আসামি ধরতে গিয়ে

গত শনিবার রাতে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার রামভদ্র খানাবাড়ি গ্রামে আসামি ধরতে গেলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের কর্মী-সমর্থক ও গ্রামবাসীর যে সংঘর্ষ হয়েছে, তাকে ছোটখাটো একটা যুদ্ধ বলা যেতে পারে। পুলিশের প্রায় ১০০ সদস্যকে চারদিক থেকে অবরুদ্ধ করে ফেলেছিল সহস্রাধিক মানুষ; যাদের সংঘবদ্ধ করেছিলেন জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা। গ্রামে ডাকাত পড়েছে বলে মাদ্রাসা ও মসজিদের মাইকে গুজব ছড়িয়ে তাঁরা এটা করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
এ ঘটনার যে বিবরণ সোমবারের প্রথম আলোয় প্রকাশিত হয়েছে, তা থেকে এটা স্পষ্ট যে গাইবান্ধার ওই এলাকাটি জামায়াত-শিবিরের শক্ত ঘাঁটি। কিন্তু সেটা তো বাংলাদেশের বাইরে কোনো জনপদ নয়, যেখানে এ দেশের আইন প্রয়োগ করা যাবে না। পুলিশের প্রায় ১০০ সদস্য যদি কয়েকজন আসামিকে গ্রেপ্তার করতে গিয়ে নিজেরাই জীবনের ঝুঁকিতে পড়ে যান, তবে তা বিরাট উদ্বেগের বিষয়। কী করে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হলো, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার তা ভেবে দেখা উচিত।
গত বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতের নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষিত হওয়ার পর গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় পুলিশের সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের কর্মী-সমর্থকদের ব্যাপক সংঘর্ষে কয়েকজন পুলিশ সদস্য নিহত হওয়ার পর মোট ৩২টি মামলা দায়ের করা হয়। সেসব মামলায় আসামি করা হয় প্রায় ৬০ হাজার মানুষকে; তাদের মধ্যে এক হাজার ১০০ জন আসামির নাম উল্লেখ করা হয়, বাকিদের অজ্ঞাতনামা হিসেবে দেখানো হয়। এত বিপুলসংখ্যক মানুষকে আসামি করার মধ্য দিয়ে পুরো একটি জনপদকেই প্রশাসনের প্রতি বৈরী মনোভাবাপন্ন্ন করে তোলা হয়েছে। শনিবার রাতের সহিংস ঘটনার পর আবারও ৬৭ ব্যক্তির নাম উল্লেখ করে এবং সাড়ে পাঁচ হাজার মানুষকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
সংঘটিত অপরাধের বিচার ও প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এত বিপুলসংখ্যক মানুষকে আসামি করে প্রচুরসংখ্যক মামলা দায়ের করা কতটা প্রয়োজনীয় বা কার্যকর কৌশল? তা ছাড়া রাতের অন্ধকারে গ্রেপ্তার অভিযান চালালে ‘ডাকাত পড়েছে’ গুজবের শিকার হওয়ার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা তো এর আগেও হয়েছে। সহিংসতায় নেতৃত্বদানকারী মানুষের সংখ্যা কত? তাদের গ্রেপ্তার করা কি এতই দুরূহ কাজ যে সেটা করতে গিয়ে পুরো একটি জনপদের মানুষের সঙ্গে যুদ্ধ বেধে যায়? গণহারে গ্রেপ্তার অভিযান চালানোর পরিবর্তে প্রধান অপরাধীদের গ্রেপ্তার করলেই তো পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আসতে পারে। রাজনৈতিক অসদুদ্দেশ্যে বা জনজীবনের শান্তিশৃঙ্খলা বিনষ্ট করতে মসজিদ-মাদ্রাসার মাইক ব্যবহার করে গুজব ছড়ানোর ঘটনা এর আগেও ঘটেছে। যারা এগুলো করে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয় না বলেই এসবের পুনরাবৃত্তি ঘটছে। সাম্প্রতিক কালে এই প্রবণতা বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। এটা স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে হলে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।