সড়ক পরিবহন আইনের খসড়া

বিলম্বে হলেও সড়ক পরিবহন আইনের খসড়া মন্ত্রিসভায় অনুমোদন লাভ করেছে। এর কিছু ভালো দিক রয়েছে। তবে প্রস্তাবিত খসড়ায় কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অস্পষ্ট রয়েছে, যা পরিষ্কার ও নির্দিষ্ট করতে হবে। দুর্ঘটনার জন্য অভিযুক্ত ব্যক্তিদের শাস্তির বিধানে দণ্ডবিধি ও প্রস্তাবিত আইনের শাস্তির বিধানে যে গুরুতর অসংগতি তৈরি হয়েছে, তা অবশ্যই দূর করতে হবে। দুর্ঘটনায় প্রাণহানির জন্য সাজার মেয়াদ বৃদ্ধির দাবি অবশ্যই বিবেচনায় নেওয়া উচিত।
দেশে এখন বিভিন্ন ধরনের প্রায় ৩০ লাখ পরিবহন চলছে এবং এর সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। একই সঙ্গে মৃত্যুর মিছিলও চলমান। বছরে ১০ হাজার লোক মারা যাচ্ছে। অথচ প্রস্তাবিত আইনে দক্ষ চালক তৈরির কোনো পরিকল্পনার ছাপ নেই। সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৮ ও ৩৭ ভাগ মৃত্যুর জন্য যথাক্রমে বাস ও ট্রাক দুর্ঘটনাই দায়ী বলে এক পরিসংখ্যান বলছে।
আমাদের দেশে সড়কপথের বড় মাথাব্যথা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বাস-ট্রাকচালকের অভাব। আর আমরা জানি, অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাস-ট্রাকের হেলপার থেকেই চালকে উত্তরণ ঘটছে। অথচ চালকের শিক্ষাগত যোগ্যতা অষ্টম শ্রেণি ও হেলপারের পঞ্চম শ্রেণি রাখা হয়েছে। বাস্তবে এই দুইয়ের মধ্যে কীভাবে সমন্বয় ঘটবে, তা একটা প্রশ্ন। এই প্রেক্ষাপটে প্রস্তাবিত আইনের শিরোনামে ‘সড়ক নিরাপত্তা’ কথাটি যুক্ত না করা এবং ক্ষতিপূরণের কোনো বিধান না রাখা সবচেয়ে উদ্বেগজনক বলে আমরা মনে করি।
দেশি–বিদেশি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ থাকা সত্ত্বেও আইনের শিরোনামে ‘নিরাপত্তা’ কথাটি বাদ দেওয়া সরকারের দিক থেকে সুপরিকল্পিত বলে সন্দেহ করার অবকাশ আছে। কারণ, এর সঙ্গে সড়কনীতি এবং বাজেট বরাদ্দের প্রশ্ন জড়িত। আইনের শূন্যতা পূরণে সরকারের উদ্যোগ প্রশংসনীয়। কিন্তু আমরা বিস্মৃত থাকতে পারি না যে, সারা দেশে বাস্তবে ছয় শর কম লোকবল দিয়ে পরিচালিত বিআরটিএর বার্ষিক বাজেট সাকল্য মাত্র ২৫০ কোটি টাকা, আর সেই প্রতিষ্ঠান সরকারের জন্য ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকার রাজস্ব এনে দিচ্ছে। এ রকম একটি অসম ও বৈষম্যমূলক ব্যবস্থাপনা জিইয়ে রেখে কোনো আইন কার্যকর করাও কঠিন। আমরা আশা করব, ক্ষতিপূরণের জন্য একটি বড় তহবিল গঠনের বিধান অবশ্যই যুক্ত করা হবে।
সড়ক পরিবহনে নৈরাজ্য দূর করে শৃঙ্খলা আনয়ন এবং মৃত্যুর মিছিল বন্ধ করার লক্ষ্য যদি স্পষ্ট না হয়, তাহলে নতুন আইন তেমন একটা কাজে আসবে না। আর সেই আইন যদি আমাদের মৌলিক আশঙ্কাগুলো দূর না করে, তাহলে তা অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হবে।