যেকোনো সরকারের মেয়াদের শেষে অর্থাৎ নির্বাচনের বছর সব সময়ই বিনিয়োগে মন্দা ভাব লক্ষ করা যায়। অর্থনীতির ওপর বিনিয়োগের সরাসরি প্রভাব রয়েছে। সামনে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে যখন আরও রাজনৈতিক সংঘাত ও সহিংসতার আশঙ্কা রয়েছে, তখন দেশের অর্থনীতি তথা জননিরাপত্তার জন্য এই পরিস্থিতি অশনিসংকেত হিসেবেই বিবেচিত হবে। আর এ ধরনের রাজনৈতিক সহিংসতা ও হানাহানি দেশের গণতন্ত্র এবং রাজনৈতিক ভবিষ্যৎকে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যেতে পারে।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন বলছে, ঈদের পর আবার শক্তি দেখাতে চায় জামায়াত। বিএনপির পক্ষ থেকেও ঈদের পর ‘লাগাতার’ ও ‘অচল’ করে দেওয়ার মতো কঠিন কর্মসূচির কথা বলা হয়েছে। জামায়াতের শক্তি দেখানো মানে কী, সেটা দেশবাসীর জানা আছে। সাম্প্রতিক সময়ে জামায়াতের সহিংস রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যেমন অসংখ্য প্রাণ ঝরেছে, তেমনি ঘটেছে সম্পদহানি। গতকাল শনিবারও বগুড়ায় এমনই শক্তি প্রদর্শনের চেষ্টা করেছে দলটি। জামায়াতের ছাত্রসংগঠন শিবিরের কর্মীরা শহরের সাতমাথা এলাকায় পুলিশের ওপর ককটেল নিক্ষেপ করেছেন। পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা এই ককটেল থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারলেও আহত হয়েছেন সিএনজির নিরীহ এক চালক। ঈদের পর জামায়াত যদি সত্যিই ‘শক্তি’ প্রদর্শনে নামে, তবে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।
একইভাবে বিএনপি সামনে যেসব কর্মসূচি পালনের ইঙ্গিত দিচ্ছে, সেগুলোর ফলাফল কী হতে পারে, তা-ও স্পষ্ট। হরতাল বা এ ধরনের কর্মসূচিগুলোর ডাক দেওয়া মানে আগের দিন থেকেই গাড়ি ভাঙচুর শুরু হয়ে যাওয়া। হরতাল মানে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকা ব্যাহত হওয়া, সংঘাত আর সহিংসতায় প্রাণ ও সম্পদহানির আশঙ্কা। সামনের দিনগুলো নিয়ে তাই দেশবাসীর উৎকণ্ঠা বেড়েই চলেছে।
আমরা রাজনৈতিক দলগুলোকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, দাবি আদায়ের জন্য রাজনৈতিক আন্দোলন আর সংঘাত-সহিংসতা সৃষ্টি এক জিনিস নয়। আন্দোলনের নামে সহিংসতা সৃষ্টি করে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির যে কৌশল বিরোধী দলগুলো নিচ্ছে, তা সরকারের ওপর কতটুকু চাপ সৃষ্টি করা যাচ্ছে, তা নিয়ে সংশয় থাকলেও পুরো চাপটি যে দেশ ও দেশের জনগণের ওপর গিয়ে পড়ছে, তাতে সন্দেহ নেই। সরকারের ওপর চাপ দিতে গিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো আসলে দেশ ও জনগণের বিরুদ্ধেই অবস্থান নিচ্ছে।
অন্যদিকে দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার দায়িত্ব যে সরকারের, সেটা যেন সরকারি দল ভুলে যেতে বসেছে। সরকারি দল ও বিরোধী পক্ষ নিয়েই একটি গণতান্ত্রিক সরকার কাজ করে। গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থার এই মূল দিকটিই দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের দেশে পরিত্যক্ত বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। আলাপ-আলোচনা ও সমঝোতার পথই যে গণতন্ত্রের মূল—এই সত্যকে বিবেচনায় নিয়ে সরকারি দলকে সে অনুযায়ী কাজ করতে হবে।
সামনের দিনগুলো নিয়ে যে অনিশ্চয়তা ও উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, তা দূর করতে সরকার ও বিরোধী দল দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেবে, সেটাই প্রত্যাশিত।