চাঁপাইনবাবগঞ্জে 'রগ কাটা'

জামায়াতের নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায়ের পর থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জে কথিতমতে ‘২১ ব্যক্তির রগ কাটার’ প্রেক্ষাপটে ইউপি সদস্য নূরজাহান বেগমের ‘ডান হাত ও ডান পায়ের রগ কাটার’ খবর প্রথম আলোয় ছাপা হয়েছে। পাঁচটি উপজেলা নিয়ে গঠিত চাঁপাইনবাবগঞ্জে ২১ ব্যক্তির রগ কাটার খবর আছে, কিন্তু দুর্বৃত্তদের বিচারের অগ্রগতি নেই। এই দুর্ভাগ্যজনক অবস্থানটি নির্দেশ করে যে চাঁপাইনবাবগঞ্জে যা চলছে তা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতির নির্দেশক। অথচ ক্ষমতাসীন দল এই অব্যাহত বিচারহীনতা কিংবা বিচার করতে না পারার অপারগতা মূল্যায়ন করতে চাইছে না। বরং এসব জঘন্য অপরাধের দায় দৃশ্যত রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ওপর চাপিয়ে দিতেই সচেষ্ট। অপরাধী ও আইন প্রয়োগকারী কার্যত উভয় পক্ষ দায়মুক্তি ভোগ করছে চাঁপাইনবাবগঞ্জে।
উদ্বেগজনকভাবে প্রতীয়মান হচ্ছে যে, পুলিশ অব্যাহত ‘রগ কাটার’ বিষয়ে কেবল মৌখিকভাবে সম্ভাব্য অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিষয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে মুখ খুলছে। তারা এ পর্যন্ত লিখিত বিবৃতি প্রকাশ করেনি। এবং এটা বিশ্বাস করার কারণ রয়েছে যে, এ বিষয়ে তারা যে যথাদায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হচ্ছে, সে জন্য তাদের ওপর থেকে ‘ওপরওয়ালাদের’ তেমন জোরালো চাপ নেই। তাদের আইন অনুযায়ী জবাবদিহি করতে হচ্ছে না।
২৪ জানুয়ারি প্রথম আলোর বিবরণ অনুযায়ী, যে ২১ জনের রগ কাটা পড়েছে, তাদের মধ্যে একজন জাসদের ও একজন বিএনপির নেতা। নূরজাহানের মতো বিএনপির নেতাও একই উপজেলার। শিবগঞ্জ উপজেলার ধাইনগর ইউনিয়নের ওয়ার্ড বিএনপির সম্পাদক।
এটা পরিতাপের যে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যাপক শাজাহান মিয়া প্রথম আলোর কাছে নূরজাহানের অভিযোগমতে বিএনপির কর্মীদের সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করেন। তাঁর দাবি, চাঁপাইনবাবগঞ্জের সাম্প্রতিক সহিংসতা কেবলই রাজনৈতিক নয়, এর সঙ্গে ব্যক্তিগত কার্যকরণও জড়িত। আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেত্রী ও ইউপি সদস্য নূরজাহানের ওপর হামলা ‘ব্যক্তিগত ধরনের’ উল্লেখ করলেও তা তিনি নির্দিষ্ট করতে পারেননি। তিনি অবশ্য বর্তমানে পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপির নেতার ওপর হামলার ঘটনাও ‘মূলত ব্যক্তিগত’ বলে দাবি করেন।
একটি জেলায় মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে ২১টি রগ কাটার ঘটনা পদ্ধতিগত চরম বর্বরতা এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অসহায়ত্ব নিশ্চিত করে। এটা কি চলতেই থাকবে?