‘সজিনি সিন্দে কা ভাইরাল ভিডিও’ সিনেমাটি আমাদের যা শেখায়

আমরা কি অনিচ্ছাকৃতভাবে ভিডিও বা ছবি ভাইরাল হওয়াকে আমলে নিয়ে ভুক্তভোগীর বিরুদ্ধে অযাচিত মন্তব্য করে তাঁর জীবন বিপন্ন করব? জীবনে বেঁচে থাকার চেয়েও কি সম্মান বড়? অপমানের থেকে কি মৃত্যু বড়? ‘সজিনি সিন্দে কা ভাইরাল ভিডিও’ সিনেমা এবং আমাদের হাল আমলের জনসংস্কৃতির সূত্রে এই লেখা।

‘সজিনি সিন্দে কা ভাইরাল ভিডিও’ সিনেমার পোস্টার

তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে অনেকে ভাইরাল হয়ে জনপ্রিয়তার শীর্ষে উঠে গেছেন। আবার অনেকেই ভাইরালের কারণে সম্মান–খ্যাতি–যশ হারিয়েছে নিমেষেই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এখন কোনো একটি ঘটনার ভাইরাল হওয়া বেশ সহজই হয়েছে, যা একপলকেই বিশ্বের নানা প্রান্তের মানুষের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। সম্প্রতি বলিউডের আলোচিত থ্রিলারধর্মী ‘সজিনি সিন্দে কা ভাইরাল ভিডিও’ সিনেমাটি ওটিটি প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পাওয়ার পর দর্শকদের কাছে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। বলিউডের প্রখ্যাত প্রযোজক দীনেশ ভিজানের ‘ম্যাডক ফিল্মস’–এর ব্যানারে পরিচালক মিখিল মুসালে কর্তৃক পরিচালিত এই সিনেমা গত বছর অক্টোবরে মুক্তি পায়। নিম্রত কৌর, রাধিকা মদান, সুবোধ ভাবে ও ভাগ্যশ্রী মূল চরিত্রে অসাধারণ অভিনয় করছেন।

মহারাষ্ট্র রাজ্যের পুনে শহরের একটি নামী স্কুলের পদার্থবিদ্যার নারী শিক্ষক সজিনি শিন্দের নাচের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার গল্প অবলম্বনে নির্মিত সিনেমাটি দর্শকদের মনোজগতে সজোরে কড়া নাড়ার মতো করে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।

তরুণ এই শিক্ষক তাঁর জন্মদিনের অনুষ্ঠানে নাচের ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর ভীষণ সমালোচনার শিকার হন। এই পরিস্থিতিতে তাঁর চাকরিও চলে যায়। মা–বাবা, ভাই, বাগ্‌দত্তা, চাচা, বন্ধুবান্ধব, সাধারণ মন্তব্যকারীরা, স্কুল কর্তৃপক্ষের অমানবিক চাপের মুখে সজিনি একটি চিরকুট লিখে নিখোঁজ হওয়ার কাহিনিকে কেন্দ্র করে সিনেমাটি গল্প এগিয়েছে রহস্যময়তার দিকে। সজিনির ব্যক্তিগত ভিডিও জনসমক্ষে আসার পর সারা দেশে ব্যাপক সমালোচনার কারণে ব্যক্তিগতভাবে ভীষণ সাদাসিদে স্বভাবের সজিনি সিন্দে মানসিক দিক দিয়ে চরমভাবে ভেঙে পড়ে। বাগ্‌দত্তা, মা-বাবা, ভাই এবং সহকর্মীদের নির্লিপ্ত আচরণ ও স্বজনদের অসযোগিতামূলক ব্যবহার, দুর্বিষহ যন্ত্রণা, কারও সঙ্গে মনঃকষ্ট প্রকাশ করতে না পেরে আত্মাহুতির পথ বেছে নিতে বাধ্য হয় মেয়েটি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যক্তিগত গোপন ভিডিও ভাইরাল হওয়ার কারণে পরিবারের অনেককেই ভুক্তভোগীর পাশে পাওয়া যায় না। অন্যদিকে পরিবার ও স্কুল কর্তৃপক্ষ তাদের সুনাম রক্ষায় বেশি ব্যস্ত থেকে মেধাবী শিক্ষকের যন্ত্রণা, মানসিক অবস্থার দিকটি একেবারে আমলে না নিয়ে প্রকারান্তরে সজিনি ম্যাডামকে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করেছে।

‘হ্যাকড’ সিনেমার পোস্টার

দুঃসময়ে কাছের মানুষদের পাশে না পেলে আমরা চরম নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ি। এই নিঃসঙ্গতা আমাদের বুদ্ধিহীন এবং চিন্তাকে একমুখী করে দেয়। এ সময় ভুক্তভোগী বিশেষ করে নারী হলে অসহায়ত্ব, হতাশা ও যন্ত্রণার পালা আরও ভারী হয়ে যায়। এ অবস্থায় কেবল মা–বাবা, ভাই–বোন, প্রেমিক তথা কাছের বন্ধুরাই কেবল নিদারুণ যন্ত্রণা ও হতাশা দূর করতে পারে। এই সিনেমায় চরম বিষাদগ্রস্ত ভগ্ন হৃদয়ের সজিনিকে স্বাভাবিক করার জন্য তার মা–বাবা, ভাই–বোন, হবু বর, বন্ধুবান্ধবকে খুঁজে পাওয়া তো দূরের কথা, বরং সজিনি সিন্দেকে আরও হতাশাগ্রস্ত করার জন্য তারা নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করেছে। মোদ্দাকথা, সহজ–সরল মানসিকতার অসহায় সজিনিকে সত্যিকার অর্থেই তারা আত্মাহুতির পথে প্ররোচিত করেছে।

সিনেমাটিতে একদিকে নারীবাদী মতবাদ প্রকাশের প্রয়াস রয়েছে, অপর দিকে তথাকথিত নারীবাদের অন্ধকার দিকটিও উদ্‌ঘাটন করার চেষ্টা রয়েছে। বিপদের সময় ভিকটিমকে কাউন্সেলিং বা পরামর্শ দিলে অনেক ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারে। এতে ভুক্তভোগীর জীবন ও পরিবার ভবিষ্যৎ অপ্রীতিকর ঘটনা থেকে রক্ষা পায়। কিন্তু এই সিনেমায় নারীবাদী সংগঠন কাউন্সেলিং না করে শুধু প্রচার–প্রচারণায় সীমাবদ্ধ ছিল। তবু এ কথাও বলতে হবে, নারীবাদীর প্রচারণার কারণেও অনেক ভুক্তভোগীর কষ্ট বা যন্ত্রণার কথা জনগণের কানে গিয়ে কড়া নাড়ে এবং সাধারণ জনগণ সচেতন হয়। যেমন এই সিনেমায় ‘ইয়ে আওরাত কো হি হামেশা কিউ জাস্টিফাই করনা পারতা হ্যা? (নারীদেরই কেন সব সময় জবাবদিহি করতে হয়?)’—এমন বেশ কয়েকটি নারীবাদী উক্তি সারাক্ষণ দর্শকদের মস্তিষ্কে আঘাত করে এবং আমাদের বিবেক জাগ্রত হয়।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যক্তিগত ভিডিও ফাঁস হয়ে সাম্প্রতিক সময়ে অনেকেই বিপদে পড়েছেন, কারও কারও জীবন বিপন্নও হয়েছে শোনা যায়; আবার কেউ কেউ দেশান্তরিত হয়েছেন বলেও খবর রয়েছে। সাধারণ মানুষের অযাচিত অপ্রয়োজনীয় মন্তব্য অথবা অশ্লীল অভিমত, মতামত বা টিপ্পনী ভুক্তভোগীকে মানসিক অশান্তির চরম পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে। এসব মন্তব্য বা আঘাতপূর্ণ টিপ্পনী ভিকটিমকে মাঝেমধ্যে মৃত্যুর মুখেও ঠেলে দেয়। দেখা যায়, কোনো কোনো ফেসবুক–ইউটিউব ব্যবহারকারীরা তাঁদের ‘বাজে ভাষায়’ মন্তব্যের মাধ্যমে ভিকটিমকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেই বিচারের আগেই ‘মিডিয়া ট্রায়াল’–এর পরিস্থিতিতে ফেলে দেয়।

‘ধাক ধাক’ সিনেমার পোস্টার

এদিকে ২০২০ সালে মুক্তি পাওয়া বিক্রম ভাট পরিচালিত ‘হ্যাকড’ নামের মনস্তাত্ত্বিক থ্রিলার সিনেমায় ১৯ বছর বয়সী ভিভেক তিবেরি নামে একজন টিনেজ হ্যাকার কীভাবে একজন তরুণীর জীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছিল, সেটাই এ সিনেমার বিষয়বস্তু। সামীরা ও তার বয়ফ্রেন্ডের অন্তরঙ্গ একটি ভিডিও ভিভেক লুকিয়ে রেকর্ড করে এবং পরে সামীরাকে লাগাতার ব্ল্যাকমেল করে নিজের কামনা চরিতার্থ করতে চায়।

তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহার করে এই সিনেমার নায়িকা সামীরা খান্নাকে পারিবারিক ও সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করে, যা তাকে চরম অশান্তিতে দিনানিপাত করতে বাধ্য করেছে। তা ছাড়া ২০২৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত প্রখ্যাত চিত্রনাট্যকার ও পরিচালক তরুণ দুদেজার ভ্রমণকাহিনিমূলক ‘ধাক ধাক’ সিনেমাটির নায়িকা শশি কুমার যাদব স্কাইয়ের (অভিনয়কারী বলিউড নায়িকা ফাতিমা সানা শাইখ) একটি একান্ত ব্যক্তিগত ছবি তার প্রেমিকের অনিচ্ছায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে নায়িকা সামাজিক ও পারিবারিকভাবে ব্যাপক অপমানের শিকার হন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একেকজন একেক অশালীন ও অযাচিত মন্তব্য করে তাকে হেনস্তা করতে থাকে। এসব ছবির কাহিনি ও নাম শিরোনাম দেখে বোঝা যায়, আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে বেশির ভাগই নারী। ‘সজিনি সিন্দে কা ভাইরাল ভিডিও’ বা ‘হ্যাকড’ বা ‘ধাক ধাক’ অথবা অন্য কোনো সিনেমাই হোক, এ রকম ঘটনা বর্তমান সময়ে পৃথিবীর নানা প্রান্তেই ঘটছে। সমাজ সচেতনতা সৃষ্টিতে এই ধরনের সিনেমা আমাদের দেশেও বেশ প্রাসঙ্গিক ও তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। প্রেম–ভালোবাসা, রাজনীতি, অ্যাকশন সিনেমার পাশাপাশি বাংলাদেশে চলচ্চিত্র নির্মাতারাও এ ধরনের সিনেমা নির্মাণ করলে সাধারণ দর্শকদের সচেতনতা বৃদ্ধি পেত এবং আমাদের সাধারণ দর্শকদের চিন্তার গণ্ডি ও দৃষ্টিভঙ্গি আরও প্রসারিত হতো।

মানুষের জীবনের চেয়েও কি পরিবার বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সুনাম বা মর্যাদা বেশি? পাছের লোকের কথায় আমরা জীবনের সৌন্দর্য ও দর্শনকে কি আমরা হত্যা করতে পারি? সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমরা অযাচিতভাবে নানা রকম স্যুইপিং মন্তব্য করে ভুক্তভোগীদের আরও অসহায় করে দিচ্ছি কি না? বিপদগ্রস্ত, অসহায়, যন্ত্রণাদায়গ্রস্ত ভুক্তভোগীদের পাশে দাঁড়িয়ে মানুষ হিসেবে আমরা ভূমিকা রাখতে পারি কি না? অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে আমরা অপ্রয়োজনীয় মন্তব্য করে কি অন্যের জীবনকে বিপদগ্রস্ত করব কি না? মৃত্যুর পরে শোকসভা মতো কিছু না করে জীবিতাবস্থায় আমরা ভুক্তভোগীর পাশে কি দাঁড়াতে পারি না? যে কোন বিরূপ পরিবেশে সাহসিকতার নিয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে বড় আর কী–ই বা আছে?

প্রযুক্তি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপব্যবহার করে এই যুগে যে কারও ভিডিও, ছবি বা কণ্ঠস্বর এমনভাবে নকল করা যায় যে কোনটি সঠিক বা কোনটি মিথ্যা, এটা যাচাই করা সাধারণের পক্ষে বেশ মুশকিল। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বদৌলতে একদম হুবহু ছবি বা ভিডিও বা কণ্ঠস্বর নকল করা সম্ভব। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে ভিডিও বা ছবিতে তিল বা জন্মদাগ বা অন্য কোনো বিশেষ চিহ্ন একদম একই রকমের মতো তৈরি করা যায়, যেটা সাধারণ চোখে পার্থক্য করা বেশ কঠিন বলেই মনে হবে। বর্তমানে অনেকগুলো অ্যাপস রয়েছে, যা দিয়ে যেকোনো লোকের কণ্ঠস্বর, ছবি বা ভিডিও অন্য ব্যক্তির মতো হুবহু তৈরি করা যায়।

অ্যাপসগুলোর মধ্যে শেলোফেকস, স্পিচ সিনথেসিস, ডিপফেক অ্যাপস উল্লেখযোগ্য। এদের মধ্যে ডিপফেক সবচেয়ে অত্যাধুনিক অ্যাপস, যার মাধ্যমে ডিজিটালভাবে একজনের চেহার অন্যের সঙ্গে বিশ্বাসযোগ্যভাবে প্রতিস্থাপিত করা যায়। জেনারেটিভ অ্যাডভারসারিয়াল নেটওয়ার্ক (জিএএন) প্রযুক্তির সাহায্যে ডিপফেক অ্যাপস শিশু বা নারীদের যৌন নির্যাতনের ছবি বা ভিডিও, সেলিব্রিটি পর্নোগ্রাফিক ভিডিও, নকল সংবাদ এবং আর্থিক জালিয়াতির ক্ষেত্রে ব্যাপক সফলতার পরিচয় দিয়েছে।

‘সজিনি সিন্দে কা ভাইরাল ভিডিও’ সিনেমাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারী সাধারণ ও নিছক মন্তব্যকারী তথা পুরো সমাজকে বিবেকের আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে বেশ কয়েকটি প্রশ্নের মুখোমুখি করে দিয়েছে। আমরা কি অনিচ্ছাকৃতভাবে ভিডিও বা ছবি ভাইরাল হওয়াকে আমলে নিয়ে ভুক্তভোগীর বিরুদ্ধে অযাচিত মন্তব্য করে তাঁর জীবন বিপন্ন করব? জীবনে বেঁচে থাকার চেয়েও কি সম্মান বড়? অপমানের থেকে কি মৃত্যু বড়? মানুষের জীবনের চেয়েও কি পরিবার বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সুনাম বা মর্যাদা বেশি? পাছের লোকের কথায় আমরা জীবনের সৌন্দর্য ও দর্শনকে কি আমরা হত্যা করতে পারি?

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমরা অযাচিতভাবে নানা রকম স্যুইপিং মন্তব্য করে ভুক্তভোগীদের আরও অসহায় করে দিচ্ছি কি না? বিপদগ্রস্ত, অসহায়, যন্ত্রণাদায়গ্রস্ত ভুক্তভোগীদের পাশে দাঁড়িয়ে মানুষ হিসেবে আমরা ভূমিকা রাখতে পারি কি না? অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে আমরা অপ্রয়োজনীয় মন্তব্য করে কি অন্যের জীবনকে বিপদগ্রস্ত করব কি না? মৃত্যুর পরে শোকসভা মতো কিছু না করে জীবিতাবস্থায় আমরা ভুক্তভোগীর পাশে কি দাঁড়াতে পারি না? যে কোন বিরূপ পরিবেশে সাহসিকতার নিয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে বড় আর কী–ই বা আছে?

এই সিনেমা আমাদের বেঁচে থাকাবস্থায় মানুষদের সম্মান করতে ও মর্যাদা দিতে শিক্ষা দেয়। সহনশীল ও সংবেদনশীল মানবিক ও সদা সচেতন নাগরিক সমাজই কেবল নতুন নতুন সমস্যার সমাধান করে একে অপরের জন্য বেঁচে থাকাতে শেখায়।

শত বাধাবিপত্তির, হতাশা, দুর্বিষহ যন্ত্রণা, অসহ্য মানসিক কষ্ট, উপায়হীন অবস্থাও জীবনের সবচেয়ে বড় সৌন্দর্য হলো বেঁচে থাকা, যন্ত্রণাকে জয় করে সামনে এগিয়ে যাওয়া। সীমাহীন মানসিক যন্ত্রণাকে পরাভূত করে নিজেকে জয়ী করার মাঝেই অফুরান আর অনাবিল আনন্দ। পরাজিত হয়ে আত্মাহুতি বা নিজেকে শেষ করে দেওয়া মানেই যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পলায়ন। লড়াই করে সাহসিকতার সঙ্গে বেঁচে থাকার চেয়ে নান্দনিক আনন্দ আর কী–ই বা আছে? সজিনি ম্যাডামের মতো আর কেউ যেন আমাদের অযাচিত, অপ্রয়োজনীয়, অমর্যাদাকর ও অশ্লীল মন্তব্য বা সুইপিং কমেন্টসের শিকার না হয়—এটা শুধু নাগরিক হিসেবে আমাদের কর্তব্যই নয় বরং সমানুভূতি দিয়ে ভুক্তভোগীর পাশে সর্বশক্তি নিয়ে অবস্থান করাই আমাদের মানবিক ও নৈতিক দায়িত্ব।

সত্যিকার অর্থে খাদ্যের অভাবে এখন আর মানুষ মরে না; বরং মানুষ মরে ভালোবাসার অভাবে, মায়ার অভাবে, হৃদয়ের টানের অভাবে। সুতরাং বেশি বেশি ভালোবাসাই আমাদের নব দিগন্তের অপরিসীম আনন্দ খুঁজে পেতে সহায়তা করবে। আত্মহত্যা বা পলায়ন বা আত্মাহুতি কখনোই কোনো সমাধান নয়। এই সিনেমার ভীষণ তৎপর্যপূর্ণ শেষ লাইন হলো, ‘প্রকৃত সাহসের নামই বেঁচে থাকা।’ তাই ভূপেন হাজারিকার গানের সঙ্গে সুর মিলিয়ে গাইতেই পারি, ‘আজ জীবন খুঁজে পাবি ছুটে ছুটে আয়, মরণ ভুলে গিয়ে ছুটে ছুটে আয়...যুগের নতুন দিগন্তে সব ছুটে ছুটে আয়..।’