কেমন ছিল ব্র্যাকের প্রথম দিককার সেই দিনগুলো

আজ স্যার ফজলে হাসান আবেদের জন্মদিন। মুক্তিযুদ্ধের পর সুনামগঞ্জের শাল্লা ও দিরাই অঞ্চলে তিনি প্রথম শুরু করেছিলেন ব্র্যাকের কার্যক্রম। কেমন ছিল ব্র্যাকের প্রথম দিককার সেই দিনগুলো? ‘আমার ব্র্যাক-জীবন: একজন উন্নয়নকর্মীর বেড়ে ওঠা’ বইতে এ বিষয়ে বিস্তারিত লিখেছেন ফজলে হাসান আবেদের ঘনিষ্ট সহচর আহমদ মোশতাক রাজা চৌধুরী। প্রথমা প্রকাশন থেকে বেরোনো বই থেকে জানা যাক ব্র্যাকের সেই সব দিন সম্পর্কে।

স্যার ফজলে হাসান আবেদছবি: সাজিদ হোসেন

১৯৭৭ সালের জানুয়ারি মাসের একদিন। ঢাকায় একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে দ্বিতীয়বারের মতো দেখা হলো ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক ফজলে হাসান আবেদের সঙ্গে। কন্যা ছোট্ট তামারাকে নিয়ে হাঁটছিলেন। আমি এগিয়ে গেলাম। সাহস সঞ্চয় করে সালাম দিলাম। দেখেই চিনে ফেললেন। বললেন, কবে জয়েন করছ? বললাম, ১৭ মার্চ।  
ঠিকই নির্দিষ্ট দিনে ব্র্যাকে যোগদান করেছিলাম—মগবাজারের সেই অফিসটিতে।

পরিচয় হলো অনেকের সঙ্গে, যাঁদের কেউই এখন আর ব্র্যাকে নেই। অনেকে ইহলোকও ত্যাগ করেছেন। মাহেরা আপা, নাজমা আপা, কায়সার ভাই, ইমাউল হক চাচা, বিশ্বাসদা, নূরুল হক প্রমুখ। পরের সপ্তাহেই আবেদ ভাই আমাকে পাঠিয়ে দিলেন শাল্লায়। বললেন, শাল্লায় আমরা সবজি চাষ বৃদ্ধির চেষ্টা করছি কিন্তু বুঝতে পারছি না কতটুকু সফল হয়েছি। দেখো তো কিছু বের করা যায় কি না। আমি তো মহাখুশি। গবেষণায় আমার বিপুল আগ্রহ আর প্রথমেই কিনা এই কাজ পেয়ে গেলাম। যথারীতি রওনা হলাম। ব্র্যাকের প্রকল্প সমন্বয়ক কায়সার জামান আমার সঙ্গী। বিমানে সিলেট এবং সেখান থেকে বেবিট্যাক্সিতে (ইঞ্জিনচালিত ত্রিচক্র যান) শেরপুর। সেখানে ব্র্যাকের স্পিডবোট অপেক্ষা করছিল। চড়ে বসলাম। স্পিডবোট রওনা দিল ভাটির টানে পশ্চিম দিকে। কুশিয়ারা নদী। কয়েক ঘণ্টা পরই আমাদের গন্তব্যস্থল মাকু‌র্লিতে পৌঁছাব।

ইতিমধ্যে বিগত কয়েক দিনে ব্র্যাক সম্পর্কে বেশ কিছু পড়াশোনাও হয়ে গেছে। পুলকিত বোধ করলাম এ কথা ভেবে যে ব্র্যাক এই কুশিয়ারা নদী দিয়েই ১৯৭২ সালে ভারত থেকে লাখ লাখ বাঁশ আমদানি করেছিল মুক্তিযুদ্ধের শরণার্থীদের পুনর্বাসনকাজে গৃহ নির্মাণের জন্য। কায়সার ভাইয়ের সঙ্গে এসব বিষয় নিয়ে আলাপ করতে করতে দেখছিলাম নদীর দুই তীর, ‘ছায়া সুনিবিড় শান্তির নীড় ছোটো ছোটো গ্রামগুলি’। ব্যক্তিগতভাবে শহরেই আমার বড় হয়ে ওঠা। তাই গ্রামের গন্ধ-সুবাস কোনোটাই খুব একটা ভাগ্যে জোটেনি। যদিও আবেদ ভাইয়ের নির্দিষ্ট করে দেওয়া কাজটাই মুখ্য ছিল আমার জন্য, তবে এই সফরে আরও দুটি অর্জন ছিল। এক. বাংলার গ্রাম দেখা, বিশেষ করে শীতকালের ভাটি অঞ্চল। দুই. ব্র্যাকের বিস্তৃত কার্যক্রম দেখা এবং তা সম্যক উপলব্ধি করা।

শীতকালে ভাটি অঞ্চলে যাতায়াতের জন্য বিশেষ বিড়ম্বনাপূর্ণ। রাস্তাঘাট নেই। মূলত হাঁটাই একমাত্র উপায়। ব্র্যাকের দশটি ‘ক্যাম্প’ (অফিস) ছিল—একটি থেকে আরেকটিতে যেতে কোনো কোনো ক্ষেত্রে সারা দিন লেগে যেত। ক্যাম্পগুলোর মধ্যে আটগাঁও ছিল সবচেয়ে দূরে। এখন তো ঘুঙ্গেরগাঁও ছাড়া প্রায় সব জায়গাতেই গাড়ি করে যাওয়া যায়। শাল্লা, তথা ভাটি অঞ্চলে ব্র্যাকের বিভিন্ন প্রকল্পে এর পরেও অনেকবার যাওয়ার সুযোগ হয়েছে। বর্ষার শাল্লা, সে তো আরেক রূপ। ‘যেদিকে তাকাই শুধুই পাথার’—এ যেন সাগর-মহাসাগরকেও হার মানায়। ব্র্যাকের কর্মীরা এসব অঞ্চলে উন্নয়নকাজ করে অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন। সে সময় কত রকম গল্পই না প্রচলিত ছিল। সারা দিনের পরিশ্রম শেষে হয়তো ক্লান্ত এক নারী কর্মী বিছানায় যাবেন, এমন সময় বালিশের নিচ থেকে বেরিয়ে এল এক বিষধর সাপ। আস্তে আস্তে সেই সাপ বিছানা থেকে নেমে বেরিয়ে গেল আর আমাদের অকুতোভয় আপা তাঁর শয্যায় ঘুমিয়ে পড়লেন। জুতার ভেতর সাপ তো প্রায়ই লুকিয়ে থাকত। এত সব বিড়ম্বনা আর চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও ব্র্যাকের কর্মীরা তাঁদের দায়িত্ব পালন করতে একটুও পিছপা হতেন না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তাঁরা তা উপভোগ করতেন। কারণ, যাঁদের সঙ্গে তাঁদের দৈনন্দিন ওঠাবসা ছিল, সেই ভাটি অঞ্চলের মানুষগুলো ছিলেন অত্যন্ত সাদাসিধে সহজ-সরল প্রকৃতির।

এঁদের জন্য সামান্য কিছু করতে পারলেই কর্মীরা খুব স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতেন। আসলে মানুষের জন্য গভীর অনুরাগই তাঁদের আঁকড়ে রাখত। ভাটি অঞ্চল মাছের জন্য বিখ্যাত। মাছের বিশাল আকৃতি ও আস্বাদ নিয়েও ছিল নানা গল্প-উপাখ্যান। একবার নাকি এক বিরাটকায় চিতল মাছের লেজের ঝাপটায় ব্র্যাকের একটি নৌকা উল্টে গিয়েছিল। অবশ্য সে সময় পানিতে ডুবে কোনো কর্মীর মৃত্যু ঘটেছে বলে শুনিনি।

শাল্লায় দ্বিতীয় সপ্তাহে দেখা হলো আবেদ ভাইয়ের সঙ্গে। ঢাকা থেকে এসেছেন তার আগের দিন। সঙ্গী অক্সফাম বাংলাদেশের প্রধান ডেভিড ক্যাম্পবেল। গত সপ্তাহের বেশির ভাগই কাটিয়েছি দিরাই ক্যাম্পে। সেখানে আমার পূর্বপরিচিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্য সেন হলের কামাল (কামাল উদ্দিন, পরবর্তী সময়ে এনজিও নেতা) এবং নতুন বন্ধু মীরার সঙ্গে বেশ ভালো সময় কাটল। সন্ধ্যার সময় সুরমা নদীর তীরে বসে শুনলাম প্রেমদার (প্রেমরঞ্জন রায়, হিসাব বিভাগ) রবীন্দ্রসংগীত। আর কী চাই! যাহোক, আবেদ ভাইয়ের মাসিক প্রকল্প সভায় যোগ দিতে আমরা এলাম মাকু‌র্লি। মাকু‌র্লিকে বলা হতো ‘কন্ট্রোলিং ক্যাম্প’, যেখানে শাল্লা প্রকল্পের সমন্বয়ক খুশী কবির থাকতেন।

শপ্রেমে উদ্বুদ্ধ সদ্য বিশ্ববিদ্যালয় পেরোনো আমার মতো যুবক অনেক ধরনের আশা-নিরাশায় থাকে আচ্ছন্ন। থাকে বিচিত্র সব সমাজচিন্তা। অনেকের মতো আমার মধ্যেও ধনী-গরিব ফারাকের বিষয়টি তোলপাড় করত। শাল্লায় এসে মনে হলো ব্র্যাক তো বাস্তবে এই ফারাক ঘোচানোর কাজটাই করছে। গ্রামের গরিব মানুষকে নিজেদের উন্নয়নে কীভাবে উদ্বুদ্ধ করতে হয়, মনে হলো ব্র্যাক ভালোভাবেই সেটা অনুধাবন করেছে। পাওলো ফ্রেইরির নাম জীবনে এই প্রথম শুনলাম। দেখলাম, ব্র্যাক এবং তার কর্মী বাহিনী কীভাবে ফ্রেইরির চিন্তাভাবনাকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার চেষ্টা করছে।

একদিন গেলাম ব্যবহারিক শিক্ষার এক ক্লাসে। সেখানে ২০-২৫ জন নারী একসঙ্গে জড়ো হয়ে ব্র্যাকের কর্মীর সঙ্গে আলাপ করছিলেন। কিছু পুরুষও ছিলেন। তাঁদের কথাবার্তা শুনে আমি তো অবাক। এটা কোন বাংলাদেশ দেখছি? এটাই যদি ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ হয়, তাহলে তো আমার মতো অনেকের স্বপ্ন পূরণ হবে; গরিব মানুষ এবং অবহেলিত নারীরা প্রাণ খুলে কথা বলবে, আর তাতে অন্তরায় সৃষ্টি করার কেউ থাকবে না। ভাবলাম, এ তো এক নীরব বিপ্লব। দেশে সমাজ পরিবর্তন ও নারীর ক্ষমতায়নের ভিত যে এভাবেই রচিত হয়েছিল, সেটা প্রায় নিশ্চিত। সত্তর ও আশির দশকে এই কাজে ব্যাপৃত থাকা ব্র্যাক, গ্রামীণ, প্রশিকা, এফআইভিডিবি, আরডিআরএস প্রভৃতি সংস্থা এবং তাদের উৎসর্গিত কর্মীদের জন্য রইল শ্রদ্ধা আর কৃতজ্ঞতা।

১৯৭২ সালে ব্র্যাক গড়ে তোলার দিনগুলোতে মার্কুলিতে ফজলে হাসান আবেদ
ছবি: সংগৃহীত

সন্ধ্যায় গেলাম ব্যবহারিক শিক্ষার আরেকটা ক্লাসে। সেখানে সবাই পুরুষ। ব্যতিক্রমী এক দৃশ্য। ব্র্যাকের কর্মী তাঁদের অক্ষরজ্ঞান দেওয়ার চেষ্টা করছেন, কিন্তু পেছনে বসা অনেকেই ঘুমে আচ্ছন্ন। সারা দিনের কায়িক পরিশ্রমের পর কজনেরই-বা আগ্রহ বা স্পৃহা অবশিষ্ট থাকে। ভাবলাম, এখানে আরও অনেক কিছু ভাবার আছে। ব্যবহারিক শিক্ষা ছাড়াও শাল্লায় তখন আরও কয়েকটি কার্যক্রম চলছিল। যেমন প্যারামেডিকের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা, কৃষি সম্প্রসারণ এবং ক্ষুদ্রঋণ প্রদান। তবে ব্যবহারিক শিক্ষার মাধ্যমে সামাজিক উদ্বুদ্ধকরণের বিষয়টি আমাকে বিশেষভাবে নাড়া দিয়েছিল। তখন ‘অবহেলিতদের ক্ষমতায়ন’ বা ‘ Emancipation of the poor’ ছিল ব্র্যাকের মূল স্লোগান। অবশ্য বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ বিবর্তনে তা আজকাল আর বেশি উচ্চারিত হয় না। এই কাজে তত্ত্ব জোগানকারী ব্র্যাকের কালজয়ী প্রকাশনা  দেশ কাল সমাজ  আমাদের কজনই-বা পড়েছে বা কজনই জানি এ দর্শনের রূপদানে রত শাল্লা ভূমিহীন সচিবালয় বা তার নেতা ক্কদবানুর কথা? গরিব ও অবহেলিত মানুষের ক্ষমতায়ন পাকাপোক্ত করতে সত্তর দশকের শেষের দিকে ব্র্যাক গ্রামভিত্তিক সব ভূমিহীন সংগঠনের একটি সচিবালয় গড়ে তোলে। তার নেতৃত্বে ছিলেন তুখোড় ক্কদবানু। তাঁরা সরকারের বিভিন্ন অফিসে গিয়ে ভূমিহীন নারীদের প্রাপ্ত সব সুযোগ-সুবিধা বুঝে নিতে প্রায়ই ধরনা দিতেন এবং অনেক ক্ষেত্রে সফল হয়েছিলেন। কিন্তু ধীরে ধীরে ব্র্যাকের কৌশল পরিবর্তনের কারণে তাঁর কাজ অনেকটা স্তিমিত হয়ে যায়।  

শাল্লায় দ্বিতীয় সপ্তাহে দেখা হলো আবেদ ভাইয়ের সঙ্গে। ঢাকা থেকে এসেছেন তার আগের দিন। সঙ্গী অক্সফাম বাংলাদেশের প্রধান ডেভিড ক্যাম্পবেল। গত সপ্তাহের বেশির ভাগই কাটিয়েছি দিরাই ক্যাম্পে। সেখানে আমার পূর্বপরিচিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্য সেন হলের কামাল (কামাল উদ্দিন, পরবর্তী সময়ে এনজিও নেতা) এবং নতুন বন্ধু মীরার সঙ্গে বেশ ভালো সময় কাটল। সন্ধ্যার সময় সুরমা নদীর তীরে বসে শুনলাম প্রেমদার (প্রেমরঞ্জন রায়, হিসাব বিভাগ) রবীন্দ্রসংগীত। আর কী চাই! যাহোক, আবেদ ভাইয়ের মাসিক প্রকল্প সভায় যোগ দিতে আমরা এলাম মাকু‌র্লি।

মাকু‌র্লিকে বলা হতো ‘কন্ট্রোলিং ক্যাম্প’, যেখানে শাল্লা প্রকল্পের সমন্বয়ক খুশী কবির থাকতেন। খুশী আপা প্রথম দিকে ঢাকায় আবেদ ভাইয়ের সঙ্গে কাজ করতেন। পরবর্তী পর্যায়ে তাঁকে শাল্লায় পাঠিয়ে দেওয়া হয় মাঠপর্যায়ের অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য। শুনে অভিভূত হয়েছিলাম যে শাল্লা প্রকল্পের দশটি ক্যাম্পের একটি ‘আনন্দপুর’ ছিল পুরোপুরি নারী কর্মী দ্বারা চালিত এবং খুশী কবির প্রথম দিকে এই ক্যাম্পেই থাকতেন।

কয়েক মাস পরেই শাল্লায় এক অভ্যুত্থানের চেষ্টা হয়, যা আবেদ ভাইয়ের ত্বরিত সিদ্ধান্তে সহজেই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। অভ্যুত্থানটি পরিচালনায় ছিলেন শাল্লা প্রকল্পের স্থানীয় কিছু কর্মী। স্থানীয় লোকজনের মধ্যে একটি চাপা ক্ষোভ কিছুদিন থেকে দানা বাঁধছিল যে বাইরে থেকে আসা কর্মীরা ব্র্যাকের ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে এসে যাচ্ছিলেন। এখানে বলা উচিত যে শাল্লা প্রকল্পের প্রথম দিকের কর্মীদের বেশির ভাগ ছিলেন স্থানীয়। আবেদ ভাইয়ের ভায়রা সালাউদ্দিন আহমদ তখন স্বরাষ্ট্রসচিব। তিনি সিলেটের জেলা প্রশাসককে এই ‘বিদ্রোহ’ দমাতে নির্দেশ দিলে পুলিশ সঙ্গে সঙ্গেই মাঠে নামে এবং ‘বিদ্রোহী’ দলের মূল নেতাদের গ্রেপ্তার করে। ধীরে ধীরে সব শান্ত হয়ে আসে।

‘আমার ব্র্যাক-জীবন: একজন উন্নয়নকর্মীর বেড়ে ওঠা’ বইয়ের প্রচ্ছদ

এরপর খুশী কবিরকে ঢাকায় ফিরিয়ে আনা হয়। তাঁর স্থলে সুখেন্দ্র কুমার সরকারকে (পরবর্তীতে ব্র্যাকের পরিচালক এবং ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ) নতুন সমন্বয়ক নিয়োগ করা হয়। আরেকটি অভ্যুত্থানচেষ্টা হয়েছিল ১৯৮০ সালে। তখন ব্র্যাকের ভবিষ্যৎ কর্মকৌশল নিয়ে চলছিল এক বিতর্ক। ব্র্যাক কি শুধুই এক দীর্ঘমেয়াদি সামাজিক বিপ্লবের পেছনে ছুটবে নাকি তার বিপরীতে আদিষ্ট জনগোষ্ঠীর আশু প্রয়োজন মেটাতে কিছু আর্থসামাজিক উদ্যোগ গ্রহণ করবে? ঊর্ধ্বতন কিছু কর্মী ছিলেন প্রথমোক্তটির প্রতি আপসহীন। তাঁরা এক কঠিন অবস্থান নিয়ে আবেদ ভাইয়ের বিরুদ্ধে ব্র্যাকের গভর্নিং বডির কাছে নালিশ করেন। গভর্নিং বডি অবশ্য তাঁদের অভিমত আমলে না নিয়ে তাঁদের ব্র্যাক ছেড়ে চলে যেতে বলেন। ব্র্যাক এক অনিশ্চয়তা থেকে মুক্তি পায়।

বিকেলে প্রকল্প সভা বসল। বাঁশ দিয়ে তৈরি সভাকক্ষ, ওপরে টিনের ছাদ। পাশেই কুশিয়ারা বহমান। সভা চলল প্রায় শেষরাত অবধি। প্রকল্পের বিভিন্ন কার্যক্রমের পর্যালোচনা হলো, আবেদ ভাই নতুন নতুন দিকনির্দেশনা দিলেন। উন্নয়নে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতার কথা বললেন। বিভিন্ন তাত্ত্বিক দিকও বিশ্লেষণ করলেন। দেখলাম, আবেদ ভাইয়ের প্রতি ব্র্যাকের কর্মীদের অকুণ্ঠ শ্রদ্ধা এবং বিশ্বাস। আবেদ ভাই যা বলছেন, তা-ই শেষ কথা। তাঁর সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করার কেউ নেই। তিনি যা বলছিলেন, সবই মনে হচ্ছিল জ্ঞানগর্ভ, সঠিক ও বাস্তব। ব্র্যাকের কর্মীরা যেন আবেদ ভাইয়ের মুখে তাঁদের স্বীয় অন্তরের কথাই শুনতে পাচ্ছিলেন। এতটাই ছিল তাঁর আবেদন!
(সংক্ষেপিত)

আমার ব্র্যাক-জীবন: একজন উন্নয়নকর্মীর বেড়ে ওঠা
আহমদ মোশতাক রাজা চৌধুরী
প্রকাশক: প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা
দাম: ৫৫০ টাকা।