মাতৃত্বকালীন ছুটি

মাতৃত্বকালীন ছুটিতে যাওয়ায় ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার চরমৌকুরী বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সামসুন্নাহারের চাকরি হারানোর ঘটনাটি কেবল নৈতিকতার দৃষ্টিতে নয়, আইনের দৃষ্টিতেও অপরাধ। দেশের আইন অনুযায়ী যেকোনো মা সন্তান জন্ম দেওয়ার সময় ছয় মাস মাতৃত্বকালীন ছুটি ভোগ করার অধিকার রাখেন। সে অনুযায়ী চরমৌকুরী বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সামসুন্নাহার বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি খায়বার হোসেনের কাছে ছয় মাসের ছুটির আবেদন করেন। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি সেই আবেদনপত্র রাখলেও তা মঞ্জুর করেছেন কি না জানাননি। ছুটি শেষে সামসুন্নাহার বিদ্যালয়ে যোগদান করতে গিয়ে দেখেন, তাঁর স্থলে অন্য একজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি যত ক্ষমতাধর ব্যক্তিই হোন না কেন, তিনি দেশের আইন অমান্য করতে পারেন না। প্রধান শিক্ষিকার অনুপস্থিতিতে যদি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় বিঘ্ন ঘটে, তিনি ছুটিকালীন সময়ের একজনকে অস্থায়ী নিয়োগ দিতে পারতেন। কিন্তু সেই পথে না গিয়ে বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি প্রধান শিক্ষিকার চাকরি খেয়েছেন। এ ধরনের নারীবিদ্বেষী ব্যক্তির বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি থাকার অধিকার নেই।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা দীন মোহাম্মদ মাতৃত্বকালীন ছুটিতে থাকা শিক্ষিকাকে বাদ দেওয়া অন্যায় বলে অভিহিত করেছেন। শুধু মৌখিকভাবে ‘অন্যায়’ বললেই তাঁর কর্তব্য শেষ হয়ে যায় না। আমরা দেখতে চাই, শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে তিনি বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি কিংবা পুরো কমিটির বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেন। বেআইনিভাবে যে প্রধান শিক্ষিকাকে বাদ দেওয়া হয়েছে, অবিলম্বে তাঁকে পুনর্বহাল করতে হবে।
কেবল শৈলকুপার প্রাথমিক বিদ্যালয়েই নয়, অনেক সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে মাতৃত্বকালীন ছুটির কারণে অনেক নারীকর্মী হয়রানি ও চাকরিচ্যুতির শিকার হচ্ছেন। বিষয়টি দেখার ও প্রতিকারের দায়িত্ব সরকারেই। প্রয়োজনে এ ব্যাপারে আলাদা তদারকি প্রতিষ্ঠানও করা যেতে পারে। কর্মক্ষেত্রে নারীর মর্যাদা ও অধিকার নিশ্চিত করতে না পারলে নারীর ক্ষমতায়ন নিষ্ফল রোদনেই পরিণত হবে।