ফয়জুল ইসলামের গল্পপাঠ প্রসঙ্গে

অলংকরণ: মাসুক হেলাল

সৃষ্টিশীল মানুষদের নির্মিত শক্ত ভিতের ওপরে বাংলা সাহিত্যের ছোটগল্পের প্রাসাদ দাঁড়িয়ে আছে। যুগে যুগে গল্পকারদের প্রজ্ঞা, পরিশ্রম, নিরীক্ষাপ্রবণতা বাংলা গল্পভান্ডারকে সমৃদ্ধ করেছে। গল্পকারদের প্রচেষ্টায় চিরাচরিত ধারায় যেমন গল্প নির্মিত হয়েছে তেমনি নিরীক্ষাধর্মী গল্পের নির্মাণও পাঠককে তৃপ্ত করেছে। শব্দের গতিময় সৌন্দর্য, ভাষার কুশলী ব্যবহার, বিষয়ের বৈচিত্র্য, নির্মাণশৈলীর ভিন্নতা—সবকিছু মিলিয়ে বাংলা গল্পের পরিধি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিস্তৃত হয়েছে। এই পরিধির ভেতরে নিজের স্বকীয়তা ধরে রেখে যেসব গল্পকার বর্তমান সময়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছেন, ফয়জুল ইসলাম তাঁদের মধ্যে অন্যতম।

যদিও লেখক ফয়জুল ইসলামের নামের পরে ব্রাকেটবন্দী করে ‘জন্ম ২৪ নভেম্বর ১৯৬৩, মৃত্যু ২১ জানুয়ারি ২০২৫’ লেখার সময় এখন। তিনি লেখালেখির খাতা বন্ধ করে এখন সময়ের ফ্রেমে আটকে গেছেন। ফয়জুল ইসলামের লেখা এই ফ্রেম অতিক্রম করে অনন্ত লক্ষ্যের দিকে যাত্রা করবে কি না, সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এখনো আসেনি। তা ছাড়া লেখক যখন লিখেছেন তিনি কোনো লক্ষ্য তাক করে ছুটেছেন বলে নজরে পড়েনি। বরং তাঁকে খানিকটা নিশ্চুপে, নিভৃতে নিজের কাজ করতে দেখা গেছে। কোনো শোরগোল তুলে পাঠকের নজরবন্দী হওয়ার কাঙ্ক্ষা যে তাঁর ছিল, সে-ও বলা যাবে না। তবু বরাবর তাঁর লেখার দিকে পাঠক আমার দৃষ্টি ছিল। সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে লেখক ফয়জুল ইসলাম অকপটে লিখে যেতে পেরেছেন কি না, তা নিয়েও কৌতূহল ছিল। তাই যখনই তাঁর লেখা চোখে পড়েছে, আমি পড়েছি।

পড়তে পড়তে বুঝেছি, ফয়জুল ইসলামের গল্পের ক্যানভাস নিখুঁত কিন্তু মসৃণ নয়। তিনি অবলীলায় প্রান্তিক মানুষের জীবন নিয়ে গল্প লিখেছেন। মানুষের নির্মমতা, মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্বও বারবার তাঁর গল্পে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। গল্পের চরিত্রদের মুখের সংলাপ নির্মাণে তিনি ছিলেন সোজাসাপটা, ভণিতাহীন। মানুষের মুখের বুলি, গালি তিনি অনায়াসে কলমে ধারণ করেছেন, তাই তাঁর আখ্যান হয়ে উঠেছে বিশ্বাসযোগ্য ও একান্ত আপনার।

শব্দের গতিময় সৌন্দর্য, ভাষার কুশলী ব্যবহার, বিষয়ের বৈচিত্র্য, নির্মাণশৈলীর ভিন্নতা—সবকিছু মিলিয়ে বাংলা গল্পের পরিধি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিস্তৃত হয়েছে। এই পরিধির ভেতরে নিজের স্বকীয়তা ধরে রেখে যেসব গল্পকার বর্তমান সময়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছেন, ফয়জুল ইসলাম তাঁদের মধ্যে অন্যতম।
ফয়জুল ইসলামের গল্পগ্রন্থ ‘খোয়াজ খিজিরের সিন্দুক’ প্রথম আলো বর্ষসেরা বই ১৪২২ পুরস্কার জিতেছিল
ছবি: সংগৃহীত

যত দূর মনে পড়ে, প্রথম পাঠ করেছি ফয়জুল ইসলামের গল্প ‘গগনশিরীষ’। একটা পুরোনো গগনশিরীষগাছের মৃত্যুর আশঙ্কার মধ্য দিয়ে গল্পটি শুরু হয়। এই গাছটা দেখলে মৃত তপনের রুনুর কথা মনে পড়ত। পাতলা-সাতলা লম্বা রুনুকে অন্ধকারের ভেতরে দাঁড়ানো অবস্থায় দেখলেই মনে হতো গম্ভীর, উদ্বাহু একটা গগনশিরীষগাছ দাঁড়িয়ে আছে। এভাবে গল্পের ভেতরে গল্পের আভাস দিয়ে ‘গগনশিরীষ’ গল্পটির যাত্রা শুরু হলেও ধীরে ধীরে গল্পে মুক্তিযুদ্ধ, প্রেম, স্মৃতিকাতরতা ইত্যাদি প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে। আর সিদ্ধেশরী মহল্লার শহীদ তপন না থেকেও সামাদ, মাসুদা আর রুনুর ভাবনায় সব সময় জীবন্ত হয়ে থাকে। তপন বেঁচে থাকলে কী করত, কী করত না, এসব নিয়ে গল্পের বিভিন্ন চরিত্রের ভাবনার বিস্তার ঘটতে ঘটতে একে একে ২৫ মার্চ, ২৬ মার্চের সিদ্ধেশ্বরী রোড, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল, জগন্নাথ হলের মাঠের শহীদ মিনার; গণকবর, যেখানে পুঁতে রাখা হয়েছিল হলের ছাত্র, মালি, দারোয়ান, বাবুর্চি, সুইপার, তাদের পরিবারের কিশোর সদস্য, রিকশাওয়ালা, ঠেলাগাড়িওয়ালাদের লাশ আর গেরিলা যোদ্ধা, গণহত্যা, মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলো সামনে আসতে থাকে। সামাদ আর রুনুর কাছে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি মানে তপনের স্মৃতি। সিদ্ধেশ্বরী জামে মসজিদের পশ্চিম মহল্লার একমাত্র গগনশিরীষগাছটি রোদে, বৃষ্টিতে অথবা কুয়াশায় তপনের স্মৃতি নিয়েই দাঁড়িয়ে থাকত। সত্যি সত্যি একদিন গগনশিরীষগাছটা কাটা পড়ে। আর শহীদ তপন বন্ধু সামাদের কাছে আক্ষেপ করতে থাকে, ‘গাছটারে তরা এমনে মাইরা ফালাইলি? অহন কী হইব আমার? রুনুর কথা আমি ভাবমু কী দেইখা?’ এরপর অদ্ভুত এক হাহাকারের মধ্য দিয়ে গল্পের পরিসমাপ্তি ঘটে।

মৃত বন্ধুকে নিয়ে লেখা ফয়জুল ইসলামের আরেকটি গল্প ‘বখতিয়ার খানের সাইকেল’। পৌষ মাসের মাঝামাঝি এক রাতে ঢাকা শহরের লেক সার্কাস এলাকার কেউ কেউ কেন অপঘাতে মৃত বখতিয়ার খানের পাইন গ্রিন র‌্যালি সাইকেলের বেলের ক্রিং ক্রিং আওয়াজ শুনতে পাচ্ছিল, সেই রহস্য খোঁজার মধ্য দিয়ে গল্পের যাত্রা শুরু হয়। চাকরি থেকে অবসর নেওয়া জগলুল আহমেদ, গোলাম ফারুক ও শহিদুল আলম প্রাতর্ভ্রমণে বের হয়ে এ রহস্যেরই অনুসন্ধান করতে থাকেন। একে একে এই সাইকেলের চক্করে বিভ্রান্ত হতে থাকে লেক সার্কাসের একগাদা বাসিন্দা। একটা সময়ে এই এলাকায় বখতিয়ার খান ও তার সাইকেলের সরব উপস্থিতি ছিল। লেক সার্কাসের বাসিন্দারা যখন বখতিয়ার খান ও তার সাইকেলকে ভুলে যেতে শুরু করেছিল তখনই সেই শীতের রাতে রহস্যজনকভাবে সাইকেলটির প্রত্যাবর্তন ঘটেছিল আর রহস্যের সুরাহা হচ্ছিল না বলে ভৌতিক সাইকেলটা পুনরায় তাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে পড়ছিল। শেষ পর্যন্ত কী ঘটে লেক সার্কাসের বাসিন্দাদের জীবনে, তা জানতে গিয়ে নগরের বিবিধ সমস্যার চিত্র পাঠককে একপ্রকার বিচলিত করে তোলে।

লেখক যখন লিখেছেন তিনি কোনো লক্ষ্য তাক করে ছুটেছেন বলে নজরে পড়েনি। বরং তাঁকে খানিকটা নিশ্চুপে, নিভৃতে নিজের কাজ করতে দেখা গেছে। কোনো শোরগোল তুলে পাঠকের নজরবন্দী হওয়ার কাঙ্ক্ষা যে তাঁর ছিল, সে-ও বলা যাবে না। তবু বরাবর তাঁর লেখার দিকে পাঠক আমার দৃষ্টি ছিল।
ফয়জুল ইসলাম (২৪ নভেম্বর ১৯৬৩—২১ জানুয়ারি ২০২৫)
প্রতিকৃতি: মাসুক হেলাল

একে অপরের সাহচর্যে অর্থাৎ পুষ্টি, নিরাপত্তা, রোগ বা পরজীবীর আক্রমণ থেকে সুরক্ষা বা প্রজননের জন্য পরস্পরের সাহচর্যে যেসব জীব বেঁচে থাকে তারাই সিমবায়োটিক বা মিথোজীবী। মানুষ মানুষকে আশ্রয় করে কীভাবে নিজের জীবিকা ধারণ করে তা ফয়জুল ইসলাম তাঁর ‘মিথোজীবন’ গল্পে নিবিড়ভাবে দেখিয়েছেন। ব্যতিক্রমধর্মী দুই ধরনের পেশার মানুষকে নিয়ে এই গল্পের আখ্যান বিস্তৃত হয়েছে। গল্পের মুখ্য চরিত্র শরিফের সঙ্গে আমাদের যখন পরিচয় ঘটে তখন সে আরিপপুর গোরস্তান থেকে মৃত মানুষের ঊরুর হাড়, গোরস্তানের মাটি আর ছোট এক টুকরা কাফনের কাপড় চটের একটা ব্যাগে ভরছিল আর তার কালো রঙের ময়লা ফতুয়ার বাঁ পকেটের ভেতরে কাগজে কয়েক টুকরা নখ আর কয়েক গাছি চুলও মুড়িয়ে নিয়েছিল। কবরের মালসামানা দিয়ে বান মারার কাজ করে বাতেন ফকির। একটা সময়ে সাপ্লাইয়ার শরিফও বাতেন ফকিরের মক্কেল হয়ে যায় আর মুর্দার পায়ের হাড্ডি, নখ, চুল, কবরের তিন মুঠো মাটি এবং এক টুকরা কাফনের কাপড় বাতেন ফকিরকে দিয়ে আসে। এভাবে যা কিছু আমাদের জন্য ঘৃণ্য বা নিষিদ্ধ কাজ সেটাই অন্যের পেটে ভাতের জোগান দেয়। আঞ্চলিক ভাষার শ্রুতিমধুর ব্যবহার ‘মিথোজীবন’ গল্পটিকে বাস্তবসম্মত ও প্রাঞ্জল করেছে।

ফয়জুল ইসলামের বহুলপঠিত গল্পের একটি হলো ‘খোয়াজ খিজিরের সিন্দুক’। এই গল্পে ‘মিথোজীবন’ গল্পের মতোই বিলুপ্তপ্রায় এক পেশাজীবীর দেখা পাই। গল্পের শুরুতে আরিপপুর গ্রামের সালু পরামানিকের পাতকুয়ায় একটা হাড় পড়ে গেলে গ্রামের অভিজ্ঞ বাষট্টি বছর বয়স্ক কুয়াঝাড়ানি চ্যাংটা হাবিবের ডাক পড়ে। কুয়া ঝাড়তে গেলে চ্যাংটা হাবিব ও তার জোগালি নজরের পরিশ্রমের অন্ত থাকে না। তারা বিশ্বাস করে, খিজির পয়গম্বর খুশি না হলে হারানো ধন নাগালে আসবে না, হাতে একটা ফুটো পয়সাও মিলবে না। তাই কাদাবাছুনি প্রক্রিয়ায় একদিকে হারের সন্ধান চলতে থাকে আরেক দিকে চ্যাংটা হাবিবের মতো মানুষের জীবনের দুর্দশার চিত্র স্পষ্ট হয়ে উঠতে থাকে। নজর আর চ্যাংটার জীবনে সাদা ভাতের সুখ ক্ষণিকের জন্য আসে। সে-ও সম্ভব হয় কুয়ার ভেতরে কারও হারানো ধনের সন্ধান পেলে। পানির দেশের পয়গম্বর খোয়াজ খিজিরের লুকিয়ে রাখা মালসামানা হাতে এলে সুখ স্থায়ী হবে সেই আশায় চল্লিশ বছর কুয়ার কাদাই ছেনে গেছে চ্যাংটা হাবিব। প্রায় দুই দশকের অব্যবহারে হেজে-মজে যাওয়া খুনকারবাড়ির প্রাচীন কুয়ার ভেতরে নামতে পারলে কাঙিক্ষত ধনসম্পদের সিন্দুকের দেখা মিলবে, সেই আশায় একদিন বেশুমার জংলাবেগুন আর শিয়ালকাঁটার ঝোপ সাফ করতে শুরু করে চ্যাংটা ফকির আর নজর। এরপর ঢোঁড়া সাপ, মাটে শিয়াল, লাল পিঁপড়ার দল, বুনো কুকুরের দলকে প্রতিরোধ করে প্যাচপেচে কাদার স্তরের ভেতরে দুজনের মন্থন অভিযান শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত খোয়াজ খিজিরের সিন্দুকের দেখা মিলে কি না বা কুয়াঝাড়ানিদের কী পরিণতি হয়, তা পড়তে পড়তে শ্বাসরোধ হয়ে আসতে থাকে।

শব্দের ঘূর্ণাবর্তের ভেতরে ফয়জুল ইসলাম প্রকট করে তুলেছেন মানবজীবনের নানাবিধ সংকট, বিড়ম্বনা আর ঘাত-প্রতিঘাত। গল্প বলার ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন সংযমী। সংযমী এই অর্থে যে তিনি আখ্যানের বিস্তার ঘটাতে গিয়ে কোনো তাড়াহুড়া করেননি। ধীরস্থিরভাবে গল্পের একেকটি চরিত্র নির্মাণ করেছেন।
ফয়জুল ইসলামের গল্পগ্রন্থ ‘বখতিয়ার খানের সাইকেল’–এর প্রচ্ছদ
ছবি: সংগৃহীত

ধারাবাহিকভাবে ফয়জুল ইসলামের গল্প পড়তে পড়তে ‘ঋতুরেখায়’ গল্পে এসে ধাক্কা খাই। এ কী! এ তো মানুষের গল্প নয়! এ তো মানুষের জীবন-জীবিকা, মানবিক সম্পর্ক, মিথকে আশ্রয় করে বাস্তবতার পুনর্নির্মাণ বা মনস্তাত্ত্বিক টানাপোড়েন নিয়ে গল্পগাথা নয়! মান্তিস রেলিজিওসা প্রজাতির পতঙ্গ ঘুরঘুরে ও কায়াকে নিয়ে কেন গল্প ফেঁদেছেন গল্পকার! এরা মূলত পাতাফড়িং। গল্পে এদের দশ মাসের জীবনচক্রের পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা দিয়েছেন গল্পকার। পাতাফড়িং কি গল্পে ব্যবহৃত মেটাফোর বা কী উদ্দেশ্যে এই মেটাফোর ব্যবহার, তা খুঁজতে খুঁজতে পাঠক পাতাফড়িংয়ের প্রজনন, জন্ম, খাদ্য গ্রহণ প্রক্রিয়া, বাসস্থান নির্মাণ, যৌনজীবন সম্পর্কে একেবারে স্পষ্ট ধারণা পেয়ে যায়। কাহিনিতে একে একে তরুণী পাতাফড়িং কায়া, চিকনি, সাজুগুজু, পুরুষ পাতাফড়িং ঘুরঘুরে চিৎপটাং, ফিচকে, বদখত, মাঞ্জা উড়ে এসে জুড়ে বসে। তরুণীদের যৌনক্ষুধার বলি হওয়ার আশঙ্কা নিয়েও পুরুষেরা এদের চারদিকে ঘুরঘুর করতে থাকে। বুদ্ধিমান পুরুষেরা নিজেদের বাঁচিয়ে সঙ্গমের আনন্দ শেষে চম্পট দেয়। কারণ, শুধু প্রজননের লক্ষ্যে সঙ্গমের ভয়াবহ পরিণতিতে যেভাবে বিশালার কাছে উজ্জ্বলের মুণ্ডু কাটা পড়ে, সেভাবে একই পরিণতি আসতে পারে পুরুষদের জীবনে। গল্পের দ্বিতীয় অংশে রক্তজবার রেস্তোরাঁয় বসে ঘুরঘুরে আর কায়ার মধ্যে যখন আলাপচারিতা হয় তখন স্বজাতি হত্যার ফরম্যাটটা চেনা মনে হতে হতে গল্পের নেপথ্যের গল্পটাও স্পষ্ট হয়ে উঠতে থাকে আর ‘ঋতুরেখায়’ নিছক পাতাফড়িংয়ের গল্প হয়ে থাকে না। ফয়জুল ইসলামের বেশির ভাগ গল্পের মতো এই গল্পের সমাপ্তিও শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত পাঠকের কাছে অজানাই থেকে যায়। তাই পাঠের সময়কাল দীর্ঘ হলেও গল্পপাঠের আনন্দ অটুট থাকে।

শুধু শব্দের সুষমামণ্ডিত ব্যবহার নয়, শব্দের ঘূর্ণাবর্তের ভেতরে ফয়জুল ইসলাম প্রকট করে তুলেছেন মানবজীবনের নানাবিধ সংকট, বিড়ম্বনা আর ঘাত-প্রতিঘাত। গল্প বলার ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন সংযমী। সংযমী এই অর্থে যে তিনি আখ্যানের বিস্তার ঘটাতে গিয়ে কোনো তাড়াহুড়া করেননি। ধীরস্থিরভাবে গল্পের একেকটি চরিত্র নির্মাণ করেছেন। এ কারণেই হয়তো তাঁর লেখা গল্পের দৈর্ঘ্য তুলনামূলকভাবে দীর্ঘ। হাওয়ার সঙ্গে এক–দুই মুঠো চিপস একটা প্যাকেটে ভরে দিয়ে যেই ফাঁকিটা দেওয়া হয় তেমন ফাঁকিজুকি ফয়জুল ইসলামের গল্পে পাওয়া যায় না। বরং ঠাসবুনটের ভেতরে বিস্তৃত হয় তাঁর গল্পের আখ্যান। তাই বিশ্বাস করি, আয়ুর বিচারে দীর্ঘ পথ অতিক্রম করতে না পারলেও গল্পকার ফয়জুল ইসলাম বহু বছর বাংলা সাহিত্যে প্রাসঙ্গিক হয়ে থাকবেন।