বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবস উৎসবে বাণী

রবীন্দ্রনাথ যখন বঙ্গীয় সাহিত্য–সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনের সভাপতি, ১৩১৪ বঙ্গাব্দ। ছবি: সংগৃহীত
রবীন্দ্রনাথ যখন বঙ্গীয় সাহিত্য–সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনের সভাপতি, ১৩১৪ বঙ্গাব্দ। ছবি: সংগৃহীত
>

গতকাল ছিল রবীন্দ্র-প্রয়াণবার্ষিকী: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (৭ মে ১৮৬১—৭ আগস্ট ১৯৪১)

রবীন্দ্রনাথের প্রায় সব লেখাই সম্ভবত গ্রন্থে বা রচনাবলিতে প্রকাশ পেয়েছে। তবে অনেক চিঠিপত্র এখনো গ্রন্থভুক্ত হওয়ার অপেক্ষায়। গৌরচন্দ্র সাহা রবীন্দ্র পত্র প্রবাহ ও তথ্যপঞ্জীতে সাত হাজারের বেশি চিঠির বইয়ে (বিশ্বভারতীর ২০ খণ্ডে চিঠিপত্র ও অন্যান্য) কিংবা সাময়িকপত্র মুদ্রণের হদিস দিয়েছেন। চিঠিপত্র ছাড়া স্বাক্ষরলিপির দাবিতে ও নানা উপলক্ষে কবির লেখা ছোট চার শতাধিক কবিতা (রবীন্দ্রনাথ আখ্যা দিয়েছেন ‘কবিতিকা’) স্ফুলিঙ্গতে সংকলিত হয়েছে। অনাথনাথ দাসের সম্পাদনায় পাঁচ খণ্ডে কবিতাসমগ্রতে (কলকাতা: আনন্দ পাবলিশার্স ২০১০) সম্ভবত সব কবিতাই সংগ্রথিত।

বিশ্বভারতী গ্রন্থ বিভাগ ১৯৯৫ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত রবীন্দ্র–রচনাবলীর আরও ছয়টি খণ্ড প্রকাশ করেছে। রবীন্দ্রসাহিত্যের পাঠকেরা অনেকে জানেন, কবির জীবিতাবস্থা থেকে রচনাবলি প্রকাশ শুরু হয় (১৯৩৯)। নতুন ছয় খণ্ড ও পুরোনো সাতাশ খণ্ড এবং দুটি ‘অচলিত’ খণ্ড প্রকাশের পর এখন কবির গদ্যরচনা অগ্রন্থিত থাকার সম্ভাবনা নেই।

এখানে সংগ্রহীত শিরোনামহীন ছোট লেখাটি ‘বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবস উৎসবে অভিনন্দন’। লেখাটির পাণ্ডুলিপি–চিত্র রবীন্দ্রশতবর্ষ উপলক্ষে বিশেষ সংখ্যা সাহিত্য–পরিষৎ–পত্রিকায় (বর্ষ ৬৬।। সংখ্যা ৩–৪, শ্রাবণ ১৩৭১) মুদ্রিত হয়েছিল। তবে লেখাটি মুদ্রাক্ষরে প্রকাশিত হয়নি। সূচিপত্রে এর উল্লখ না থাকায় বাণীটি লোকলোচনের অগোচরে থেকে গেছে। এই বাণীতে কবি লেখেন:

বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের প্রথম সূচনাকালে তাহাকে দেখিয়াছি। তখন নব–নিঃসৃত নির্বতরের মতো সে ছিল ক্ষীণ–ধারা, বনস্পতির প্রসাদ–চ্ছায়ায় তাহার প্রবাহ বহিত। অবশেষে একদা পূর্ণতা লাভ করিয়া নিজের ঐশ্বর্য্যের যখন সে প্রতিষ্ঠিত হইল তখনও তাহাকে দেখিলাম। কিন্তু সেদিনও মনের মধ্যে আশঙ্কা ছিল। কেননা বাংলাদেশের পলি মাটিতে যেমন কোনো কীর্ত্তিমন্দির স্থায়ী হয় না তেমনি মিলনী শক্তির অভাবে আমাদের দেশে কোনো জনসংসদ পাকা হইয়া টিকিতে পারে না, রন্ধ্রে রন্ধ্রে দলবিরোধের দুর্ব্বার বীজ তাহার ভিত্তিতে ভিত্তিতে গ্রন্থি বিদারণকারী বিনাশকে পরিপুষ্ট ও প্রসারিত করিতে থাকে। বোধকরি একমাত্র বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের ভাগ্যেই এরূপ দুর্যোগ ঘটে নাই। এ পর্যন্ত যাঁহারা তাহাকে রক্ষা করিয়া আসিয়াছেন তাঁহারা শক্তিশালী পুরুষ। তথাপি তাঁহাদের নিজের শক্তিই ইহাকে সন্ধিভেদ হইতে রক্ষা করিতে পারিত না। বস্তুত বাঙ্গালির চিত্ত ইহাকে গভীরভাবে রক্ষা করিয়াছে। সাহিত্য বাঙালির সত্য সম্পদ, সাহিত্যে বাঙালি আপন গৌরব উপলব্ধি করে। বাংলাদেশে সাহিত্য পরিষৎ আপন স্বাভাবিক আশ্রয় পাইয়াছে। তাই আজ আটত্রিশ বৎসর কালের অভ্যর্থনার দ্বারা জয়যুক্ত এই পরিষৎকে নিঃশংসয়িত কণ্ঠে অভিনন্দিত করিবার দিন আসিল। এই দিন পূর্ণত্তর প্রাণশক্তি বহন করিয়া বৎসরে বৎসরে প্রত্যাবর্তন করুক এই কামনা করি।

শ্রী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

লেখাটি বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের রবীন্দ্র–সংগ্রহ–এর অন্তর্গত। রবীন্দ্র–বাণীটি ১৩৩৯ বঙ্গাব্দে লেখা বলে অভ্যন্তরীণ প্রমাণ আছে। ১৩০১ বঙ্গাব্দে প্রতিষ্ঠাকালে কবি পরিষদের সহসভাপতি ছিলেন।

বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবস উৎসবে রবীন্দ্রনাথের বাণীর পাণ্ডুলিপিচিত্র
বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবস উৎসবে রবীন্দ্রনাথের বাণীর পাণ্ডুলিপিচিত্র