কখনো কখনো কোনো সংবাদ দারুণ উজ্জীবিত করে। অনেক হতাশামুখর সময়েও কারও সাফল্য, এগিয়ে চলার উপাখ্যান পায়ের তলায় মাটির ভিত তৈরি করে। মনে হয় নতুন দিনের সূর্যকে মানুষই পারে আবাহন করতে। আবার কোনো সংবাদ শরীরের রক্তকে হিমশীতল করে ফেলে (আজকাল এমন সংবাদই মনে হয় চোখে বেশি পড়ছে)। সুনামগঞ্জ শহরতলির একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক দীপা দাস ৪৮ খুদে শিক্ষার্থীর হাতে ধারালো ব্লেড তুলে দিয়েছেন। বাড়ি থেকে অঙ্ক করে না আনার অপরাধে এই ব্লেড দিয়ে নিজেদের রক্তাক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন। সংবাদটি পড়ে একজন শিক্ষক বলে লজ্জায় নিজের ভেতরে কুঁকড়ে গিয়েছি আমি। শিশু শিক্ষার্থীরা সরল, তারা শিক্ষকদের কথা সহজেই মেনে নেয়। সেই তারা কিনা এমন এক নৃশংস নির্দেশের বলি হলো। শুধু বিদ্যালয় কেন, গৃহকোণ-রাজপথ, সব ক্ষেত্রেই দেখা যায় শিশুরা নানা রকম প্রতিহিংসার শিকার হচ্ছে। শিশু হত্যা হচ্ছে, শিশু অপহরণ হচ্ছে। নির্যাতিত হচ্ছে। শিশুখাদ্যে ভেজাল হচ্ছে। ভাবতে গেলেই গায়ের লোম খাড়া হয়ে যায়। আর এসব যারা করছে, তারা পূর্ণবয়স্ক মানুষ। এ কোন সভ্য সময়ের মানুষ আমরা!
এই শিক্ষক নিজেকে অসুস্থ বলে সাফাই গেয়েছেন। একজন অসুস্থ হতেই পারেন। ব্যক্তিজীবন বা সামাজিকভাবে কোথাও মানসিক নিগ্রহে জর্জরিত হতে পারেন। কিন্তু এই অসুস্থতার পর্যায় যদি এমন হয়, যা তাঁরই সন্তানতুল্য শিশুদের রক্তাক্ত করার মতো ঘটনায় উদাসীন হয়ে পড়েন। তাহলে তাঁর প্রয়োজন বিশ্রাম, চিকিৎসা। অসুস্থতার অজুহাতে কি এ রকম একটি অমানবিক, পৈশাচিক কাজকে সমর্থন করা যায়! শিশুকে হয়তো সব সময় সমানভাবে আদর করা যায় না। কখনো কখনো ভান করে হলেও শাসন করতে হয়। কিন্তু তার অর্থ এই নয়, শিশুর মন ও শরীরকে আঘাত করে এমন শাসন করা যাবে। শিক্ষকদের ক্ষেত্রে বিষয়টি আরও স্পর্শকাতর। আমাদের নিজের অবস্থা বা পারিপার্শ্বিকতা যা-ই থাক, এর প্রভাব শিশুদের ওপর পড়ে, এমন আচরণ করা যাবে না। এই ৪৮ শিশুর ক্ষত হয়তো একদিন মুছে যাবে। কিন্তু তাদের মনে যে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে, সেটা থাকবে অনেককাল। যা শিশুর জীবন গঠনেও প্রভাব ফেলতে পারে। যে কারণে আমাদের এমন কোনো আচরণ করা ঠিক হবে না, যা একটি শিশুর মনকে আহত করে। পেশাটিকেও কলঙ্কিত করে।
তাসনীম চৌধুরী
কাগাবলা, মৌলভীবাজার।