বকেয়া হোল্ডিং ট্যাক্স

ঢাকা সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত মেয়ররা নিজেদের জনদরদি প্রমাণের জন্য দীর্ঘদিন বাড়ি ও প্রতিষ্ঠানের হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়াননি। তাতে নিম্ন আয়ের মানুষেরা স্বস্তিবোধ করলেও বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকদের যে সুমতি ফিরে আসেনি, তার প্রমাণ কেবল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ১৫০ কোটি টাকা হোল্ডিং ট্যাক্স বকেয়া থাকা। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন যোগ করলে বকেয়া হোল্ডিং ট্যাক্সের পরিমাণ কয়েক শ কোটি টাকা হবে। এত বিপুল পরিমাণ ট্যাক্স বাকি পড়লে সিটি করপোরেশনের উন্নয়নকাজ কীভাবে হবে?
হোল্ডিং ট্যাক্স যেকোনো প্রতিষ্ঠানের সার্বিক করের তুলনায় খুবই সামান্য। কিন্তু সেই সামান্য ট্যাক্স পরিশোধে অসামান্য ব্যক্তিদের এত অনীহা কেন, তা বোধগম্য নয়। হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধ না করার তালিকায় যেমন নামকরা ব্যবসায়ী ও শিল্পপ্রতিষ্ঠান আছে, তেমনি আছে হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, এমনকি সরকারি প্রতিষ্ঠানও। কেন এই বিপুল পরিমাণ হোল্ডিং ট্যাক্স বকেয়া রয়েছে, তার সদুত্তর নেই কোনো পক্ষ থেকেই। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান কর ফাঁকি দেওয়ার উদ্দেশ্যে উল্টো মামলা করেছে সিটি করপোরেশনের বিরুদ্ধে। এই দুঃসাহস তারা কোথায় পেল? তারা কি আইনের ঊর্ধ্বে?
সব মিলিয়ে ঢাকা সিটি করপোরেশনের হোল্ডিং ট্যাক্স আদায় নিয়ে চলছে একধরনের নৈরাজ্য। এর কারণ সম্ভবত আমাদের প্রশাসন কিংবা জনপ্রতিনিধিত্বকারী প্রতিষ্ঠান—সর্বত্র জবাবদিহির অনুপস্থিতি। জবাবদিহি থাকলে সরকার দেশের বৃহত্তম স্থানীয় সরকার সংস্থা দুটির নির্বাচন এভাবে ঝুলিয়ে রাখতে পারত না। জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে তারা ঢাকা সিটি করপোরেশনকে দুই ভাগ করলেও এখন প্রতিষ্ঠানটির পুরো কার্যক্রমই প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে।
বকেয়া হোল্ডিং ট্যাক্সের ব্যাপারে সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কোনো গাফিলতি আছে কি না, তা-ও তদন্ত করে দেখা দরকার। সরকারি সেবাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় কর আদায়কারী ও কর প্রদানকারীদের মধ্যে একটি অশুভ আঁতাত লক্ষ করা যায়। এ ক্ষেত্রেও যে সে রকম কিছু হয়নি, তার নিশ্চয়তা কী? সিটি করপোরেশনের কর্তাব্যক্তিরা নোটিশ দিয়েই তাঁদের দায়িত্ব শেষ করেন। তাঁরা এখন বকেয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে জোরালো আইনি ব্যবস্থা ও মালামাল ক্রোকের কথা বলছেন। কিন্তু এত দিন কেন ব্যবস্থা নেওয়া হলো না?
আমাদের দাবি, সিটি করপোরেশনের সব বকেয়া হোল্ডিং ট্যাক্স আদায়ে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হোক। আইন নিজস্ব গতিতে চলুক। প্রয়োজনে আইন সংশোধন করে প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের জরিমানা আদায় করতে হবে। সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে সিটি করপোরেশনকে আঙুল বাঁকা করতে হবে বৈকি। হোল্ডিং ট্যাক্স বকেয়া থাকা প্রতিষ্ঠানের মালিকেরা যতই ক্ষমতাধর হোন না কেন, তাঁরা কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নন।