয়া যায়।
বাংলার এই উর্বর মাটিতে তাঁরা শুধু ব্যবসা করেননি, বরং গড়ে তুলেছিলেন একটি সমৃদ্ধ জনগোষ্ঠী। তাঁরা পাট, বস্ত্র, লবণ, প্রসাধন আর সুগন্ধিসহ নানান ইউরোপিয়ান বিলাসপণ্যের বাণিজ্য করেছেন। এ ছাড়া তাঁরা প্রথম ঘোড়ার গাড়িকে বাহন হিসেবে পরিচয় করিয়েছেন। কী দ্রুততায় তাঁরা হয়ে উঠেছিলেন ঢাকার অন্যতম প্রভাবশালী ও ধনী সম্প্রদায়! আরমানিটোলা এলাকাটিকে তাঁরা সাজিয়েছিলেন নিজেদের স্বতন্ত্র স্থাপত্যরীতিতে। আজও যে কয়েকটি পুরোনো দালান চোখে পড়ে, সেগুলো যেন সেই যুগের জীবন্ত স্মৃতিস্তম্ভ।
গির্জার মূল ফটকে খোদাই করে লেখা ১৭৮১ সাল, দেখে আর্মেনীয় জমিদার নিকোলাস পোগোজের কথা মনে পড়ল। স্থানীয় লোকজন যাঁকে ভালোবেসে ডাকতেন ‘নিকি সাহেব’, এই গির্জা নির্মাণের পেছনে তাঁর যে দৃঢ় সংকল্প আর বিশ্বাস ছিলে, তা আজও এই স্থাপত্যের প্রতিটি ইটে, প্রতিটি পাথরে মূর্ত হয়ে আছে। এ ছাড়া পোগোজ স্কুলের কথা আমাদের সবার জানা। পুরান ঢাকার ঐতিহাসিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে এই স্কুল বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
এই গির্জা প্রথমে একটি ছোট প্রার্থনাগৃহ ছিল, যেখানে স্থানীয় খ্রিষ্টান সম্প্রদায় জড়ো হতেন, পরবর্তীকালে নিকি সাহেব কয়েক বিঘা জমিজুড়ে গড়ে তুলেছিলেন এই বিশাল গির্জা বা চ্যাপেল—‘চার্চ অব দ্য রেজারেকশন’। কিন্তু এই স্বপ্ন বাস্তবায়নে তিনি একা ছিলেন না। আগা মিনাস ক্যাটচিক দান করেছিলেন প্রয়োজনীয় বিস্তৃত জমি। লোকশ্রুতি অনুযায়ী, আরও চারজন মহানুভব ব্যক্তি এগিয়ে এসেছিলেন সাহায্যের হাত নিয়ে—মাইকেল সার্কিস, অকোটাভাটাসেতুর সিভর্গ, আগা এমনিয়াস ও মার্কার পোগোজ।
গির্জার ভেতরে পা রেখে অনুভব করলাম এক অন্য প্রশান্তি। এই অনুভূতি নিয়ে গেল সেই সময়ে, যখন এখানে নিয়মিত প্রার্থনায় মুখরিত হতো পুরো পরিবেশ। প্রধান নেভটি দীর্ঘ ও প্রশস্ত—যেন ঐশ্বরিক উপস্থিতির দিকে প্রসারিত এক নিরবচ্ছিন্ন পথ। এই স্থাপত্যিক নকশায় আর্মেনিয়ান ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশেছে স্থানীয় কারিগরি দক্ষতার অপূর্ব সমন্বয়। ছাদের সরল অথচ আভিজাত্যপূর্ণ গম্বুজাকৃতির নকশা দেখে বোঝা যায় আর্মেনিয়ান ধর্মীয় স্থাপত্যের আসল পরিচয়। দেয়ালের উঁচু ধনুকাকৃতি জানালা দিয়ে যে সূর্যালোক ঢুকে পড়ছিল, তা গির্জার ভেতরে তৈরি করেছিল এক স্বর্গীয় আলোর নৃত্য। রোমানেস্ক ও আর্মেনিয়ান রাউন্ড-আর্ক খিলান, চুনাপাথর আর খয়েরি ইটের ব্যবহার—সব মিলিয়ে এ যেন এক অসাধারণ মিশ্র শিল্পকর্ম।
আর্মেনীয় জমিদার নিকোলাস পোগোজের কথা মনে পড়ল। স্থানীয় লোকজন যাঁকে ভালোবেসে ডাকতেন ‘নিকি সাহেব’, এই গির্জা নির্মাণের পেছনে তাঁর যে দৃঢ় সংকল্প আর বিশ্বাস ছিলে, তা আজও এই স্থাপত্যের প্রতিটি ইটে, প্রতিটি পাথরে মূর্ত হয়ে আছে।
একসময় এই ছাদের ওপর যে ঘণ্টাধ্বনির টাওয়ার ১৮৩৭ সালে বানানো হয়েছিল, ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে তা ধসে পড়ার আগপর্যন্ত সেই ঘণ্টার মধুর আওয়াজে হয়তো পুরান ঢাকা জেগে উঠত প্রার্থনার সুরে। সেই ধ্বনি শুধু আর্মেনিয়ানদের নয়, সব ধর্মের মানুষের কাছেই ছিল সময়ের পরিচায়ক।
গির্জাটির স্থাপত্যিক বিশেষত্ব লক্ষ করতে গিয়ে দেখলাম, এর দৈর্ঘ্য সাতাশ ফুট, প্রবেশপথ চারটি এবং জানালা সাতাশটি। তিন দিক ঘিরে রয়েছে বারান্দা, আর ভবনের শেষ প্রান্তে একটি ষড়ভুজ আকৃতির টাওয়ার। ভেতরে সারিবদ্ধ বেঞ্চগুলো আজও সাক্ষ্য দেয় সেই সব দিনের, যখন এখানে নিয়মিত উপাসনা হতো। প্রবেশমুখের প্যাঁচানো সিঁড়ি দিয়ে দ্বিতীয় তলায় উঠে যাওয়া যায়, এই অংশটি গ্যালারির মতো, যা নারী ও শিশুদের জন্য সংরক্ষিত ছিল বলে জানা গেল। এখান থেকে পুরো প্রার্থনা কক্ষটি দেখতে পেলাম ভিন্ন আঙ্গিকে। কক্ষের শেষ প্রান্তে উঁচু বেদিতে স্থাপিত যিশুখ্রিষ্টের চিত্র ও ক্রুশ। দেখে মনে হলো, এখানে শুধু ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানই হতো না, বরং হয়তো গড়ে উঠেছিল একটি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবেও। অনেক সময় মনে হয় আমাদের যে শ্যামাসংগীত সেখানকার মেলাঙ্কলি, হয়তোবা আর্মেনিয়ান বাদ্যযন্ত্র দুদুক দ্বারা সংক্রমিত হয়েছে কি না!
এই গির্জার স্থাপত্যে উত্তর আর্মেনিয়ান গির্জা স্টাইলের প্রভাব স্পষ্ট। প্রতিটি রেখা ও বাঁক যেন ঐশ্বরিকতা, স্মৃতি ও শিল্পশৈলীর একক সমন্বয়ের প্রতীক। ঢাকার আর্মেনীয় গির্জার স্থাপত্যে উত্তর আর্মেনিয়ার ঐতিহ্যবাহী গির্জার ড্রাম-অ্যান্ড-কোণ প্যাটার্ন, শঙ্কু গম্বুজ, উল্লম্ব উচ্চতা, খিলানযুক্ত প্রবেশদ্বার এবং গোলাকার জানালার প্রভাব দেখা যায়। এই বৈশিষ্ট্যগুলো আর্মেনিয়ার মূল গির্জার স্থাপত্যের সঙ্গে ঢাকার গির্জাকে সরাসরি সংযুক্ত করেছে। এ নিছক স্থাপত্য নয়, বরং ইতিহাসের জীবন্ত অনুবাদ। আরমানিটোলার আমূল পরিবর্তনের মধ্যেও এই গির্জাটি আজও টিকে আছে তার আদি স্থাপত্যিক চরিত্র নিয়ে।
গির্জার পাশের আর্মেনিয়ান সমাধিক্ষেত্রে হাঁটতে হাঁটতে মনে হচ্ছিল, আমি যেন পড়ছি মৃত্যুর ভাষায় রচিত জীবনের এক অনন্য মহাকাব্য। এখানে দুই শতাধিক কবর রয়েছে, যার অনেকগুলোই ১৭০০ সালের আগের—তথ্যটি আমাকে এই জনগোষ্ঠীর দীর্ঘ ইতিহাসের কথা মনে করিয়ে দিল।
একসময় এই ছাদের ওপর যে ঘণ্টাধ্বনির টাওয়ার ১৮৩৭ সালে বানানো হয়েছিল, ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে তা ধসে পড়ার আগপর্যন্ত সেই ঘণ্টার মধুর আওয়াজে হয়তো পুরান ঢাকা জেগে উঠত প্রার্থনার সুরে। সেই ধ্বনি শুধু আর্মেনিয়ানদের নয়, সব ধর্মের মানুষের কাছেই ছিল সময়ের পরিচায়ক।
পাথরে খোদাই করা এপিটাফে আর্মেনিয়ান হরফে লেখা নামগুলো দেখে মনে হলো, এরা যেন কথা বলছেন পরস্পরের সঙ্গে, শুধু ভাষাটা আমার রপ্ত নেই। আর্মেনীয় এপিটাফের সবচেয়ে আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য হলো খাচকার, অর্থাৎ ক্রস-স্টোন বা ক্রুশযুক্ত পাথর। এগুলো সাধারণত স্থানীয় পাথরে খোদাই করা হয় এবং এতে একটি অলংকৃত ক্রুশ থাকে, যা প্রায়ই সূর্য বা ‘শাশ্বত চক্র’ নামক প্রতীকের ওপর স্থাপিত থাকে। বিশেষভাবে চোখে পড়ল এই আর্মেনিয়ান ক্রুশ—খাচকার, যা পবিত্রতার চিরন্তন প্রতীক হয়ে পাথরে স্থায়ী হয়ে আছে। এই খাচকারগুলো শুধু ধর্মীয় চিহ্ন নয়; বরং আর্মেনিয়ান শিল্পকলার উৎকৃষ্ট নমুনা। একটি কবরের ওপরে রয়েছে ‘ওবেলিস্ক’, যার চূড়ায় সুন্দর মার্বেল পাথরে খোদাই করা মা মেরির ভাস্কর্য—এর কারুকাজ দেখে আর্মেনিয়ান শিল্পীদের দক্ষতার পরিচয় পাওয়া যায়। এ ছাড়া চারপাশে ফুল, পাতা, লতা, জ্যামিতিক নকশা এবং কখনো কখনো প্রাণী বা সন্তদের চিত্র খোদাই করা রয়েছে। এই অলংকরণগুলো খুবই বিস্তারিত ও সূক্ষ্মভাবে করা হয়। বেশ কিছু এপিটাফে সূর্য, চাঁদ বা নক্ষত্রের প্রতীক দেখা যায়, যা আধ্যাত্মিকতা ও পুনর্জন্মের প্রত্যাশাকে নির্দেশ করে বলে জানা যায়। আবার অনেক এপিটাফে বৃত্তাকার বা অষ্টভুজাকার ফুলের মালা, লতাপাতার নকশা রয়েছে, যা আর্মেনীয় শিল্পকলার ঐতিহ্যবাহী উপাদান হিসেবে আমরা চিনি। অর্থাৎ প্রতিটি সমাধিফলক আর্মেনিয়ান খ্রিষ্টীয় প্রতীক, জ্যামিতিক নকশা আর দেবদূতের মূর্তি দ্বারা অলংকৃত। আর এই শিল্পকর্মগুলো শুধু স্মৃতিরক্ষার জন্য নয়, বরং পরবর্তী প্রজন্মের কাছে তাদের সংস্কৃতি ও বিশ্বাস পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যমও হয়তো ছিল।
এই সমাধিক্ষেত্রে হাঁটতে হাঁটতে মনে পড়ল বাংলার ইতিহাসে আর্মেনিয়ানদের অবদানের কথা। তাঁরা শুধু ব্যবসাই করেননি, এ অঞ্চলের সাংস্কৃতিক–বুদ্ধিবৃত্তিক উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। তাঁদের প্রতিষ্ঠিত ছাপাখানা, স্কুল-কলেজ আর ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান এই অঞ্চলের আধুনিকায়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছিল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সম্প্রদায়ের সংখ্যা কমতে থাকে। নানা রাজনৈতিক ও সামাজিক কারণে তাঁরা ধীরে ধীরে অন্যত্র চলে গিয়েছেন। আজ আর এই এলাকায় প্রায় কোনো আর্মেনিয়ান পরিবার নেই, কিন্তু তাঁদের রেখে যাওয়া এই গির্জা ও সমাধিক্ষেত্র আজও বলে চলেছে তাঁদের জীবনের গল্প।
ফেরার পথে রিকশায় বসে ভাবছিলাম এই অভিজ্ঞতার কথা। একটি গির্জা ও সমাধিক্ষেত্র দেখতে এসে আমি যেন স্পর্শ করলাম একটি হারিয়ে যাওয়া সভ্যতার খণ্ডাংশ। অনুভব করলাম ইতিহাস, সংস্কৃতি আর শিল্পের এক অপূর্ব মেলবন্ধনকে।
এই নিঃসঙ্গ গির্জা ও সমাধিস্থল একসময় ছিল পুরান ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। এখানে শুধু ধর্মীয় অনুষ্ঠানই হতো না; বরং বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের আয়োজন করা হতো। কিন্তু আজকের আধুনিক অ্যাপার্টমেন্ট আর ব্যস্ত নগরজীবনের কোলাহলে এই অনন্য স্থাপনাটি ক্রমেই অবহেলিত। চারপাশের প্রাচীন স্থাপত্যশৈলী আজ বিলীন হওয়ার পথে। যেখানে একসময় ছিল আর্মেনিয়ানদের বাড়িঘর, দোকানপাট, সেখানে আজ গড়ে উঠেছে আধুনিক ইমারত। আর্মেনিয়ানরা যেভাবে এই দেশকে নিজেদের মাতৃভূমি হিসেবে গ্রহণ করে এর উন্নতিতে অবদান রেখেছিলেন, তা আজও অনুকরণীয় হতে পারে।
ফেরার পথে রিকশায় বসে ভাবছিলাম এই অভিজ্ঞতার কথা। একটি গির্জা ও সমাধিক্ষেত্র দেখতে এসে আমি যেন স্পর্শ করলাম একটি হারিয়ে যাওয়া সভ্যতার খণ্ডাংশ। অনুভব করলাম ইতিহাস, সংস্কৃতি আর শিল্পের এক অপূর্ব মেলবন্ধনকে। রাজনৈতিক উত্থান-পতন, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি-দুর্দশা সবকিছুর মধ্য দিয়েও এই মানুষগুলো তাঁদের বিশ্বাস আর সংস্কৃতি ধরে রেখেছিলেন।
এই নিস্তব্ধ সৌন্দর্য, অবহেলিত হলেও, এখনো জ্বলজ্বল করছে সম্ভাবনার আলো। আর্মেনিয়ান চার্চ অব দ্য হোলি রেজারেকশন আর এই সমাধিক্ষেত্রে আজ সংস্কৃতির কোনো জাতিগত সীমানা নেই। মানবিকতা, সৃজনশীলতা আর ভালোবাসা যেখানে আছে, সেখানেই গড়ে ওঠে চিরস্থায়ী সভ্যতা।