আন্তর্জাতিকমনা দেশপ্রেমিক

প্রকাশনাশিল্পের অন্যতম পুরোধা ও ইউপিএলের প্রতিষ্ঠাতা মহিউদ্দিন আহমেদ মারা গেলেন সম্প্রতি। তাঁকে শ্রদ্ধা

মহিউদ্দিন আহমেদ (২ ডিসেম্বর ১৯৪৪—২২ জুন ২০২১)। প্রতিকৃতি: মাসুক হেলাল

মহিউদ্দিন আহমেদের প্রয়াণে বাংলাদেশের প্রকাশনাজগতে ইন্দ্রপতন ঘটেছে অনেক অর্থে, সেই সঙ্গে বাংলাদেশের সারস্বত পরিমণ্ডলে বড় এক শূন্যতা তৈরি হলো। তিনি সেই সব প্রকাশকদের একজন, যাঁদের কাজ জাতির মননের প্রতিনিধিত্ব করে, সেই সঙ্গে মননচর্চায় সমৃদ্ধি জোগায়। এমন প্রকাশক সংখ্যায় বেশি হয় না, কোনো দেশে হয়তো হাতে গোনা দুই-একজন এমন প্রকাশক মিলবে, যাঁরা যুগপ্রবর্তক, নতুন ধারার উদ্‌গাতা। ইংল্যান্ডে নমস্য প্রকাশক হিসেবে আমরা পাই অ্যালেন লেনকে, পেঙ্গুইন ও পেলিক্যান সিরিজের পেপারব্যাক বইয়ের প্রবর্তক হিসেবে যিনি স্মরণীয় হয়ে আছেন। ভিক্টর গোল্যাঞ্জের কথাও বলা যেতে পারে, চিন্তাশীল প্রগতি ধারার বই প্রকাশ করে তিনি এক বিশেষ ঘরানার জন্ম দিয়েছিলেন। আমেরিকায় নানা ধারার প্রকাশক আমরা পাই, যাঁদের মধ্যে কতক নাম বিশেষভাবে স্মরণ করতে হয়। এ ক্ষেত্রে উল্লেখ করা যায় ফারার, স্ট্রস অ্যান্ড গিরোক্সের কথা—তিন ব্যক্তির সমন্বিত প্রকাশনা সংস্থা। ভিন্ন মেরুর তাৎপর্যময় প্রকাশনা সংস্থা ‘সিটি লাইট বুকস’—বিট কবি–লেখকদের বই প্রকাশ করে আলোড়ন তুলেছিল যারা। বাংলা প্রকাশনায় দিলীপকুমার গুপ্তের ‘সিগনেট’ প্রেস একদা এমন সাড়া জাগিয়েছিল। বিকল্প ধারার প্রকাশকদের মধ্যে শ্রীশকুমার কুণ্ডুর ‘জিজ্ঞাসা’র কথা আমরা বলতে পারি, যারা প্রবন্ধের বই ছাড়া আর কিছু ছাপেননি, অথবা বলা যায়, কানাইলাল মুখোপাধ্যায়ের ‘ফার্মা কেএলএম’, অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাকের প্রিয় প্রকাশনা সংস্থা। আরও বলা যায় মহিউদ্দিন আহমেদের প্রীতিভাজন মন্দিরা সেনের ‘স্ত্রী’ সংস্থার কথা।

মহিউদ্দিন আহমেদের নামের সঙ্গে দুনিয়াজোড়া আরও অনেকের নামোচ্চারণ যে করা যায়, সেটা বুঝিয়ে দেয়, বাংলাদেশের প্রকাশনা সংস্থার পরিচালক হলেও প্রকাশনা–দৃষ্টিভঙ্গি, গ্রন্থ বাছাই ও উপস্থাপনে তিনি ছাপিয়ে গিয়েছিলেন জাতীয় মাপকাঠি, হয়ে উঠেছিলেন আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে পরিমাপযোগ্য। এই ছাপিয়ে যাওয়া শুরু হয়েছিল মহিউদ্দিন আহমেদের পেশাগত জীবনের সূচনা থেকে। তিনি নিজে ছিলেন বিদ্বৎসমাজের সদস্য, প্রকাশনার সঙ্গে যুক্ততা তাঁর এই মননশীলতার কারণে। পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতায় স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করার পর তাঁর সামনে পেশা বেছে নেওয়ার অনেক পথ খোলা ছিল। তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনায় যুক্ত হয়েছিলেন। ইংরেজি ভাষায় তাঁর দখল এবং শিক্ষাগত ফলাফলের বিচারে পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসের প্রবেশিকা পরীক্ষায় তাঁর অংশ নেওয়া ছিল প্রায় অবধারিত। সিএসপি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ তরুণ বাঙালি অফিসারদের সঙ্গে পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থীর ছিল বিশেষ সখ্য, তাঁদের অনেকেই তাঁর আজীবন বন্ধু হয়ে থেকেছেন। কিন্তু সাফল্যের সমাজস্বীকৃত সেই পথে এগোতে মহিউদ্দিন আহমেদ কখনো প্রলুব্ধ হননি। বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি ছেড়ে তিনি যোগ দিলেন অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেসে, ওইউপি নামে যার পরিচিতি এবং বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক জ্ঞান ও বিদ্যাচর্চার সবচেয়ে বনেদি ও সফল প্রকাশক, যেখানে তিনি যোগ দিয়েছিলেন সম্পাদক হিসেবে, পদ হিসেবে সম্মানীয়, বেতনের হারেও আকর্ষণীয়। এখানেই তিনি প্রকাশনার গভীরতা, দায়িত্বশীলতা ও জ্ঞানকেন্দ্রিকতা সম্পর্কে বিশেষভাবে অবহিত হন। এই অভিজ্ঞতা হয়েছিল তাঁর আজীবন সঙ্গী। নানা চড়াই-উতরাইয়ের মধ্যেও প্রকাশনা থেকে তিনি বিচ্যুত হননি। তিনি বাংলাদেশের প্রকাশনা কোন উচ্চ স্তরে নিয়ে গিয়েছিলেন, সেটা আমরা সম্যক উপলব্ধি করতে পেরেছি বলে মনে হয় না। আন্তর্জাতিক প্রকাশনা পরিমণ্ডল ও ভারতীয় প্রকাশকদের মধ্যে মহিউদ্দিন আহমেদ কতখানি সমীহ আদায় করতেন, আমি নানাভাবে তার সাক্ষী হয়েছি। নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি দিল্লিতে অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল পাবলিশার্স অ্যাসোসিয়েশনের কংগ্রেসে আমি যোগ দিই মহিউদ্দিন আহমেদের উৎসাহে। সেখানে ব্রিটিশ আমেরিকান অগ্রণী প্রকাশকদের সঙ্গে মহিউদ্দিন আহমেদের ভাববিনিময় ছিল বিশেষভাবে শিক্ষামূলক। ভারতীয় প্রকাশকদের সঙ্গে তাঁর আলোচনায় তিনি বাংলাদেশকে সমপর্যায়ে নিয়ে রাখতেন, যদিও আমাদের প্রকাশনা তখনো বিশেষ শক্তি অর্জন করেনি। দিল্লি বুক ফেয়ার, আফ্রো-এশীয় বুক কাউন্সিলের বিভিন্ন সভায় ভারতীয়দের ন্যায্য সমালোচনায় সরব হতে মহিউদ্দিন আহমেদ কখনো পিছপা হতেন না। চিনতেন তিনি এদের অনেককে, স্টার্লিং পাবলিশার্সের ও পি ঘাই, বিকাশ পাবলিশিং হাউসের নরেন্দ্রকুমার, জন উইলির অশোক ঘোষ প্রমুখ ডাকসাইটে প্রকাশকের বাণিজ্য রীতির কতক নেতিবাচক দিক মেলে ধরে তাঁদের বাক্যবাণে জর্জরিত করতে মহিউদ্দিন আহমদই পারতেন। প্রকাশনা ও বিপণনের হাঁড়ির খবর তিনি রাখতেন বলেই এটা সম্ভব হয়েছিল। অন্যদিকে কালি ফর উওমেনের উর্বশী বুটালিয়া কিংবা রিতু মেননের জন্য তাঁর ছিল বিশেষ স্নেহ।

দিল্লির প্রকাশক, যাঁদের বেশির ভাগ পাঞ্জাবি, তাঁদের সঙ্গে কথোপকথনে মহিউদ্দিন আহমেদের বিশেষ সুবিধা ছিল, পাঞ্জাবি ভাষা তিনি ভালোই জানতেন। আর তাই পাঞ্জাবিদের তাঁদের ভাষায় গালমন্দ করতে তাঁর ছিল বাড়তি উৎসাহ। তবে তাঁকে আমি বিষণ্ন হতে দেখেছি যখন সুরেশ ঘাই আমাদের নিয়ে গিয়েছিলেন তাঁর দপ্তরে, দিল্লির শিল্প এলাকায় প্রকাশকদের দেওয়া হয়েছে প্লট, তাঁরা সেখানে অফিস ও গুদাম তৈরি করেছেন, আছে সভাগৃহ ও বিক্রয়-এজেন্টদের থাকার জন্য অতিথিশালা। বইয়ের গুণগত মান বিচারে তাদের প্রকাশনার চেয়ে ইউপিএলের প্রকাশনা অনেক পরিশীলিত ও সুচারু। কিন্তু দিল্লির প্রকাশকেরা সরকারের কাছ থেকে পান নানা সুবিধা। স্বল্প মূল্যে তাঁরা পেয়েছেন শিল্প এলাকায় প্লট, রপ্তানি বাবদ পান নগদ প্রণোদনা, বিভিন্ন দেশের বইমেলায় জোগদানের জন্য সহায়তা এবং আরও অনেক সুযোগ। সে তুলনায় বাংলাদেশের প্রকাশনার জন্য সরকার কোনো সহায়তার হাত কখনো বাড়ায়নি। এর জন্য তাঁর চেষ্টার অন্ত ছিল না, কিন্তু এর গুরুত্ব তিনি নীতিনির্ধারকদের বোঝাতে পারেননি। প্রকাশনামণ্ডলীতে মহিউদ্দিন আহমদের অবস্থান এবং বাংলাদেশের নিরিখে তাঁর ভূমিকা সম্পর্কে একটি ছোট অভিজ্ঞতা এখানে ব্যক্ত করা যায়। ওইউপি করাচিতে মহিউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে কাজ করেছিলেন মার্টিন পিক। অনেক পরে তাঁর সঙ্গে আমার পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন মহিউদ্দিন আহমেদ স্বয়ং। মার্টিন তখন বেলিথা প্রেস নামে শিশু-কিশোরদের জন্য শিক্ষামূলক বই প্রকাশের সংস্থা গড়েছিলেন। কো-পাবলিশিং প্রবর্তনের জন্য মহিউদ্দিন আহমেদের বিশেষ আগ্রহ ছিল। এতে প্রকাশনার ব্যয় কমে এবং ইংরেজি ভাষার মানসম্পন্ন বই বাংলায় প্রকাশ সম্ভব। বেলিথা প্রেসের সঙ্গে আমরা কিছু কাজ করেছিলাম মূলত মহিউদ্দিন ভাইয়ের উৎসাহে। পরে ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় তাঁর সঙ্গে দেখা হয়েছে, তিনি তখন প্রকাশনা সংস্থা ছেড়ে লিটারেরি এজেন্টের কাজ করছেন, যারা বেস্টসেলার্স বইয়ের পাণ্ডুলিপি খুঁজে থাকে এবং সম্পাদনার কাজ করে। সর্বাধিক বিক্রীত বই কীভাবে তৈরি হয়, তার কিছু ভেতরের খবর মার্টির পিক আমাকে জানিয়েছিলেন। বইয়ের সেই বাজারে লেখকের চেয়ে এজেন্টের কদর বেশি, কোন এজেন্টের কয়টি বই বেস্টসেলার্স হয়েছে, সেটা বড় খবর। সম্পাদক পাণ্ডুলিপির খোলনলচে পাল্টে দেন বাজারের কথা ভেবে। তিনিই আমাকে বলেছিলেন যে খালেদ হোসাইনির দ্য কাইট রানার-এর অন্তত এক-চতুর্থাংশ সম্পাদকের লেখা। তো মহিউদ্দিন আহমেদ প্রসঙ্গ নিয়ে কথা হতো মার্টিন পিকের সঙ্গে। তিনি জানিয়েছিলেন, একাত্তরের সেই দুঃসময়ে রাজিয়া খান আমীনের ঢাকা থেকে লন্ডন যাওয়ার ব্যবস্থা করতে কীভাবে তাঁরা দুজন কাজ করেছিলেন। করাচি হয়েই যেতে হবে লন্ডনে, ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের ফ্লাইটে। বেশ উত্তেজনা ও ঝুঁকি নিয়েই তাঁরা এই কাজ করেছিলেন। বিমান সংস্থার সঙ্গে আগে কথা বলে রেখেছিলেন, কীভাবে রাজিয়া খান আমীন চটজলদি বিমানে উঠবেন। শেষ পর্যন্ত অবশ্য নির্বিঘ্নে কাজটি সমাধা হয়েছিল।

মহিউদ্দিন আহমেদকে নিয়ে বলার থাকে অনেক কথা। ঢাকায় ফিরে তিনি হাল ধরেন অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেসের স্থানীয় অফিসের। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে বইয়ের ব্যবসার সুযোগ ছিল সঙ্কুচিত। অচিরে ওইউপি বাংলাদেশ থেকে ব্যবসা গুটিয়ে ফেলে। এরপর ১৯৭৫ সালে মহিউদ্দিন আহমেদের পরিচালনায় যাত্রা শুরু করে ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড। প্রায় পাঁচ দশকের এই অভিযাত্রায় যে বিদ্যা ও জ্ঞানের ভান্ডার ইউপিএল তৈরি করতে পারল, তা বিস্ময়কর। প্রতিটি প্রকাশনায় পেশাদারি দক্ষতা ও মুদ্রণ সৌকর্যের ছাপ আমরা দেখতে পাই। বাংলাদেশকে বাইরের দুনিয়ায় মেলে ধরার ক্ষেত্রে ইংরেজি বইয়ের মানসম্মত প্রকাশনার কোনো বিকল্প ছিল না। এই কাজ এককভাবে কোনো প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সম্পাদন সম্ভব নয়। বিদ্বৎসমাজ ও বাংলাদেশ অধ্যয়নে অগ্রণী পাঠকদের জন্য বিভিন্ন জ্ঞানভিত্তিক বিভিন্ন বিশ্লেষণী প্রকাশনা প্রয়োজন, অন্য দেশে এই ক্ষেত্রে বিশিষ্ট প্রকাশকদের পাশাপাশি কাজ করেন বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক প্রকাশনা সংস্থা। আমরা চলতি বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ উদ্‌যাপন করছি, দেশে সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা নেহাত কম নয়। কিন্তু আমাদের উচ্চতর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কিংবা তৎসংশ্লিষ্ট বিদ্বৎগোষ্ঠী অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস অথবা কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেসের ধারায় প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েছে। এই অভাব এককভাবে পূরণ করেছেন মহিউদ্দিন আহমেদ। ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের নামকরণেও তাঁর সদ্‌কামনার প্রকাশ ঘটেছিল। ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড কোনো বিশ্ববিদ্যালয়সম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠান নয়, তবে ইউনিভার্সিটির যে কাজ করার কথা, সেই দায়িত্ব তিনি নিজ কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন এবং সে ক্ষেত্রে অসাধারণ সার্থকতার পরিচয় দিলেন। এমন প্রতিষ্ঠান দ্বিতীয়টি খুঁজে পাওয়া যাবে না। বিশ্বের যেখানে যিনিই বাংলাদেশ অধ্যয়নে আগ্রহী হবেন, তাঁর বইয়ের শেলফে অবশ্যই মিলবে ইউপিএলের লোগোখচিত বই। তিলে তিলে অশেষ পরিশ্রম ও দূরদর্শিতা নিয়ে এমনি গ্রন্থভান্ডার নির্মাণ করেছেন মহিউদ্দিন আহমেদ, যা বাংলাদেশের গর্ব।

অবশ্য গর্বপ্রকাশ একান্তভাবে পরিহার করতেন মহিউদ্দিন আহমেদ, অন্তঃসারশূন্য আড়ম্বর ছিল তাঁর অপছন্দ। পরিহাসচ্ছলে আমাকে বলতেন, ‘আপনাদের হে মহানের খবর কী!’ বাঙালি যেভাবে বিশেষণের ফল্গুধারা বইয়ে দেয়, সেটা তাঁকে পীড়িত করত গভীরভাবে। প্রকাশনার বিকাশে এই মানুষ আবার ছিলেন গভীরভাবে ভাবিত ও সক্রিয়। অনুজ প্রকাশকদের বিকাশে বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নিতে তিনি ছিলেন প্রবলভাবে আগ্রহী। ‘বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি’ গঠনের মূল পরিকল্পনা ছিল তাঁর এবং চিত্তরঞ্জন সাহার। তাঁরাই পরিষদ গঠন করলেন, তবে পদ ও নেতৃত্বে অধিষ্ঠিত করলেন নবীনদের। জাতীয় গ্রন্থনীতি প্রণয়নে নেতৃত্ব ও শ্রম দুই–ই তিনি ব্যয় করেছেন। তবে সরকারি নীতি ও দৃষ্টিভঙ্গিতে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন যে তিনি ঘটাতে পারেননি, এই খেদ তাঁর ছিল। সেসব ছিল তাঁর সীমার বাইরে, কিন্তু নিজ সীমার মধ্যে তিনি যেসব কাজ করে গেছেন, যে সমৃদ্ধ ভান্ডার দেশের জন্য রেখে গেছেন, তার সীমা-পরিসীমা নেই। বাংলাদেশ স্টাডিজের তিনি এক মহান রূপকার, জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে নন্দিত। গভীর দেশপ্রেম ছিল তাঁর জীবনকর্মের প্রেরণা, দিগন্তপ্রসারী ছিল তাঁর ভাবনা। তাঁর কাছে জাতি ঋণী হয়ে থাকবে। এখানেই মহিউদ্দিন আহমেদের সার্থকতা।