চোখ বন্ধ করে নেতাকে সমর্থন করে যাওয়াই কি রাজনীতি?

আমাদের দেশের অবিচ্ছেদ্য একটা অংশ রাজনীতি। সেখানে কেউ জীবন উৎসর্গ করছেন বা অন্যের জীবন কেড়ে নিচ্ছেন। প্রভাব বিস্তার করতে গিয়ে  জায়গায় জায়গায় মূল্যবোধের বিসর্জনের ছবি আমরা দেখতে পাই।

একজন নেতা দুর্নীতির দায়ে যখন জেলে গিয়েছেন, তখন তাঁর পক্ষে কথা বলেছি, ‘আমার নেতার চরিত্র ফুলের মতো পবিত্র’ বলে স্লোগান দিয়েছি। প্রায় সমতুল কাণ্ডে বিরোধী দলের নেতাকে খুন করার আলটিমেটামও দিয়েছি।

কিন্তু আপনি আপনার নেতাকে সমর্থন দিতে গিয়ে নিজের মূল্যবোধ হারাচ্ছেন না তো? বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট যদি দেখেন বিষয়টা খুবই স্বাভাবিক, নেতার কথাই আমার কথা। একজন নেতা কি ভালো কাজ করছেন, নাকি মন্দ, অত চিন্তা করার আমাদের সময় নেই। নেতা বলেছেন বা করেছেন, ব্যস ওইটাই ঠিক, ওটাই কার্যত।
একজন সরকারদলীয় এমপি বিপুল অর্থের দুর্নীতি দায়ে জেলে গেছেন, তাঁর সমর্থনে শত শত লোক হাজির। এই যে সাধারণ কর্মী, যাঁরা নেতার পক্ষ সমর্থনে হাজিরা দিচ্ছেন, তাঁরা কি জানেন না নেতার কাজটা খারাপ, আইনবহির্ভূত? অবশ্যই, তাঁরা আমার আপনার চেয়ে ভালে জানেন, খারাপ কাজ করলে জেলে যেতে হবে।

কিন্তু নিজের নেতার বেলায় নয়, তাঁদের বিশ্বাস করতে শেখানো হয়েছে, ‘আমার নেতা কোনো খারাপ কাজ করতে পারেন না, তিনি তুলসী পাতার মতোই কোমল।’

ভাববেন না জিনিসটা নতুন, শুধু হাজি সেলিমই পারেন, এটা বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকেই হয়ে আসছে।

আমি জানি যে, আমার নেতার কাজটি ভালো না, সে একটা খারাপ কাজ করছে, সাধারণ জনগণের জন্য ভালো নয়। তবুও দলীয় ভাবমূর্তি রক্ষায় নেতাকে সমর্থন করি, নেতার পক্ষে সমর্থন জেগায়।

সুভাষচন্দ্র বোস, মহাত্মা গান্ধীর নীতি সঙ্গে এক হতে পারেননি, তাই স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন কংগ্রেসের সর্বোচ্চ পদ থেকে। আমি বলছি না গান্ধীর নীতি খারাপ বা ভালো ছিল, এটা এই লেখার বিষয়বস্তু নয়। আমি এখানে নেতার নিজস্ব অবস্থান, নিজের সদিচ্ছার অর্থাৎ আমার নেতার ‘হাঁ–তে যে সবসময় হাঁ মিলাইতে হবে’—এ ধারা থেকে বের হয়ে আসার কথা বলছি। আমার নেতাও যে ভুল করতে পারেন, এ ধারণা প্রজ্বলন রাখতে বলছি।

আমাদের দেশেও বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে নেতারাও পদত্যাগ করেন। বিবেকের তাড়নায় বা স্বেচ্ছায় নয়, পর–ইচ্ছায় (ওপরের নেতার আদেশে)। ডা. মুরাদ হাসান সাহেব তাঁর জ্বলন্ত উদাহরণ। আমাদের এখানে মেনে নিতে হবে সবাই যেমন সুভাষ বোস না, পদত্যাগই একমাত্র পথ নয়। তারই সঙ্গে মনে রাখি একজন নেতা তাঁর আদর্শ দিয়ে তাঁর কর্মীদের পথ দেখান।

দেখা উচিত একটা ভুল কাজের ভুল সংশোধন হয়েছে কি না।
আমি জানি না, আমরা কখনো এ ভুলধারা রাজনীতি থেকে বের হতে পারব কি না, সবাই মূল্যবোধের প্রতি সচেতন হতে পারব কি না, জানি না।

তবে নেতারা যদি নিজের কার্যত ও অর্পিত দায়িত্ব সম্পর্কে মূল্যবোধ বিষয়ে সচেতন ও কর্মবান হন, তবে এ অসুস্থতা খুব বেশিদিন থাকবে না।

বায়েজিদ সৌরভ
শিক্ষার্থী
আড়ুয়াডঙ্গা, ফকিরহাট
বাগেরহাট