বিশ্বাসের জন্য কারও মানবাধিকার লঙ্ঘন করা যেতে পারে না, এটাই সভ্যতা ও মানবিকতার প্রথম শর্ত। ইসলামও বিশ্বাসের জন্য কাউকে শাস্তি দেওয়া সমর্থন করে না। অথচ ধর্মের নামেই জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে চারটি পরিবারকে এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছেন স্থানীয় সমাজপতি ও মাতবরেরা। বাংলাদেশে সম্প্রতি বিভিন্ন রকম সংখ্যালঘুর ওপর সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে; এ ঘটনা তার থেকে বিচ্ছিন্ন নয়।
জামালপুরের সরিষাবাড়ীর আহমদিয়া জামায়াতের সদস্য এক ব্যক্তি এবং তাঁর তিন ভাই মিলিয়ে চারটি পরিবারের ২৫ জন সদস্য হঠাৎ দেখতে পান, তাঁরা কোণঠাসা হয়ে গেছেন। তাঁদের সঙ্গে কেউ কথা বলে না, তাঁদের ছেলেমেয়েরা স্কুলে যেতে পারে না। কিন্তু সমাজপতিদের ক্রোধ এখানেই শেষ হয়ে যায়নি; অবশেষে গত শুক্রবার মাতবরেরা এই চারটি পরিবারকে এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দেন। অথচ এই চারটি পরিবার ওই এলাকার সমাজেরই একটি অংশ। তারা এমন কিছুই করেনি, যা সমাজবিরুদ্ধ। তাহলে কেন এই শাস্তি? অনেক সময় জমি, স্বার্থ ও ক্ষমতার জন্য সাম্প্রদায়িকতাকে ব্যবহার করা হয়; এ ঘটনাও সম্ভবত তারই অংশ।
ব্যক্তিগত ধর্মবিশ্বাসের চর্চার অধিকার সংবিধানের মৌলিক অধিকার। যেকোনো ধর্ম ও সংস্কৃতি লালন করলে যদি অন্য ধর্মের ক্ষতি হতো, তাহলে পৃথিবীতে একটি ছাড়া অন্য কোনো ধর্মই থাকতে পারত না। বাংলাদেশের মানুষ ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক বিষয়ে অনেক সহনশীল। সে কারণেই এ অঞ্চলে ধর্ম নিয়ে বহু মত ও পথের জন্ম হয়েছে এবং যুগ যুগ ধরে ভিন্ন ধর্মের মানুষ পাশাপাশি বসবাসও করে আসছে। কিন্তু দেখা যায়, একশ্রেণীর ফায়দাবাজ ব্যক্তি, নিজেদের অসৎ ইচ্ছা চরিতার্থের জন্য ক্ষুদ্র ধর্ম ও জাতিগোষ্ঠীকে ভয়ের মধ্যে রাখে। সম্প্রতি বাংলাদেশে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, আদিবাসীসহ আহমদিয়া, বাউল-ফকির, সুফি মতবাদের মানুষের ওপর চাপ বাড়ছে। সংখ্যালঘুদের পরিকল্পিতভাবে হুমকির মুখে রাখা হচ্ছে। সংখ্যালঘুর অস্তিত্ব সম্পত্তি গ্রাস ও রাজনৈতিক কূটকৌশলের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। সে কারণে রাজনৈতিক শক্তিকে এ রকম মানবতাবিরোধী কূটকৌশলের আশ্রয় নেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
জামালপুরের প্রশাসনের দায়িত্ব রয়েছে ওই চারটি পরিবারের পক্ষে দাঁড়ানোর। আইনের বলে নয়, সামাজিক সংযোগ ও আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই মাতবরদের প্রতাপ ঠেকাতে হবে। সাধারণ মানুষই পারে ক্ষমতালোভী মাতবরদের সমাজবিরোধী কার্যকলাপকে বর্জন করে চলতে।