অমর একুশে বইমেলার রূপ–রূপান্তর

শামসুজ্জামান খান
ফাইল ছবি
আজ প্রয়াত হলেন বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক ও বর্তমান সভাপতি, লোকসংস্কৃতিবিদ শামসুজ্জামান খান। বইমেলা শুরু হলে গত ১৯ মার্চ তিনি তাঁর শেষ লেখাটি লিখেছিলেন ‘প্রথম আলো’তে। এর পরপরই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ‘অমর একুশে বইমেলার রূপ–রূপান্তর’ শিরোনামে সেই লেখাটি পুর্নমুদ্রিত হলো।

বাঙালির সাংস্কৃতিক ইতিহাসে বইমেলা এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। ৫০ বছর ধরে ঢাকা ও কলকাতা—বাঙালি–অধ্যুষিত দুই শহরে প্রতিবছর জ্ঞানচর্চা ও চিৎপ্রকর্ষের শ্রেষ্ঠ উৎসবের নাম বইমেলা। এই চিত্তরঞ্জিনীবৃত্তি এখন দুই রাজধানী শহর ছাপিয়ে অন্য শহর, বন্দর, গঞ্জেও আলো ফেলছে। বিশ্বের যে প্রান্তে—যেখানে বাঙালি ঘর বেঁধে থিতু হয়েছে, সেখানেই জমিয়েছে বইমেলার আসর। ‘মুক্তধারা’র উদ্যোগে নিউইয়র্ক বইমেলা তাই ৩০ বছরের দীপ্ত ঔজ্জ্বল্যে ভাস্বর। লন্ডন—আরেক বহু বাঙালির আস্তানা গাড়া শহরেও বইমেলা ঢাকার বাংলা একাডেমির সলতেয়, কখনোবা স্থানীয় উদ্যোগে জ্বলে উঠছে। জার্মানির বিশ্ববিখ্যাত ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় বাঙালির পদছাপ ঢাকার প্রকাশকদের উপস্থিতিতে লক্ষ করা যায়।

বাংলাদেশের বইমেলা মানে বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসের চিত্তজাগরণের মাস ফেব্রুয়ারি। প্রায় হাজার বছর আগের বাঙালি কবি ভুসুকু নানা অপমানে বুক বিদীর্ণ করা উচ্চারণে বলেছিলেন: ‘আজি ভুসুকু বঙ্গালী ভৈলী, আজি ভুসুকু বাঙ্গালী হইল।’ হাজার বছর ধরে বাঙালি নিন্দা, গ্লানি অপমান–অপবাদ সহ্য করে তাদের মাতৃভাষা আর জাতিসত্তা বাঙালিত্ব ছাড়েনি। ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারির ২১ তারিখে পাকিস্তানি স্বৈরশাসকদের দোসর-অনুচরদের জীবনবিনাশী গুলিবর্ষণে ঢাকার রাস্তা রক্তে ভাসিয়েও বাংলা ভাষা আর বাঙালি সত্তার বিনাশ হতে দেননি পূর্ব বাংলার তরুণ বাঙালিরা। বাঙালিত্বের, মাতৃভাষার সেই গৌরবদীপ্ত অহংকারের ঐতিহ্য বহন করে একুশে বইমেলার স্বপ্ন-কল্পনার যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল ঢাকার বাংলা একাডেমি, তার সঙ্গে যুক্ত থাকার গৌরবে আমি আপ্লুত। গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করি এই প্রয়াসের প্রধান উদ্যোক্তা কবি ও একাডেমির তৎকালীন মহাপরিচালক সদ্য প্রয়াত মনজুরে মওলাকে।

তখনকার সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান বাঙালি হয়েও বাঙালি-জাতিসত্তাবিরোধী ‘বাংলাদেশি’ জাতীয়তার ফরমান জারি করেন। তাঁর পরবর্তী সামরিক শাসক এরশাদের সময়েও ওই ধারা চলমান ছিল। দুঃশাসনের ভয়াবহতা তখন গ্রাস করেছে গোটা দেশকে। সেই সময়ে বাঙালিত্বের গভীর চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আমরা বইমেলার আয়োজনের বিষয়টি মাথায় আনি। সেটা ১৯৮৩ সালের কথা। তখন এরশাদের দুঃশাসন চলছে। সেই অবস্থায় বইমেলার আয়োজন শুরু এবং সব প্রস্তুতি শেষে বহু চিন্তাভাবনা করে বাঙালিত্বের বিষয়টিকে সামনে আনার জন্য সুকৌশলে মেলার মূল স্লোগান নির্ধারণ করা হয়: ‘একুশ [একুশে] আমাদের পরিচয়’ অর্থাৎ যে মাতৃভাষা বাংলা এবং বাঙালির জাতিসত্তা রক্ষার জন্য আমার ভাইয়েরা শহীদ হয়েছেন, সেই বাঙালি ও বাঙালিত্বেই আমাদের পরিচয়। বিষয়টি যে তখনকার গোয়েন্দারা একেবারে বোঝেননি, তা–ও নয়। আবুল খায়ের মুসলেহউদ্দিন তখন এক গোয়েন্দা দপ্তরপ্রধান। তিনি আবার লেখকও। কিন্তু আমাদের কৌশলটি ছিল সূক্ষ্ম এবং ইতিহাস ও রাজনৈতিক দিক দিয়ে স্পর্শকাতর। তাই বিরোধিতা করা সম্ভব ছিল না। তো, ১৯৮৩–তে বইমেলা উদ্বোধনের প্রাক্‌মুহূর্তে শিক্ষা ভবনের সামনে ছাত্র মিছিলে এরশাদ সরকারের পুলিশ বাহিনী ট্রাক তুলে দেয়। এতে দুজন ছাত্র নিহত হয়। ফলে সে বছর আর বইমেলা করা আমরা সমীচীন মনে করিনি। পরের বছর ১৯৮৪ সাল থেকে বাংলা একাডেমির ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’র সূচনা হয়। এ হলো বইমেলার আশির দশকের ঘটনা।

কিন্তু সত্তরের দশকের বইমেলার জন্মযন্ত্রণার ইতিহাস না জানলে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক মুক্তধারা ও তার দুঃসহ যন্ত্রণাময় অধ্যায়টি বোঝা যাবে না।

পাকিস্তান আমলে আবদুল হক বা বদরুদ্দীন উমর সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী যেসব প্রবন্ধ বা বই লেখেন, জিয়া-এরশাদ আমলে তা সম্ভব ছিল না। যাহোক, পাকিস্তান আমলে ১৯৬৪ সালে পূর্ব বাংলায় বইমেলার ভ্রূণ অঙ্কুরিত হয় ন্যাশনাল বুক সেন্টারের পরিচালক, কথাসাহিত্যিক সরদার জয়েনউদ্দীনের হাতে—প্রথমে শিশু গ্রন্থপোকরণ প্রদর্শনের মাধ্যমে, পরে ১৯৬৯–এ সেগুনবাগিচায় পাকিস্তান আর্ট কাউন্সিল ভবনে (বর্তমান শিল্পকলা একাডেমি ভবনে) এবং ১৯৭০ সালে নারায়ণগঞ্জের বইমেলা আয়োজনের মাধ্যমে।

স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম প্রথাসিদ্ধ ও আনুষ্ঠানিক বইমেলা হয়েছে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ১৯৭২-এ জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের উদ্যোগে। সরদার জয়েনউদ্দীন তখন গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক। সে বছর মেলাটি হয়েছিল সপ্তাহব্যাপী—২০-২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত। ওই বছরকে ইউনেসকো আন্তর্জাতিক গ্রন্থবর্ষ ঘোষণা করেছিল। গ্রন্থকেন্দ্রের আয়োজনটি সে উপলক্ষেই। ওই মেলা উদ্বোধন করেছিলেন বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী। সেই মেলায় যোগ দিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের বিশিষ্ট চিন্তাশীল লেখক অন্নদাশঙ্কর রায় ও বিখ্যাত ভারতীয় হিন্দি ভাষার লেখক মুলকরাজ আনন্দ। তাঁরা মেলার আয়োজিত আন্তর্জাতিক সেমিনারে অংশ নেন।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর উপর্যুক্ত বইমেলা ছাড়া আর কোনো আনুষ্ঠানিক বইমেলা সত্তরের দশকে হয়নি। এমনকি ১৯৭৪ সালে বাংলা একাডেমির উদ্যোগে প্রথম বিশাল আন্তর্জাতিক লেখক-শিল্পীদের অংশগ্রহণে প্রথম জাতীয় সাহিত্য সম্মেলন হলেও কোনো আনুষ্ঠানিক বইমেলা তাতে যুক্ত ছিল না। বিচ্ছিন্নভাবে চিত্তরঞ্জন সাহার ‘মুক্তধারা’সহ কোনো কোনো প্রকাশক একুশে এবং বাংলা নববর্ষে একাডেমি প্রাঙ্গণে তাঁদের বইয়ের পসরা সাজিয়ে বসেছিলেন।

তবে সত্তরের দশকে যে বড় মাপের আনুষ্ঠানিক বইমেলার উদ্যোগ বাংলা একাডেমি বা কোনো সংস্থা নিতে পারেনি তার কারণ তখনকার ভয়ের রাজনৈতিক সংস্কৃতি। ১৯৭৫–এ বঙ্গবন্ধুকে সপরিবার ইতিহাসের নিষ্ঠুরতম হত্যাকাণ্ডের পর সংস্কৃতি ক্ষেত্রে নেমে আসে হিমশীতল ভয়-ত্রাস-শঙ্কার রাজত্ব। ১৯৭৬ সালে কবি জসীমউদ্‌দীনকে সভাপতি এবং খোন্দকার মোহাম্মদ ইলিয়াসকে সাধারণ সম্পাদক করে যে একুশে উদ্‌যাপন কমিটি করা হয়, তা পণ্ড করার জন্য ইলিয়াস সাহেবকে গ্রেপ্তার করা হয়। আমি তখন বাংলা একাডেমির সংস্কৃতি বিভাগের প্রধান। বাংলা একাডেমি তখন সামরিক সরকারের পাকিস্তানবাদী সংস্কৃত-তাত্ত্বিকদের আক্রমণের প্রধান লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। সাংবাদিক খোন্দকার আবদুল হামিদ নামে-বেনামে সংবাদপত্রে লিখছেন: ‘বাংলা একাডেমির বটবৃক্ষের কোটরে কোটরে বাসা বেঁধেছে বাঙালি সংস্কৃতির বিষধর কেউটেরা।’ সে সময় আমি দৈনিক সংবাদ–এ প্রবন্ধ লিখেছিলাম ‘পথিক তুমি পথ হারিয়েছ’ শিরোনামে। প্রবন্ধের মূল বক্তব্য ছিল: বাঙালি জাতীয়তাবাদের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ঐতিহাসিক সাফল্যকে সাম্প্রদায়িকতায় আচ্ছন্ন করবে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ। ফলে আমাকে বহু ধরনের ঝামেলা ও বিপদের মুখে পড়তে হয়। সংস্কৃতি বিভাগ থেকে অবহেলিত ফোকলোর বিভাগে বদলি করা হয়। এর আগে তৎকালীন সরকারের এক গোয়েন্দা সংস্থার ছয়জনের একটি দল এসে বাংলা একাডেমি থেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আমাকে ধরে নিয়ে যায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তাদের অস্থায়ী ক্যাম্পে। ওই সংস্থার পরিচালক তিন–চার ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করেন আমাকে। শেষে ওই সংস্থারই এক সহকারী পরিচালককে আমার ওপর নজরদারির দায়িত্ব দিয়ে আমাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এটা ১৯৭৭ সালের ঘটনা। সে বছর আমাদের একুশের সেমিনারে কবি সুকান্তের ওপর আলোচনা রেখেছিলাম। ভাবলাম সে জন্যই বোধ হয় এ বিপদ। কিন্তু দেখলাম, না তার জন্য নয়, আমাকে তারা ধরে এনেছে শিখা গোষ্ঠী ও বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন আলোচনায় অন্তর্ভুক্ত করার জন্য। তখন বুঝলাম তারা ঠিক জায়গায়ই ধরেছে।

মুক্তিযুদ্ধকালে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পক্ষে অসাধারণ গুরুত্বপূর্ণ ‘রক্তাক্ত বাংলা’ (১৯৭১) বইয়ের প্রকাশক ‘মুক্তধারা’র স্বত্বাধিকারী চিত্তরঞ্জন সাহাকে গ্রেপ্তার করা হয় ওই সময়ে। তাঁর ওপর মানসিক নির্যাতন হয় কয়েক দিন ধরে। অনুমান করি, শারীরিক নির্যাতনও হয়। তিনি পরিবারে বার্তা পাঠান, ‘যেকোনোভাবে আমাকে দ্রুত মুক্ত করো। না হলে আমি বাঁচব না।’ তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে তখন অধ্যাপক আবুল ফজলকে দিয়ে জেনারেল জিয়াউর রহমানকে অনুরোধ করায় শেষ পর্যন্ত চিত্তবাবু মুক্তিলাভ করেন। সামরিক দুঃশাসনের সেই গা ছমছম করা ভয়াল সময়ে আনুষ্ঠানিকভাবে সাংস্কৃতিক মুক্তধারার উৎসব হিসেবে নানা মত, পথ ও পন্থার ও পরমতসহিষ্ণুতার দীপাধার বইমেলা করা সম্ভব হয়নি। কারণ, বাংলা একাডেমির মতো জ্ঞানার্জনী এবং ‘মুক্তধারা’র মতো চিত্তরঞ্জনী প্রকাশনা সংস্থাকে এভাবে রাশ টেনে ধরায় ঢাকঢোল পিটিয়ে বইমেলা করে, সাধ্য কার!

তাই বাঙালির প্রাণের বইমেলা শুরু হলো একটু দেরিতে—১৯৮৪ সালে। এর পটভূমিকা আমরা আগেই বলেছি। এ ঐতিহাসিক বইমেলার নাম ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’। কিন্তু এই মেলারও রূপান্তর–বিবর্তনের ইতিহাস আছে। তখন এরশাদের দাপুটে শাসনের গায়ে আন্দোলন-প্রতিবাদের আঁচ লাগতে শুরু করেছে। সেই সময়ে শুরু হলো অমর একুশে গ্রন্থমেলা। যত দূর মনে পড়ে, ৩৩টি প্রকাশনা সংস্থা তাতে অংশ নেয়। বাংলা একাডেমির একটি নান্দনিক স্টলের অলংকরণ ও অঙ্গসজ্জা করে দিয়েছিলেন শিল্পী কালীদাস কর্মকার। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত এই বইমেলা বড় থেকে বৃহৎ পরিসরে রূপান্তরিত হতে থাকে।

২০০৯ সালে আমি বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হওয়ার পর যখন দেখি বইমেলার সময়ে একাডেমি প্রাঙ্গণে তিল ধারণের ঠাঁই নেই, তখন মেলাটি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্প্রসারিত করার কথা বলি; তাতে কয়েকজন বড় ও মাঝারি প্রকাশক ও জনপ্রিয় লেখক বলেন, ‘সব্বোনাশ! তাহলে বইমেলার অপমৃত্যু ঘটবে। বাংলা একাডেমির বাইরে নিলে মেলায় কোনো লোকই আসবে না।’ আমি তাঁদের বলি, ‘একুশে আমাদের নবজাগৃতির শুরু, তা পরিপূর্ণতা লাভ করেছে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায়। এই উদ্যানেই (তখন রেসকোর্স ময়দান) জিন্নার উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার ঔদ্ধত্যপূর্ণ ঘোষণা, তার প্রতিবাদে ছাত্রদের না না ধ্বনি; এই উদ্যানেই বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ এবং মুক্তিযুদ্ধে বাঙালির কাছে পরাজিত পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর আত্মসমর্পণ। তাই এই উদ্যানে সম্প্রসারিত হলেই বইমেলা আমাদের জাতিসত্তা ও সাংস্কৃতিক স্বাধিকারের সংগ্রামের সঙ্গে রাজনৈতিক স্বাধীনতা সংগ্রামের সম্পৃক্তিতে নব তাৎপর্যময় পরিপূর্ণতা লাভ করবে। কিন্তু তবু ইতিহাস ও রাজনীতি অসচেতন বিরোধীরা অনড়।

অবশেষে আমাকে চিন্তা করে কৌশল বের করতে হলো। পরের বছর (২০১৩) মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অমর একুশে গ্রন্থমেলা উদ্বোধন করতে এলেন। আমি স্বাগত বক্তব্যে বইমেলা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যে নেওয়া প্রয়োজন, তার যৌক্তিকতা আমার উপর্যুক্ত বক্তব্যের আলোকে ব্যাখ্যা করলাম। প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে আমার বক্তব্য সমর্থন করলেন। ফলে আর কোনো মতান্তর বা বিরোধ থাকেনি।

২০১৪ সাল থেকে বইমেলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ছাড়াও সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্প্রসারিত হয়। এ ছাড়া স্থান সংকুলান এবং প্যাভিলিয়ন ও নান্দনিক আঙ্গিক ও রুচিশীল সজ্জায় মেলার বিশাল পরিসরকে দর্শক-পাঠক ও গ্রন্থপ্রেমিকবান্ধব করা যেত না।

অমর একুশে বইমেলা বাঙালির সাংস্কৃতিক জাগৃতির অনিঃশেষ পরিবর্তনশীল ঋদ্ধতার প্রতীক। প্রতিবছরের এই মেলা শুধু বাঙালির মাসব্যাপী এক বুদ্ধিবৃত্তিক চৈতন্যের উৎসবই নয়, বিজ্ঞানমনস্ক যুক্তিবাদী সমাজ নির্মাণেরও অনন্য উৎস।

করোনা মহামারি এ বছর বাংলা একাডেমি অমর একুশে বইমেলাকে ফেব্রুয়ারি-বিচ্যুত করেছে; কিন্তু এর অনিরুদ্ধ যাত্রাকে ব্যাহত করতে পারেনি। আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষে যথাযথ মাত্রা এবং তাৎপর্যে ১৮ মার্চ থেকে শুরু হয়েছে প্রাণের মেলার নব অভিযাত্রা। নব বাস্তবতায় বাংলা একাডেমির আন্তরিক শ্রমনিষ্ঠ পরিকল্পনায় এবং সবার সহযোগিতায় এবারের বইমেলা সফল হোক—এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

বাংলাদেশের এই দুর্দমনীয় সাংস্কৃতিক অভিযাত্রাকে বঙ্গবন্ধু তাঁর বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের সঙ্গে সৃজনশীলভাবে যুক্ত করতে পেরেছিলেন বলেই তিনি বলতে পেরেছিলেন: ‘বাংলাদেশ একটি কালচারাল নেশন।’ অমর একুশে বইমেলা তাঁর এই কালচারাল নেশনেরই এক অনন্য মূর্ত প্রকাশ।