প্রায় ১৮ কোটি মানুষ নিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতির দেশ। তিন দিকে কাঁটাতারবেষ্টিত আন্তর্জাতিক সীমান্ত এবং একদিকে সমুদ্রবেষ্টিত এই বাংলাদেশ পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবিলা করছে। প্রলয়ংকরী সব ঘূর্ণিঝড়, সুনামি ও জলোচ্ছ্বাস, বন্যা ও নদীভাঙন, উচ্চ তাপমাত্রা ও খরা, শুষ্ক মৌসুমে আন্তর্জাতিক নদীর পানিহীনতা—এসব মিলে বাংলাদেশ যেন বিশ্বের সবচেয়ে বড় জলবায়ু কারাগার। আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রতিবছর অন্তত আট লাখ মানুষ নতুন করে আন্তর্জাতিক দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যাওয়ার ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করেন।
দারিদ্র্য, মানবসম্পদ উন্নতকরণ, কৃষি উৎপাদন ও অর্থনৈতিক দিক থেকে অর্ধশতাব্দী বয়সী বাংলাদেশের বহু অর্জন থাকলেও করোনা-পরবর্তীকালে বাংলাদেশের প্রতি চারজনের অন্তত একজন দারিদ্র্যসীমার নিচে। একটি অতি ছোট আয়তনের দেশের বিশাল কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর জন্য টেকসই মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা খুবই চ্যালেঞ্জিং, বস্তুত বিশ্বের মধ্যে অন্যতম কঠিন। দেশটিতে উল্লেখযোগ্য খনিজসম্পদ নেই এবং প্রাকৃতিক গ্যাসের বর্তমান মজুতও প্রায় শেষের পথে। সুবিশাল নাগরিকের জীবনমান উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসুবিধা নিশ্চিতকরণ, শ্রমবাজার তৈরি, জলবায়ু ঝুঁকির মুখে দাঁড়িয়ে থাকা দেশে টেকসই অবকাঠামো তৈরির মতো কঠিন কঠিন নিত্যনৈমিত্তিক সমস্যা, জঞ্জাল ও চ্যালেঞ্জে নিপতিত হয়ে আছে বাংলাদেশের জনগণ, প্রশাসন ও সরকার—সবাই। সঙ্গে আছে একটি স্বচ্ছ, জবাবদিহি, বেপরোয়া দুর্নীতিমুক্ত জনবান্ধব ও টেকসই সরকারব্যবস্থা প্রবর্তনের প্রধানতম মৌলিক চ্যালেঞ্জ। এই বহুবিধ চ্যালেঞ্জ টেকসইভাবে উতরানোই বাংলাদেশের জনগণের প্রধানতম চাওয়া। এসব উদ্দেশ্য অর্জনে বাংলাদেশ বিশ্ব সম্প্রদায়ের বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতা কামনা করে।
এমতাবস্থায় জনগণ মনে করে, আসলেই বাংলাদেশের আঞ্চলিক ও ভূরাজনীতিতে মেরুকরণে যাওয়ার সুযোগ নেই। কোয়াডসহ সুনির্দিষ্ট জোট বা বলয়ভুক্ত অবস্থান বাংলাদেশের জন্য লাক্সারি বা একধরনের বিলাসিতা। বরং দেশটিকে একটি মেরুহীন জোট নিরপেক্ষ অবস্থানে থেকে তার নাগরিকের কল্যাণ নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর থাকতে হবে। বাংলাদেশের মানুষ এশীয় সমাজের ঐতিহ্য, ধর্ম ভাষা ও সংস্কৃতির বৈচিত্র্য এবং ভ্রাতৃত্ববোধকে আন্তরিকতার সঙ্গে সম্মান জানায়। দক্ষিণ, দক্ষিণ-পূর্ব, পূর্ব, মধ্যপ্রাচ্যসহ সমগ্র ভারতীয় আরব আসিয়ান সর্বোপরি সমুদয় এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক, বাণিজ্য ও সামরিক শক্তি, পরাশক্তি ও জোটগুলোর সঙ্গে সম্মান ও ন্যায্যতার অর্থনৈতিক সাম্যভিত্তিক উষ্ণ সম্পর্ক তৈরি করতে চায় বাংলাদেশ। এ ক্ষেত্রে দেশে দেশে ভেদাভেদ ও জোটবদ্ধ মেরুকৃত রাজনৈতিক সংস্কৃতির চর্চা থেকে বাংলাদেশের মানুষ নিজেরা দূরে থাকে এবং অন্যদেরও নিরুৎসাহিত করে।
বাংলাদেশ মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকাসহ বিশ্বের অস্থিতিশীল দেশ ও অঞ্চলগুলোতে শান্তি স্থাপনে নিবেদিত ও অগ্রদূত। দারিদ্র্য বিমোচন, বন্যা ও ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলা এবং সর্বোপরি বহুবিধ জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবিলায় বাংলাদেশের মানুষ তাঁদের দীর্ঘ অর্জিত অভিজ্ঞতা অপরাপর দেশগুলোর সঙ্গে ভাগাভাগি করেই এগিয়ে যেতে চায়।
স্বাধীনতাযুদ্ধে ভারতের সক্রিয় অংশগ্রহণকে বাংলাদেশ সর্বোচ্চ মর্যাদা দিয়ে এসেছে এবং ভবিষ্যতেও বাংলাদেশ ভারতীয় জনগণের এ ঋণকে সম্মানের আসনে রাখবে। ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য ও সম্পদ ভাগাভাগির একটা সম্মান ও ন্যায্যতাভিত্তিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বাংলাদেশের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের বিষয়। পাশাপাশি স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নতি, দারিদ্র্য বিমোচন, জ্বালানি সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ ভ্রাতৃপ্রতিম মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোকে বিশেষ কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করে। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের বাংলাদেশি শ্রমবাজারের সুবিধাদানকারী দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশ অত্যন্ত উষ্ণ সম্পর্ক বজায় রাখবে বলেই নাগরিকদের বিশ্বাস।
পাশাপাশি বন্ধুরাষ্ট্র হিসেবে ভারতও বাংলাদেশের দক্ষ মানবসম্পদের জন্য কাজের ক্ষেত্র (ওয়ার্ক পারমিট) উন্মুক্ত করবে, এমন প্রত্যাশা রাখে এ দেশের মানুষ। বাংলাদেশের শীর্ষ অবকাঠামো উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে বাংলাদেশ জাপানের সঙ্গে বরাবরই অতি উষ্ণ ও বর্ধিত সম্পর্ক বজায় রাখবে বলেই নাগরিকদের বিশ্বাস। শিক্ষা-গবেষণা, কারিগরি ব্যবস্থাপনা ও প্রযুক্তি হস্তান্তরের বাংলাদেশ জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর ভূমিকাকে অত্যন্ত সম্মান করে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে ভারত, চীন, সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, রাশিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অপরাপর দেশের সঙ্গে উন্নত সম্পর্ক বজায় রেখেই আগামীর পথ হাঁটবে।
বাংলাদেশের জনগণ চীনের নেতৃত্বাধীন বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ বা বিআরআইকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং এর অর্থনৈতিক অবকাঠামোগত সংযোগে নিজেকে যুক্ত করার অভিপ্রায়কে স্বাগত জানায়। বিআরআই পরবর্তীকালে ডোনাল্ড ট্রাম্প সূচিত বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে নাইন ইলেভেন-পরবর্তী বিশ্ব ব্যবস্থায় যে বিশাল পরিবর্তন হতে চলেছে, বাংলাদেশের নাগরিকেরা তার এক সতর্ক তথাপি নিরপেক্ষ দর্শকমাত্র। বিআরআইয়ে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ অন্য কোনো দেশের ক্ষতি করা কিংবা বৈরিতার তরে নয়, বরং নাগরিকের আর্থিক যোগ তৈরি করাই চূড়ান্ত লক্ষ্য। বাংলাদেশের মানুষ উপলব্ধি করছে যে আটলান্টিকের দুই পাড়ের বিপরীতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য অর্থনীতি ও রাজনীতির ভরকেন্দ্র প্রশান্ত মহাসাগরের দুই পাড়েই কেন্দ্রীভূত হচ্ছে। এমতাবস্থায় ইন্দো-প্যাসিফিক বাজার, বাণিজ্য ও অর্থনীতি কেন্দ্রিক নতুন বিশ্ব ব্যবস্থাকেও বাংলাদেশ তাঁর বৃহৎ জনসংখ্যার বৃহত্তর স্বার্থ আদায়ের দৃষ্টিতেই দেখবে। বাংলাদেশের জনগণ মহামারি বিপর্যস্ত বিশ্ব ব্যবস্থায় অপরাপর জনগোষ্ঠীর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করতে অকুণ্ঠ চিত্ত, টিকাসহ অপরাপর চিকিৎসা ও সুরক্ষাসমতায় আকাঙ্ক্ষী।
তাই ভারত, ইউরোপ, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উষ্ণ সম্পর্ক বজায় রেখেই পূর্বমুখী অর্থনৈতিক সমঝোতার পথে হাঁটার পক্ষে এ দেশের নাগরিক। ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক সম্পর্কের পাশাপাশি চীনের নেতৃত্বাধীন রিজওনাল কম্প্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ (আরসিইপি) বা আঞ্চলিক সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারত্বে যুক্ত হয়ে বাংলাদেশ ভবিষ্যতে তার শিল্প ও বাণিজ্যের বিকাশকে এগিয়ে নেবে, এমন প্রত্যাশা আমাদের রয়েছে। দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় বাণিজ্য বিন্যাস ও বহুস্তরের চুক্তিকে বাংলাদেশ ভৌগোলিক ও রাজনৈতিক অক্ষের স্বার্থিক দ্বন্দ্বের বাইরে রেখেই পারস্পরিক ন্যায্যতার ভিত্তিতে পথ চলবে। বাংলাদেশ ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাণিজ্য ফ্রেমওয়ার্ক, সম্পদ শিক্ষা ও কারিগরি বিন্যাস এবং বিশেষ করে শেনঝেনভুক্ত ইউরোপীয় জাতিগুলোর পারস্পরিক সংযোগ ও প্রশাসনিক বোঝাপড়াকে অত্যন্ত সম্মানের দৃষ্টিতে দেখে। এ ধরনের পারস্পরিক সম্মান ও বাণিজ্য ভাগাভাগির স্বপ্নকে জনগণ সার্কভুক্ত দেশগুলোতে সঞ্চারিত করতে চায়। তথাপি ব্রেক্সিট গণভোটের রায়কে বাংলাদেশের জনগণ সম্মান জানায় এবং গ্রেট ব্রিটেনের সঙ্গে নতুন করে বাণিজ্য সম্পর্ক বিস্তারে বিশেষ মনোযোগী।
বাংলাদেশের জনগণ ভাটির দেশ হিসেবে তার নিকট ও দূর প্রতিবেশী দেশগুলোর কাছে অভিন্ন নদীর পানির অধিকার প্রত্যাশা করে। দূষণমুক্ত পানির অধিকার প্রত্যাশা করে। বাংলাদেশ জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবিলায় বিশ্বের সক্ষম দেশগুলোর দায়িত্বশীল ভূমিকা আশা করে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক আদালতে নিষ্পত্তিকৃত আন্তর্জাতিক সমুদ্রসীমানাকে সম্মান করে। তাই দেশটি তার দুই সাগর প্রতিবেশী ভারত ও মিয়ানমার থেকেও একই ন্যায্যতা পাওয়ার দাবি রাখে।
বাংলাদেশের মানুষ ভূরাজনৈতিক সমীকরণে জড়িয়ে প্রতিবেশী কিংবা প্রতিবেশী নয় এমন কোনো দেশেরই বিচ্ছিন্নতাকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয় হবে না। ভবিষ্যতেও প্রতিবেশীর ক্ষতি হয়, এমন কোনো প্রকল্পে সজ্ঞানে অংশ নেবে না বলে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ঘোষণা করা হয়। তবে হ্যাঁ, মানবিক কারণে নির্যাতিত জাতি ও ক্ষুদ্র জাতিসত্তার অধিকার ও সম্মানের প্রতি শ্রদ্ধা ও সহমর্মিতা জানায় এবং জানাবে। নিজের সাধ্যমতো চিকিৎসাসহ মানবিক ও প্রাকৃতিক দুর্যোগপূর্ণ সংকটময় পরিস্থিতিতে অংশগ্রহণ করবে। জনসংখ্যার ভারে ন্যুব্জ বাংলাদেশ বর্তমানে যে প্রায় ১৫ লাখ রোহিঙ্গা অভিবাসী গ্রহণ করে ক্রমাগত অর্থনৈতিক, পরিবেশগত ও ভূরাজনৈতিক সংকটে ভুগছে, তা থেকে উত্তরণে মিয়ানমারসহ চীন, জাপান, কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, আসিয়ান, ভারতসহ মার্কিন ও ইউরোপীয় সহযোগীদের প্রত্যক্ষ ও আন্তরিক ভূমিকা প্রত্যাশা করে। এ দেশের জনগণ মিয়ানমারের মানুষের গণতান্ত্রিক রায়কে সম্মান জানিয়ে অবৈধ সামরিক জান্তা সরকারে অনাস্থা জানায়।
বাংলাদেশের নাগরিক চায় তাঁদের রাষ্ট্র জাতিসংঘের সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণাসহ বিশ্বের অপরাপর গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক আন্তর্জাতিক চুক্তিকে স্বাগত জানিয়ে নিজেও সেসব মেনে চলার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে। বাংলাদেশ টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট ২০৩০ এবং প্যারিস জলবায়ু চুক্তিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়। পাশাপাশি বিশ্বের জাতিগুলোর অর্জিত শিক্ষা-জ্ঞান ও গবেষণালব্ধ অভিজ্ঞতাকে নিজের নাগরিকের জীবনমান উন্নতকরণে গ্রহণ ও প্রয়োগ করায় অতীব গুরুত্ব দেয়। জলবায়ু ঝুঁকির দেশ হিসেবে মানুষ চায় দেশের সরকার আগামী দিনের উন্নয়ন পরিকল্পনাকে টেকসই করতে, প্রাণ ও পরিবেশের সুরক্ষা দিতে, কার্বন ও গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন থামাতে, পলিথিনদূষণ কমাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাবে এবং বিশ্ব সম্প্রদায়ের সঙ্গে ঝুঁকি ও সম্ভাবনার কারিগরি বিষয় ব্যবস্থাপনার অভিজ্ঞতা বিনিময় করে যাবে।
নাগরিকের প্রত্যাশা যে বাংলাদেশ কোনো ধরনের জোটভুক্ত হবে না। বরং জোট নিরপেক্ষ কূটনৈতিক শিষ্টাচার লালন করবে। সবার সঙ্গে সম্মানজনক ও ন্যায্যতাভিত্তিক সম্পর্ক বজায় রাখাই বাংলাদেশের মানুষের উদ্দেশ্য। কারও সঙ্গেই শত্রুতা নয়, এমন নীতিই আমাদের সর্বজনীন বৈদেশিক নীতি। এমন বহুপক্ষীয় নীতি বাস্তবায়নে বাংলাদেশকে স্বচ্ছ ও সক্ষম রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান গড়ায় জোর দিতে হবে। দেশের সরকারকে স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক নির্বাচন, প্রাতিষ্ঠানিক শাসন এবং সর্বোপরি বাইরের দেশের হস্তক্ষেপমুক্ত অভ্যন্তরীণ ক্ষমতা হস্তান্তরের টেকসই কাঠামো তৈরি করতে হবে।
বাংলাদেশের নাগরিক সমাজ এ নিয়ে উদ্বিগ্ন যে নির্বাচনহীন ক্ষমতায়নের বহিঃসমর্থন ন্যায্যতাভিত্তিক বহুপক্ষীয় আন্তর্জাতিক সম্পর্ক তৈরির ক্ষেত্রে বিরাট এক দেয়াল তৈরি করে দিয়েছে। সরকারের জনভিত্তির দুর্বলতা, নির্বাচনের স্বচ্ছতা ও ক্ষমতায়নে বিদেশনির্ভর বৈধতার প্রশ্নযুক্ত অচলায়তন ভাঙতে পারলেই বাংলাদেশ ব্যবসা-বাণিজ্য, প্রাণ-প্রকৃতি, নদী-পানিসমতা ও ন্যায্যতা, সামরিক বোঝাপড়া, সর্বোপরি মানবসম্পদ উন্নয়নে শক্তিশালী আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পক্ষগুলের সঙ্গে লাভজনক অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হবে। নাগরিকদের আস্থা থাকলেই বিশ্ব ব্যবস্থার সম্ভাব্য পরিবর্তন কিংবা চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য অস্থিরতার কালে বাংলাদেশের পক্ষে সঠিক বোঝাপড়া তৈরির শক্তি আসবে, অন্যথায় কূটনৈতিক সম্ভাবনা শঙ্কা ও দ্বন্দ্বে হারিয়ে যেতে পারে।
ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব টেকসই উন্নয়নবিষয়ক লেখক। ‘চতুর্থ শিল্পবিপ্লব ও বাংলাদেশ’, ‘বাংলাদেশ: অর্থনীতির ৫০ বছর’ বইয়ের লেখক। [email protected]