মুক্তিযোদ্ধা সনদ কেলেঙ্কারি

জাল মুক্তিযোদ্ধা সনদধারীদের চিহ্নিত করার কাজ শুরু হওয়া ভালো উদ্যোগ। নতুন ৩৫ জনসহ সম্প্রতি ১৫১ জন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর সনদ বাতিল হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা সনদ বণ্টনে যে ধরনের দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়া হয়েছে, জাল সনদ খোঁজায় যেন সেটি হবে না বলেই আশা করা গিয়েছিল। কিন্তু কয়েকজন সচিবের জাল সনদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত না হওয়ায় আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।
মুক্তিযুদ্ধের সনদ প্রতারণার দায় থেকে পূর্বাপর কোনো সরকারই মুক্ত নয়। মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়ে যখন সুযোগ-সুবিধার দরজা খোলে, তখন তা দুর্নীতির দুয়ারও খুলে দেয়। মুক্তিযোদ্ধা সনদ দেখাতে পারলে চাকরির মেয়াদ এক বছর বাড়ানোর সুযোগ খোলা মাত্রই তাই জনপ্রশাসনের কর্মকর্তাদের মধ্যে সনদ নেওয়ার হিড়িক পড়ে গিয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একটি প্রজ্ঞাপনে সুস্পষ্টভাবে বলা রয়েছে, চাকরিতে যোগ দেওয়ার সময়ে না জানালে পরে কাউকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বিবেচনা করা হবে না। তাহলে পরে যাঁরা আবেদন করেছেন, তাঁদের আবেদন বিবেচনা করা হলো কিসের ভিত্তিতে?
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের পাঁচ বছরে মুক্তিযোদ্ধা সনদ নিয়েছেন বিভিন্ন পেশার মোট ১১ হাজার ১৫০ জন। সংখ্যাটি ব্যাপক! সম্প্রতি সনদ জাল করে চাকরি নেওয়ার অভিযোগে আটক হয়েছেন পুলিশের ২৩ কনস্টেবল। মুক্তিযোদ্ধা কোটায় প্রাথমিক শিক্ষক পদে আবেদনকারী এক হাজার ৩৩৮ জনের মধ্যে ১৫২ জনের সনদ ভুয়া প্রমাণিত হয়। প্রশ্ন উঠেছে রাষ্ট্রীয় সুবিধা নেওয়া সাত হাজার সনদধারীকে নিয়েও। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় এখন ভুয়া সনদ বাতিলের ভঙ্গি করছে, কিন্তু সময়মতো এগুলো ঠেকানো হলো না কেন? যাঁদের সময়ে এই সীমাহীন দুর্নীতি হয়েছে, তাঁদের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হবে না কেন?
দলের খাতিরে বনে যাওয়া মুক্তিযোদ্ধা, সুপারিশে রূপান্তরিত মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যা এখন হাজার হাজার। এঁরা এবং এঁদের সনদদাতারা শুধু মুক্তিযুদ্ধের মর্যাদা, ইতিহাস ও অবদানই আত্মসাৎ করেননি, তাঁরা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদেরও তাঁদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করেছেন। এঁরা ক্ষমার অযোগ্য, এঁদের বিচার হতে হবে।