
হত্যা ও গুপ্তহত্যা যেভাবে রাষ্ট্রীয় আইনে একটি ভয়াবহ অপরাধ, তেমনি পবিত্র কোরআন ও হাদিসের দৃষ্টিতেও জঘন্যতম অপরাধ। এ ধরনের অমানবিকতা দূর করতে হলে মানুষের মধ্যে আল্লাহর ভয় সৃষ্টি করতে হবে। তাকওয়া বা খোদাভীতি মনে থাকলে মানুষ কখনো কাউকে হত্যা করবে না। পরকালে আল্লাহর দরবারে জবাবদিহি করার অনুভূতি জাগ্রত থাকলে মানুষের মধ্যে অপরাধের মাত্রা অনেক কমে যায়। কারণ, মানুষ জানে, তাকে একদিন আল্লাহর সামনে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। তখন নরহত্যার মতো মহাপাপের কথা জিজ্ঞাসা করলে সে কী জবাব দেবে? মানুষের অন্তরের এই অনুভূতি অন্যায় কাজ করতে বাধা দেয়। নরহত্যার শাস্তি সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে ঘোষণা করেছেন, ‘নরহত্যা বা পৃথিবীতে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি ছাড়া কেউ কাউকে হত্যা করলে সে যেন দুনিয়ার সমগ্র মানবগোষ্ঠীকে হত্যা করল।’ (সূরা আল-মায়িদা, আয়াত: ৩২)
ভয়ানক নরহত্যার জঘন্যতা ও হত্যাকারীর জন্য কঠোর শাস্তির কথা হাদিস শরিফেও উল্লেখ করা হয়েছে যে ‘দুনিয়া ধ্বংস করে দেওয়ার চেয়েও আল্লাহর কাছে ঘৃণিত কাজ হলো মানুষ হত্যা করা।’ (তিরমিযি) কিয়ামতের দিন নরহত্যার বিচার করা হবে সবার আগে। তারপর অন্যান্য অপরাধের বিচার করা হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন মানুষের মধ্যে সর্বপ্রথম যে মোকদ্দমার ফয়সালা হবে, তাহলো রক্তপাত (হত্যা) সম্পর্কিত।’ (বুখারি ও মুসলিম)
নবী করিম (সা.) কখনো একজন মানুষকে গুপ্তহত্যা করেননি, বরং নির্মম হত্যাযজ্ঞ থেকে মানুষকে দূরে থাকতে বলেছেন এবং হত্যাকে কুফরির মতো ভয়াবহ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি মানুষকে হত্যার পরিবর্তে মিত্রতা স্থাপনের কথা বলেছেন। খুনখারাবি থেকে মানুষকে বিরত রেখে তিনি বিবদমান আরব গোত্রদের ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করেছেন। বিদায় হজের ভাষণে মহানবী (সা.) বিনা অপরাধে একজন নিরীহ মানুষকেও হত্যা করতে নিষেধ করেছেন। যখনই কেউ অবৈধ হত্যায় লিপ্ত হয়, তার ওপর থেকে আল্লাহর রহমত উঠে যায়। সবার গুনাহ ক্ষমা করলেও আল্লাহ তাআলা হত্যাকারীকে ক্ষমা করবেন না। নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘একজন প্রকৃত মুমিন তার দ্বীনের ব্যাপারে পূর্ণ প্রশান্ত থাকে, যে পর্যন্ত সে অবৈধ হত্যায় লিপ্ত না হয়।’ (বুখারি)
সমাজে ফেতনা-ফ্যাসাদ, মানবিক বিপর্যয় ও অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করাকে হত্যার চেয়ে জঘন্যতম অপরাধ সাব্যস্ত করা হয়েছে। তাই জনগণের জানমালের নিরাপত্তা রক্ষায় সব ধরনের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। দেশের আলেম সমাজ, ধর্মীয় নেতা, মসজিদের ইমাম ও খতিবদের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অপহরণ, গুম, হত্যা ও গুপ্তহত্যার বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ এবং বলিষ্ঠ অবস্থান রেখে জনগণকে সম্পৃক্তকরণের মাধ্যমে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা সমাধানের একটি সহজ পথ। নিরীহ মানুষকে অপহরণ, গুম, হত্যা ও গুপ্তহত্যা সম্পর্কে সচেতন ও সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে ইসলামের বিধানের প্রচারণামূলক কর্মসূচি হাতে নিয়ে গণমাধ্যমও ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে।
ড. মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান: শিক্ষক, দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়।