গণপরিবহনে ৬০ শতাংশ ভাড়ার অর্থ কি দুর্ভোগ

গণপরিবহনে আসনসংখ্যা সীমিত করায় বাসে উঠতে ভোগান্তিতে পড়তে হয় নারীদের। কলেজ গেট, ঢাকা, ৩ এপ্রিল
ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

সম্প্রতি করোনা সংক্রমণের হার বেড়ে যাওয়ায় গণপরিবহনে যাতায়াতের ব্যাপারে বিশেষ নির্দেশনা জারি করেছে বাংলাদেশ সরকার। নির্দেশনাটি গত ৩১ মার্চ থেকে কার্যকর হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাচলের জন্য এতে নানা ধরনের নির্দেশনা যুক্ত করা হয়েছে। তন্মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো বাসে অর্ধেক যাত্রী পরিবহন করতে হবে এবং বাসের ভাড়া ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। সব নির্দেশনাকে ছাপিয়ে এই নির্দেশনা বর্তমান সময়ে সবচেয়ে আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এত আলোচিত–সমালোচিত হওয়ার কারণও রয়েছে অবশ্য অনেকগুলো।

আমি এখানে আমার নিজের অভিজ্ঞতাটুকু শেয়ার করতে চাই। গত ৩১ মার্চ আমি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলা পর্যন্ত বাড়ি আসার উদ্দেশ্যে ভ্রমণ করি। বাসে ওঠার সময় আমাকে আগে থেকে বলা হয় যে ক্যাম্পাস থেকে মধুখালী পর্যন্ত ভাড়া ২০০ টাকা দিতে হবে এবং ২০০ টাকা না দিলে তারা আমাকে বাসে নেবে না। এখানে বলে রাখা ভালো, ক্যাম্পাস থেকে মধুখালী পর্যন্ত আমরা সাধারণত ভাড়া দিয়ে থাকি ১০০ টাকা। তবে মাঝেমধ্যে ভাড়া ১০ থেকে ২০ টাকা কম বা বেশি হয়। সরকারের জারি করা নির্দেশনা অনুযায়ী ভাড়া হওয়ার কথা ১৬০ টাকা কিন্তু তারা নিচ্ছে দ্বিগুণ ভাড়া। যেহেতু আমি গাড়ির জন্য অনেকক্ষণ অপেক্ষা করছিলাম এবং গাড়িও পাচ্ছিলাম না, তাই বাধ্য হয়ে গাড়িতে উঠে পড়লাম। গাড়িতে ওঠার পর দেখি অন্য রকম চিত্র। যাত্রীদের বেশির ভাগেরই মাস্ক নেই এবং প্রায় অধিকাংশ সিটই যাত্রী দিয়ে পরিপূর্ণ। কিন্তু সরকারের নির্দেশনা হচ্ছে বাসে অর্ধেক যাত্রী পরিবহন করতে হবে। অর্থাৎ বাসগুলোয় সরকারের নির্দেশনা মানা হচ্ছে না, বরং যাত্রীদের কাছ থেকে বেশির ভাগ জায়গায় দ্বিগুণ বা তারও বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।

বাসের ভেতরে গাদাগাদি করে চলছে মানুষ
ছবি: হাসান রাজা

পয়লা এপ্রিলে বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, বাংলাদেশের বেশির ভাগ স্থানে ভাড়া নেওয়া হয়েছে দ্বিগুণের বেশি এবং যাত্রী পরিবহন করা হয়েছে একদম পরিপূর্ণভাবে। ফলে সাধারণ জনগণ পড়েছে মারাত্মক ভোগান্তিতে। বিশেষত মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত স্তরের মানুষকে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, ঢাকা শহরের রাস্তার চিত্র পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, প্রচুর মানুষ কর্মক্ষেত্র কিংবা অফিসে যাওয়ার জন্য রাস্তায় অপেক্ষারত আছেন, কিন্তু তাঁরা সময়মতো বাসে উঠতে পারছেন না; যদিও–বা উঠতে পারছেন, ভাড়া গুনতে হচ্ছে দ্বিগুণ, যা সাধারণ জনগণের জন্য অত্যন্ত পীড়াদায়ক একটি ব্যাপার। অন্যদিকে যাত্রীরা যখন বাসের জন্য অপেক্ষা করছেন, তখন কিন্তু ঠিকই প্রচুর জনসমাগম তৈরি হচ্ছে এবং করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে। তাহলে এটি স্পষ্ট যে এ নির্দেশনা জারি করে স্বাস্থ্যবিধি মানার নামে কেবল জনগণের ভোগান্তি বাড়ানো হচ্ছে। একদিকে যেমন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে, অন্যদিকে কর্মক্ষেত্রে যাওয়ার সুযোগ কমেছে ও গণপরিবহনে যাতায়াতের ভাড়া বেড়েছে। এ সবকিছুর ফলাফল সবচেয়ে খারাপ ভাবে পড়েছে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত মানুষের জীবনে। যাঁর নুন আনতে পান্তা ফুরায়, তাঁকেও কর্মক্ষেত্রে বা অফিসে যেতে হচ্ছে দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে।

সীমিত পরিসরে স্বাস্থ্যবিধির শর্ত সাপেক্ষে বাস চলাচল শুরু হয়েছে। ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি ভাড়া দিয়ে বাসে চড়ছে যাত্রী। গুলিস্তান এলাকায় বেলা ১টা, ৩১ মার্চ
ছবি: প্রথম আলো

পয়লা এপ্রিল বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকায় প্রকাশিত নিউজের তথ্যমতে, রাজধানীবাসী সময়মতো অফিসে যেতে না পারায় রাস্তা অবরোধ করে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেন এবং অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন। এই প্রতিবাদ করাটা ন্যায্য, কারণ দেশের সবকিছু যখন দিব্যি চলছে, তখন শুধু গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করার নামে জনগণের ভোগান্তি বাড়ানো এবং অতিরিক্ত অর্থ আদায় জনগণের নাগরিক অধিকার হরণেরই নামান্তর। তাই যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ, সাধারণ জনগণের কথা মাথায় রেখে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধ করুন এবং প্রয়োজনে বাসমালিকদের প্রণোদনার আওতায় নিয়ে আসুন, যাতে তাঁরাও ক্ষতির সম্মুখীন না হন। এ ছাড়া জনগণের জন্য অতিরিক্ত গণপরিবহনের ব্যবস্থা করা, যাতে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে খুব সহজেই কর্মক্ষেত্রে চলাচল করা যায়। এসব নিশ্চিত করা গেলে অন্ততপক্ষে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত মানুষের কষ্ট কিছুটা হলেও লাঘব হবে। কমবে ভোগান্তি।

*লেখক: মো. বিল্লাল হোসেন, শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ।

*নাগরিক সংবাদে লেখা পাঠাতে পারেন [email protected]