হাসান হাফিজুর রহমানের দেশচেতনার দায়

১৪ জুন কবি হাসান হাফিজুর রহমানের জন্মদিন। পুরো জীবন তিনি হেঁটে বেড়িয়েছেন দেশ ও জনতার নামে। বাংলাদেশের অস্তিত্বের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িয়ে আছেন তিনি।

হাসান হাফিজুর রহমান
প্রতিকৃতি: মাসুক হেলাল

কেউ কি জানত সত্যি সত্যিই একদিন রক্ত-সবুজ মানচিত্র নিয়ে ফুটে উঠবে ‘হঠাৎ বাংলাদেশ’! ছিল তো পূর্ব বাংলা, হয়ে গেল পূর্ব পাকিস্তান; কিন্তু সহসাই সীমানায় দাগ টেনে জেগে উঠল বাংলাদেশ। ইতিহাসের নির্দিষ্টতায় জনতার লড়াই ও রক্তক্ষয়ের স্বাক্ষর লিখে দিয়েছে নতুন এক নাম—বাংলাদেশ। যে নাম পেতে গিয়ে এ অঞ্চলের গণমানুষকে নামতে হয়েছে জনযুদ্ধে, তৈরি করতে হয়েছে আত্মপরিচয়। পরিচয়ের রাজনীতিতে খুঁজতে হয়েছে সুস্পষ্ট নিশানা। আর তখন রাজনীতির পাটাতনজুড়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছিল ক্ষমতার বিকার। ঠিক সেই সময় পূর্ব বাংলার এক বাঙালি কবি—হাসান হাফিজুর রহমান লিখলেন, ‘এখানে আমরা ফ্যারাউনের আয়ুর শেষ কটি বছরের ঔদ্ধত্যের মুখোমুখি’। ফ্যাসিবাদী ও ঔপনিবেশিক চরিত্রের শাসকের চোখে চোখ তুলে কবি বললেন, ‘ফ্যারাউন’। আমরা শুনতে পেলাম ক্ষমতাতন্ত্রের পিরামিডের শিখরচূড়ায় দাঁড়ানো শাসকের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত প্রতিবাদ। 

আজ থেকে ৭৫ বছর আগের এই বাংলাদেশে এ রকম একটি দৃশ্য গড়ে উঠেছিল। হাল আমলের পরিভাষায় একে হয়তো আমরা বলতে পারি সাংস্কৃতিক প্রতিরোধ। এই প্রতিরোধে শামিল হয়েছিলেন হাসান হাফিজুর রহমান। ভাষা ও সংস্কৃতিকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে তাঁর অংশগ্রহণ ছিল প্রত্যক্ষ ও সক্রিয়। ভাষা আন্দোলনবিষয়ক প্রথম সংকলন একুশে ফেব্রুয়ারী প্রকাশিত হয়েছিল তাঁরই পৌরোহিত্যে। ইতিহাসের এই এক চিরায়ত কাজ হাসান হাফিজুর রহমানকে দিয়েছে স্থায়ী আসন ও মর্যাদা। প্রকৃতপক্ষে একটি ঐতিহাসিক দায়িত্বই পালন করেছেন তিনি।

সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিরোধের নন্দনতত্ত্বকে হাজির করেছিলেন একুশে ফেব্রুয়ারী সংকলনের মাধ্যমে। বাঙালির সামষ্টিক ইতিহাসকে শক্তিশালী একটি ভিত্তি দিয়েছিল এই সংকলন, যেখানে যোগ দিয়েছিলেন সে কালের নবীন ও প্রবীণ সৃষ্টিশীল কবি, লেখক ও শিল্পীরা। একুশবিষয়ক কবিতা, গল্প, নাটক, প্রবন্ধ ও গানের সমবেত বয়ান আজও বাঙালিকে দাঁড় করিয়ে দেয় ইতিহাসের সামনে। এই সংকলনেই প্রথমবারের মতো প্রকাশিত হয়েছিল হাসান হাফিজুর রহমানের বিখ্যাত ‘অমর একুশে’ কবিতাটি।

১৯৫২ সালের মার্চ-এপ্রিল মাসে রচিত এ কবিতায় দেখা গেল দেশ গড়ে তোলার অমোঘ অনিবার্যতা। যেন জেগে উঠবে দেশ। দেশ হলো সেই মাতৃপ্রতীক—যার সন্তানেরা ঝরে গেছে ফুটে ওঠার আগেই। হাসান হাফিজুর রহমান লিখেছেন, ‘সালাম, রফিকউদ্দিন, জব্বার/ কি বিষণ্ন থোকা থোকা নাম।’ বিষণ্ন নামগুলোর ভেতর থেকেই বেরিয়ে এসেছিল জ্বলন্ত শিখা। কোনো শাসক অথবা স্বৈরতন্ত্র তাকে নেভাতে পারেনি। ভাষার ঐক্য হাসান হাফিজুর রহমানকে দিয়েছিল সুদৃঢ় স্পর্ধা, এরই সূত্রে তাঁর মর্মে মর্মে গড়ে উঠছিল ‘দেশচেতনা’। শুধু ব্যক্তি হাসান হাফিজুর রহমানের ভেতর নয়, পূর্ব বাংলার জনচিত্তে গড়ে উঠেছিল দেশবোধের কল্পিত মানচিত্র। মূলত ভাষা আন্দোলন ঘুরিয়ে দিয়েছিল পূর্ব বাংলার বাঙালির রাজনৈতিক মনস্তত্ত্ব। হাসান লিখলেন, ‘যাঁদের হারালাম তাঁরা আমাদেরকে বিস্তৃত ক’রে দিয়ে গেল।’ একটি দেশ গঠনের ক্ষেত্রে খুব জরুরি উপাদান হলো ‘আমরা’ ও ‘আমাদের’ চেতনা; সম্মিলনের এই বোধ জাতীয় চেতনা ও জাতীয়তাবাদের পরম আরাধ্য। হাসান হাফিজুর রহমান অনুভব করেছিলেন জনতার ভাব ও ভাষা। আর তাই পুরো জীবন ধরে পথ তিনি হেঁটে বেরিয়েছেন দেশ ও জনতার নামে।

কবিতার আধুনিকায়ন–বিষয়ক ভাবনায়ও হাসান হাফিজুর রহমান পথ ঘুরিয়ে চলে গেছেন অন্য দিকে। তাঁর সময়জুড়ে ছিল ইউরোকেন্দ্রিক আধুনিকতার জোয়ার। একদিকে তিরিশি কবিতার নেতি-ইতির দোলাচল, অন্যদিকে ইয়েটস-এলিয়ট প্রভাবিত কবিতার ভুবন। কোনো দিকেই দিশা খুঁজে পাননি তিনি, যদিও স্বীকার করেছিলেন এলিয়টের প্রভাব। দ্য ওয়েস্ট ল্যান্ড–এর প্রতিধ্বনি করে প্রথম বইয়ের নামও দিয়েছিলেন বিমুখ প্রান্তর। তবে সময়ের পরিক্রমায় বেছে নিয়েছিলেন পছন্দের পথ; নজরুলের মতো করে তাঁর কবিতায় বিষয় হিসেবে এসেছিল ‘সামাজিক অসন্তোষ অনাচার, বিক্ষোভ’। এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘আমার গন্তব্য বাস্তবতার দিকে’। জানিয়েছেন, কবিতার কারুকার্য নয়, তিনি প্রাধান্য দিয়েছেন বক্তব্যকে। শিল্পত্ববাদীরা প্রশ্ন তুলতে পারেন, তাঁর কবিতায় কারুকলার ঘাটতি আছে। কিন্তু কবি নিজেই যখন মেনে নেন সেই ঘাটতিকে, তখন তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা চলে না; বরং বোঝার চেষ্টা করা যেতে পারে, কবির অভিপ্রায় কী? কোথায় তাঁর গন্তব্য? কেনই–বা নির্বাচন করে নিলেন সেই পথ?

পাকিস্তানবাদী রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে হাসান হাফিজুর রহমান লিখেছিলেন, ‘দেশ/ আমার তোমার প্রাণের গভীর জলে স্নান করে/ এবার এলাম।’ প্রতীকী এই অনুষঙ্গ জড়িয়ে আছে তাঁর সমগ্র সৃষ্টির মূলে। দিন এগিয়ে গিয়েছে ভবিষ্যতে, দেশ স্বাধীন হয়েছে, দেশের আসনে বসেছে নতুন নতুন শাসক। কিন্তু দেশের প্রাণের গভীর জলে তাঁর স্নান সমাপন হয়নি। কেননা বদলে যায়নি দেশের মাটি, জল, হাওয়া; বদলে যায়নি মানুষ। দেশচেতনার সঙ্গে নিবিড়ভাবে গাঁথা থাকে মানুষের মনের ভূগোল। বাংলার দুই প্রধান কবি রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল হাজির করেছিলেন দেশের ধারণা। মানুষের ধর্ম বইয়ে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, ‘দেশ কেবল ভৌগলিক নয়, দেশ মানসিক। মানুষে মানুষে মিলিয়ে এই দেশ জ্ঞানে জ্ঞানে, কর্মে কর্মে। যুগ–যুগান্তরের প্রবাহিত চিন্তাধারায় প্রীতিধারায় দেশের মন ফলে–শস্যে সমৃদ্ধ। বহু লোকের আত্মত্যাগে দেশের গৌরব সমুজ্জ্বল।’ হাসান হাফিজুর রহমান রক্তের অক্ষরে চিনেছিলেন আত্মত্যাগের ইতিহাস। রবীন্দ্রনাথের মতো করেই বলা যায় তাঁর ‘ইচ্ছার গতি কর্মের গতি ছিল আগামীকালের অভিমুখে।’ দেশের একজন ধারক হিসেবে ‘দেশের ভবিষ্যতের জন্য বর্তমানকে উৎসর্গ’ করেছেন। ভবিষ্যৎকে তিনি ‘ব্যক্তিগতরূপে’ ভোগ করেননি। অন্যদিকে নজরুল বলছেন, ‘দেশের অধিবাসী লাইয়াই তো দেশ এবং ব্যক্তির সমষ্টিই তো জাতি।’ এই আবেগও হাসান হাফিজুর রহমানকে প্রবলভাবে স্পর্শ করেছে। হয়তো দেশচেতনার দায়ই তাঁকে সম্পৃক্ত করেছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ: দলিলপত্র সম্পাদনায়।

এ ধরনের ঐতিহাসিক কাজে নিরপেক্ষতা ও বস্তুনিষ্ঠতা বজার রাখা অত্যন্ত জটিল। বিশেষত সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় কোনো কাজ সম্পন্ন করতে গেলে রাজনৈতিক ভাবাদর্শ দ্বারা চালিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণকেন্দ্রিক দ্বান্দ্বিকতাও দেখা দিতে পারে। বিশেষত আমাদের মতো দেশে, যেখানে রাজনৈতিক দলগুলো প্রায়ই ইতিহাসের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করতে চায়। হাত ধরাধরি করে চলতে চায় ক্ষমতা ও ইতিহাস। আর তাই দলিলপত্র সম্পাদনার সময় হাসান হাফিজুর রহমান যথাসাধ্য সতর্ক থেকেছেন। অবশ্য এটিকে সমবায়ী কাজ বলাই ভালো। কারণ, ইতিহাসবিদ মফিজুল্লাহ কবির ও সালাহ্উদ্দীন আহমদ, গবেষক ও প্রাবন্ধিক অধ্যাপক আনিসুজ্জামানসহ আরও অনেকেই যুক্ত ছিলেন এ প্রকল্পের সঙ্গে। তবে সম্পাদক হিসেবে নেতৃত্বের দায় পড়েছে হাসান হাফিজুর রহমানের কাঁধেই। 

ঐতিহাসিক দলিল সম্পাদনা মূলত ইতিহাসবিদেরই কাজ। এ অর্থে হাসান হাফিজুর রহমান বিদ্যায়তনিক ইতিহাসকার নন। কিন্তু তাঁর ভেতর কাজ করেছে সচেতন ইতিহাসদৃষ্টি। সে কারণে সম্পাদনায় তিনি থেকেছেন সংহত ও সংযত। গড়ে নিয়েছেন ইতিহাসের সীমা-পরিসীমাবিষয়ক ভাবনা। হাসান হাফিজুর রহমান স্পষ্ট করে নিয়েছেন, ‘এ-কাজে একটিই আমাদের প্রধান বিবেচ্য ছিল, সঠিক ঘটনার সঠিক দলিল যেন সঠিক পরিমাণে বিন্যস্ত হয়। আমাদের কোনো মন্তব্য নেই, অঙ্গুলিসংকেত নেই, নিজস্ব ব্যাখ্যা–বিশ্লেষণও নেই। আমরা বস্তুনিষ্ঠ ও নিরপেক্ষ মনোভাব আগাগোড়া বজায় রাখার চেষ্টা করেছি।’ কারও পক্ষে শতভাগ বস্তুনিষ্ঠ হওয়া সম্ভব কি না, সেটি এক তাত্ত্বিক প্রশ্ন; ইতিহাসই আদতে বস্তুনিষ্ঠভাবে রচিত হয় কি না কিংবা তার প্রয়োজন আছে কি না, তারও তত্ত্বগত নানা রকম মীমাংসা আছে। কিন্তু সাদাচোখে বুঝতে পারি, এমন একটি বিষয়বস্তু নিয়ে হাসান হাফিজুর রহমান কাজ করেছেন, যার গভীর প্রদেশে আছে প্রাণবান আবেগ, সেটিকে উপেক্ষা করা কঠিন। 

হাসান হাফিজুর রহমান জনতার আবেগ ও শক্তির সারপদার্থকে ভুলে যাননি। মুক্তিযুদ্ধের নায়ক-মহানায়কের প্রশ্নে উচ্চবর্গ যখন আপ্লুত ও তর্কপ্রবণ হাসান হাফিজুর রহমান তখন বলছেন, ‘বস্তুত জনসাধারণই এ ধরনের ঘটনার প্রকৃত মহানায়ক।’ কেননা জনসাধারণের ভেতর থেকেই জন্মায় ‘পরিবর্তনের ইচ্ছা’; সে ইচ্ছা ‘পরিণত ও অপ্রতিরোধ্য’ হয়ে উঠলেই কেবল ‘জনগণের মধ্য থেকে যোগ্যতম নেতৃত্বের অভ্যুদয় ঘটে’। এ কারণে কেবল ক্ষমতাবলয়ে চারপাশে ক্রিয়ারত ব্যক্তি, দল ও সংগঠনের কর্মবৃত্তান্তের দলিল সংকলন হয়ে ওঠেনি স্বাধীনতাযুদ্ধের দলিলপত্র। হাসান হাফিজুর রহমানরা সংকলনভুক্ত করেছেন প্রান্তবর্তী দল ও সংগঠনের দলিল। জাতীয় রাজনীতির ইতিহাসে তাঁরা হয়তো মুখ্য ভূমিকা বা নেতৃত্ব গ্রহণ করেননি। তাহলে কি ধরে নেব হাসান হাফিজুর রহমানের মধ্যে কাজ করছিল জন-ইতিহাসের ধারণা? এ রকম কোনো তাত্ত্বিক প্রেক্ষণবিন্দু আমরা দলিল সংকলনে পাব না। কিন্তু প্রামাণিকতার প্রশ্নে সরকারি ও অসরকারি, ব্যক্তিক ও দলীয় নথিপত্র, আলাপ, দিনলিপি, চিঠিপত্র ইত্যাদির গুরুত্বকে তিনি স্বীকার করেছেন।

প্রকৃতপক্ষে জনগণের শক্তির ভূমিকাকে হাসান হাফিজুর রহমান কোনোকালেই ভোলেননি। স্থানিক ও আঞ্চলিক বাসনার সঙ্গে জনতার মিতালিকে পাঠ করেছেন ঐতিহাসিক অনুভবতায়। তাই তাঁর এ মন্তব্য খুবই জোরালো আর যৌক্তিক মনে হয়, ‘...একাত্তরের অনেক আগেই বাংলাদেশের স্বাধীনতার চিন্তা একটা দেশের, একটা জাতির নির্দিষ্ট লক্ষ্যাভিসারী অন্তঃস্রোতকেই সামনে তুলে ধরে। আসলে মহিরুহের চারপাশে জেগে ওঠা অজস্র গাছপালা নিয়েই বনের কাঠামো। বনকে জানতে হলে এর সবটাই জানা দরকার।’ 

হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত একুশে ফেব্রুয়ারী ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ: দলিলপত্র–এর প্রচ্ছদ

সবটা জানতে গেলেই দেখা যায় বাংলাদেশ গড়ে ওঠার পটভূমি কী করে তৈরি হয়েছিল বঙ্গভঙ্গ–পরবর্তী প্রেক্ষাপটে। প্রথম খণ্ডে সংকলিত পটভূমিবিষয়ক তথ্যে হাসান হাফিজুর রহমান জানিয়েছেন কালানুক্রমিকভাবে সেসব তথ্য ও দলিলই আধেয় হিসেবে গৃহীত হয়েছেন, ‘যা বাংলাদেশের বর্তমান ভূখণ্ডের বৈশিষ্ট্য ও এখানে বসবাসকারী জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। অর্থাৎ যেসব ঘটনা, আন্দোলন ও কার্যকারণ এই ভূখণ্ডের জনগণকে মুক্তিসংগ্রামের দিকে উদ্বুদ্ধ ও পরিচালিত করেছে...।’ এ কারণে তাঁরা ‘বাংলাদেশের অতীত ঘাঁটতে গিয়ে বহু দূর-অতীতে প্রত্যাবর্তন’ করেননি।

অনেক দূর আমরা পেরিয়ে এসেছি। বাংলাদেশের ইতিহাসও পেরিয়ে গেছে ৫০ বছরের কোঠা। সম্মুখে সুবিস্তৃত বর্তমান ও ভবিষ্যৎ। কিন্তু অতীতের সঙ্গে সংলাপ ছাড়া কখনোই গড়ে ওঠে না বর্তমান, ভবিষ্যৎ পায় না কোনো লক্ষ্যবিন্দু। হাসান হাফিজুর রহমান তাঁর সমস্ত সৃষ্টির তৎপরতা দিয়ে আমাদের অতীতমুখী করেন। সেই অতীত যেন বলতে চায়, ‘আজ তো জানতে একটুকু বাকি নেই মাগো,/ তুমি কি চাও, তুমি কি চাও, তুমি কি চাও।’ ভাষা আন্দোলন, উনসত্তর আর মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে তাঁরা জানতেন কী চান দেশজননী। কিন্তু স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে আমরা কি আজও স্পষ্টতরভাবে বুঝতে পেরেছি, বাংলাদেশ সত্যিই কী চায়! ইতিহাসের আলোয় সম্ভবত বাংলাদেশের নতুন পাঠ জরুরি। তাত্ত্বিক ও সমালোচনাত্মক সেই পাঠে অনন্য এক দীক্ষাগুরু হতে পারেন হাসান হাফিজুর রহমান, যাঁর মর্মে ছিল এই দেশ, এই ভূগোল।

একনজরে হাসান হাফিজুর রহমান

হাসান হাফিজুর রহমান

কবি ও সম্পাদক

জন্ম

১৪ জুন ১৯৩২, জামালপুর, বাংলাদেশ

শিক্ষাজীবন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ (১৯৫১) এবং বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে এমএ (১৯৫৫)

পেশাজীবন

বেগম পত্রিকার সহকারী সম্পাদক হিসেবে কর্মজীবনের সূচনা; একপর্যায়ে স্বাধীনতার পর দৈনিক বাংলায় সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি নিযুক্ত হন

উল্লেখযোগ্য সম্পাদনা

একুশের প্রথম সংকলন একুশে ফেব্রুয়ারী (১৯৫৩); ১৬ খণ্ডে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ: দলিলপত্র (১৯৮২-৮৩)

উল্লেখযোগ্য বই

বিমুখ প্রান্তর (১৯৬৩); আধুনিক কবি ও কবিতা (১৯৬৫); সীমান্ত শিবিরে (১৯৬৭); আর্ত শব্দাবলী (১৯৬৮); আরো দুটি মৃত্যু (১৯৭০); সাহিত্য প্রসঙ্গ (১৯৭৩); দক্ষিণের জানালা (১৯৭৪); প্রতিবিম্ব (১৯৭৬)

উল্লেখযোগ্য পুরস্কার

পাকিস্তান লেখক সংঘ পুরস্কার, আদমজী পুরস্কার (১৯৬৭); বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৭১); অলক্ত সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮১); একুশে পদক (মরণোত্তর, ১৯৮৪); স্বাধীনতা পুরস্কার (২০০২)

মৃত্যু

১ এপ্রিল ১৯৮৩, মস্কো সেন্ট্রাল ক্লিনিক্যাল হাসপাতাল, রাশিয়া