ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত ঘিরে যেভাবে শেয়ার–লাইকের মাধ্যমে ফায়দা হাসিলের চেষ্টা

কথায় আছে, কোনো যুদ্ধে প্রথম মৃত্যু হয় সত্যের। ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের প্রেক্ষাপটেও কথাটি সত্য।সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অগুনতি ভুয়া তথ্য ও অপতথ্য ছড়ানো হয়েছে ইসরায়েল-হামাস লড়াইকে কেন্দ্র করে। কী ধরনের ভুয়া ও অপতথ্য ছড়ানো হলো? আর কেনই-বা ছড়ানো হলো এসব তথ্য?

গ্রাফিকস: প্রথম আলো
ফিলিস্তিনের গাজায় হামলা চালানোর প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ট্যাংকসহ অবস্থান নিয়েছেন ইসরায়েলি সেনারা। ১১ অক্টোবর গাজা সীমান্তবর্তী সেদরতে।
ছবি: এএফপি

হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধকে ঘিরে কয়েক দিন ধরে বিভিন্ন ভুয়া তথ্য ও অপতথ্যের মেলা বসেছে যেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে! বিশেষ করে ব্যক্তি কিংবা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে অপতথ্য দিয়ে হেয় করার যে চল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখা যাচ্ছিল, ইসরায়েল-হামাস ইস্যু তাতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। আবার ফিলিস্তিনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করতে গিয়ে কেউ কেউ কোনো বাছবিচার না করেই নিজেদের অভিলাষী চিন্তার পসরা সাজিয়ে বসেছেন ফেসবুকে, বাস্তবতা যেখানে ভিন্ন। ফলে যুদ্ধ হামাস-ইসরায়েলের হলেও বাংলাদেশের অপতথ্যের জগতে তাতে গুণগত কোনো বদল ঘটেনি। একই প্রতিপক্ষ, একই কৌশল, অবশ্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহারটুকুকে খানিকটা নতুন বলা যায়। ইসরায়েল-হামাস ইস্যুতে আমরা প্রতিদিন লাখ লাখ ক্লিকবেইট আর ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে ফিলিস্তিনের ভাগ্যাহত জনগোষ্ঠীর কোনো উপকার করতে না পারলেও অযুত পরিমাণ লাইক, শেয়ার কামানোর মাধ্যমে নিজ নিজ ব্যবসায়িক ও রাজনৈতিক ফায়দা ঠিকই হাসিল করে নিচ্ছি।

হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধে ‘উইশফুল থিংকিং’-এর একটা আগ্রহোদ্দীপক নমুনা খুঁজে পাওয়া গেছে। উইশফুল থিংকিং বা অভিলাষী চিন্তা হচ্ছে এমন একটা কিছু ঘটবে বলে বিশ্বাস করা, যা আমরা চাই ঘটুক, তবে সেটা আদতে ঘটবে কি না তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীদের মধ্যে যাঁদের প্রায় বেশির ভাগই ফিলিস্তিনকে নৈতিক সমর্থন দিয়েছেন, অভিলাষী চিন্তার যে প্রবণতা দেখতে পাওয়া গেছে, তার উদাহরণস্বরূপ ভাইরাল হওয়া কিছু গুজবের নমুনা এখানে লক্ষণীয়। ইসরায়েলে সৈন্য পাঠাতে প্রস্তুত আফগানিস্তানের বর্তমান ক্ষমতাসীন তালেবান সরকার—এই দাবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একাধিক ব্যবহারকারী শেয়ার করেছেন, যা পরবর্তীকালে মিথ্যা বলে সাব্যস্ত হয়েছে। লাইলাতুল কদরের রাতে পবিত্র আল-আকসা মসজিদে মুসলমানদের জড়ো হওয়ার ভিডিও এবং ফিলিস্তিনি টেলিভিশন সিরিজের একটি অংশকে এই মর্মে শেয়ার করা হয়েছে যে ফিলিস্তিনিরা পবিত্র আল-আকসা মসজিদ ইসরায়েলিদের কাছ থেকে মুক্ত করেছে।

এই খবরটি প্রথম আলোতে প্রকাশিত হয়নি। কিন্তু প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে যেভাবে বিভিন্ন খবর প্রকাশিত হয়, সেই ডিজাইনেই এই ভুয়া সংবাদটি ছড়ানো হয়েছিল
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে হামাস-ইসরায়েলের যুদ্ধকে ঘিরে ড. মুহাম্মদ ইউনূস, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং বিএনপির বিরুদ্ধে ইসরায়েলকে নৈতিক সমর্থন প্রদানের প্রমাণস্বরূপ ভুয়া ফটোকার্ড, প্রথম আলোর নামে ভুয়া সংবাদ ও ভুয়া উক্তি ব্যবহার করতে দেখা গেছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও মির্জা ফখরুল ইসলামের উক্তিসংবলিত যে ফটোকার্ডগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছিল, সেগুলো পরে ভুয়া তথ্য বলে গণ্য হয়েছে।

আবার আজারবাইজানের কারাবাখ অঞ্চল থেকে কয়েকজন বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে আসার ভিডিও শেয়ার করে দাবি করা হয়েছে, তাঁরা ইসরায়েলের গোয়েন্দা এবং সামরিক বাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, যাঁদের নির্দেশমতো ইসরায়েল ফিলিস্তিনিতে হামলা চালাত। একাধিক পোস্টে হামাস ইসরায়েলের পারমাণবিক কেন্দ্র দখল করেছে দাবি করা হলেও আদতে তারা ইসরায়েলের পারমাণবিক কেন্দ্রগুলোর কাছাকাছি পৌঁছাতে পারেনি বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

এই নমুনাগুলো ভালোভাবে খেয়াল করলে বোঝা যাবে যে যাঁরা পোস্টগুলো শেয়ার করেছেন, তাঁরা চাইতেন কিছু একটা ঘটুক এবং যখনই এই পোস্টগুলো তাঁদের চাওয়াকে সমর্থন করত, তখন তাঁরা সেগুলো শেয়ার করতেন। অর্থাৎ তাঁরা চাইতেন, ফিলিস্তিনের যোদ্ধারা পবিত্র আল-আকসা মসজিদসহ ইসরায়েলের কোনো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা দখল করে নিক, ইসরায়েলের উচ্চপদস্থ সামরিক ও গোয়েন্দা কর্মকর্তারা আটক হোক কিংবা আফগানিস্তানের তালেবান সৈন্যরা ইসরায়েলকে কাবু করতে এগিয়ে আসুক।

এমনকি হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধ নিয়ে প্রকাশিত সংবাদেও অভিলাষী চিন্তার প্রবণতা লক্ষ করা গেছে। একটি বাংলা পত্রিকা এ মর্মে সংবাদ প্রকাশ করেছিল যে হামাসের ভয়ে ইসরায়েলিরা দেশ ছেড়ে পালানোর জন্য এয়ারপোর্টে ভিড় করছে। এই তথ্যের সূত্র হিসেবে একটি ইসরায়েলভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ‘গ্লোবস’-এর নাম মূল সংবাদে উল্লেখ করা হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে গ্লোবসের সংবাদটি পড়ে দেখা গেছে, ওই বাংলা পত্রিকা যে মর্মে সংবাদ প্রকাশ করেছে এবং আদতে যা ঘটেছে, তা পুরোপুরি বিপরীত। অর্থাৎ হামাসের ভয়ে ইসরায়েলিরা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়নি, বরং যেসব ইসরায়েলি নাগরিক বিদেশে আটকে ছিলেন, তাঁরা নিজ দেশে ফিরেছেন।

ইসরায়েলি পণ্যের ভুয়া তালিকা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এটি ছড়ানো হয়
ছবি: সংগৃহীত

এবার আসি কোনো ব্যক্তি বা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হেয় করার প্রয়াস প্রসঙ্গে। রাজনীতিতে এটা খুব সাধারণ চর্চা যে কোনো জাতীয় বা আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে ক্ষমতাসীন দল তার প্রতিপক্ষ দলগুলোর অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করে। বিশেষত ব্যক্তি কিংবা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের নৈতিক অবস্থানকে জনগণের নৈতিক অবস্থান বা সহানুভূতির বিরুদ্ধে ঠেলে দিয়ে তাঁদের হেয় প্রতিপন্ন করা হয়। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে হামাস-ইসরায়েলের যুদ্ধকে ঘিরে ড. মুহাম্মদ ইউনূস, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং বিএনপির বিরুদ্ধে ইসরায়েলকে নৈতিক সমর্থন প্রদানের প্রমাণস্বরূপ ভুয়া ফটোকার্ড, প্রথম আলোর নামে ভুয়া সংবাদ ও ভুয়া উক্তি ব্যবহার করতে দেখা গেছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও মির্জা ফখরুল ইসলামের উক্তিসংবলিত যে ফটোকার্ডগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছিল, সেগুলো পরে ভুয়া তথ্য বলে গণ্য হয়েছে। ভুয়া ফটোকার্ডের পাশাপাশি প্রথম আলোর নামে একটি ভুয়া সংবাদও ছড়িয়েছিল, যেখানে মির্জা ফখরুলের নামে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের পাশে থাকার অঙ্গীকার দেওয়ার অপতথ্য ছড়ানো হয়েছিল। ভুয়া ফটোকার্ডগুলোতে মুহাম্মদ ইউনূস ও মির্জা ফখরুলের যে বানোয়াট উক্তিগুলো ব্যবহার করা হয়েছে, সেগুলো পড়ে মনে হতে পারে, তাঁরা নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ ছাড়া অন্য কোনো বিষয়ে মনোযোগ দেবেন না এবং ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের হামলাকে তাঁরা নৈতিক সমর্থন দিচ্ছেন। অন্যদিকে একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল, যাদের নামে আগেও ভুয়া সংবাদ প্রচারের রেকর্ড রয়েছে, এই বলে সংবাদ প্রকাশ করেছিল যে ড. ইউনূস ইসরায়েলকে ১০০ কোটি টাকা দিয়ে সহায়তা করেছেন। তবে ওই নিউজ পোর্টালের প্রকাশিত সংবাদটি সর্বৈব মিথ্যা বলে প্রতিপন্ন হয়েছে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে এই ছবিটি তৈরি করা হয়। পরে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এ ধরনের ভুয়া উক্তিসংবলিত ফটোকার্ড ও ভুয়া সংবাদগুলো ডিজইনফরমেশন ক্যাম্পেইনারদের জন্য মোক্ষম হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। ভুয়া ফটোকার্ড কিংবা ভুয়া সংবাদের মাধ্যমে ডিজইনফরমেশন বা অপতথ্য ছড়িয়ে হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধ ইস্যুতে বিরোধী দলের নৈতিক অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করে ফিলিস্তিনের প্রতি সহানুভূতি জানানো হচ্ছে। সমীহ আদায় করার প্রচেষ্টা ক্ষমতাসীনদের। বিগত মাসগুলোতে দেখা গেছে, ক্ষমতাসীন দলের ভার্চ্যুয়াল অনুসারীরা বিভিন্ন ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের হেয় করতে নানা রকমের অপতথ্য ছড়িয়েছেন। বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম যে অপতথ্যের আখড়া হয়ে উঠবে, তা আগে থেকেই অনুমেয় ছিল। হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধ আমাদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পূর্ব–অধিষ্ঠিত অপতথ্যের ক্যাম্পেইনে অপ্রত্যাশিতভাবে হাজির হয়ে কিছুদিনের খোরাকের জোগান দিয়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতে হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধকে কেন্দ্র করে তাদের ডানপন্থী দলগুলোর সদস্যদের এক্স (টুইটার) অ্যাকাউন্ট থেকে ইসলামোফোবিক ও ফিলিস্তিনবিরোধী পোস্ট শেয়ার করা হচ্ছে। মূলত ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও তাঁর দল বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর থেকে ভারতে ইসলামোফোবিয়া ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। বিজেপির আইটি সেল সাম্প্রতিক হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধকে কেন্দ্র করে মুসলিমদের প্রতি পুঞ্জীভূত ঘৃণাকে উসকে দিচ্ছে। সম্প্রতি আল-জাজিরা তাদের একটি নিবন্ধে ভারতীয় স্বনামধন্য ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থা ‘বুম’-এর বরাত দিয়ে জানিয়েছে, ভারতে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচারণা চালাতে এবং ইসরায়েলকে সমর্থন করে একটি অপতথ্যের ক্যাম্পেইন শুরু হয়েছে, যেখানে কিছু ভেরিফায়েড ভারতীয় ‘এক্স’ (টুইটার) ব্যবহারকারীর অ্যাকাউন্ট থেকে রুটিনমাফিক অপতথ্য শেয়ার করা হচ্ছে। বুমের বরাত দিয়ে আরও জানানো হয়েছে, ফিলিস্তিনবিরোধী যেসব নেতিবাচক প্রচারণা চালানো হচ্ছে, তার মধ্যে একটি ভিডিও রয়েছে, যেখানে দাবি করা হয়েছে, ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা ডজনখানেক যুবতী মেয়েদের যৌনদাসী হিসেবে ধরে নিয়ে গেছেন। অন্য একটি ভিডিওতে এটা দাবি করা হয়েছে, হামাস একজন ইহুদি শিশুকে অপহরণ করে নিয়ে যাচ্ছে। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না, দুটো ভিডিওর দাবিই যথাযথ তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে নাকচ হয়ে গেছে। বাংলাদেশ ও ভারত তাদের রাজনৈতিক স্বার্থের পরিপ্রেক্ষিতে হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধ ইস্যুতে ভিন্ন ভিন্ন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পরিমণ্ডলে অপতথ্যের ক্যাম্পেইন চালাচ্ছে।

দ্য ডেইলি স্টার ও ড. মুহম্মদ ইউনূসের নাম ব্যবহার করে ছড়ানো হয় ভুয়া ফটোকার্ড
ছবি: সংগৃহীত

রাজনৈতিক অভিলাষ, ধর্মীয় অভিলাষ এর পাশাপাশি ব্যবসায়িক অভিলাষের নমুনাও দৃষ্টিগোচর হয়েছে। ফিলিস্তিনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে ইসরায়েলি পণ্যের একাধিক ভুয়া তালিকা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করে সেগুলো বয়কটের আহ্বান করতে দেখা গেছে। ওই তালিকাগুলোতে ইসরায়েলি পণ্যের বিকল্প হিসেবে যে পণ্যগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে, সেগুলোর নামও উল্লেখ করা হয়েছে। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে জনগণের নৈতিক অবস্থানকে পুঁজি করে কেউ যদি অন্য ব্র্যান্ডের পণ্যকে ইসরায়েলের পণ্য দাবি করে এবং ওই পণ্যের চাহিদা কমিয়ে নিজের ব্যবসায়িক লাভকে নিশ্চিত করতে চায়, তাহলে সেটাকে অস্বাভাবিক ঘটনা মনে করার কোনো কারণ নেই। কেননা, ফিলিস্তিনের প্রতি সহানুভূতি জানানো মানুষ তখন ইসরায়েলি পণ্যের বিকল্প হিসেবে তালিকায় উল্লেখিত পণ্যগুলো কিনবে।

গাজায় ইসরায়েলের বিমান থেকে ফেলা বোমায় জ্বলছে ভবন। ফিলিস্তিন
ফাইল ছবি: এএফপি

হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধ বাংলাদেশের অপতথ্যের জগতে গুণগত পরিবর্তন না আনলেও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার বেশ নতুন। এ যুদ্ধকে ঘিরে গুজব ছড়াতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স দিয়ে তৈরি একটি ছবিকে আল-আকসা মসজিদ রক্ষা করতে আসা হামাস যোদ্ধাদের আকাশ থেকে প্যারাস্যুট দিয়ে অবতরণের দৃশ্য বলে দাবি করা হয়েছিল। এ ছাড়া হামাস-ইসরায়েল সংঘাতের মধ্যে গোলাগুলির ভিডিও দাবি করে বিদেশি অ্যাকশন গেমের ভিডিও সিমুলেশন ব্যবহার করার প্রমাণ পাওয়া গেছে। যেহেতু ইতিমধ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নির্মিত একটি ছবি পাওয়া যাচ্ছে, সেহেতু ভবিষ্যতে এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে যুদ্ধের আরও গুজব তৈরি হওয়ার আশঙ্কাকে একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

ভারতে ফিলিস্তিনিবিরোধী ভুয়া তথ্য নিয়ে আল-জাজিরার একটি নিবন্ধ
ছবি: সংগৃহীত

হামাস-ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধ হচ্ছে এবং হাজার হাজার মানুষ মরছে। বাংলাদেশ সেই যুদ্ধে ফিলিস্তিনকে নৈতিক সমর্থন জানিয়েছে। তবে তাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করতে গিয়ে ভুয়া তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। ক্ষমতাসীনেরা এ যুদ্ধকে পুঁজি করে অপতথ্যের সহায়তা নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী ব্যক্তি ও দলকে হেয়প্রতিপন্ন করছে। সুবিধাবাদীরা তাদের ব্যবসায়িক লাভের পথ খুঁজছে। অন্যদিকে যাদের নৈতিক সমর্থন দেওয়ার নামে এসব সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে, সেই ফিলিস্তিনিরা এসব কর্মকাণ্ডে কোনোভাবে উপকৃত হচ্ছে না। একটা কথা সর্বজনবিদিত যে যুদ্ধে প্রথম মৃত্যু হয় সত্যের। তাই সুবিধাবাদীদের স্বার্থ আদায়ের লক্ষ্যে পরিচালিত ডিজইনফরমেশন ক্যাম্পেইন যাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাধারণ ব্যবহারকারীদের প্রভাবিত করতে না পারে, সেই জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পরিমণ্ডলে তথ্য কিংবা সংবাদের ভোক্তাদের সচেতন হওয়া জরুরি।

মোহাম্মদ আরাফাত: তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান ‘ফ্যাক্টওয়াচ’-এর ফ্যাক্ট চেকার।