মায়েদের দীর্ঘশ্বাস

মায়ের আর্তনাদে নাকি সৃষ্টিকর্তার আসন কাঁপে, শুধু কাঁপে না পৈশাচিক হত্যাযজ্ঞের নায়কদের। একসময় মায়েদের প্রার্থনা ছিল, তঁার সন্তান যেন থাকে দুধে-ভাতে। এখন আর সেই সময় নেই। এখন প্রার্থনা, ‘আমার সন্তান যেন মানুষের মতো মরে।’

এ দেশের মায়েদের জন্য উপহারের ডালি সাজিয়ে রাখা হয়েছে নদীর বুকে। এই তো সেদিন আমরা লাখ লাখ প্রাণ একসঙ্গে গেয়েছিলাম, ‘কী অঁাচল বিছায়েছ বটের মূলে নদীর কূলে কূলে৷’
সে নদীর কূলে এখন মায়ের সন্তানদের বীভৎস লাশের স্তূপ৷ মােয়দের বুকে নয়, নদীর জলের শীতলতায় স্থান হচ্ছে হতভাগ্য সন্তানদের৷
এ দেশের মায়েরা তাঁদের সম্ভ্রম আর সন্তানদের রক্তে যে রাষ্ট্র অর্জন করেছিলেন, সে রাষ্ট্রে আজ মানুষরূপী শ্বাপদের দাপট৷ মায়ের স্নেহের অঁাচল এসব শ্বাপদের হাত থেকে রক্ষা করতে পারছে না সন্তানদের৷
রাষ্ট্রের আইন ছুঁতে পারছে না অপরাধীদের৷ অভিযোগের আঙুল একে অন্যের দিকে তাক করে দাঁড়িয়ে আছে৷ অসহায় মা দেখছেন চাতুর্য আর ভণ্ডামির নাটক৷ যাদের হাতে প্রতিকার তাদের সন্তান থাকে নিরাপদে, নিশ্চিন্তে৷

সাধারণ মায়েদের সন্তান কুকুর-বিড়ালের মতো পড়ে থাকে ডোবায়, নদীতে৷ আবার কারও কারও কোনো সন্ধানই পাওয়া যায় না৷ লেখা হয়, কথা হয়৷ নিত্যনতুন ঘটনার মাঝে আজকের ঘটনা কাল ফিকে হয়ে আসে৷
মায়েরা একাই অশ্রু বিসর্জন দেন৷ ত্বকী, আবু বকর, সাদসহ এ দেশের যে সন্তানের মায়েরা সন্তানের মৃত্যুর ভয়ংকর স্মৃতি বুকে নিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলছেন, তাঁদের দীর্ঘশ্বাসেই ধ্বংস হোক মানুষরূপী শ্বাপদেরা৷
বিচারের বাণী যখন নিভৃতে কাঁদে, মুখ খুললেই যখন মৃত্যুর স্বাদ পেতে হয়, তখন প্রাকৃতিক প্রতিশোধের অপেক্ষা ছাড়া উপায় কী?

শাকিলা নাছরিন
মুরাদপুর মাদ্রাসা রোড, ঢাকা৷