প্লাস্টিক ও পলিথিন

দেশে প্লাস্টিকের বস্তা ও পলিথিনের ব্যবহার ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। ১২ জানুয়ারি প্রথম আলোয় অর্থ ও বাণিজ্য পাতায় একটি খবরের শিরোনাম ছিল: ‘চালের বিপণন এখনো প্লাস্টিকের বস্তায়’। প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয় নতুন বছরের প্রথম দিন থেকে ধান ও চালের বিপণন শুধু পাটের বস্তায় করা বাধ্যতামূলক করে। এ ছাড়া মন্ত্রণালয় ২০১০ সালে পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক আইন করে। কিন্তু এসব আইন-নির্দেশ উপেক্ষা করে চাল ও মিলমালিকেরা আগের মতো প্লাস্টিকের বস্তায় বিপণন করে চলেছেন। এর কারণ হিসেবে সামনে এসেছে পাটের বস্তার দাম বেশি ও সহজে না প্রাপ্তির বিষয়টি।
পরিবেশদূষণের যেসব উপাদান রয়েছে, তার মধ্যে পলিথিন অন্যতম। তৎকালীন সরকার ২০০২ সালের ১ জানুয়ারি ঢাকা শহরে এবং ১ মার্চ থেকে সারা দেশে পলিথিনের উৎপাদন ও ব্যবহার সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এরপর কিছুদিন পাটের (চটের) ও কাগজের ব্যাগের ব্যবহার লক্ষ করা গেলেও প্রচার-প্রচারণার অভাবে এবং মানুষের অসচেতনতার অভাবে আবার পলিথিনের ব্যবহার ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি এমন যে খালি হাতে বাজারে গিয়ে ১০ থেকে ১২টি রঙিন পলিথিন ব্যাগ নিয়ে ঘরে ফেরা যায়।
পলিথিন এমন একটি উপাদানে তৈরি, যা পরিবেশের জন্য মোটেই উপযোগী নয়। এর মধ্যে থেকে বিষ নির্গত হয় এবং খাদ্যদ্রব্যের সঙ্গে মিশে যায়। পলিথিন মাটির সঙ্গে মেশে না। ফলে মাটির উর্বরতা শক্তি নষ্ট করে। ডাস্টবিনে ফেলা পলিথিন বৃষ্টির পানির সঙ্গে ড্রেনে ঢুকে পড়ে। ফলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করে। পলিথিন নদীর তলদেশে জমা হয়ে নদী ভরাট করে ফেলে। পলিথিন পোড়ালে তা বায়ুদূষণে সহায়তা করে। এখন কাগজ ও পাটের ব্যাগের ব্যবহারই আমাদের পলিথিনের ভয়াবহতা থেকে রক্ষা করতে পারে। পাটের ব্যাগ পরিবেশবান্ধব। পলিথিনের উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ বন্ধে সরকারের ব্যাপক নজরদারিসহ প্রচারমাধ্যমগুলোয় (রেডিও, টেলিভিশন, পত্রিকা) ব্যাপক প্রচারণা দরকার। পাশাপাশি পাটের ও কাগজের ব্যাগের ইতিবাচক দিক, দাম কম ও সহজে প্রাপ্তির বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া দরকার। আসুন, আমরা সবাই মিলে পলিথিনমুক্ত বাংলাদেশ গড়ি।
সাধন সরকার
শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা