হল-মার্কের তদন্ত প্রতিবেদন

হল-মার্ক কেলেঙ্কারির ব্যাপারে বাংলাদেশের জনগণের ধিক্কার ও কৌতূহল উভয়ই প্রবল। কারণ, রাষ্ট্রায়ত্ত একটি ব্যাংক থেকে আড়াই হাজার কোটি টাকারও বেশি আত্মসাৎ হয়ে যাওয়া এই দরিদ্র দেশে সামান্য বিষয় নয়। এটা নিয়ে সংবাদমাধ্যমে প্রচুর সমালোচনা হলো, জনমতের চাপে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হলো, সেই তদন্ত কমিটি তদন্ত করে একটি প্রতিবেদন জমাও দিল, কিন্তু সেই প্রতিবেদনে কী আছে, তা জনগণকে জানতে দেওয়া হচ্ছে না—এ কেমন ধারার কথা? এই রাখঢাকের উদ্দেশ্য আসলে কী?

শুক্রবারের প্রথম আলোর প্রথম পাতায় একটি প্রতিবেদনের তথ্য হচ্ছে, সোনালী ব্যাংক থেকে হল-মার্কের দুই হাজার ৬৬৮ কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন সংসদের অর্থ মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি প্রকাশ করবে না। এ বিষয়ে সরকারকে তারা কোনো সুপারিশও করবে না। প্রশ্ন হচ্ছে, কেন? এই গোপনীয়তার যুক্তি কী? সংসদীয় কমিটির সভাপতির বক্তব্য, এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) একটি মামলা দায়ের করেছে। প্রতিবেদনটি জনসমক্ষে প্রকাশ করা হলে মামলার গতিপ্রকৃতি প্রভাবিত হতে পারে। কিন্তু দুদকের একজন কমিশনার প্রথম আলোকে বলেছেন, দুদকের মামলার সঙ্গে সংসদীয় কমিটির তদন্তের সম্পর্ক নেই। বলা বাহুল্য, দুদক তার নিজ দায়িত্বে স্বাধীনভাবে মামলাটি চালিয়ে যাবে, তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে তাতে কোনো হেরফের ঘটবে না।

গুরুতর বিষয় হলো, তদন্ত প্রতিবেদনটি যে শুধু জনসাধারণের কাছ থেকে গোপনে রেখে দেওয়া হয়েছে তা-ই নয়, অর্থ মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভায়ও ওই প্রতিবেদন নিয়ে কোনো আলোচনা করা হয়নি। তদন্ত কমিটির সদস্যরা এ জন্য যে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন, তা যথার্থ। কারণ, তাঁদের তদন্তে ফলাফল নিয়ে যদি সংশ্লিষ্ট স্থায়ী কমিটির বৈঠকেই আলোচনা না হয়, উপরন্তু তা যদি জনসমক্ষেও প্রকাশ না করা হয়, তাহলে তদন্তকর্মটিই তো অর্থহীন হয়ে যায়।

তদন্ত প্রতিবেদনটি গোপন রাখা হলেও সংবাদমাধ্যম জানতে পেরেছে, হল-মার্ক নামের প্রতিষ্ঠানকে সোনালী ব্যাংক থেকে দুই হাজার ৬৬৮ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে, অথচ হল-মার্কের সমুদয় সম্পদের আর্থিক মূল্য ৩০০ কোটি টাকার বেশি নয়। আর তাদের মোট বিনিয়োগের পরিমাণ ৩০০ থেকে ৪০০ কোটি টাকা মাত্র। অর্থাৎ জনগণের প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা কোথায় লোপাট করা হয়েছে, সেই হদিস বের করতে পারেনি সংসদীয় কমিটি। ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের তদারকি দুর্বল ছিল—শুধু এটুকু      বলে পরিচালনা পর্ষদকে অনেকাংশে দায়মুক্তি দিয়ে পার পাওয়া যাবে না।

জনগণের অর্থ আত্মসাতের এই মহাজালিয়াতির ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানার অধিকার জনগণের আছে এবং সেই কারণে তদন্ত প্রতিবেদনটি অবশ্যই জনসমক্ষে প্রকাশ করা উচিত। এই তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত একটি কমিটির দ্বারা, যাদের দায়িত্ব জনস্বার্থ-সম্পর্কিত সব বিষয়ে জনগণকে সঠিক তথ্য অবহিত করা।