বাংলাদেশ কৃষিনির্ভর দেশ। কৃষিসম্পদ বলতে ধান, পাট, ডাল, আখ, শস্য ছাড়াও প্রাণিসম্পদ এবং মৎস্যকে বোঝায়। বর্তমানে গ্রামে গ্রামে পোলট্রি ফার্ম, গাভি পালন, গরু মোটাতাজাকরণ কার্যক্রম বিস্তৃত হওয়ায় প্রাণিসম্পদ খাতেও প্রভূত উন্নতি সাধিত হচ্ছে। আশার কথা এই যে বাংলাদেশ ইতিমধ্যে মাংস ও ডিমে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। বর্তমানে দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ২০ শতাংশ প্রত্যক্ষ ও ৫০ শতাংশ মানুষ পরোক্ষভাবে প্রাণিসম্পদ খাতের সঙ্গে জড়িত। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের তথ্যমতে ৯৯ দশমিক ২৩ লাখ মেট্রিক টন দুধ, ৭৫ দশমিক ১৪ লাখ মেট্রিক টন মাংস ও ১ হাজার ৭১১ কোটি ডিম উৎপাদনের মাধ্যমে জনপ্রতি প্রতিদিন ১৬৫ মিলি দুধ, ১২৪ দশমিক ৯৯ গ্রাম মাংস ও বছরে জনপ্রতি ১০৩ দশমিক ৮৯টি ডিম সরবরাহ নিশ্চিত হয়েছে। বর্তমান সরকারের ভিশন অনুযায়ী বাংলাদেশকে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ, ২০৩০ সালের মধ্যে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তোলা আমাদের স্বপ্ন।
বাংলাদেশে জনসংখ্যা ও আয় দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রাণিজ আমিষের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণে ৮০ দশক থেকে এদেশে বাণিজ্যিকভাবে মুরগি পালন শুরু হয়। ৯০ দশকের শুরুতে বিনিয়োগকারীদের উদ্যোগে পোলট্রি শিল্প গতি পায় এবং সস্তায় উন্নত আমিষের উৎস হিসেবে এ খাত জনপ্রিয়তা লাভ করে। ৯০ দশকের মাঝামাঝি পোলট্রি একটি সম্ভাবনাময় শিল্পের রূপ ধারণ করে এবং বছরে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেতে থাকে। ২০১৯-২০২০ সালের হিসাব অনুযায়ী দেশে ১৬টি পোলট্রি গ্র্যান্ড প্যারেন্ট ফার্ম, ২০৬টি লেয়ার ও ব্রয়লার ব্রিডার ফার্ম ও ৮ হাজার ৮০০টি লেয়ার ও ব্রয়লার খামার রয়েছে। ২১৭টি ফিড মিল, ১৫টি মিট প্রসেসিং প্ল্যান্ট ও ২ হাজার ১৫টি সোনালি মুরগির ব্রিডার খামার এবং ৫৩৪টি প্রাণিস্বাস্থ্য–সম্পর্কিত কোম্পানি কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে দেশে মোট জিডিপির ১ থেকে ৩০ শতাংশ আসছে পোলট্রিশিল্প থেকে। তাই পোশাকশিল্পের পরেই সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে পোলট্রিশিল্প ইতিমধ্যে একটি স্বতন্ত্র অবস্থান তৈরি করে নিতে সক্ষম হয়েছে। বর্তমানে এ শিল্প প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ ও অর্ধকোটি লোকের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি সস্তায় প্রাণিজ আমিষের সরবরাহ করে চলেছে। পোলট্রিশিল্পকে কেন্দ্র করে সারা দেশে গড়ে উঠেছে ছোট–বড় আকারের অনেক খামার, ফিড মিল ও ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। বিদেশি বিনিয়োগও এসেছে এ শিল্পে। গত কয়েক বছরে রেড মিটের দাম বেড়ে যাওয়ায় সস্তায় প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণে পোলট্রি শিল্প অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে।
পোলট্রিশিল্পের বর্জ্য
পোলট্রিশিল্পের বর্জ্য প্রধানত দুই ধরনের—সলিড বর্জ্য ও লিকুয়িড বর্জ্য। পোলট্রি বর্জ্যের মধ্যে রয়েছে বিষ্ঠা, লিটার, খাদ্যের উচ্ছিষ্টাংশ, পালক, হ্যাচারির বর্জ্য, মরা মুরগি ইত্যাদি। বর্তমানে দেশে বছরে ৪ দশমিক ৫২ মিলিয়ন টন পোলট্রি বর্জ্য উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে ৩ দশমিক ১ মিলিয়ন টন উৎপাদিত হয় বাণিজ্যিক খামার থেকে। এসব খামার দেশের মধ্য, উত্তর ও পূর্বাঞ্চলীয় কিছু অঞ্চলে অবস্থিত। প্রচলিত ব্যবস্থায় পোলট্রি লিটার খামারের পাশে স্তূপ করে রাখা হয়। পরবর্তী সময়ে ফারমেন্টেশন হয়ে বিভিন্ন গ্যাস উৎপন্ন ও দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পরিবেশ দূষণ করে। এতে বাতাস, পানি ও মাটিদূষণ হয়, যা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। খামারিদের তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় ২০ শতাংশ খামারি পোলট্রি লিটার ব্যবহার করেন না, ৪০ শতাংশ খামারি বিক্রি করেন, ৩০ শতাংশ লিটার শস্যক্ষেতে এবং ১০ শতাংশ লিটার মাছ উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়। সাধারণত একটি ব্রয়লার মুরগি এক কেজি খাবার খেলে এক কেজি ফ্রেশ লিটার পাওয়া যায়। অন্যদিকে একটি লেয়ার মুরগি থেকে বছরে ২০ কেজি বিষ্ঠা পাওয়া যায়। কিন্তু পোলট্রির বিষ্ঠা পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ (টেবিল ১) হওয়ায় এর উপযুক্ত ব্যবহার নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
পোলট্রি বর্জ্যের ব্যবহার
পোলট্রিশিল্পের নতুন চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা অন্যতম। একটি সময় ছিল যখন পোলট্রিশিল্পের বিকাশ শুরু হয়নি। তখন হয়তো এতসব ভাবারও সময় ছিল না। সে সময় জায়গাও ছিল; তবে সরকারি নীতিকাঠামো অনেকটা দুর্বল ছিল। এখন দিন যত যাচ্ছে, জমি কমছে, সেই সঙ্গে সরকারি নীতিকাঠামো কঠিন হচ্ছে। এখন যেভাবে চলছে, তাতে সামনের দিনগুলোতে যেখানে–সেখানে পোলট্রি বর্জ্য ও আবর্জনা ফেলার সুযোগ একেবারে কমে যাবে। বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে দেশের বড় পোলট্রি জায়ান্ট কোম্পানিগুলো ভাবছে এবং সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে। পোলট্রি বর্জ্যকে তারা এখন আর সমস্যা ভাবছে না; বরং সম্ভাবনা হিসেবে দেখছে। এ বর্জ্য দিয়ে যেমন উৎপাদন করা যায় বিদ্যুৎ ও জৈবসার। এ দুটিই নিজেদের চাহিদামতো যেমন ব্যবহার করা যায়, তেমনি বিক্রিও করা যায়। এ বজ৴৵ প্রতি কেজি ১৫ থেকে ২০ টাকায় বিক্রি হয়। বর্তমানে পোলট্রি বর্জ্য অভিশাপ নয়; বরং আশীর্বাদ হিসেবে দেখা দিয়েছে। বিশ্বের বড় বড় দেশে যেখানে কৃষিজমি অনেক বেশি; যেমন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল প্রভৃতি দেশে জমির উর্বরতাশক্তি বৃদ্ধির জন্য কম্পোস্ট সার হিসেবে ব্যবহার করা হয় পোলট্রি লিটার।
খুব সহজ পদ্ধতিতে সাধারণ কিছু প্রযুক্তি ব্যবহার করে পোলট্রি লিটার রিসাইক্লিংয়ের মাধ্যমে জৈব সার উৎপাদিত হচ্ছে এবং সেগুলো প্যাকেটজাত অবস্থায় বিপণন করা হচ্ছে। বাংলাদেশেও এর কার্যক্রম শুরু হয়েছে। পোলট্রি লিটার থেকে জৈব সার উৎপাদন শুধু নয়, এ দিয়ে তৈরি হচ্ছে বায়োগ্যাস ও বিদ্যুৎ।
বাংলাদেশের প্যারাগন পোলট্রি, কাজী ফার্মস প্রভৃতি দেশি কোম্পানি নিজস্ব খামারে বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে অভিনব এ পদ্ধতি কাজে লাগাচ্ছে। এক হিসাব মতে ১০ হাজার মুরগির একটি খামার থেকে প্রতিদিন এক টনের বেশি বর্জ্য পাওয়া যায়। বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিলের (বিপিইসিসি) হিসাব মতে দেশে বর্তমানে দৈনিক প্রায় ৪ হাজার মেট্রিক টন মুরগির মাংস এবং ২ কোটি ৮০ লাখ ডিম উৎপাদিত হচ্ছে। কাজেই আমাদের দেশে প্রতিদিন কী পরিমাণ বর্জ্য উৎপাদিত হচ্ছে, তা আমরা সহজে অনুমান করতে পারি। কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে এ সম্পদকে কাজে লাগাতে পারলে সার, জ্বালানি উৎপাদনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসা সম্ভব। এক তথ্য থেকে জানা গেছে, কাজী ফার্মস তার পাঁচটি বৃহৎ লেয়ার খামারে প্রতিদিন ১ মিলিয়ন ডিম উৎপাদন এবং প্রায় ১৭০ টন পোলট্রি বর্জ্য থেকে প্রায় ৬৫ টন জৈব সার তৈরি করে বাজারজাত করছে।
রিসাইক্লিং ও বিকল্প জ্বালানি
যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের বেশ কিছু বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্রে প্রাথমিক জ্বালানি হিসেবে পোলট্রি ও টার্কির লিটার ব্যবহার করা হচ্ছে। আয়ারল্যান্ডে বায়োগ্যাস এনার্জির উৎস হিসেবে পোলট্রি লিটার ব্যবহার করা হচ্ছে। ব্রয়লার হাউসের তাপ বা উষ্ণতা বাড়াতে আগে যেখানে ফসিল ফুয়েল বা এলপিজি গ্যাস ব্যবহার করা হতো, এখন সেখানে পোলট্রি লিটার ব্যবহার করা হচ্ছে। অ্যাডভান্স ফাইবারস অ্যান্ড পাউডারসের মতো বড় বড় কোম্পানি তাদের ইলেকট্রিক্যাল ও হিটিং অ্যাপ্লিকেশনে জ্বালানি হিসেবে পোলট্রি লিটার ব্যবহার করছে এবং এর পাশাপাশি তারা অ্যাকটিভেটেড কার্বন ও সার তৈরি করছে।
পোলট্রিশিল্পের কোনো কিছুই এখন ফেলে দেওয়া হয় না। চিকেন ফেদার মিল থেকে প্রোটিন মিল ও সার তৈরি ছাড়াও নতুন ধরনের বায়োডিজেল ফুয়েল উৎপাদন করা হচ্ছে।
গবেষণা তথ্য থেকে জানা যায়, খামারে প্রতি বছর ১ হাজার টন বর্জ্য উৎপাদিত হলে, সেখান থেকে ৩৮ থেকে ৭০ কিলোওয়াট; ১০ হাজার টন বর্জ্য থেকে ৩৪০ থেকে ৭০০ কিলোওয়াট এবং ৫০ হাজার টন বর্জ্য থেকে ১ দশমিক ৭০ থেকে ৩ দশমিক ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব।
পোলট্রি বর্জ্যের সম্ভাবনা
বাংলাদেশে বায়োগ্যাস উন্নয়ন ফাউন্ডেশন (BBDP) কর্তৃক পোলট্রি বর্জ্য থেকে প্রতিবছর ৩ দশমিক ৬ মিলিয়ন ঘনমিটার বায়োগ্যাস, ৮০৫৮ দশমিক ৮ (মেগাওয়াট ঘণ্টা) এবং ৩ দশমিক ৮১ মিলিয়ন টন বায়োস্লারি উৎপাদন করা সম্ভব। বর্তমানে দেশে পোলট্রিশিল্পে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার কোটি টাকার ওপরে বিনিয়োগ রয়েছে এবং ২০৫০ সাল নাগাদ এ খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ দ্বিগুণ হবে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আশা ব্যক্ত করছেন। পোলট্রিশিল্প তাই ব্রয়লার মুরগির মাংস ও ডিম উৎপাদনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই; মাংস ও ডিম দিয়ে প্রক্রিয়াজাত খাবার ভোক্তাদের টেবিলে পৌঁছে দেওয়ার জন্য গড়ে উঠেছে বিভিন্ন প্রসেসিং প্ল্যান্ট। পোলট্রি বর্জ্যও এখন আর পোলট্রি লিটারের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই; বরং এর সঙ্গে যোগ হয়েছে হ্যাচারি, প্রসেসিং প্ল্যান্ট এবং ফার্মের অন্যান্য বর্জ্য। এসব জায়গা থেকে উৎপাদিত বর্জ্য কাজে লাগানো হচ্ছে কিংবা কাজে লাগানোর পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। যা নিচে উল্লেখ করা হলো—
*আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে মুরগির বিষ্ঠা ও অন্যান্য বর্জ্যকে কম্পোজিট প্ল্যান্টের মাধ্যমে টানেল ভেন্টিলেশন বর্জ্যকে কম্পোজিট প্লান্টের মাধ্যমে টানেল ভেন্টিলেশন এবং ড্রাইং পদ্ধতিতে প্রক্রিয়াজাত করে গুণগতমানসম্পন্ন গুঁড়া অথবা দানাদার জাতীয় অর্গানিক জৈব সারে রূপান্তরিত করা।
*পোলট্রি ফার্মের অন্যান্য বর্জ্য এবং মুরগির প্রক্রিয়াজাত খামারের বর্জ্য থেকেও রেন্ডারিং টেকনোলজি ব্যবহারের মাধ্যমে উচ্চমাত্রায় আমিষ জাতীয় পোলট্রি মিল উৎপাদন করা যায়, যা গবাদিপশু ও মাছের খাবার তৈরিতে ব্যবহার করা হয়।
*বিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনা আগেই উল্লেখ করা হয়েছে।
*ওপরে উল্লেখিত ব্যবস্থাপনা বাস্তবায়ন করা গেলে মিথেন গ্যাস উৎপাদন কমিয়ে আনা সম্ভব।
*পোলট্রি খামার যদি জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত থাকে, তাহলে এর বর্জ্য থেকে জীবাণু নিঃসৃত হয়। ওই বর্জ্য প্রক্রিয়াজাত না করলে তা থেকে মানুষের মধে৵ রোগ ছড়ানোর আশঙ্কা থাকে। এমতাবস্থায় এসব বর্জ্য অ্যান অ্যারোটিক ডাইজেশন করা হলে এর মাধ্যমে রোগজীবাণু ছড়ানোর আশঙ্কা কমে যায়।
*গবেষণায় দেখা গেছে, প্রাণীর বর্জ্য দিয়ে সৃষ্ট জৈব সার ব্যবহার করলে রাসায়নিক সার আমদানি ৪০ থেকে ৫০ ভাগ হ্রাস পাবে এবং সেই সঙ্গে মাটির গুণগত মানেও উন্নয়ন ঘটবে।
সরকারের করণীয়
মিথেন গ্যাস নির্গমন হ্রাস, কার্বন উৎপাদনের মাত্রা কমানো এবং জলবায়ু পরিবর্তনে প্রাণিসম্পদের অভিযোজন বৃদ্ধিকে গুরুত্ব দিয়ে সরকার বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ স্ট্র্যাটেজি ও অ্যাকশন প্ল্যান (২০০৮) অনুমোদন করেছে। জাতিসংঘের জলবায়ু কর্মসূচির (United Nations Environment Programme; UNEP) আওতায় বায়ুর স্বল্পজীবী পরিবেশ দূষকগুলো (Short Lived Climate Pollutants; SLCPs) হ্রাসে জ্ঞান, উপাত্ত এবং প্রযুক্তি সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে Climate and Clean Air Coalition (CCAC) ২০১২ সালে সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশ CCAC–এর প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য এবং বাতাসের SLCPs হ্রাসের লক্ষ্যে সরকার National Action Plan for Reducing Short Lived Climate Pollutants (NAP 2013) অনুমোদন করে, বর্তমানে যেটি আরও হালনাগাদ করে NAP 2018 চূড়ান্ত করা হয়েছে। SLCP–এর একটি বড় উৎস হলো প্রাণিসম্পদ ম্যানিউর। SLCP হ্রাসে অজ্ঞানতা, অসচেতনতা, পারস্পারিক অসহযোগিতা এবং প্রয়োজনীয় নীতির অভাব ও দুর্বল সক্ষমতা CCAC কর্তৃক চিহ্নিত করা হয়। সেই আলোকে শুধু পোলট্রি বর্জ্য ব্যবহারের জন্য নয়, প্রাণিসম্পদের সব বর্জ্যের সঠিক ব্যবহার, সংরক্ষণ, প্রযুক্তিগত সহযোগিতা দেওয়ার জন্য মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় জাতীয় সংবলিত প্রাণিসম্পদ ম্যানিউর ব্যবস্থাপনা নীতি-২০২০ প্রণয়ন করা হয়েছে, যা সংক্ষেপে ILMM নামে পরিচিত। এই নীতিমালার মিশন হচ্ছে, প্রথাগত ব্যবস্থাপনার পরিবর্তে বড়, মাঝারি, ক্ষুদ্র ও ভূমিহীন খামারিদের সংগঠিত করে বাজারমুখী মুখ্য সংযোজিত প্রাণী ম্যানিউর পণ্য উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনাপদ্ধতি বাস্তবায়ন করা। ILMM নীতির ভিশন হচ্ছে—সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর উদ্যোগে দেশের প্রাণী ম্যানিউরের উন্নত ব্যবস্থাপনা বাস্তবায়ন, প্রাণিসম্পদ উৎপাদন আরও টেকসই ও বায়ুদূষণ হ্রাস করা।
নীতিমালাটি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়; বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট সংস্থা, দপ্তর ও অধিদপ্তর এবং সংগঠনগুলোর সংবলিত প্রচেষ্টায় অনুমোদিত সমন্বিত প্রাণিসম্পদ ম্যানিউর ব্যবস্থাপনানীতির বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। ওই নীতি বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয় ও সংস্থার সমন্বয়ে একটি জাতীয় পরামর্শক কমিটি (National Consultative Committee) গঠন করে বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএলআরআই) ওই (ILMM) কমিটির সার্বিক দায়িত্ব পালন করবে। কোনো বেসরকারি উদ্যোক্তা পোলট্রি বর্জ্য থেকে নতুন বায়োগ্যাস, বিদ্যুৎ, ঘনীভূত বায়োগ্যাস, জৈব সার বা মাঠ কম্পোস্ট সার, ভার্মিকম্পোস্ট এবং জৈব কীটনাশক উৎপাদন, সেক্টরে বিনিয়োগ করতে আগ্রহ প্রকাশ করলে সরকার উৎসাহিত করবে এবং সরকারি অন্যান্য প্রণোদনার মতো প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেবে।
*লেখক: নাথুরাম সরকার ও মো. রাকিবুল হাসান