হাওরের সুখ-দুঃখ যেমন দেখেছি—২

ছবি: প্রথম আলো

আজ হাওরাঞ্চলের এমন একটা বিষয় নিয়ে লেখাটা শুরু করতে যাচ্ছি, যা নিয়ে লেখার কোনো ইচ্ছাই আমার ছিল না। কারণ, হাওরপারের মানুষ হিসেবে বিষয়টা আমাদের কাছে গর্বের তো নয়ই, বরং এটা খুব একটা দুঃখজনক ব্যাপার। এতটাই দুঃখজনক যে এটা যুগের পর যুগ হাওরপারের মানুষের জীবনে একেবারে গলার কাঁটার মতো বিঁধে আছে। তাই অনেক দ্বিধা–সংকোচের পরও ভাবলাম যে বিষয়টা নিয়ে একটু আলোচনা হওয়া দরকার। এমনও তো হতে পারে যে সংশ্লিষ্ট সবার মধ্যে একটু শুভবুদ্ধির উদয় হয়ে গেল। আর যুগের পর যুগ ধরে জিইয়ে থাকা এ সমস্যার একটা সমাধান হয়ে হাওরাঞ্চলের মানুষের শান্তিতে ঘুমানোর একটু সুযোগ হয়েও তো যেতে পারে। জানি সমস্যাটি খুব শিগগির সমাধান হওয়ার মতো নয়। তবু আশা করতে তো দোষ নেই।

এবার সমস্যাটায় আসি। হাওরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় দেখেছি একেবারেই ছোটখাটো বিষয় নিয়ে বড় ধরনের ঝগড়াঝাঁটি থেকে খুনোখুনি হয়ে যাওয়াটা খুবই স্বাভাবিক একটা ব্যাপার। অনেকটা ডালভাতের মতো বিষয়। ধরা যাক, কোনো সামান্য একটা বিষয় নিয়ে একই গ্রামের দুই ব্যক্তির মধ্যে ঝগড়া হলো। দুই ব্যক্তি যদি একই গ্রামের দুই গোষ্ঠীর লোক হন, তবে দেখা যাবে দুই গোষ্ঠীর পুরো লোক কোনো বিচার বিবেচনা না করেই দুজনের পক্ষ নিয়ে বসবেন। আর অল্প সময়ের মধ্যেই দুই দল লোকের মধ্যে ঝগড়াটা ছড়িয়ে পড়বে। দুই দলই লাঠি, বল্লম, খুন্তি, কুড়াল ইত্যাদি নিয়ে একে অপরের ওপর চড়াও হবেন। আর এতে আহত এমনকি নিহতের ঘটনাও ঘটে যাবে।

আবার ধরেন, কোনো এক খেলার মাঠে বা কোনো বাজারে অথবা অন্য কোনো স্থানে দুই গ্রামের দুজন মানুষের মধ্যে কোনো সাধারণ বিষয় নিয়ে ঝগড়া হয়ে গেল। আশপাশে থাকা দুই গ্রামের মানুষজন এক নিমেষের মধ্যেই কোনো বিচার–বিবেচনা না করেই দুটি পক্ষ হয়ে মারামারিতে জড়িয়ে পড়বেন। খবর পেয়ে দুই গ্রামের সব মানুষের তৎপরতায় মারামারি ও খুনোখুনিতে পরিণত হয়ে যাবে কিছুক্ষণের মধ্যেই।

আরও পড়ুন

এমনও দেখা গেছে, কোনো এক নদীর দুই পারের দুই বাসিন্দা কোনো হাটে–বাজারে গিয়ে নিতান্তই ব্যক্তিগত কোনো বিষয় নিয়ে ঝগড়া লেগেছেন। খবর পেয়ে দুই পারের সব মানুষ (প্রতিটি পারে একাধিক গ্রাম থাকতে পারে) দুটি পক্ষ হয়ে মারামারি বা খুনোখুনিতে জড়িয়ে পড়বেন এবং আহত-নিহত হবেন। হাওরাঞ্চলে এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে। আর এখনো এমন ঘটনা বিরল নয়। হাওরের অনেক সুন্দর সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড কালের পরিক্রমায় বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এই একটা বিষয় অর্থাৎ ঝগড়াঝাঁটি, হিংসা-বিদ্বেষ আগের মতোই আছে। এ বিষয়ে চোখে পড়ার মতো কোনো পরিবর্তন নেই।

অতি সাধারণ বিষয় নিয়ে এসব ঝগড়াঝাঁটির সুদূরপ্রসারী প্রভাব থাকে। আসলে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য দুই পক্ষই বেশ উত্তেজনা, উৎসাহ-উদ্দীপনা, আর প্রস্তুতি নিয়েই ঝগড়ায় লিপ্ত হয়। কিন্তু দেখা গেল, দুর্ভাগ্যবশত এক পক্ষের কোনো লোক নিহত হয়ে যান। তখন পুরো দোষই গিয়ে পড়ে যাঁদের হাতে নিহত হলেন, তাঁদের ওপর। তাঁরা মামলায় পড়েন। বাড়িতে থাকতে পারেন না। প্রতিপক্ষের হাতে তাঁদের বাড়িঘর ভাঙচুর হয়। তাঁদের মালামাল লুটপাট হয়। তাঁদের জমিতে পাকা ধান থাকলে প্রতিপক্ষের লোকেরা কেটে নিয়ে যান। এককথায়, তাঁরা মহা বিপদে পড়েন।

অর্থনৈতিক ও মানসিকভাবে এতটাই ক্ষতিগ্রস্ত হন, যা বলে বোঝানো কঠিন। একপর্যায়ে তাঁরাও কাউন্টার মামলা করেন। এরপর উভয় পক্ষেরই থানা–পুলিশ করা, কোর্টে হাজিরা দেওয়া, জেলহাজত খাটা, সব মিলিয়ে মহা ঝক্কিঝামেলা সামলাতে কেটে যায় বছরের পর বছর। কোনো কোনো সময় দুই পক্ষের মধ্যে আপস–মীমাংসা হয় আবার কোনো কোনো সময় হয়ও না। একপর্যায়ে হয়তো বড় ধরনের জেল–জরিমানা হয়। আবার অনেক সময় আসামিরা খালাস পেয়ে যান। কিন্তু দুই পক্ষের মধ্যে শত্রুতা আর হিংসা-বিদ্বেষটা থাকে অনেক দিন। এর ফলেই আবার নতুন করে ঝগড়ার সূত্রপাত হয়। এতে করে হাওরাঞ্চলের মানুষ কত যে আর্থিক ও মানসিক ক্ষতির সম্মুখীন হন, তার কোনো শেষ নেই। আমি নিজে আমাদের এলাকায় এমন ঝামেলায় পড়ে অনেক সচ্ছল পরিবারকে সর্বস্বান্ত হতে দেখেছি। এমনও হয়েছে বা এখনো হচ্ছে যে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য এমন কোনো ছেলেকে খুনের মামলার আসামি করা হয় যে হয়তো ঝগড়াতেই যায়নি। সে হয়তো একজন খুব ভালো ছাত্র। তার আছে অমিত সম্ভাবনাময় জীবন। কিন্তু দেখা গেল জীবন গড়ার স্বপ্নে বিভোর এ কিশোরের সব স্বপ্নের সমাধি রচিত হয়ে যায় সমাজের কুটচালের বেড়াজালে পড়ে। এরপর ছন্নছাড়া জীবনের বোঝা নিয়েই বেঁচে থাকতে হয় তাকে।

যাহোক, মামলা–মোকদ্দমা উপলক্ষে আমাদের এলাকার লোকদের নেত্রকোনা ও ময়মনসিংহে যাওয়াটা একসময় ছিল নিয়মিত ব্যাপার। আগে মামলার চূড়ান্ত রায় নেত্রকোনায় হতো না, হতো ময়মনসিংহে। তবে নেত্রকোনা ও ময়মনসিংহে গিয়ে অনেকের বিচিত্র অভিজ্ঞতাও অর্জন করারও সুযোগ হতো। আমরা ছোটবেলায় তাঁদের কাছ থেকে এসব অভিজ্ঞতার কথা শুনতাম। কোনোটা ছিল খুব মজার। আবার কোনোটা ছিল খুব কষ্টের।

ময়মনসিংহ রেলস্টেশনের একটা অভিজ্ঞতা বলেছিলেন একজন। তাঁর অভিজ্ঞতাটা অত্যন্ত দুঃখজনক। সেটাই এখন বলছি। একবার স্টেশনে এক লোক দাঁড়িয়েছিলেন।

তাঁকে কিছুটা ক্লান্ত মনে হচ্ছিল। তাঁর দুই ঊরুর মাঝখানে লুঙ্গির নিচে একটা কী যেন পুঁটলির (থলে) মতো আছে মনে হচ্ছিল। লোকটা একটু পরে পরে তাঁর লুঙ্গির ওপর দিয়ে এ পুঁটলির মতো জিনিসটায় হাত দিচ্ছিলেন। মনে হচ্ছিল তাঁর লুঙ্গির নিচে মূল্যবান কোনো একটা জিনিস আছে। সংঘবদ্ধ পকেটমারের গ্রুপ এটাকে টাকার থলে মনে করে তাঁকে টার্গেট করে। তারা এ মূল্যবান জিনিসটা নেওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। ট্রেন যখন এল তখন অন্যদের সঙ্গে এ ভদ্রলোকও ট্রেনে উঠতে যান। এ সময় বেশ ভিড় হয়। পকেটমারের গ্রুপ এ সময় হঠাৎ করেই অত্যন্ত ধারালো চাকু দিয়ে লুঙ্গিসহ পুঁটলির মতো জিনিসটাকে কেটে নিয়ে যায়। আর লোকটা সঙ্গে সঙ্গেই সেখানেই পড়ে যান। তাঁর শরীর থেকে রক্ত বেরিয়ে আশপাশটা ভিজে যায় এবং লোকটা অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই মারা যান। আসলে এটা টাকার থলে ছিল না। লোকটার একশিরা রোগ হয়েছিল। আর এ কারণে তাঁর একটা অণ্ডকোষ অনেক বড় হয়ে গিয়েছিল। উনি এটার চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহে এসেছিলেন। পকেটমাররা এটাকেই টাকার থলে মনে করে কেটে নিয়ে যায়। এই ভয়াবহ গল্পটা যতবার মনে পড়ে, ততবারই আমার গা শিউরে ওঠে।

হাওরাঞ্চলের দুঃখগাথা দেখেছি ছোটবেলা থেকেই। কত মানুষকে সাধারণ বিষয়ে হতাহত হতে দেখেছি! কত মানুষের সংসার তছনছ হতে দেখেছি! কত মানুষকে বছরের পর বছর অশান্তি আর টেনশনে দিন কাটাতে দেখেছি! অথচ সবাই যদি একটু বিচার-বিবেচনা করে আর নিরপেক্ষভাবে ভালোটাকে ভালো আর মন্দটাকে মন্দ বলতে পারতেন তবে হাওরের চেহারাই বদলে যেত। মানুষের দুঃখগুলো সুখে পরিণত হতো। জীবন ভরে উঠত অনাবিল শান্তিতে। একটা সময় ছিল যখন হাওরপারের মানুষেরা তেমন শিক্ষিত ছিলেন না। এত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও ছিল না। কিন্তু এখন তো আর সে অবস্থা নেই। এখন তো শিক্ষার হার বেড়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও বেড়েছে। এখন তো পরিস্থিতির উন্নতি হওয়া দরকার। কিন্তু হচ্ছে না তো।

শৈশবে আর যে বিষয়টি দেখেছি, সেটা হলো তখন চোর-ডাকাতের খুব উপদ্রব ছিল। হাওরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় খুব ভয়ংকর ভয়ংকর অনেক ডাকাত ছিল। আমাদের এলাকায়ও এমন অনেকেই ছিল, ছোটবেলায় যাদের নাম শুনলেই আমরা ভয় পেতাম। অনেক সময় দুষ্টুমি করলে তাদের নাম বলে আমাদের ভয় দেখানো হতো। যাহোক, ডাকাতি তো হতো শুধু ধনী লোকদের বাড়িতে। ধনী লোকদের ডাকাতের ভয়ে তটস্থ থাকতে হতো। অনেক সময়ই ডাকাতেরা তাঁদের বাড়িতে এসে লোকদের নির্মমভাবে মারধর করে টাকাপয়সা, স্বর্ণালংকার সব নিয়ে যেত। মানুষ বাজারে গরু বিক্রি করে টাকা নিয়ে অথবা বিয়ের বাজার করে বাড়ি ফেরার সময় ডাকাতদের হাতে পড়ে সর্বস্ব হারিয়ে বাড়ি ফিরতেন। আবার কখনো এমনও হয়েছে ডাকাতি করতে এসে সাধারণ মানুষের সংঘবদ্ধ আক্রমণে অথবা বন্দুক আছে, এমন বাড়িতে ডাকাতি করতে এসে ডাকাতকেও বেঘোরে প্রাণ দিতে হয়েছে।

সাধারণ মানুষের বাড়িতে ডাকাতি হতো না। কিন্তু তাঁদের চোরের চিন্তায় শান্তিতে ঘুমানোর উপায় ছিল না। বিশেষ করে সিঁদেল চোর আর গরু চোরের অত্যাচারে মানুষের অশান্তির কোনো শেষ ছিল না। তবে ধরা পড়লে চোরেরও উত্তম–মধ্যমের মতো উপহারেরও অভাব হতো না। চোর ধরা পড়ার একটা গল্প বলি। এক কৃষক একদিন একটা কাজে দূরে কোথাও গেলেন। সেদিন আর বাড়ি ফিরতে পারলেন না।

তাঁর স্ত্রী বাচ্চাদের নিয়ে বাড়িতে ছিলেন। চোরেরা আগে থেকেই খবর নিয়েই চুরি করতে বের হতো। যখন তারা জানল যে ভদ্রলোক বাড়িতে নেই, তখন তারা এটাকে বিরাট এক সুযোগ মনে করে এ বাড়িতে চুরি করতে মনস্থ করল। গভীর রাতে তারা কৃষকের ঘরে সিঁদ কাটতে শুরু করল। সিঁদ কাটার শেষ পর্যায়ে তারা দেখল যে সিঁদের দুই পাশেই বেশ শক্ত দুটি খুঁটি। তাই তারা সিঁদটি পর্যাপ্ত বড় করতে পারল না। তখন তারা একটা খুঁটির আরেক পাশে নতুন করে বেশ বড় আরেকটা সিঁদ কাটল। এরপর একজন চোর ঘরের ভেতরে ডুকল। শুনেছি যে চোর ভেতরে ডুকে, সে নাকি গায়ে তেল মেখে শুধু হাফ প্যান্ট বা এ–জাতীয় ছোট কোনো পোশাক পরে ঢোকে, যাতে তাড়াহুড়া করে বের হতে কোনো অসুবিধা না হয়। যাহোক, চোর ঢোকার সময় সামান্য একটু শব্দ হলো। ফলে ভদ্রমহিলার ঘুম ভেঙে গেল। চোখ মেলে তাকিয়ে দেখেন কে যেন ঘরে ঢুকেছে।

তিনি বুঝতে পারলেন এটা চোরের কাণ্ড। সঙ্গে সঙ্গেই তিনি জোরে একটা চিৎকার দিলেন। আর চোরও লাফ দিয়ে সিঁদে পড়ে তার পা দুটি বাইরের দিকে বাড়িয়ে দেয়। বাইরে থাকা অন্য চোরেরা তার পা দুটি ধরে ভীষণ জোরে টেনে তাকে বের করার চেষ্টা করতে লাগল। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তাড়াহুড়ার মধ্যে চোরের দুই পা ঘরের খুঁটির দুই পাশে চলে যায়। তাই অন্য চোরেরা তাকে আর কোনোমতেই বের করতে পারছে না। এদিকে ঘরের ভেতর মহিলা চেঁচামেচির সঙ্গে সঙ্গে চোরের মাথায় কিল-ঘুষিও মারতে লাগলেন। ইতিমধ্যেই তাঁর প্রতিবেশীরা সবাই জেগে উঠলেন এবং তাঁর ঘরের দিকে এগিয়ে এলেন। তাঁদের সবাইকে আসতে দেখে অন্য চোরেরা সবাই পালিয়ে গেল।

মহিলা দরজা খুলে দিলেন। ঘরে ঢুকে সবাই দেখলেন চোর আধমরা হয়ে পড়ে আছে। তার নড়াচড়ারও শক্তি নেই।

চোর আর চুরি নিয়ে এমন অনেক গল্প আমাদের এলাকায় প্রচলিত আছে। এমনও হয়েছে, চুরি করতে এসে চোর এমন পরিস্থিতিতে পড়েছে, যার ফলে সে চুরি করা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছে। এমন একটা গল্প এখন বলছি।

এক চোর সুযোগ বুঝে সন্ধ্যার দিকেই এক ঘরে ঢুকে ঘরের ধানের গোলায় গিয়ে চুপটি করে বসে থাকল। তার উদ্দেশ্য হলো সবাই ঘুমিয়ে পড়লে সে ইচ্ছেমতো ঘরের সব দামি জিনিসপত্র নিয়ে চলে যাবে। চোর বসে রইল সুযোগের অপেক্ষায়। এদিকে ঘরের সবাই খাওয়াদাওয়া সেরে ঘুমাতে যাবেন, এমন সময় ঘটল এক বিপত্তি। এই ঘরের এক বউ সন্তানসম্ভবা ছিলেন। এই রাতেই তাঁর প্রসব বেদনা শুরু হলো। এমন অবস্থা হলো যে ঘরের কারোরই আর ঘুমানোর উপায় নাই। ব্যথা বাড়ছে তো বাড়ছেই। এদিকে চোরের চুরি করা তো দূরের কথা, পালিয়ে বাঁচারও সুযোগ নেই। রাত ফুরিয়ে যাচ্ছে বাচ্চাও প্রসব হচ্ছে না। ঘরের সব মানুষ জেগে বসে আছে। ধাত্রী আনা হয়েছে। বাচ্চা প্রসব করানোর জন্য তিনিও প্রাণপণ চেষ্টা করছেন। কিছুতেই কাজ হচ্ছে না। চোর বেটা তো খুব ভয় পেয়ে গেল। রাত শেষ হয়ে গেলে তার ধরা পড়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না। এর মধ্যেই কেউ কেউ বেশ কয়েকবার ধানের গোলার কাছাকাছি এসেছে এটা–সেটা নেওয়ার জন্য। চোর প্রচণ্ড ভয় পেয়ে মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে নিঃশব্দে কান্নাকাটি করে খাস দিলে প্রতিজ্ঞা করল যে এখান থেকে মান–ইজ্জতের সঙ্গে বেরিয়ে যেতে পারলে জীবনে আর কোনো দিন সে চুরি করবে না। মহান আল্লাহ তায়ালা তার দোয়া কবুল করলেন। অল্পক্ষণের মধ্যেই ছেলেসন্তানের জন্ম হলো। সবাই আনন্দে বউ-বাচ্চাকে নিয়ে মহাব্যস্ত হয়ে পড়ল। সুযোগ বুঝে চোর বেটাও ঘর থেকে বের হয় গেল। সে সত্যি সত্যি ভালো মানুষ হয়ে গেল। এরপর বাকি জীবনে আর কোনো দিন সে চুরি করল না।

বর্তমানে অবশ্য হাওরাঞ্চলে চুরি-ডাকাতি তেমন নেই বললেই চলে। এখন আর মানুষকে আগের মতো উপোসও থাকতে হয় না। তাঁদের আর্থিক অবস্থারও উন্নতি হচ্ছে। যোগাযোগব্যবস্থাসহ অবকাঠামোগত উন্নয়ন এখন চোখে পড়ার মতো। কিন্তু দাঙ্গা-হাঙ্গামা, দলাদলি ও খুনোখুনি এখনো আগের মতোই আছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে মাদকের ভয়াবহতা। এত সব সমস্যা নিয়ে বর্তমানে হাওরপারের মানুষেরা শান্তিতে ঘুমাতে পারছেন, এমনটা আশা করার যুক্তিসংগত কোনো কারণ আছে কি? চলবে...

* লেখক: মো. মোতাহার হোসেন, প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত), মোহনগঞ্জ পাইলট সরকারি উচ্চবিদ্যালয়, মোহনগঞ্জ, নেত্রকোনা।