আমলাদের ওপর নির্ভরশীলতা তৈরি হয়েছে, তাই এমন সংঘাত

বরিশালে ইউএনওর বাসায় হামলার ঘটনা পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।
প্রথম আলো

আগে দুটো জিনিস ছিল—প্রথমত, রাজনীতিবিদেরা রাজনীতি করতেন ও তাঁরা বিভিন্ন দল থেকে আসতেন; দ্বিতীয়ত, এর ফলে প্রশাসন নিরপেক্ষ থাকত। একে বলে পারমানেন্ট (স্থায়ী) সিভিল সার্ভিস। রাজনীতিবিদ যেকোনো সিদ্ধান্ত হুট করে নিয়ে ফেললে বা জনহিতকর নয় এমন কোনো কাজ করলে পারমানেন্ট সিভিল সার্ভিস রাশ টেনে ধরত। এখন পারমানেন্ট সিভিল সার্ভিসেও রাজনীতিকরণ হয়েছে।

আগে ছাত্ররাজনীতি করা ব্যক্তিরা সিভিল সার্ভিসে যোগ দেওয়ার পর রাজনৈতিক পরিচয় ধারণ করতেন না। কিন্তু বর্তমানে সেটা হচ্ছে। এখন রাজনীতিবিদও মনে করছেন, আমি রাজনীতিবিদ। আর সিভিল সার্ভিসের লোকজনও মনে করেন, আমি বা কম কিসে। তাঁরাও রাজনীতিবিদদের মতো আচরণ করছেন।

যেহেতু জাতীয় নির্বাচনে আমলাদের ওপর নির্ভরশীলতা তৈরি হয়েছে, তাই এমনটা হচ্ছে। আগেও রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে কোনো সিদ্ধান্ত গেলে তাঁরা মেনে নিতেন। ফলে সংঘাত হতো না। এখন তো দুপক্ষেই রাজনীতিবিদ। আগে সরকারি অফিসকে রাজনীতিবিদেরা টার্গেট (লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত) করতেন না। কারণ তাঁরা জানতেন, তাঁরা তো প্রতিদ্বন্দ্বী নন। বরং তাঁরা সাব–অর্ডিনেট।

রাজনৈতিক দলের মধ্যে যেমন বিভাজন থাকত, এখন সিভিল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনেও তেমন। আগে রাজনীতিবিদেরা ভাবতেন, আমলারা যা করছে টার্গেট করে করছে না। সরকারি কর্মকর্তাদের আগে মানুষ সমীহ করত।

এখন সিভিল সার্ভিস আর নিরপেক্ষ আচরণ করে না। ফলে রাজনীতিবিদেরাও তাঁদের এমন আচরণ আমলে নিচ্ছেন। আগে এমনটা ছিল না। আমরা রাজনীতিবিদদের অনেক পছন্দের বিরুদ্ধে গিয়েও সিদ্ধান্ত দিতাম। সে জন্য মাঝেমধ্যে বদলি করে দিত, কিন্তু ওইভাবে বাসাবাড়িতে আক্রমণ করত না। আগে ইউএনওদের বাসায় আনসার সদস্যও থাকত না। সিভিল সার্ভেন্টদের মোরাল অথরিটি ছিল যে আমরা শুধু রাষ্ট্রের জন্য কাজ করি, দলের জন্য নয়। এখন আমলারাও দলের জন্য কাজ করেন।

বরিশালের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর বিপক্ষে সেখানকার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কী সম্পর্ক, সেটা তো এখনো জানি না।

বরিশাল সদর ইউএনওর বাড়িতে হামলার বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন যে ভাষায় বিবৃতি দিয়েছে, সেটা এভাবে দেওয়া ঠিক হয়নি। আগে এমন ঘটলে হয়তো ক্যাবিনেট সেক্রেটারি রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন, সমাধানের চেষ্টা করতেন। এগুলো পাবলিক হতো না। এভাবে পাবলিকলি বিবৃতি দেওয়ার বিষয়টা খুবই ইনঅ্যাপ্রোপ্রিয়েট (বেমানান)। এগুলো অভূতপূর্ব। প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা তো কোনো দলের নন, কারও বিপক্ষে নন। বিষয়টি বেশ শান্তভাবে করা যেত অথবা আগে এমন ঘটনা ঘটলে হয়তো রাজনীতিবিদদের থানায় যেতে হতো।

রাজনীতিবিদ ও আমলারা স্ব স্ব বৃত্তে থাকলে সবার জন্যই মঙ্গল।

* মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, সাবেক সচিব ও অর্থনীতিবিদ