কবিতার পাঠক বেড়েছে

কবিতার পাঠক আজকাল কি কমে গেছে নাকি বেড়েছে? পাঠক যদি কমে যায়, তাহলে কেন কমেছে? কবিতার বই কী রকম বিক্রি হয়? কবিতাজগতে সম্পৃক্ত থাকার কারণে প্রায়ই এসব প্রশ্নের মুখোমুখি হই। এককথায় কোনো প্রশ্নেরই উত্তর দেওয়া সম্ভব নয়। কোনো নির্ভরযোগ্য জরিপ যেহেতু নেই, সুতরাং প্রকৃত চিত্র পাব না। উত্তরের জন্য নির্ভর করতে হবে পর্যবেক্ষণ, অভিজ্ঞতা, অনুমান, পারিপার্শ্বিক অবস্থা অনুধাবনের ওপর।

বিশ্বনন্দিত সংগীতজ্ঞ পণ্ডিত রবিশঙ্করের সাক্ষাৎকার নেওয়ার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল—দু-দুবার। একবার তিনি বলেছিলেন, ‘উচ্চাঙ্গসংগীত খুব সাধারণ মানুষও সহজেই বুঝবেন, এমন আশা করাটা সংগত নয়। নিজেকে শ্রোতা হিসেবে তৈরি করতে হবে আগে।’ কবিতাও যেহেতু শুদ্ধতম শিল্প, সে কারণে এর মর্ম বুঝতে পাঠককে কিছুটা তৈরি তো হতে হবেই। গদ্যে তেমন কোনো রহস্যাভাস উপস্থিত নেই, যা আছে কবিতার লাবণ্যমাখা শরীরে-মননে। একেক পাঠে একেক প্রকার ব্যঞ্জনার স্বাদ পাওয়া যায় কবিতার। যেন এক নান্দনিক চিত্রকর্ম। আধখানা পাই তার, আধেক হারাই। আলো-আঁধারির শিহরণ, মাদকতায় মুগ্ধ হই। কবিতা বেদনার উপশম। গল্প-উপন্যাসের তুলনায় কবিতার পাঠক চিরকালই কম ছিল। হয়তো তা-ই থাকবে।

তবে আমার মনে হয়, ইদানীং কবিতার পাঠক বেড়েছে। প্রিন্ট মাধ্যম থেকে একালের মানুষ খানিকটা দূরবর্তী, ডিজিটালেই এখন যেন তাঁদের বেশি স্বাচ্ছন্দ্য এবং তাঁরা মুঠোফোনের ওপর পুরো নির্ভরশীল। তাই কবিতাও এখন ভালোমতো ঠাঁই নিয়েছে নেট দুনিয়ায়, মেটা পৃথিবীতে। নতুন নতুন পাঠকও সৃষ্টি হচ্ছে, সন্দেহ নেই। আদতে পাঠকের কাছে পৌঁছানোর মাধ্যমটা একেবারেই পাল্টে গেছে। আমূল সে পরিবর্তন। অত্যাধুনিক ডিভাইস আমাদের প্রায় সবার হাতের নাগালে, কবিতাও পেয়েছে নতুন ঘরবসতি। তবে কথা কি, ডিজিটাল মাধ্যমে যেসব কবিতা পাচ্ছি, সেসব কবিতাকে যেমন হৃদয়ছোঁয়া হতে হচ্ছে, তেমনি হতে হচ্ছে অতি অবশ্যই সংক্ষিপ্ত। কারণ, অনলাইন বা ডিজিটালে দীর্ঘ লেখা পড়ার সময় বা ইচ্ছা মানুষের অতটা নেই।

আর ছাপা বইয়ের পাঠক কমেছে, সেটা নির্মম সত্যি। আবার এ কথাও ঠিক, বই পাঠকের কাছে সহজে পৌঁছানো এখনো অবধি নিশ্চিত করা যায়নি।

কবিতা ও গান একে অন্যের পরিপূরক। কবিতা প্রশান্তির উৎস। চিন্তাকে উসকে দেয়। ভালো লাগায় মন ভরিয়ে দিতে পারে। কবিতার অদ্ভুত এক সম্মোহনী ক্ষমতা আছে, যা গদ্যের নেই। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় সার্থক কথাশিল্পী ও কবি—দুটোই ছিলেন। সুনীলদার একটা কথা এ ব্যাপারে বেশ প্রাসঙ্গিক। তিনি বলেছিলেন, ‘গদ্য লিখতে পারলে ভারমুক্ত হই, কবিতা লিখে পাই আনন্দ।’