দীনেশচন্দ্র সেন সংকলিত মৈমনসিংহ গীতিকা আর তার ইংরেজি তরজমা ইস্টার্ন বেঙ্গল ব্যালাডস ১ম খণ্ড—দুটি বই–ই প্রকাশিত হয় ১৯২৩ সালে। বরং মূল বইটি প্রকাশের আগেই বের হয় তরজমাটি। প্রকাশের পরপরই এটি দেশি-বিদেশি সাহিত্যিক মহলে আলোড়ন তোলে। বাংলা লোকসাহিত্যের সমৃদ্ধ ভান্ডারের পরিচয় পেয়ে সবাই বিস্মিত হন। প্রকাশের শতবর্ষ উপলক্ষে দেখা দরকার, কোন বিস্ময়কর উপাদান এ বইয়ে আছে, যা আমাদের জাতীয় মানসকে নিবিড়ভাবে প্রতিনিধিত্ব করে।
১৯১৩–৩২ কালপর্বে দীনেশচন্দ্র সেন কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে রামতনু লাহিড়ী রিসার্চ ফেলোশিপের অধীনে চার খণ্ডে পূর্ব্ববঙ্গ-গীতিকা সম্পাদনা করেন। এরই ১ম খণ্ড মৈমনসিংহ গীতিকা।
১৯১৩ সালে ময়মনসিংহ থেকে প্রকাশিত সৌরভ পত্রিকায় পূর্ব বাংলার কয়েকটি গীতিকার অংশবিশেষ এবং সে সম্পর্কে চন্দ্রকুমার দের প্রবন্ধ পড়ে দীনেশচন্দ্র সেন এর প্রতি আকৃষ্ট হন। গীতিকা সংগ্রহের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক চন্দ্রকুমার দের নিযুক্তির ব্যবস্থা করেন। পরে একই কাজে নিযুক্ত করেন আশুতোষ চৌধুরী, নগেন্দ্রচন্দ্র দে ও কবি জসীমউদ্দীনকে। এঁদের মাধ্যমে ময়মনসিংহসহ বর্তমান বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ৫৪টি গাথা সংগৃহীত হয়। যেগুলো তিনি পূর্ব্ববঙ্গ-গীতিকায় সংকলন করেন। একই সঙ্গে বের করেন এর ইংরেজি তরজমা, চার খণ্ডে ইস্টার্ন বেঙ্গল ব্যালাডস। এসব গীতিকার প্রতি তাঁর আগ্রহকে সুনজরে দেখেননি কলকাতার অভিজাতশ্রেণির কিছু ব্যক্তি।
মৈমনসিংহ গীতিকার ভূমিকায় তিনি লিখেছেন:
কেহ কেহ ইংরাজি শিক্ষার দর্পে উপেক্ষা করিয়া বলিলেন, ‘ছোটলোকেরা, বিশেষতঃ মুসলমানেরা, ঐ সকল মাথামুণ্ডু গাহিয়া যায়, আর শত শত চাষা লাঙ্গলের উপর বাহুভর করিয়া দাঁড়াইয়া শোনে। ঐ গানগুলির মধ্যে এমন কি থাকিতে পারে যে শিক্ষিত সমাজ তৎপ্রতি আকৃষ্ট হইতে পারেন? আপনি এই ছেঁড়া পুঁথি ঘাঁটা দিন কয়েকের জন্য ছাড়িয়া দিন।’
কিন্তু পূর্ব বাংলার বরপুত্র দীনেশচন্দ্র সেন এসব বুদ্ধিজীবীর আহ্বানে সাড়া দেননি। পূর্ব বাংলার অশিক্ষিত চাষাদের হৃদয়মথিত কাব্যকথার মধ্যেই যে জগৎশ্রেষ্ঠ শিল্পের সৌন্দর্য বিদ্যমান, উৎকৃষ্ট জহুরি হিসেবে তিনি তা যথার্থভাবেই উপলব্ধি করেছিলেন। শতবর্ষপূর্তিতে আমরা এ নিবন্ধে তাঁর অনুধাবনের নির্যাসকেই সন্ধান করব।
এ অনুধাবনের গোড়ার কথাটা বলা প্রয়োজন। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের কৃপায় এ দেশে যাঁরা শিক্ষিত হয়ে ওঠেন, তাঁদের মধ্যে দুটি ভাগ ক্রমে স্পষ্ট হয়। এক ভাগের মধ্যে ছিল অন্ধভক্তির আচ্ছন্নতা; তাঁরা উপনিবেশবাদী প্রচারণার প্রতি ছিলেন আস্থাশীল; অর্থাৎ আমাদের নিজেদের কোনো শিক্ষা-সংস্কৃতির ঐতিহ্য নেই; ব্রিটিশরা এখানে শিক্ষা-সংস্কৃতির যে ধারা নিয়ে এসেছে, সেটাই উন্নত, গ্রহণযোগ্য। আরেক ভাগের মধ্যে এ নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছিল; তাঁরা নিজ দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য অনুসন্ধানে ব্যাপৃত হয়েছিলেন। রাজেন্দ্রলাল মিত্র, হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, দীনেশচন্দ্র সেন প্রমুখের নাম এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য। রাজেন্দ্রলাল মিত্রের দ্য স্যাংসক্রিট বুদ্ধিস্ট লিটারেচার ইন নেপাল, হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর চর্যাপদ আবিষ্কার, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লোকছড়া সংগ্রহ প্রভৃতির পরম্পরায় দীনেশচন্দ্র সেনের পূর্ব বাংলার গীতিকা সংকলনে আত্মনিয়োগের বিষয়টি বিবেচ্য। আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ভান্ডার যে শূন্য নয়, বরং তা প্রত্যাশার অতিরিক্ত সমৃদ্ধ, সেটিই তাঁরা আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে প্রমাণ করেন। এর মাধ্যমে তাঁদের উপনিবেশবাদবিরোধী মনোভাবের পরিচয় স্পষ্ট। এভাবেই তাঁরা নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেন বিউপনিবেশায়ন প্রক্রিয়ার সফল উদ্যোক্তার ভূমিকায়। মৈমনসিংহ গীতিকার প্রকাশ এই বিউপনিবেশায়ন প্রক্রিয়ারই ফল। এর মধ্য দিয়ে দেশীয় সাহিত্যের যে রত্নভান্ডার বিশ্ববাসীর সামনে উন্মোচিত হয়, সেটাই উপনিবেশবাদী প্রচারণার বিপক্ষে এক বড় প্রমাণ।
লেখকজীবনের শুরু থেকেই দীনেশচন্দ্র সেনের অবস্থান ছিল উপনিবেশবাদী চিন্তার বিপক্ষে। বঙ্গভাষা ও সাহিত্য (১৮৯৬) রচনাসূত্রেই আমরা তাঁর এই জীবনভাবনার সঙ্গে পরিচিত হই। ঔপনিবেশিক শাসন উপনিবেশিত মানুষের মধ্যে যে হীনম্মন্যতার জন্ম দেয়, তা দূর করতে স্বাদেশিকতায় উদ্বুদ্ধ দীনেশচন্দ্র ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির রূপ অনুসন্ধানে ব্যাপৃত হন। গ্রামাঞ্চল মন্থন করে তিনি প্রাচীন পুঁথি আবিষ্কারের কঠিন শ্রমে ব্রতী হন। অতঃপর তিনি এই সত্যে উপনীত হন যে অখণ্ড বাংলার ভৌগোলিক পরিসরের মধ্যেও পূর্ব বাংলার রয়েছে ভিন্নতর বৈশিষ্ট্য। বাংলার পূর্ব অঞ্চলে অধিক হারে নিম্নবর্গীয় জনগোষ্ঠীর বসবাসসূত্রে এখানেই প্রকৃত জীবনস্পন্দিত সাহিত্যের চর্চা অনেক বেশি বেগবান ছিল। নদীবিধৌত, নদীভাঙন-কবলিত, বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়-আক্রান্ত, খাল–বিলঘেরা, পলিমাটির কোমলতাশুদ্ধ এ অঞ্চলের মানুষের জীবন নিয়ত সংগ্রামশীল। অন্যদিকে সহজ-সরল, জটিলতামুক্ত, উদার চেতনায় ঋদ্ধ। ধর্মতান্ত্রিক সংকীর্ণতা কিংবা শাস্ত্রীয় কাঠিন্য ও নির্মমতা তাদের জীবনকে কলুষিত কিংবা মানবিক আবেগশূন্য করেনি। ফলে এই অঞ্চলেই সৃষ্টি হতে পেরেছে বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে ধর্মাচ্ছন্নতামুক্ত মানবিক প্রেমের আখ্যানমূলক গীতিকাসমূহ। মৈমনসিংহ গীতিকার ভূমিকায় এ সম্পর্কে তিনি যে বিশ্লেষণ করেছেন, তা আজও প্রাসঙ্গিক ও অনুধাবনযোগ্য।
গোটা পূর্ব বাংলায়ই আমরা লক্ষ করি ব্রাত্য জনগোষ্ঠীর প্রাধান্য। মূলত গঙ্গার তীরভূমিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে উচ্চবর্ণের এলিটদের বসবাস। গঙ্গার স্বর্গ থেকে মর্ত্যে আগমনবিষয়ক পৌরাণিক আখ্যান, গঙ্গাজলের পবিত্রতা প্রভৃতি মিথের সঙ্গে এই বসবাসের সম্পর্ক নিবিড়। গঙ্গার মর্ত্যে আগমনের এই মিথের সঙ্গে দেবতা শিবেরও রয়েছে ঘনিষ্ঠ যোগ। অথচ এই গঙ্গার মূল প্রবাহ হওয়া সত্ত্বেও পূর্ব বাংলায় এর নাম হলো পদ্মা, যে পদ্মার জল আর পবিত্র থাকল না। কারণ, মনসা দেবীর আরেক নাম পদ্মা। শিবের অস্বীকৃত এই কন্যার নামে পদ্মা নামকরণের মধ্যে এরূপ ব্রাত্যভাবনার গভীর সংযোগটিও তাই লক্ষণীয়।
সুতরাং পূর্ব বাংলার পশ্চাৎপদতার বিষয়টি শুধু ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন-বৈষম্যের সঙ্গেই যুক্ত নয়, এর সঙ্গে প্রাচীনকাল থেকে আর্যদের এ দেশে আগমন ও বসতি নির্মাণের বিষয়টিও নিগূঢ়ভাবে সম্পর্কিত। প্রাচীনকাল থেকে বাংলার পূর্বাঞ্চলে অনার্যদেরই আধিপত্য। এখানে মুসলিম প্রাধান্যেরও কারণ একই। গীতিকাসমূহে শাস্ত্রীয় বাধামুক্ত স্বাধীন জীবনাকাঙ্ক্ষা ও উদার মনোবৃত্তির যে পরিচয় পাই, তার সঙ্গে অনার্য জীবন-পরিবেশের রয়েছে নিবিড় যোগ।
গীতিকায় বিধৃত নারীচরিত্রের বিশেষত্ব বিশ্লেষণের কালেও দীনেশচন্দ্র সেন অনার্য বৈশিষ্ট্যকে চিহ্নিত করেছেন:
কোথাও কৃত্রিমতা, বাঁধাবাঁধি, মুখস্থ-করা শাস্ত্রের গৎ, ইহার কিছুই নাই। পরিণয় আছে কিন্তু পুরোহিতের মন্ত্রপূত দম্পতীর চেলীর বাঁধের মত তাহা বাহ্যাড়ম্বর নহে।... এই সকল গাথায়, তিনি গৃহের গৃহলক্ষ্মী, সমাজের নিকট নতশিরা, তাঁহার দর্প-অভিমান নাই, লজ্জার অবগুণ্ঠন তিনি টানিয়া ফেলিয়া রাজপথে বাহির হয়েন নাই; কিন্তু তথাপি অনুরাগের ক্ষেত্রে তিনি জগজ্জয়ী।
দীনেশচন্দ্র সেন নারীর স্বাধীন প্রণয়াবেগের মধ্যে তাঁদের যে দুর্জয় শক্তি অবলোকন করেন, তার মূলেও নিহিত শাস্ত্রের বন্ধনমুক্ত এক ব্রাত্য জীবনধারা:
আমরা যে সতীত্বের বড়াই করিয়া থাকি, তাহার জন্ম আইনকানুনে এবং আচার্য্যরে মস্তিষ্কে নহে, তাহার জন্ম প্রেমে, তাহা নিজের বলে বলীয়ান। বাহিরের শক্তি যে পতিব্রতাকে রক্ষা করে, তাহার শক্তি দুর্ব্বলতার ছদ্মবেশমাত্র, কিন্তু প্রেম যাহাকে জন্ম দিয়াছে, প্রেম যাহাকে রক্ষা করিতেছে, তাহা ঋষিবচনের প্রতীক্ষা করে না। তাহা হিন্দুসমাজের নিজস্ব নহে, তাহা সমস্ত মানবজাতির আরাধনার ধন।... এই যে মনের অগাধ অনুরাগ, পল্লীগাথাগুলি পড়িলে দেখা যায় তাহার কি দুর্জয় শক্তি।
আবার গীতিকার জীবনপরিবেশের মধ্যে দীনেশচন্দ্র সেন লক্ষ করেন, সংস্কৃত সাহিত্যের প্রভাবমুক্ত বাংলার প্রকৃতি-আশ্রিত একান্ত স্বকীয় বৈশিষ্ট্য:
পাড়াগাঁয়ের এই সকল কথা, যাহাতে সংস্কৃতের একটুকুও ধার করা শোভা নাই, যাহা নিজ স্বাভাবিক রূপে অপূর্ব্ব সুন্দর, ...। নানা দিক দিয়া এই সকল পল্লীগাথায় খাঁটি বাঙালী জীবনের অফুরন্ত সুধা, অচিন্তিতপূর্ব্ব মাধুর্য্য ঝরিয়া পড়িতেছে। ...এগুলি জানিতাম না বলিয়া আমরা এতকাল শুধু সীতা-সাবিত্রীকে লইয়া গৌরব করিয়াছি। এখন আমরা মহুয়া, মদিনা ও কমলাকে লইয়া তদপেক্ষা বেশী গৌরব করিতে পারিব।
গীতিকার ভাব ও ভাষা বিশ্লেষণ করে দীনেশচন্দ্র সেনের মনে হয়েছে, এগুলো সংস্কৃত প্রভাবের পূর্ববর্তী যুগে রচিত। ‘তখন সিন্ধাবাদের স্কন্ধে বৃদ্ধের মত বাঙ্গালা ভাষার উপর সংস্কৃতের আদর্শ আসিয়া এরূপ দুরন্তভাবে চাপিয়া বসে নাই।’ তিনি বলেছেন, এখানে আমরা ‘বাঙ্গালা ভাষার স্বরূপটি পাইতেছি। বহু শতাব্দীকাল পাশাপাশি বাস করার ফলে হিন্দু ও মুসলমানের ভাষা এক সাধারণ সম্পত্তি হইয়া দাঁড়াইয়াছে। ইহা সমগ্র বঙ্গবাসীর ভাষা। এ ক্ষেত্রে জাতিভেদ নাই। ...এই গীতিসাহিত্য হিন্দু-মুসলমান উভয়ের...’। তিনি আরও বলেছেন, ‘খাঁটি বাঙ্গালা যে প্রাকৃতের কত নিকট ও সংস্কৃত হইতে কত দূরবর্ত্তী, তাহা স্পষ্টভাবে হৃদয়ঙ্গম হইবে।’
এই এক শ বছরে দীনেশচন্দ্র সেনের মূল্যায়নের যথাযথতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন দেখা দেয়নি। বরং দিন দিন তা শক্ত ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। পূর্ব বাংলার সমাজ, সংস্কৃতি, সাহিত্য ও ভাষা-সম্পর্কিত তাঁর উপলব্ধির স্বরূপটি আমরা গত এক শ বছরে আরও গভীরভাবে অনুধাবন করতে পেরেছি। বর্ণপ্রথার নিচুতলে অবস্থিত অনার্য ব্রাত্য মানুষের প্রাধান্যই এখানকার স্বাতন্ত্র্যমণ্ডিত সাংস্কৃতিক মহত্ত্বকে নিশ্চিত করেছে। আমরা জানি, নিম্নবর্গীয় চিত্তেই স্ফুরিত হয় প্রকৃত উদারতা, মানবিকতা, শাস্ত্রীয় কঠোরতামুক্ত এক জীবনবাদী চেতনা, যা সম্ভব করে তোলে এমন মহৎ সাহিত্য সৃষ্টি। এই নিম্নবর্গের মধ্যে পরবর্তীকালে যে পরিবর্তনই আসুক না কেন, তারাও উত্তরাধিকারসূত্রে লাভ করেছে ওই সব মানবীয় গুণ, এবং গভীর প্রাণরসে আচ্ছন্ন সাহিত্য সৃষ্টির আদর্শ।
অশিক্ষিত মানুষের হাতেই সৃষ্টি হয়েছে গীতিকার মহৎ সাহিত্য। তাতে প্রতিফলিত হয়েছে সমাজেরই আসল রূপ। প্রেম আর মানবিকতাই যার ধর্ম। প্রণয় নিয়ে স্বাধীন আকাঙ্ক্ষাই বর্ণপ্রথার বিরুদ্ধে, প্রথাগত ধর্মের বিরুদ্ধে তাদের দাঁড় করিয়েছে। তাদের শক্তি জুগিয়েছে। এই প্রণয়াবেগই তাদের ভাষাকে করেছে এমন রুচিশীল, রসমণ্ডিত। প্রাত্যহিক উচ্চারণে যে ভাষা সৌন্দর্য হারায়, সেই ভাষাই প্রণয়ের আবেশে মাধুর্য ফিরে পায়। যেমন মহুয়ার উদ্দেশে নদের চাঁদের উক্তি, ‘কোথায় পাব কলসী কইন্যা কোথায় পাব দড়ী।/ তুমি হও গহীন গাঙ্গ আমি ডুব্যা মরি ॥’ আর চান্দ বিনোদকে নির্জনে প্রথম দেখার পর মলুয়ার কী হলো: ‘লাজ-রক্ত হইল কন্যার পরথম যৌবন’। গীতিকার পরতে পরতে ছড়িয়ে আছে এসব ব্যঞ্জনার দ্যুতি। অশিক্ষিত মানুষের মধ্যে এই যে কবিত্বশক্তি, সৌন্দর্যবোধ তার মূলেও আছে এ অঞ্চলের মানুষের ভেতরকার দুর্বার প্রাণময়তা। মৈমনসিংহ গীতিকার মধ্যেই আমরা তাই আমাদের জাতীয় চরিত্রের বৈশিষ্ট্যসকল দেখতে পাই।