গণমাধ্যমগুলো কখন গণমাধ্যম

বাংলাদেশে গণমাধ্যম, এর স্বাধীনতা ও সাংবাদিকতা নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে নানা মহলে আলোচনা হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে এসব আলোচনায় অতিসাধারণীকরণ এবং খুব সহজেই বড় ধরনের উপসংহার টানার প্রবণতাও দেখা যায়। এসব বিষয়ে দেশ ও দেশের বাইরে দীর্ঘদিন ধরে যেসব আলোচনা হয়েছে, তার ওপর ভিত্তি করে সংবাদমাধ্যমের চারটি দিক নিয়ে চার পর্বে লিখেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর আলী রীয়াজ। আজ প্রথম কিস্তি

আলী রীয়াজ

গণমাধ্যমগুলো আসলে গণমাধ্যম কি না, এই প্রশ্ন বাংলাদেশে এখন জোরেশোরে হলেও গণমাধ্যমে গণমানুষের উপস্থিতি বা অনুপস্থিতি আসলে নতুন কোনো আলোচনার বিষয় নয়। যোগাযোগবিজ্ঞানে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত অনেক আগেই হয়েছে; মীমাংসা হয়েছে, তা বলা যাবে না। ১৯৫৬ সালে ফ্রেড সিবার্ট, থিওডর পিটারসন ও উইবার শ্র্যাম ফোর থিওরিজ অব প্রেস নামে একটি বই প্রকাশ করেন। সেখানে তাঁরা দেখান, প্রেসের ভূমিকা এবং পরিচালনাকে চারটি তাত্ত্বিক মডেলে ভাগ করা যায়। এগুলো হচ্ছে কর্তৃত্ববাদী, লিবারটারিয়ান, সামাজিক দায়িত্বশীল ও সোভিয়েত মডেল।

গণমাধ্যমের চার মডেল

কর্তৃত্ববাদী মডেলে গণমাধ্যমের মালিকানা ব্যক্তি ও রাষ্ট্র—দুই খাতে থাকলেও এর ভূমিকা একই রকমের। এদের দায়িত্ব হচ্ছে নাগরিকদের ‘শিক্ষিত’ করা এবং সরকারের প্রোপাগান্ডার হাতিয়ার হিসেবে কাজ করা; উদ্দেশ্য স্থিতাবস্থা বহাল রাখা। লিবারটারিয়ান মডেলে গণমাধ্যম নিরঙ্কুশ স্বাধীনতা ভোগ করবে, মালিকানা থাকবে ব্যক্তি খাতে। গণমাধ্যমের কাজ হবে জানানো, বিনোদন দেওয়া, (পণ্য) বিক্রি করা, ওয়াচডগ হিসেবে নজরদারি করা এবং সরকারকে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখা, অর্থাৎ তার বাড়াবাড়ির দিকে নজর রাখা। সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি থিওরি বা সামাজিক দায়িত্বশীল গণমাধ্যম পরিস্থিতি হচ্ছে রাষ্ট্রের সব ধরনের প্রভাব এবং নিয়ন্ত্রণমুক্ত থেকে খবর প্রকাশ করা। গণমাধ্যমে সবার প্রবেশযোগ্যতা থাকার পক্ষে নয় এই তত্ত্ব। গণমাধ্যম ব্যক্তি খাতেই থাকবে কিন্তু এটি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করবে কিছু মানগত স্ট্যান্ডার্ড তৈরি করে। এই তত্ত্বের কথা হচ্ছে যে গণমাধ্যমের একটি নৈতিক দায়িত্ব হচ্ছে জনগণকে জানানো। গণমাধ্যম উঁচু পেশাগত মান বজায় রাখবে এবং সত্যতা ও নির্ভুলতার নিশ্চয়তা বিধান করবে।

সোভিয়েত মডেলের প্রধান বিষয় হচ্ছে, গণমাধ্যম সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকবে এবং তার কাজ হচ্ছে স্থিতাবস্থা বদলের লক্ষ্যে কাজ করা, স্থিতাবস্থা বদল মানে হচ্ছে ক্ষমতাসীন দলের নির্ধারিত ‘জনকল্যাণমূলক’ কাজের বাস্তবায়নের পথে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করা এবং তাদের এই লক্ষ্যে পরিচালিত করা। গণমাধ্যমের নিয়ন্ত্রণ এবং কর্তৃত্ব থাকবে গুটিকয় মানুষের হাতে, যাঁরা দলের হয়ে এই নিয়ন্ত্রণ বহাল রাখবেন। গণমাধ্যম কী প্রচার করবে না করবে, সেটাও তাঁরা নির্ধারণ করবেন।

গণমাধ্যম কার স্বার্থ দেখে

এই চার তত্ত্বের আলোকে কোন ধরনের গণমাধ্যম প্রকৃতপক্ষে জনগণের কথা বলতে পারে, কোন ব্যবস্থায় কোন মাধ্যমকে জনগণের কণ্ঠস্বর বলে কে বিবেচনা করবে, সেটা নির্ভর করছে ওই ব্যক্তির রাজনৈতিক অবস্থানের ওপর। কিন্তু এসব তত্ত্বের পরও যা আলোচনার বিষয় তা হলো, যখন গণমাধ্যম ব্যক্তিমালিকানায় থাকে, তখন এটি কার স্বার্থ দেখে। অনেক গবেষক দেখালেন, আসলে পুঁজির স্বার্থ দেখাই হচ্ছে গণমাধ্যমের কাজ। এই ধারা গণমাধ্যমের রাজনৈতিক অর্থনীতি গবেষণার যে ধারা, তাকেই প্রতিনিধিত্ব করে। এই ধারার গবেষকেরা গণমাধ্যমের কনটেন্ট এবং মালিকানা বিষয়ে গবেষণা করে দেখালেন, এমনকি লিবারটারিয়ান এবং সামাজিক দায়িত্বশীল গণমাধ্যমব্যবস্থায়ও গণমাধ্যম কার্যত সবার কথা বলে না। এগুলো সবার কাছে পৌঁছে যাওয়ার অর্থে গণমাধ্যম হলেও সংখ্যাগরিষ্ঠের কথা বলার মাধ্যম নয়, তাঁদের স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করে না। আরমান্দ মাতেলা ও সেথ সিগেলেবের সম্পাদিত গ্রন্থ কমিউনিকেশন অ্যান্ড ক্লাস স্ট্রাগল (দুই খণ্ড, ১৯৭৯) এ বিষয়ে আলোচনাকে শক্তিশালী করে। এই ধারার আরও অনেক গবেষক আছেন, যাঁদের মধ্যে হার্বার্ট শিলার, রবার্ট ম্যাকচিসনির কথা বলতে পারি, নোয়াম চমস্কি ও অ্যাডওয়ার্ড হারমানের লেখা ম্যানুফ্যাকচারিং কনসেন্ট (১৯৮৮) অন্যতম উদাহরণ।

গণমাধ্যমে কোন খবর আসে?

গণমাধ্যমগুলো যে খবর দিচ্ছে, যে মত প্রকাশ করছে, সেগুলো বিভিন্নভাবে ফিল্টার হয়। কিন্তু এর মধ্যে দুটো ফিল্টার গুরুত্বপূর্ণ—গণমাধ্যমগুলোর আদর্শিক অবস্থান এবং কোন অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মধ্যে এগুলো চালু থাকছে। গণমাধ্যমের মালিক কে বা কারা, সেটা একটা বড় বিষয়। কিন্তু এখানে বিরাজমান রাষ্ট্র-সমাজ-অর্থনৈতিক ব্যবস্থার গুরুত্ব অনেক। গণমাধ্যমের রাজনৈতিক অর্থনীতির আলোচনায় এটাও উঠে এল যে রাষ্ট্র আইনকানুন করে কনটেন্টের ওপর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারে; আবার কখনো কখনো সেটার দরকার হয় না। কেননা, গণমাধ্যমের মালিক বা পরিচালকেরাই এমন সিদ্ধান্ত নেন, যা ওই আইনের দ্বারা অর্জনের চেষ্টা করা হয়। গণমাধ্যমের জনগণের মাধ্যম হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে যে জটিল বিষয়টি উপস্থিত থাকে, তা হচ্ছে পুঁজি, মালিকানার ধরন এবং রাষ্ট্রের জটিল সম্পর্ক; সেটাই নির্ধারণ করে গণমাধ্যম কার কথা বলবে। পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রকাঠামোর মধ্যেই এই সম্পর্ক নির্ধারিত হয়।

কীভাবে এই সম্পর্ক কাজ করে, তার বিভিন্ন ধরনের উদাহরণ আছে। যেমন ধরুন ২০০৩ সালে অধিকাংশ মার্কিন গণমাধ্যম ইরাক যুদ্ধের পক্ষে দামামা বাজিয়েছে, যখন তাদের উচিত ছিল এটা অনুসন্ধান করা যে জর্জ বুশ প্রশাসন ইরাকে ব্যাপক বিধ্বংসী অস্ত্র থাকার যে কথা বলছে, সেটা আদৌ ঠিক কি না। অথচ সে সময় খোদ যুক্তরাষ্ট্রেই ইরাক যুদ্ধের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হয়েছে। গণমাধ্যমের একটা বড় অংশই সে সময় প্রশাসনের বক্তব্যের প্রতিধ্বনি করেছে। কেননা, তারা আদর্শিকভাবে এটাকে যথাযথ বলে মনে করেছে। আরও পুরোনো উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। ১৯৭৬ থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত গ্লাসগো মিডিয়া স্কুলের পক্ষ থেকে প্রকাশিত তিনটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়—ব্যাড নিউজ, মোর ব্যাড নিউজরিয়েলি ব্যাড নিউজ। এগুলোতে গবেষকেরা দেখিয়েছেন, ব্রিটেনের টেলিভিশনে প্রচারিত সংবাদে পক্ষপাতিত্ব কতটা স্পষ্ট, মিডিয়া খনিশ্রমিকদের আন্দোলনের সময় সরকারের অবস্থানকেই সমর্থন করেছে। এই ধরনের গবেষণা প্রমাণ করে যে গণমাধ্যম সব সময়ই যে জনসাধারণের সব কথাই বলে, তা নয়।

গণমাধ্যম কি কেবল সেই সব খবরই প্রকাশ করে, যা পুঁজি ও পুঁজিমালিকের স্বার্থসংশ্লিষ্ট? না, তা নয়। গণমাধ্যমকে প্রাসঙ্গিক, বিশ্বাসযোগ্য ও নির্ভরযোগ্য থাকতে হয় অন্তত পক্ষে দুটো কারণে—প্রথমত, এই আর্থরাজনৈতিক ব্যবস্থা যেন অব্যাহত রাখা যায়, তার জন্য মানসিক অবস্থা তৈরি করা; যাতে বিরাজমান ব্যবস্থাকে গ্রহণযোগ্য মনে হয়। এই ব্যবস্থার সঙ্গে গণমাধ্যমের স্বার্থ যুক্ত। দ্বিতীয়ত, একটি সুনির্দিষ্ট আদর্শের দ্বারা পরিচালিত গণমাধ্যম, যার উদ্দেশ্য হচ্ছে এই ব্যবস্থাটার খোলনলচে বদলে দেওয়া, তারা ব্যতিক্রম।

ইরাক যুদ্ধের সময় হোয়াইট হাউসের সামনে যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভ। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে
ফাইল ছবি: এএফপি

নির্ভরযোগ্যতা, আস্থা ও বস্তুনিষ্ঠতা

প্রচলিত রাষ্ট্রকাঠামো হচ্ছে এই ব্যবস্থার রক্ষক। তার মানে গণমাধ্যম ও রাষ্ট্র একই উদ্দেশ্যে কাজ করছে। এই বিবেচনা থেকে লুই আলথুসার গণমাধ্যমকে বলেছেন ‘রাষ্ট্রের আদর্শিক হাতিয়ার’। গণমাধ্যম সেভাবেই সমাজে গণ-আলোচনার সূচি বা পাবলিক অ্যাজেন্ডা তৈরি করে। আমরা কী নিয়ে ভাবব, সেটাই ঠিক করে দেয় গণমাধ্যম। কিন্তু গণমাধ্যম যা বলে, তার সবটাই যেভাবে চায় আমরা সেভাবে গ্রহণ করি? কালচারাল স্টাডিজের পুরোধা স্টুয়ার্ট হল দেখিয়েছেন তিনভাবে গণমাধ্যমের বার্তা গ্রহণ করা হয়—এর একটি হচ্ছে গণমাধ্যম যেভাবে চায় সেইভাবে; একটি হচ্ছে খানিকটা আপসরফা করে, মানে খানিকটা গণমাধ্যমের পছন্দের, খানিকটা নিজের; আর হচ্ছে একেবারে উল্টোভাবে। ফলে ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখার জন্য গণমাধ্যম ভোক্তাকে যা এবং যেভাবে দিচ্ছে, ভোক্তারা সবটাই সেইভাবে গ্রহণ করছেন, এমন মনে করার কারণ নেই। গণমাধ্যমকে তাই এমনভাবে দিতে হয়, যা সংখ্যাগরিষ্ঠের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়।

দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে, গণমাধ্যমকে এমন পণ্য তৈরি করতে হয়, যা তারা বিক্রি করতে পারে। তথ্যই হচ্ছে তার পণ্য। বাজারে প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং সামাজিক দায়িত্ববোধের কারণেই গণমাধ্যমকে সততার সঙ্গে তুলে ধরতে হয় ঘটনা কী ঘটেছে। সবটাই সব সময় তুলে ধরছে, তা নয়, যেটাকে গণমাধ্যম মনে করছে গুরুত্বপূর্ণ, সেটাকে তুলে ধরছে, বাছাই করেই দিচ্ছে। এটাই হচ্ছে গেটকিপিং। এতে গণমাধ্যমকে এমনভাবে বলতে হয়, যা সত্যের অপলাপ নয়। কেননা, তাহলে তা ভোক্তারা গ্রহণ করবেন না। এটা নিশ্চিত করার উপায় হচ্ছে কতগুলো মান বজায় রাখা। কয়েক শ বছর ধরে গণমাধ্যমের ধারার মধ্যে এই মানগুলো তৈরি হয়েছে; এর উৎস হচ্ছে সামাজিক দায়িত্ববোধ। তাকে অর্জন করতে হয় নির্ভরযোগ্যতা, আস্থা; নিশ্চিত করতে হয় বস্তুনিষ্ঠতা।

গণমাধ্যমের গণসংশ্লিষ্টতা

গণমাধ্যম আদর্শিকভাবে বিরাজমান ব্যবস্থার পক্ষে হলেও এই ব্যবস্থার অসংগতিগুলো তুলে ধরা, ক্ষমতাশালীদের জবাবদিহির মুখোমুখি করা এবং রাষ্ট্রের ওপর নজরদারি করা তার কাজ। ক্ষমতাকে অর্থনৈতিক, সামাজিক বা রাজনৈতিক জবাবদিহির মুখোমুখি করাই হচ্ছে গণমাধ্যমের দায়িত্ব। গণমাধ্যমকে যদিও বলা হচ্ছে রাষ্ট্রের আদর্শিক হাতিয়ার, কিন্তু তার অবস্থান হচ্ছে সিভিল সোসাইটিতে—রাষ্ট্র ও রাজনৈতিক দলের মাঝামাঝি। তার কাজ হচ্ছে তার ভোক্তাদের পক্ষ থেকে প্রশ্ন তোলা; কেবল ভোক্তা বলেই নয়, নাগরিকদের প্রতিনিধি হিসেবেও। তথ্য জানা নাগরিকের অধিকার। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জবাবদিহি কেবল নির্বাচনের মধ্যে সীমিত নয়।

যেকোনো গণমাধ্যমের গণসংশ্লিষ্টতা বিচারের জন্য এগুলোকে মাপকাঠি বলে বিচার করতে হবে। বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলো গণমাধ্যম কি না, সেই প্রশ্ন বিচারের জন্যও দরকার এই মাপকাঠিগুলোকে মাথায় রাখা। গণমাধ্যমে তথ্য হিসেবে যা পরিবেশিত হচ্ছে, তা নাগরিকদের এক বড় অংশের কাছে পৌঁছাচ্ছে, এই হিসেবে এগুলোকে গণমাধ্যম বলে বিবেচনা করতেই হবে। কিন্তু গেটকিপার হিসেবে কোন ধরনের তথ্য বাদ দিচ্ছে, সংবাদমূল্য বিবেচনায় বাদ দিচ্ছে, নাকি অন্য বিবেচনা কাজ করছে, কী বিষয়কে গণ-আলোচনার সূচি করছে, পেশাগতভাবে যে মানগুলো বজায় রাখার বাধ্যবাধকতা আছে—সত্যতা, বস্তুনিষ্ঠতা ও প্রাসঙ্গিকতা, সেগুলো পালন করা হচ্ছে কি না, সেগুলো কার্যত নির্ধারকের ভূমিকা পালন করে। সেসব বিবেচনায়ই বাংলাদেশের এক বড়সংখ্যক গণমাধ্যমের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ; এই দুর্বলতা এই মাধ্যমের বিশ্বাসযোগ্যতাকে ক্রমাগতভাবে দুর্বল করেছে। মনে রাখা দরকার, গণমাধ্যমের সংখ্যা বৃদ্ধি কিংবা সংখ্যাগরিষ্ঠের কথা বলার নামে সংবাদমূল্যহীন বিষয়কে উপস্থাপন করাই গণমাধ্যমের গণবিচ্ছিন্নতাকে আড়াল করতে পারে না।

গণমাধ্যম রাষ্ট্র ও রাজনীতির স্থিতাবস্থার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত কিংবা আদর্শিকভাবে পুঁজিবাদী ব্যবস্থার পক্ষে এটা সত্য কিন্তু গণমাধ্যমের নীতিনির্ধারক সম্পাদকেরা এই যুক্তিকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে কিংবা দল, ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে নিরঙ্কুশভাবে সমর্থন করার জন্য ব্যবহার করতে পারেন না। কেননা, বস্তুনিষ্ঠতা, সত্যতা ও সামাজিক দায়িত্ব পালনের মৌলিক শর্ত পূরণ করা ছাড়া, যার অন্যতম হচ্ছে ক্ষমতাসীনদের জবাবদিহির মুখোমুখি করা, গণমাধ্যম কখনো গণমাধ্যম হয়ে ওঠে না; নাগরিকের মৌলিক যে অধিকার, সেটিকে পাশ কাটিয়ে গণমাধ্যম তার অন্য দায়িত্ব পালন করছে, এমন মনে করার কারণ নেই।

আগামী পর্ব: সাংবাদিকতার দায় কার কাছে, সাংবাদিকের দায়িত্ব কী