কোথায় লুকিয়ে আছে সাহিত্যের জনপ্রিয়তার প্রাণভোমরা?

বাংলা কথাসাহিত্যকে জনপ্রিয়তার অন্য রকম স্তরে নিয়ে গিয়েছিলেন ঔপন্যাসিক শরৎচন্দ্র চট্টপাধ্যায়। এই দু–তিন দশক আগেও এমন বাঙালির ঘর খুঁজে পাওয়া যেত না, যেখানে শরৎচন্দ্রের একটি বইও নেই। সেই শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যুবার্ষিকী ১৬ জানুয়ারি। এ উপলক্ষে এ লেখায় খোঁজা হয়েছে একটি বইয়ের জনপ্রিয় হয়ে ওঠার কার্যকারণ এবং বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয়তার সমাজতত্ত্ব।

অলংকরণ: আরাফাত করিম

সেই কবে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন আসাদুল্লাহ খাঁ গালিব, অথচ এখনো পঠিত হন তিনি; অনেকের কণ্ঠ আওড়ে ওঠে তাঁর শের, সাহিত্যের বিশ্ববাজারে বিক্রি হয় তাঁর লাখো কপি বই। কিংবা মনে করুন, লেবাননের সেই চিররুগ্‌ণ কবির কথা—কাহলিল জিবরান—নিতান্ত অসাহিত্যিক লোকের ঘরেও শোভা পায় যাঁর দ্য প্রফেট। জনপ্রিয়তার হাত ধরে ওয়ান হানড্রেড ইয়ার্স অব সলিটিউড–এর লেখক গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেসের নাম চলে গিয়েছে চিরায়ত সাহিত্যের পাতায়। হাল আমলে প্রভাবের ডানা মেলে বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়েছেন জাপানি কথাসাহিত্যিক হারুকি মুরাকামি। এককালে বাংলার ঘরে ঘরে পড়া হতো ‘আদরের ঔপন্যাসিক’ শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বই। বাংলাদেশের পাঠকদের বইয়ের তাকে এখন নিশ্চিতভাবে শোভা পান হুমায়ূন আহমেদ। মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও আনিসুল হকের বইও পাওয়া যাবে অনেকের ঘরে। আর এ তালিকা থেকে বাদ যাবেন না সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় বা সমরেশ মজুমদার।

গাল–মুখ ভারী করে দেড়–দুই দশক আগেও যাঁরা বলতেন ‘জনপ্রিয়তা হলো পতনের সিঁড়ি’ কিংবা ‘পাঠকের কথা ভেবে কখনো লিখি না’, ইতিহাসের পাকেচক্রে পড়ে তাঁদের নামও উঠে গিয়েছে জনপ্রিয় সাহিত্যের তালিকায়। ভারি রহস্যময় বলে মনে হয় এই বাস্তবতা। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, কোনো অযুক্তির বশে কেউ কখনো জনপ্রিয় হননি, হন না; ইচ্ছা করে জনপ্রিয় উপাদান গেঁথে দিলেও কেউ জনসমর্থন না–ও পেতে পারেন। তাহলে কোথায় লুকিয়ে আছে জনপ্রিয়তার প্রাণভোমরা? কোন জাদুর কাঠির স্পর্শ লেগে ধন্য হয়ে ওঠে লেখকের অক্ষর ও বাক্যমালা?

মোটা দাগে দুটো দিক থেকে এসব প্রশ্নের মোকাবিলা করা যায়—নন্দনতাত্ত্বিকভাবে ও সমাজতাত্ত্বিকভাবে; হয়তো মিলেমিশে দুটি আবার একই সারিতে ঢুকে যেতে পারে যেকোনো মুহূর্তে। তার আগে আমাদের মেনে নেওয়া দরকার যে সাহিত্য সত্যিকার অর্থে অন্য সবকিছুর মতোই একটি পণ্য। এ কথা মানতে হয়তো আমাদের মন সায় দেবে না; কিন্তু বাস্তবতার রূঢ় নিদর্শনগুলো কড়ায় গণ্ডায় বুঝিয়ে দেবে পণ্যায়নের সব সূত্র মেনে একটি বই প্রকৃতপক্ষে পণ্য। বইয়ের সঙ্গে জড়িয়ে আছে লেখকের শ্রম, শিল্পীর সৃষ্টিশীলতা, প্রকাশকের পুঁজি, বাঁধাইকারীর শ্রম; সামগ্রিকভাবে একটি বইয়ের আছে উৎপাদন খরচ ও বিক্রয় মূল্য। সম্ভাব্য ক্রেতা বিবেচনা করে মুদ্রিত হয়ে সেগুলো ছড়িয়ে পড়ে পুস্তক বাজারে। এ রকম অসংখ্য পণ্যরূপ বইয়ের ভেতর থেকে কোনো কোনো বই হয়ে ওঠে আকাশচুম্বী; পাঠকের হৃদয় কাড়ে, আলোড়ন তোলে, অন্য আরও পাঠক উদ্দীপিত হয় ওই বই কেনার ইচ্ছায়। একটি বই হয়ে ওঠে মিথ, লেখক হয়ে ওঠেন কিংবদন্তি। তখন বই ও লেখকের নামের আগে আলতো করে বসিয়ে দেওয়া হয় ‘জনপ্রিয়’ বিশেষণটি।

এই বিশেষণ প্রয়োগে অনেকে অবমাননার গন্ধ পেলেও বাস্তবতা হলো, সংস্কৃতির বাজারে ‘জনপ্রিয় সাহিত্য’ একটি ক্ষমতার নাম। প্রাথমিকভাবে সে বহন করে থাকে নতুন চিন্তা, আইডিয়া, স্বাদ, উপাদান—নন্দনতাত্ত্বিক বা ভাষিক দিক থেকে এত দিন যা ছিল অনুপস্থিত। তা না হলে প্রথাগত উপাদান কাউকে খুশি করতে পারত না। এখানেই নিহিত জনপ্রিয়তার প্রথম ও প্রধান সূত্র। এই প্রিয়তা এখানেই থেমে থাকে না। একে নিয়ে যাওয়া হয় পরিকল্পিত উৎপাদন ও পুনরুৎপাদনের দিকে। জার্মান ভাবুকেরা এই ধরনকেই বলতে চেয়েছেন ‘কালচার ইন্ডাস্ট্রি’। মূলত পুঁজি খাটিয়ে মুনাফার লক্ষ্যে সংস্কৃতির কারখানায় ঘুরিয়ে–পেঁচিয়ে একই জিনিসের পুনরুৎপাদন ঘটানো হয়। পাঠকের দ্বারা গৃহীত একটি সাহিত্য চলে যেতে পারে সংস্কৃতি কারখানার বিস্তৃত চক্রের অধীন। এমনকি একটি বইকে ছড়িয়ে দেওয়া যেতে পারে অন্য কোনো মাধ্যমে—বই থেকে মঞ্চে, মঞ্চ থেকে টিভিতে, টিভি থেকে সিনেমায়।

হিমু চরিত্রকে কেন্দ্র করে হুমায়ূন আহমেদ লিখেছিলেন ময়ূরাক্ষী উপন্যাস। বইটি পাঠকদের দ্বারা ব্যাপকভাবে গৃহীত হওয়ার পর একই চরিত্রকে কেন্দ্র করে হুমায়ূন লিখলেন আরও কিছু উপন্যাস। এবার শুধু পাঠক নয়, প্রকাশকও চাইলেন একই চরিত্র, হাস্যরস ও ভাষারীতির উপন্যাস। সমাজে ওই ধারার বই এবং ওই চরিত্রের ঘোরতর প্রভাবও তৈরি হয়ে গেল। হিমু–বিষয়ক বইয়ের সাংস্কৃতিক চাহিদা প্রকাশনা চক্রটিকে নন্দনতাত্ত্বিক সীমারেখায় আটকে রাখেনি।

বাংলাদেশের তারুণ্যের সাংস্কৃতিক ইতিহাস ঘাঁটতে গেলে দেখা যাবে, গত ৫০ বছরে প্রচুর পাঠক সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর আরেফ আলী কিংবা সৈয়দ শামসুল হকের বাবর আলী হতে চায়নি, কিন্তু হিমু হতে চেয়েছে অগণিত তরুণ। কারও কারও মনস্তত্ত্বে নাড়া দিয়েছে শুভ্র হওয়ার বাসনা; কেউ হয়তোবা মনে মনে মিসির আলীও হয়ে উঠেছেন। উপন্যাসের কোনো চরিত্রের মতো করে ‘হতে চাওয়া’র এই বাসনা হুমায়ূন নিজে পরিকল্পিতভাবে তৈরি করে দেননি। প্রতিটি চরিত্রের ব্যক্তিক বিশেষত্ব সামাজিক ও নন্দনতাত্ত্বিকভাবে অভিনব লেগেছে বলেই পাঠককে তা আকৃষ্ট করেছে। হয়তো চরিত্রের বৈশিষ্ট্যের ভেতর পাঠক পেয়েছে নিজের অচরিতার্থ বাসনার ভুবন।

প্রশ্ন হলো, জনপ্রিয়তা মাপব কোন মানদণ্ডে? সমাজের সব অর্থনৈতিক শ্রেণির পাঠক কি জনপ্রিয় হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে প্রভাবক? বাংলা সাহিত্যে কীভাবে তৈরি হয়েছে জনপ্রিয়তার ইতিহাস? প্রকৃতপক্ষে জনপ্রিয়তা পরিমাপ করার সরল মানদণ্ড হলো প্রকাশনা বাণিজ্যে লেখক ও সাহিত্যবস্তুর অবিরল উপস্থিতি; আধার ও আধেয়, কলাকৌশল, মুদ্রণ সংখ্যা, বিক্রির হার সমেত লেখকের বিস্তার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা হিসাবে কাজ করে। জনপ্রিয় সাহিত্য নির্মাণ প্রক্রিয়ার সঙ্গে ঘোরতরভাবে যুক্ত থাকে উঠতি ও বিকশিত মধ্যবিত্ত পাঠকের বিপুল অংশ। ইতিহাসের পটভূমি সাক্ষ্য দেয়, সাহিত্যের জনপ্রিয়তা নির্মাণ করেছে মূলত মুদ্রণ সংস্কৃতি। বলা চলে, বাঙালির জীবনে মুদ্রিত বই পড়ার চর্চাই শুরু হয়েছে উনিশ শতকে। সেদিক থেকে গদ্য ও পদ্য হয়ে উঠেছে বই আকারে ক্রয়–বিক্রয়ের বস্তু। বই যাঁরা ছেপেছেন, তাঁদের হাতে চলে এসেছে বই বিক্রির হিসাব। আর তাই সহজেই পাওয়া গেল, কার বই কেমন চলে, অথবা চলে না, তার পরিসংখ্যান।

উনিশ শতকের বাংলায় জনপ্রিয় সাহিত্যের দুটো ধারা প্রায় সমান্তরালভাবে চলেছে। এক দিকে বিদ্যাসাগর-বঙ্কিমচন্দ্র ঘরানার লেখক-পাঠকদের সাহিত্যধারা, অন্যদিকে স্বল্প পরিচিত লেখক, পুরোনো ধাঁচের বিষয়বস্তু ও রচনারীতিনির্ভর সাহিত্যধারা; যার সহজ পরিচিতি হলো ‘বটতলার বই’। ঢাকায় যেমন গড়ে উঠেছিল ‘চকবাজারের কেতাবপট্টি’। দুটি ধারার আশ্রয় ছিল ছাপাখানা। উচ্চ সংস্কৃতি ও নিম্ন সংস্কৃতির টানাপোড়েন মেনে নিয়েই এগিয়ে গিয়েছিল জনপ্রিয় সাহিত্যের দুই প্রান্ত।

সেকালে বিদ্যাসাগর ছিলেন বহুল পঠিত এক লেখক। বিধবা বিবাহের পক্ষে লেখা তাঁর বই মুহূর্তেই বাজার থেকে ফুরিয়ে গিয়েছিল। এর কারণ নন্দনতাত্ত্বিক নয়, একেবারেই সমাজতাত্ত্বিক। মধ্যবিত্ত পাঠকের সামনে বিদ্যাসাগর হাজির করেছিলেন অপ্রথাগত চিন্তার সূত্র। বঙ্কিমচন্দ্র জনপ্রিয় হয়েছিলেন প্রথমত সাহিত্যিক কারণে। এমন কৌশলে তিনি গল্প ফেঁদেছিলেন, যা ছেড়ে উঠে যেতে পারেননি উদ্দীপ্ত পাঠক। তার সঙ্গে বাড়তি আলোড়ন জুগিয়েছিল বঙ্কিমচন্দ্রের রাজনৈতিক মতাদর্শ। তার প্রমাণ আনন্দমঠ উপন্যাসের অসংখ্য সংস্করণ। বাঙালির মুসলমানের ঘরে সাংস্কৃতিক বস্তুতে পরিণত হয়েছিল মীর মশাররফ হোসেনের বিষাদ-সিন্ধু। সাড়া ফেলার কারণ দুটি: প্রথমত, বাঙালি মুসলমানের গদ্য, দ্বিতীয়ত, পুঁথি সাহিত্যের বাইরে এই প্রথম দীর্ঘ কোনো গদ্যে পাওয়া গেল কারবালার কাহিনি।

রবীন্দ্রনাথের পাতে জনপ্রিয়তার ভাগ পড়েছিল কিছুটা কম। শিক্ষিত মধ্যবিত্তের হৃদয় সম্ভবত প্রথমবারের মতো তিনি স্পর্শ করেছিলেন বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনের সময়; তবু তা বিশেষত গানের মাধ্যমে। সৃষ্টিশীলতা ও কলাকৌশলের শ্রেষ্ঠ প্রতিভূ হওয়া সত্ত্বেও গণপাঠক তাঁকে সাদরে গ্রহণ করেননি। এ ক্ষেত্রে প্রধান বাধা রবীন্দ্রনাথের চিন্তা ও আদর্শের জটিল পরিপ্রেক্ষিত। তবে ব্যতিক্রমী সাড়া ফেলেছে শেষের কবিতা। রাবীন্দ্রিক রোমান্টিকতার আড়াল এখানে এসে খানিকটা খোলাসা হয়েছে।

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৫ সেপ্টেম্বর ১৮৭৬—১৬ জানুয়ারি ১৯৩৮)

শরৎচন্দ্র শুরু থেকেই বলে গেছেন মাটি-পৃথিবীর গল্প। সমাজের নিম্নবর্গ ও মধ্যবিত্ত নিজেকে শনাক্ত করতে পেরেছে এই সব গল্পে। জাতি ও শ্রেণিবিভক্ত সমাজে বাস্তব মানুষের সুখ ও আর্তনাদের চিহ্ন এঁকে দিলেন শরৎচন্দ্র। আর চারদিকে শোরগোল তুলে নিজেকে তৈরি করে ফেললেন জনপ্রিয় এক স্তম্ভ। বহুকাল ধরে আবর্তিত হলো বাঙালি পাঠক; অনেক গৃহিণীর নির্জন অবসর উপভোগ্য হয়ে উঠল শরতের আশ্রয়ে। কবিতায় কাছাকাছি বিষয় ও সংবেদনা নিয়ে মাত করলেন কাজী নজরুল ইসলাম। কথাসাহিত্যের নবীন মোহনায় এলেন যাযাবর, নিমাই ভট্টাচার্য, ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায়। জনপ্রিয় বলেই কিনা, একাডেমিক মহলে তাঁরা বিশ্লেষিত হয়েছেন খুবই কম। কিন্তু উপন্যাস পাঠকমাত্র জানেন দৃষ্টিপাত কিংবা মেমসাহেব–এর আঙ্গিক অভিনব ও আকর্ষণীয়। উপন্যাসগুলো পাঠককে নিয়ে যেতে সক্ষম চেনা অভিজ্ঞতা, সমাজ ও সংস্কৃতির বাইরে।

প্রকৃতপক্ষে জনপ্রিয় সাহিত্য রূপহীন, নির্গুণ কোনো রচনা নয়। পাঠককে দেওয়ার মতো দরকারি উপাদান নিয়েই তার উদ্ভব। যেমন রাত ভ’রে বৃষ্টি উপন্যাসে বুদ্ধদেব বসু দিয়েছেন মধ্যবিত্তের যৌনতা ও মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্বের স্বাদ। সুনীলের হাতে বিষয়বস্তু হিসেবে জনপ্রিয়তা পেয়েছে ইতিহাস। গত দুই–তিন দশকের বাংলাদেশে ঐতিহাসিক বিষয়বস্তুকে জনপ্রিয় করেছেন আনিসুল হক। কবিতায় জনপ্রিয় হয়েছিলেন রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ, হেলাল হাফিজ। নানা নিরীক্ষার দোলাচলে রেখেও পাঠকের প্রিয় হয়েছেন কবি শ্রীজাত। প্রতি-কবিতা নিয়ে পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছেন ইমতিয়াজ মাহমুদ। তবে নির্মমতা হলো, জনপ্রিয়তা কোনো চিরস্থায়ী ব্যাপার নয়। সমাজ বদল কিংবা সাংস্কৃতিক রূপান্তরের প্রেক্ষাপটে জনপ্রিয়তার হার বাড়ে ও কমে।

সাম্প্রতিককালে জনপ্রিয় সাহিত্য একক ব্যক্তির কর্তৃত্বে আটকে নেই। জনপ্রিয়তার একটি ন্যারেটিভ তৈরি হচ্ছে, নতুন আরেকটি ন্যারেটিভ এসে পুরোনোটিকে ভেঙে দিচ্ছে। মুদ্রণ সংস্কৃতির পাশাপাশি এ কালের সংস্কৃতি কারখানায় যোগ হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, অডিও-ভিডিও শেয়ারিং সাইট, বই পড়া ও বেচাকেনার অ্যাপস; নতুন এই সংস্কৃতি কারখানা জনপ্রিয়তাকে তৈরি করে, উদ্‌যাপন করে, লেখক স্বয়ং সেখানে হাজির হন প্রচারকের ভূমিকায়, নিজের পুস্তকটিকে পণ্য বলতে লেখক আর সনাতন বধূর মতো লাজে রক্তিম হয়ে ওঠেন না। লেখক নিজেই নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বইয়ের প্রচারণা চালান, পেজ খোলেন, প্রি–অর্ডারের বন্দোবস্ত করেন; বইমেলাকেন্দ্রিক বেচাবিক্রির কার্যক্রম শেষে হয়ে গেলে ‘নটে গাছটি মুড়লো’ বলে সাংবাৎসরিক শীতনিদ্রায় চলে যান কেউ কেউ। আবার বইমেলার ঠিক দুই মাস আগে বাইবেল–এর লেজারাসের মতো জেগে ওঠেন। দেখেশুনে মনে হয়, একা একা জনপ্রিয় হয়ে বসে থাকার দিন ফুরিয়ে এসেছে। জনপ্রিয়তার গ্র্যান্ড ন্যারেটিভে ভাগ বসিয়েছে ছোট ছোট ন্যারেটিভ। জনপ্রিয় সাহিত্য, সিরিয়াস সাহিত্য—এই ধরনের বৈপরীত্যমূলক বর্গ থাকবে কি না, এই সন্দেহের মেঘও ঘনিয়ে আসছে।