জেগে উঠেছে চর্যাপদের গান

গ্রাফিকস: প্রথম আলো

মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী বিশ শতকের শুরুতে নেপালের রাজদরবারে ‘চর্যাপদ’–এর সন্ধান পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতির ইতিহাস নতুন করে লিখতে হয়। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের গবেষণায় এক নবযুগের সূচনা হয়। যেন হাজার বছর অন্ধকারে চাপা পড়ে থাকা থাকা জাতির ‘আপন খবর’ হঠাৎ আলোয় ঝলমল করে ওঠে। হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর সেই সন্ধানের পর বাঙালি বিদ্বৎসমাজে যে আত্ম-আবিষ্কারের জোয়ার উঠেছিল, তা আজও আমাদের সাংস্কৃতিক আত্মপরিচয়ের ভিত হয়ে আছে।

নেপালে হরপ্রসাদ শাস্ত্রী যে বহুমূল্য পাণ্ডুলিপির সন্ধান পেয়েছিলেন, সম্পাদনা করে ১৯১৬ সালে তা ‘হাজার বছরের পুরাণ বঙ্গালা ভাষায় বৌদ্ধগান ও দোহা’ নামে প্রকাশ করেন। সে গ্রন্থের ভূমিকায় শাস্ত্রী এক বিস্ময়োক্তি লিপিবদ্ধ করেন, ‘১৯০৭ সালে নেপালে গিয়া আমি কয়েকখানি পুথি দেখিতে পাইলাম। একখানির নাম চর্য্যাচর্য্যবিনিশ্চয়, উহাতে কতকগুলি কীর্ত্তনের গান আছে ও তাহার সংস্কৃত টিকা আছে। গানগুলি বৈষ্ণবদের কীর্ত্তনের মত, গানের নাম চর্য্যাপদ।’ (শাস্ত্রী, ১৯১৬: ৪) অর্থাৎ প্রথম দর্শনেই তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, এগুলো ছিল গীতপদ। এ ছিল সংগীত, ছিল পরিবেশনা, ছিল ছন্দ ও তাল। সাহিত্যবেত্তাগণ এখন সর্বসম্মত যে চর্যাপদ কেবল গীতই হতো না, তা পরিবেশিত হতো বিবিধ ধর্মীয় ও সামাজিক আয়োজনে।

শিল্পকলা একাডেমিতে বাংলাদেশের চর্যাগানের আসরে আমেরিকান গবেষক কিথ ই. কান্তুর পরিবেশনা
ছবি: লেখকের সৌজন্যে

পদকর্তাগণ নিজেরাই ছিলেন গায়ক, বাদক, কখনো নাট্যশিল্পী, কখনো নৃত্যশিল্পী, কখনো ব্যাখ্যাকার। চর্যার পরিবেশনা ছিল বহুস্তরীয়। বৃহত্তর সমাজের বেশির ভাগ মানুষ নিরক্ষর ছিল, তাই চর্যার জটিল আধ্যাত্মিক সংকেত, গভীর দার্শনিক রূপকের পরিবেশন ভর করত সুর, নৃত্য, নাট্য, বাদ্য এই সব চিরায়ত শিল্পরূপের ওপর। সমাজসংস্কার ও জ্ঞান বিস্তারের মাধ্যম ছিল চর্যাপদের পরিবেশনা এই আমাদেরই ভূখণ্ডে। অনেকেরই হয়তো জানা নেই যে চর্যাপদের সর্বাধিক সংখ্যক পদের রচয়িতা কাহ্নপা এবং বিরুপা ছিলেন ঐতিহাসিক পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারের আবাসিক শিক্ষক। বিক্রমপুরের বজ্রযানী সাধক অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞানের চর্যাপদের পাণ্ডুলিপি সংরক্ষিত রয়েছে নেপালে ও তিব্বতে।

মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী বিশ শতকের শুরুতে নেপালের রাজদরবারে ‘চর্যাপদ’–এর সন্ধান পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতির ইতিহাস নতুন করে লিখতে হয়। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের গবেষণায় এক নবযুগের সূচনা হয়।

ইতিহাসবিদরা বলেন ৬০০ থেকে ১২০০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত বাংলা ও পার্শ্ববর্তী জনপদের সামাজিক-সাংস্কৃতিক জীবনে চর্যার প্রভাব প্রবল ছিল। কিন্তু বৌদ্ধ শাসনাবসানে চর্যা চর্চার ধারায় ছেদ পড়ে। নব্য রাজনৈতিক শক্তি ও তাদের সমর্থিত সামাজিক গোষ্ঠী চর্যার বিলোপে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। যদিও প্রকৃতপক্ষে কেন বা কীভাবে এই বিস্তীর্ণ জনপদের জীবন্ত সাংস্কৃতিক ধারা নিস্তব্ধ হয়ে গেল, এ কথা আজ আর নিশ্চিত করে বলা যায় না। তবু অনুমান করা যায় যে সমাজের বর্ণভেদ, ক্ষমতাকেন্দ্রিক ধর্মীয় মতাদর্শের উত্থান এবং সহিংস অনুশাসনের বিস্তার হয়তো চর্যার মর্ম, স্বাধীন চর্চা ও মানবিক মুক্তির বাণীকে দমিয়ে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু সংস্কৃতি নদীর মতো। নদী যেমন জীবন্ত সত্তা, সংস্কৃতিও তাই। তাকে বাঁধা যায়, মেরে ফেলা যায় না। সংস্কৃতির প্রধান উপাদান সংগীতের প্রবহমানতা হয়তো বাধা পেয়ে অন্যদিকে দিক পরিবর্তন করে, কিন্তু নিঃশেষ হয় না। পৃথিবীতে শেষ একটি পাখি থাকলেও সে যেমন গান গাইবে, শেষ একটি নদী থাকলেও সে যেমন সমুদ্রে মিলিত হওয়ার আপন পথ খুঁজে নেবেই, সংগীত সেই ধারায় তো আরও বেশি বেগবান হবে। মানুষের সঙ্গে, প্রাণ-প্রকৃতির সঙ্গে, জীবের জীবন্ত ভাবের সঙ্গে সংগীত এমন গভীরভাবে মিশে আছে যে তার কোনো ধারাকে চিরতরে থামিয়ে রাখা অসম্ভব।

আমেরিকার ইউনিভার্সিটি অফ শিকাগোর সংগীত বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় চর্যাপদের গান
ছবি: লেখকের সৌজন্যে

সেই সূত্রেই এ কথা বলা চলে যে চর্যাপদ মানুষের জীবনধারা থেকে সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হয়নি, সে সুপ্ত ছিল। সমাজের ভয়-বাধা এড়িয়ে অদৃশ্য স্রোতের মতো নির্দিষ্ট সীমিত পরিসরে টিকে ছিল। যেমন নেপালের বিভিন্ন অঞ্চলে এখনো ‘চচা’ পরিবেশনা প্রচলিত—যা চর্যারই ধারাবাহিকতা। বাংলাদেশের শিক্ষিত সমাজ দীর্ঘদিন চর্যাপদকে পুঁথিবদ্ধ, দুর্বোধ্য, প্রায় অলৌকিক এক গ্রন্থ হিসেবে কেবলই পাঠ্যপুস্তক করে রেখেছিল। এমন একটা আদর্শিক ভয়ের জাল পেতে রাখা হয়েছিল যে সমকালীন ভাষা ও সুরে চর্যাপদকে সংস্কৃতির অংশ হিসেবে জীবন্ত রাখলে যেন শ্রেণি-নির্ধারিত পবিত্রতার ক্ষতি হবে। ফলে চর্যাপদ আবিষ্কারের পরবর্তী এক শতক পর্যন্ত বিচ্ছিন্নভাবে যাঁরা চর্যা পরিবেশনের প্রচেষ্টা গ্রহণ করেছিলেন, তা ছিল নোটেশন ফলোয়ার পণ্ডিতনির্দেশিত, আর সেই আদি ভাষায় যা সাধারণ মানুষের কাছে প্রায় দুর্বোধ্য। ফলে চর্যাপদ শ্রেণিকক্ষ ও গবেষণাগারের বাইরে জনপদে, জীবনযাপনে প্রবেশ করতে পারেনি। কিন্তু সংস্কৃতির নিয়ম অন্য রকম। বহু পুরোনো রীতির এক কণাও যদি কোথাও টিকে থাকে, তবে সঠিক মানুষের হাতে তা আবার জেগে উঠতে পারে। নতুন রূপ নিতে পারে। নতুন করে ঐতিহ্যের পুনর্জন্ম হতে পারে। তবে একই নদীতে যেমন দুইবার স্নান করা যায় না—কেননা নদী প্রবহমান—তেমনি সংস্কৃতির প্রতিটি উপাদানই পরিবর্তনশীল, রূপান্তরবাদী, একইরূপে থাকে না। বিশেষ করে বর্তমান প্রেক্ষাপটে চর্যাপদ চর্চার সামনে কিছু মৌলিক প্রশ্ন এসে দাঁড়ায়, কেমন ছিল চর্যা পরিবেশনার প্রকৃত রূপ? কেমন করে গাওয়া হতো? আবৃত্তিও নিশ্চয় হতো—কিন্তু কেমন ছিল সে সুর ও উপস্থাপন ভঙ্গি? না, কোনো রেকর্ড আমাদের সামনে নেই। অথচ এ কথা তো ঠিক যে হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্, রাজ্যেশ্বর মিত্র, সুকুমার সেন, শশিভূষণ দাশগুপ্ত, নীলরতন সেন, আহমদ শরীফসহ সব চর্যা গবেষকই নিশ্চিত করেছেন যে চর্যাপদ গীত হতো। এর সবচেয়ে বড় প্রমাণ প্রতিটি চর্যাপদের চূড়ায় উল্লিখিত রাগ-রাগিণী। কিন্তু রাগ-রাগিণীও অনিত্য পরিবর্তনশীল। সুতরাং যাঁরাই ইতিমধ্যে দু-একটি চর্যাপদ গাওয়ার চেষ্টা করেছেন, রসিকজনের হৃদয় স্পর্শ করতে ব্যর্থ হয়েছেন।

চর্যার পরিবেশনা ছিল বহুস্তরীয়। বৃহত্তর সমাজের বেশির ভাগ মানুষ নিরক্ষর ছিল, তাই চর্যার জটিল আধ্যাত্মিক সংকেত, গভীর দার্শনিক রূপকের পরিবেশন ভর করত সুর, নৃত্য, নাট্য, বাদ্য এই সব চিরায়ত শিল্পরূপের ওপর।

আপনারা জানেন, ঐতিহ্য হারাতে পারে, বদলে যায়, নতুন ঐতিহ্যের আবির্ভাবও ঘটে। উৎপাদন ব্যবস্থা, অর্থনৈতিক বিবর্তন, জলবায়ু পরিবর্তন, ধর্ম-প্রভাবিত সামাজিক মনস্তত্ত্ব, প্রযুক্তির আবির্ভাব, রাজনৈতিক ও ভৌগোলিক পরিবর্তন ইত্যাদি নানা পটভূমিতে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি ও সংস্কৃতি চেতনার পরিবর্তন ঘটা এক স্বাভাবিক ঘটনা। সুতরাং একটি বিষয় স্পষ্ট যে চর্যাপদ পরিবেশনা যে রূপে ছিল, ঠিক তেমন কিছু ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা আজকের প্রেক্ষাপটে আর নেই। তার প্রয়োজন আছে বলেও মনে হয় না। পরম্পরার ধারাবাহিকতায় সংস্কৃতির রূপান্তরবাদী বৈশিষ্ট্য অনুসারে যেকোনো ঐতিহ্যকে পুনর্নির্মাণ করা সম্ভব এবং শিকড়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার এটাই কার্যকর উপায়। সে নিয়মেই বাংলাদেশে আজ আবারও চর্যাপদের জীবন্ত রূপ ফুটে উঠতে দেখা যাচ্ছে।

পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারে স্থানীয় বাউল-ফকিরগণ চর্যাপদের পুনর্জাগরণ উৎসব উদযাপন করছেন। সেখানে গড়ে উঠেছে তিনটি চর্যা চর্চা কেন্দ্র
ছবি: লেখকের সৌজন্যে

বাংলাদেশের সৌভাগ্য—চর্যাপদ জেগে উঠেছে। এবং কী আশ্চর্য পুনর্জাগরণ! আজ সারা দেশে ঐতিহাসিক পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার থেকে কুষ্টিয়া, পাবনা, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, চুয়াডাঙ্গা, মাদারীপুর, কুমিল্লা, সুনামগঞ্জ, বরিশাল, পটুয়াখালী, ঢাকায়—বাউল-ফকির-লোকশিল্পীরা চর্যাপদ গাইছেন। তাঁদের কণ্ঠে চর্যা পেয়েছে নতুন প্রাণ, নতুন রূপ, নতুন ভাষা। সমসাময়িক লোকসুরে, নিজস্ব উচ্চারণে, বর্তমানকালের মানুষের ভাষায় চর্যা যেন আবার বাংলার মানুষের ঘরে ফিরে এসেছে। ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে টানা এক যুগ ধরে প্রতি বুধবার বিকেলে সংস্কৃতি গবেষণা ও চর্চার প্রতিষ্ঠান ভাবনগর ফাউন্ডেশনের নিয়মিত কার্যক্রম হিসেবে চর্যাপদের আসর বসে। ইতিমধ্যে ভাবনগর সাধুসঙ্গে ভাবসাধকদের চর্যাপদের গানের ৫৭৮টি আসর অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২০২৪ ও ২০২৫ সালে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্বদের অংশগ্রহণে ভাবনগর সাধুসঙ্গের উদ্যোগে পরপর দুটি চর্যাপদ পুনর্জাগরণ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে।

এমন নিরবচ্ছিন্ন, একাগ্র, স্বতঃস্ফূর্ত সাংস্কৃতিক চর্চার উদাহরণ বাংলাদেশে আর নেই। দেশের মানুষ, বিদেশি গবেষক, পথচারী, শিক্ষার্থী, অধ্যাপক, শিল্পী সেখানে সমবেত হন—চর্যার পুনর্জাগরণ চোখের সামনে দেখতে পান। এখান থেকে চর্যাপদ আজ বিশ্বেও ছড়িয়ে পড়েছে। ইউরোপ, আমেরিকা, জাপান, চীন, শ্রীলঙ্কাসহ বহু দেশে শিল্পীরা চর্যাগান শিখছেন ও চর্চা করছেন বাংলা ভাষায়। শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগ পুনর্জাগরিত চর্যাপদের গানকে তাদের পাঠ্য হিসেবে গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশের সাধিকা সৃজনী তানিয়ার মতো শিল্পী সেখানে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে আসা শিক্ষার্থীদের চর্যাগানের প্রশিক্ষণ দেন। তিনি নিজেও চর্যাগানকে বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরছেন নিরলসভাবে। আমেরিকার শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়সহ জাপান, নেপাল, হাঙ্গেরি, জার্মানি, ফ্রান্স প্রভৃতি দেশে তিনি চর্যাপদ পুনর্জাগরণের আসর করেছেন।

অস্ট্রিয়ার লিনজে দানিয়ুব নদী তীরে অস্ট্রিয়ার কবি ওয়ালি রে-র সঞ্চালনায় সাধিকা সৃজনী তানিয়া চর্যাপদের গান পরিবেশন করছেন। পাশে রয়েছেন ড. সাইমন জাকারিয়া
ছবি: লেখকের সৌজন্যে

পাশাপাশি বাংলাদেশের শিল্পকলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, বাংলা একাডেমি, বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগ চর্যাগানের পুনর্জাগরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। আর এই সবকিছুর মূলে আছেন একজন মানুষ—ড. সাইমন জাকারিয়া। তাঁর গবেষণা, তাঁর গীতল অনুবাদ, তাঁর অপরিসীম ধৈর্য, অনড় বিশ্বাস—সবকিছুর মিলিত শক্তিতে চর্যাপদ আজ শুধু একটি প্রাচীন পুঁথির নাম নয়, বরং জীবন্ত সংগীতধারা। তাঁর একক উদ্যোগে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে বাউল-ফকিরদের কণ্ঠে চর্যা হয়ে উঠেছে সর্বজনের সহজ অথচ মহিমান্বিত সাংস্কৃতিক সম্পদ। তিনি নিঃসন্দেহে ইতিহাসে থেকে যাবেন।

বর্তমান প্রেক্ষাপটে চর্যাপদ চর্চার সামনে কিছু মৌলিক প্রশ্ন এসে দাঁড়ায়, কেমন ছিল চর্যা পরিবেশনার প্রকৃত রূপ? কেমন করে গাওয়া হতো? আবৃত্তিও নিশ্চয় হতো—কিন্তু কেমন ছিল সে সুর ও উপস্থাপন ভঙ্গি? না, কোনো রেকর্ড আমাদের সামনে নেই।

বাউল-ফকির সাধক সম্প্রদায়ের মধ্যে চর্যাপদ পুনর্জাগরণের অসাধারণ একটি যৌক্তিকতা খুঁজে পাওয়া যায় আহমদ শরীফের ভাষ্যে। তাঁর মতে, চর্যাপদের সাধক কবিগণ ছিলেন বাংলার আদি বাউল। কেননা চর্যাপদের কবি বীণাপা ও ভাদেপা বর্ণিত ‘বাজিল’ ও ‘বাজুল’ শব্দ দুটি ‘বাউল’ শব্দের আদি রূপ (বাজিল>বাজুল>বাউল)।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বুধবারের ভাবনগর সাধুসঙ্গে চর্যাগান চর্চার আসরে চীনের অধ্যাপক-গবেষকবৃন্দের অংশগ্রহণ
ছবি: লেখকের সৌজন্যে

বাউলশিল্পী শাহ আলম দেওয়ান অবশ্য দৃঢ়চিত্তে বলেন, ‘চর্যাপদের গভীরে লুকিয়ে আছে বাংলাদেশের মানুষের আদি আপন খবর। এখনকার ভাষায় জনপ্রিয় সুরে শুনলে তারা বুঝতে পারে যে এ আমাদের নিজস্ব জ্ঞানের উৎস। তবে পাঠক-শ্রোতার জাগরণও প্রয়োজন। যাঁরা গান ভালোবাসেন, যাঁরা ঐতিহ্য ভালোবাসেন, যাঁরা জানতে চান বাংলার সাহিত্য-সংগীতের সূচনাতে কী কথা বেজেছিল, তাঁরা চর্যাপদের আসরে শামিল হতে পারেন। চর্যাপদের শিল্পীদের বেশি বেশি পরিবেশনের সুযোগ করে দিতে পারেন। তাহলে চর্যাপদ বইয়ের পৃষ্ঠা থেকে সত্যিকার অর্থে সমগ্র জাতির হৃদয়ে ফিরে আসবে।’

সংস্কৃতি তখনই বাঁচে, যখন মানুষ তাকে সঙ্গী করে বাঁচে। বাংলাদেশের একদল মানুষ সে কাজটি করছে। চর্যার নদী আবার বইছে। এখন প্রয়োজন বৃহত্তর পরিসরের রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ ও পৃষ্ঠপোষকতা।