ইমারসিভ ও ইন্টারঅ্যাকটিভ সিনেমা: দর্শক যেখানে গল্পের নিয়ন্ত্রক

গ্রাফিকস: প্রথম আলো

এক শ বছরের বেশি সময় ধরে বিশ্ব চলচ্চিত্র ‘লিনিয়ার ন্যারেটিভ’ বা ‘সরলরেখায় এগোনো’ গল্প বলার ওপর নির্ভরশীল ছিল। নন-লিনিয়ার গল্পের সংখ্যাও হাজার হাজার। লিনিয়ার চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে সাধারণত দর্শক বসে থাকেন। পর্দায় যা ঘটে, তিনি তা গ্রহণ করবেন, এটাই ছিল প্রচলিত ব্যাকরণ। কিন্তু প্রযুক্তির উত্থান, বিশেষত ভার্চ্যুয়াল রিয়েলিটি (ভিআর), অগমেন্টেডরিয়েলিটি (এআর), এক্সটেন্ডেড রিয়েলিটি (এক্সআর) ও ইন্টারঅ্যাকটিভ প্ল্যাটফর্ম সিনেমার ভাষাকে আমূল বদলে দিয়েছে। এখন দর্শক শুধু দেখছেন না, বরং গল্পের ভেতরে ঢুকে পড়ছেন, এমনকি ঘটনাপ্রবাহেও অংশ নিচ্ছেন। চলচ্চিত্রের এই নতুন ব্যাকরণের নাম ইমারসিভ ও ইন্টারঅ্যাকটিভ স্টোরিটেলিং। ইমারসিভ স্টোরিটেলিং ও ইন্টারঅ্যাকটিভ স্টোরিটেলিং দুটি শব্দ দেখতে কাছাকাছি হলেও অভিজ্ঞতার দিক থেকে এরা একেবারেই ভিন্ন।

ইমারসিভ স্টোরিটেলিং দর্শককে এমনভাবে ভেতরে টেনে নেয় যে তিনি অনুভব করেন ঘটনাটি যেন তাঁর চোখের সামনেই ঘটছে। এখানে দর্শকের কাজ মূলত অভিজ্ঞতাকে গভীরভাবে গ্রহণকরা। উদাহরণস্বরূপ, ৩৬০°ভিডিও প্রযুক্তি কিংবা ভার্চ্যুয়াল রিয়েলিটি (ভিআর) হেডসেট দর্শককে গল্পের কেন্দ্রে নিয়ে যায়। প্রজেকশন ম্যাপিংও একইভাবে বাস্তব স্থানকে গল্পের অংশে পরিণত করে। এ ক্ষেত্রে দর্শক যদিও কাহিনির গতিপথ বদলাতে পারেন না, তবে তিনি ঘটনাস্থলের ভেতরে শারীরিকভাবে উপস্থিত হওয়ার এক বিভ্রম পান। বলা যায়, ইমারসিভ স্টোরিটেলিং হলো ‘ডুবে যাওয়ার অভিজ্ঞতা’, যেখানে আমরা বাইরের জগৎ ভুলে গিয়ে এক নতুন বাস্তবতায় প্রবেশ করি।

প্রযুক্তির উত্থান, বিশেষত ভার্চ্যুয়াল রিয়েলিটি (ভিআর), অগমেন্টেডরিয়েলিটি (এআর), এক্সটেন্ডেড রিয়েলিটি (এক্সআর) ও ইন্টারঅ্যাকটিভ প্ল্যাটফর্ম সিনেমার ভাষাকে আমূল বদলে দিয়েছে।

অন্যদিকে, ইন্টারঅ্যাকটিভ স্টোরিটেলিং কেবল অভিজ্ঞতার ভেতর দর্শককে ফেলে রাখে না, বরং তাঁকে সক্রিয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতাও দেন। এখানে দর্শক নিজেই নির্ধারণ করতে পারেন গল্পের মোড় কোথায় ঘুরবে, কোন চরিত্র বাঁচবে আর কোন চরিত্র মারা যাবে। এককথায়, তিনি হয়ে ওঠেন কাহিনির সহলেখক। নেটফ্লিক্সের আলোচিত চলচ্চিত্র ’ব্ল্যাক মিরর: ব্যানডারস্ন্যাচ’ তার এক দৃষ্টান্ত। এই চলচ্চিত্রে দর্শককে বিভিন্ন বিকল্প দেওয়া হয়। যেমন নায়ক কি নির্দিষ্ট ওষুধ খাবে, নাকি খাবে না? প্রতিটি সিদ্ধান্ত গল্পকে এক নতুন পথে নিয়ে যায়, ফলে দর্শক প্রতিবার ভিন্ন অভিজ্ঞতা পান।

এখানে মৌলিক পার্থক্য হলো: ইমারসিভ স্টোরিটেলিং অভিজ্ঞতার গভীরতায় জোর দেয়, আর ইন্টারঅ্যাকটিভ স্টোরিটেলিং নিয়ন্ত্রণ ও বিকল্পের সুযোগ দেয়। একটিতে দর্শক পুরোপুরি ঘটনার ভেতর ডুবে থাকেন, অন্যটিতে তিনি সক্রিয়ভাবে কাহিনি নির্মাণে অংশ নেন।

জাতিসংঘের ভিআর ডকুমেন্টারি ‘ক্লাউডস ওভার সিদ্রা’ (২০১৫)
ছবি: সংগৃহীত

ইমারসিভ ও ইন্টারঅ্যাকটিভ স্টোরিটেলিং কেবল নতুন প্রযুক্তি নয়, এটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিপ্রেক্ষিতেও গভীর প্রভাব ফেলছে। যেখানে প্রচলিত চলচ্চিত্র দর্শককে দূর থেকে বিষয়বস্তু দেখার সুযোগ দিত, সেখানে এই নতুন মাধ্যম দর্শককে ঘটনাস্থলের অংশ করে তোলে। উদাহরণ হিসেবে নেওয়া যায় জাতিসংঘের ভিআর ডকুমেন্টারি ‘ক্লাউডস ওভার সিদ্রা’ (২০১৫)। এখানে সিরিয়ার এক কিশোরীর চোখ দিয়ে দর্শক সরাসরি শরণার্থীশিবিরের ভেতরে প্রবেশ করেন। শুধু দেখা নয়, তাঁরা অনুভব করেন শিশুর দৈনন্দিন জীবন, তার সীমাবদ্ধতা, ভয় ও আশা। এই অভিজ্ঞতা বুদ্ধিবৃত্তিক পর্যায়ের বাইরে গিয়ে দর্শকের মানসিক ও আবেগিক স্তরকে স্পর্শ করে।

এখন দর্শক শুধু দেখছেন না, বরং গল্পের ভেতরে ঢুকে পড়ছেন, এমনকি ঘটনাপ্রবাহেও অংশ নিচ্ছেন। চলচ্চিত্রের এই নতুন ব্যাকরণের নাম ইমারসিভ ও ইন্টারঅ্যাকটিভ স্টোরিটেলিং।

শিক্ষাক্ষেত্রে এর প্রভাবও উল্লেখযোগ্য। ইতিহাস শেখানোর সময় শিক্ষার্থীরা ৩৬০° ভিআর পরিবেশে প্রবেশ করতে পারেন, যেমন কোনো প্রাচীন যুদ্ধক্ষেত্র বা সভ্যতার পুনর্নির্মিত দৃশ্য। এটি কেবল তথ্য সরবরাহ করে না, বরং শিক্ষার্থীর অনুভূতি ও অভিজ্ঞতার সঙ্গে বিষয়বস্তুকে যুক্ত করে, ফলে শিক্ষার মান অনেকগুণ বেড়ে যায়। থেরাপির ক্ষেত্রে ইমারসিভ মিডিয়া পিটিএসডি বা মানসিক চাপে ভোগা রোগীদের পুনর্বাসনের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে। ভিআরের মাধ্যমে তাঁরা নিজের ট্রমা পরিস্থিতির পুনঃপ্রদর্শন দেখেন এবং নিরাপদ পরিবেশে তা মোকাবিলা করতে শেখেন।

রাজনৈতিক ও সামাজিক সচেতনতার ক্ষেত্রে ইমারসিভ অভিজ্ঞতা দর্শককে অন্যের চোখে বিশ্বের পরিস্থিতি দেখার সুযোগ দেয়। এটি কেবল তথ্য নয়, বরং সহানুভূতি ও নৈতিক দায়িত্ব তৈরি করে। যেমন জলবায়ু পরিবর্তন, শরণার্থী সংকট বা সামাজিক বৈষম্য নিয়ে নির্মিত ভিআর প্রকল্পগুলো দর্শককে সরাসরি অভিজ্ঞতার মাধ্যমে সচেতন করে তোলে। দর্শক যখন দেখেন, শোনেন ও অনুভব করেন, তাঁর ধারণা পরিবর্তিত হয়, যা শুধু পড়াশোনা বা সংবাদমাধ্যমে সম্ভব নয়।

রাজনৈতিক ও সামাজিক সচেতনতার ক্ষেত্রে ইমারসিভ অভিজ্ঞতা দর্শককে অন্যের চোখে বিশ্বের পরিস্থিতি দেখার সুযোগ দেয়। এটি কেবল তথ্য নয়, বরং সহানুভূতি ও নৈতিক দায়িত্ব তৈরি করে।

এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো মানসিক অভিজ্ঞতা। দর্শক আর কেবল কল্পনা করেন না; তিনি শারীরিক ও আবেগীয়ভাবে কাহিনির অংশ হন। লরা মার্কসের ‘হ্যাপটিক ভিজ্যুয়ালিটি’ তত্ত্ব অনুযায়ী দর্শকের দেহগত প্রতিক্রিয়া গল্পের অংশ হয়ে যায়। স্পর্শ, দেহের দিকনির্দেশনা, চলাচলসহ সব মিলিয়ে গল্পকে আরও বাস্তবসম্মত ও গভীর করে তোলে। এটি কেবল বিনোদন নয়, বরং দর্শকের অভিজ্ঞতাকে শিক্ষামূলক, নৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাবকে রূপান্তরিত করে।

ইমারসিভ ও ইন্টারঅ্যাকটিভ স্টোরিটেলিং সমাজকে এক নতুন নীতিনির্ধারণী দৃষ্টিভঙ্গি দিতে পারে। যখন মানুষ বাস্তব অভিজ্ঞতার মাধ্যমে কোনো সমস্যা বোঝে যেমন শরণার্থী শিশুদের জীবন, তখন তাদের মনোভাব, নৈতিক সচেতনতা ও সামাজিক প্রতিক্রিয়া পরিবর্তিত হয়। এটি কেবল সিনেমার চর্চা নয়; এটি একটি সাংস্কৃতিক ও নৈতিক শিক্ষার মাধ্যম হয়ে ওঠে।

ইমারসিভ ও ইন্টারঅ্যাকটিভ স্টোরিটেলিং কেবল প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন নয়, এটি চলচ্চিত্র ও নন্দনতত্ত্বের একটি গভীর প্রেক্ষাপটও তৈরি করছে। দর্শককে গল্পের মধ্যে ডুবিয়ে দেওয়ার এই নতুন ধারা শিল্পকে নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে পুনর্গঠনের সুযোগ দিচ্ছে। ভিআর বা এক্সআরকে অনেকে ‘চলচ্চিত্রপরবর্তী শিল্প’ হিসেবে বর্ণনা করছেন। লরা মার্কস তাঁর ‘দ্য স্কিন অব দ্য ফিল্ম’ গ্রন্থে ‘হ্যাপটিক ভিজ্যুয়ালিটি’ ধারণার প্রবর্তন করেছেন। তাঁর মতে, আধুনিক চলচ্চিত্রে দর্শক কেবল চোখের মাধ্যমে দৃশ্য গ্রহণ করেন না; বরং দেহগত অনুভূতি, স্পর্শ, দেহের আন্দোলন সবই গল্পের সঙ্গে সংযুক্ত হয়। এটি ইমারসিভ অভিজ্ঞতাকে এক নতুন মাত্রা দেয়, যেখানে দর্শক শারীরিকভাবে ঘটনাস্থলের সঙ্গে একীভূত হয়ে যান।

লরা মার্কস তাঁর ‘দ্য স্কিন অব দ্য ফিল্ম’ গ্রন্থে ‘হ্যাপটিক ভিজ্যুয়ালিটি’ ধারণার প্রবর্তন করেন
ছবি: সংগৃহীত

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দার্শনিক ও নন্দনতাত্ত্বিক প্রশ্ন হলো লিনিয়ার বনাম ব্রাঞ্চড ন্যারেটিভ। প্রচলিত চলচ্চিত্রে গল্পের বয়ান নির্দিষ্ট; একটি দৃশ্য অন্য দৃশ্যের ওপর নির্ভর করে এবং দর্শক কেবল সেই লিনিয়ার বয়ান গ্রহণ করেন। কিন্তু ইন্টারঅ্যাকটিভ কাঠামোতে বয়ান বহু পথে এগোতে পারে। এসপেন অ্যারসেথ তাঁর ‘সাইবারটেক্সট’ গ্রন্থে এমন কাহিনিকে ‘এরগোডিক লিটারেচার’ বলেছেন, যেখানে পাঠক বা দর্শকের শ্রম (এরগন) টেক্সট বা গল্প নির্মাণে অপরিহার্য। অর্থাৎ দর্শক কেবল গ্রহণকারী নন, তিনি কাহিনির সহস্রষ্টা। তাঁর সিদ্ধান্ত, নির্বাচন ও ক্রিয়াই গল্পকে একটি নির্দিষ্ট রূপ দেয়। এটি চলচ্চিত্রকে সরলরেখার গল্প থেকে বহুবচন (মাল্টিলিনিয়ার) বয়ানের দিকে নিয়ে যায়।

ইমারসিভ ও ইন্টারঅ্যাকটিভ স্টোরিটেলিং সমাজকে এক নতুন নীতিনির্ধারণী দৃষ্টিভঙ্গি দিতে পারে। যখন মানুষ বাস্তব অভিজ্ঞতার মাধ্যমে কোনো সমস্যা বোঝে যেমন শরণার্থী শিশুদের জীবন।

দর্শকের ভূমিকা আরও গভীরভাবে দেখা যায় ক্রাকাওয়ারের তত্ত্বে। তিনি বলেন, প্রচলিত সিনেমায় দর্শক ক্যামেরার চোখের মাধ্যমে বাস্তবতাকে ‘ধরে রাখেন’। দৃশ্যটি তাঁর সামনে আসে, কিন্তু তিনি কেবল পর্যবেক্ষক। ইমারসিভ ন্যারেটিভে কিন্তু দর্শক নিজেই ক্যামেরার ভূমিকায় অবস্থান করেন। তিনি শুধু দৃশ্য গ্রহণ করেন না; তাঁর দৃষ্টি, দেহের অবস্থান ও প্রতিক্রিয়া গল্পকে রূপান্তরিত করে। অর্থাৎ দর্শক নিজেই গল্পের অংশ হয়ে ওঠেন। তাঁর উপস্থিতি ও সিদ্ধান্তই বয়ানকে নতুন অর্থ প্রদান করে।

এই তিনটি দিক—শারীরিক অভিজ্ঞতার অন্তর্ভুক্তি, লিনিয়ার বনাম ব্রাঞ্চড ন্যারেটিভ এবং দর্শকের সক্রিয় ভূমিকা মিলিত হয়ে ইমারসিভ ও ইন্টারঅ্যাকটিভ স্টোরিটেলিংকে কেবল বিনোদনের মাধ্যম নয়, বরং একটি নতুন নন্দনতাত্ত্বিক ফ্রেমওয়ার্ক হিসেবে দাঁড় করাচ্ছে। এটি চলচ্চিত্রের কল্পনাকে নতুন মাত্রায় নিয়ে যায়, যেখানে দর্শক আর কেবল দর্শক নন; তিনি শিল্পের অভিজ্ঞতার সহনির্মাতা।

ইমারসিভ ও ইন্টারঅ্যাকটিভ স্টোরিটেলিং শুধু নন্দনতত্ত্ব বা সামাজিক প্রভাবের মাধ্যম নয়, এটি অর্থনীতি ও বিনোদনশিল্পেও গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনছে। জোসেফ পাইন ও জেমস গিলমোরের ‘দ্য এক্সপেরিয়েন্স ইকোনমি’ তত্ত্ব অনুযায়ী, আজকের দর্শক কেবল পণ্য বা সেবা নয়, অভিজ্ঞতা কিনতে চান। ইমারসিভ সিনেমা, ভিআর থিয়েটার, মিউজিয়াম ইনস্টলেশন এবং মেটাভার্সে প্রদর্শিত ইন্টারঅ্যাকটিভ কাহিনি—সবকিছুই দর্শককে নতুন ধরনের অভিজ্ঞতা প্রদান করছে, যা ঐতিহ্যবাহী ‘বক্স অফিস’ মডেলকে ছাপিয়ে যাচ্ছে।

বাণিজ্যিক দিক থেকে ইমারসিভ সিনেমার বাজার এখনো তুলনামূলক সীমিত। ভিআর হেডসেট, ৩৬০ ক্যামেরা ও উচ্চমানের সাউন্ড সিস্টেমের খরচ এখনো অনেক। ফলে এই শিল্প প্রধানত ধনী শ্রেণির দর্শকের কাছে সীমিত। তবে প্রযুক্তি সস্তা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এটি বিস্তৃত দর্শকের কাছে পৌঁছাতে পারে, যেমন একসময় টেলিভিশন বা স্মার্টফোন বিস্তৃত হয়েছিল।

তাত্ত্বিক দিক থেকেও প্রশ্ন ওঠে, যখন দর্শক কাহিনিতে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন, তখন তাঁর নৈতিক দায়িত্ব কতটুকু? ইন্টারঅ্যাকটিভ গল্পে সহিংস বা বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিলে দর্শকের মানসিক প্রভাব কী হতে পারে? জিন বড্রিলার্ড তাঁর ‘সিমুলাক্রা অ্যান্ড সিমুলেশন’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, অতিরিক্ত সিমুলেশন বাস্তবতাকেই প্রতিস্থাপিত করতে পারে। অর্থাৎ বাস্তব ও ভার্চ্যুয়ালের মধ্যে সীমানা অস্পষ্ট হয়ে যায়।

স্টোরিটেলিংকে কেবল বিনোদনের মাধ্যম নয়, বরং একটি নতুন নন্দনতাত্ত্বিক ফ্রেমওয়ার্ক হিসেবে দাঁড় করাচ্ছে। এটি চলচ্চিত্রের কল্পনাকে নতুন মাত্রায় নিয়ে যায়, যেখানে দর্শক আর কেবল দর্শক নন; তিনি শিল্পের অভিজ্ঞতার সহনির্মাতা।

আরেকটি চ্যালেঞ্জ হলো শিল্প বনাম প্রযুক্তি। প্রযুক্তি যতই উন্নত হোক, চলচ্চিত্রের শৈল্পিক দিক কীভাবে রক্ষিত হবে, এটি একটি বড় প্রশ্ন। লিনিয়ার ন্যারেটিভের সরলতা, গল্প বলার নিখুঁত কাঠামো, নাট্যসংগঠন ইত্যাদি কি হারিয়ে যাবে, নাকি প্রযুক্তির সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে নতুন রূপ নেবে? গবেষকেরা মনে করেন, সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখলে শিল্পকে আরও সমৃদ্ধ করতে পারে প্রযুক্তি। দর্শক শুধু গল্পের অংশ হয়ে ওঠেন না, তিনি শিল্পের সহস্রষ্টাও হয়ে ওঠেন।

ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ আরও বিস্তৃত। বর্তমানে ইমারসিভ স্টোরিটেলিং মূলত প্রযুক্তিনির্ভর, যা উচ্চব্যয় ও সীমিত অ্যাক্সেসের কারণে সীমিত শ্রেণির দর্শকের কাছে সীমাবদ্ধ। কিন্তু ধীরে ধীরে প্রযুক্তি সস্তা ও সহজলভ্য হলে এটি শিক্ষাক্ষেত্র, সামাজিক সচেতনতা ও বিনোদনে বিপ্লব ঘটাতে সক্ষম হবে। এ ছাড়া দর্শকের মানসিক ও নৈতিক প্রভাব নিয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে, যাতে শিল্প ও দর্শকের মধ্যে ভারসাম্য বজায় থাকে।

ইমারসিভ ও ইন্টারঅ্যাকটিভ স্টোরিটেলিং চলচ্চিত্রকে নতুন সংজ্ঞা দিচ্ছে। প্রযুক্তি, নন্দনতত্ত্ব, সমাজ ও অর্থনীতির সংযোগ এই পরিবর্তনকে বৈপ্লবিক মাত্রা দিয়েছে। তবে এ নতুন ব্যাকরণ শেখা ও গ্রহণ করা একটি চ্যালেঞ্জ। শিল্পী, গবেষক ও দর্শক—তিন পক্ষকে মিলিতভাবে কাজ করতে হবে, যাতে চলচ্চিত্র কেবল বিনোদন নয়, বরং শিক্ষামূলক, নৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাবক হিসেবেও দাঁড়াতে পারে।