বেশ কয়েক বছর ধরে আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতার প্রচার শুনে আসছি। এবারের বন্যার শুরুর দিকেও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আমাদের যথেষ্ট খাদ্য মজুত আছে, খাদ্যের অভাবে কাউকে কষ্ট পেতে হবে না। কিন্তু সরকারের এই আশ্বাস বাস্তবে পূরণ হয়নি; সংবাদমাধ্যম খবর দিচ্ছে, বন্যাদুর্গত অনেক অঞ্চলের মানুষ খাদ্যাভাবে কষ্ট পাচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থাসহ ছয়টি সংস্থার যৌথ উদ্যোগে প্রণীত বিশ্বের খাদ্যনিরাপত্তা ও পুষ্টি পরিস্থিতি বিষয়ে ২০১৭ সালের প্রতিবেদন প্রকাশ পেল। সেখানে আমরা দেখতে পাচ্ছি, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতার দাবিদার এই জাতির ২ কোটি ৪৪ লাখ সদস্য এখনো অপুষ্টির শিকার। এটা দেশের মোট জনসংখ্যার ১৫ শতাংশের বেশি। প্রশ্ন হচ্ছে, কেন এই বেদনাদায়ক পরিস্থিতি?
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হলে দেখতে হবে, আমাদের খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতার স্বরূপ কী। এ বিষয়ে মোদ্দা কথা হলো, গত কয়েক বছরে দেশে ধান উৎপাদন বেড়ে এমন পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে যে তা দিয়ে মোট জনগোষ্ঠীর ভাতের চাহিদা পূরণ হচ্ছে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বড় ধরনের ফসলহানি না ঘটলে আমাদের বিদেশ থেকে চাল আমদানি করতে হয় না। এমনকি আমরা কোনো কোনো বছর কিছু পরিমাণ চাল রপ্তানিও করতে পারি। অর্থাৎ আমাদের খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতার অর্থ হলো, আমরা আমাদের নিজেদের পেটের ভাত নিজেদের জমির ধান থেকেই মেটাতে পারছি।
কিন্তু মানবদেহের সার্বিক পুষ্টির কথা ভাবলে শুধু ভাত নিয়ে সন্তুষ্ট থাকলে চলে না। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গবেষক এম আসাদুজ্জামান সম্প্রতি প্রথম আলোর সঙ্গে আলাপকালে যথার্থই বলেছেন, বাংলাদেশে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির ফলে মানুষ আগের চেয়ে বেশি খাদ্য পাচ্ছে এটা ঠিক, কিন্তু কী ধরনের খাদ্য পাচ্ছে, তা ভালোভাবে পর্যালোচনা করা দরকার।
যদিও ধান ছাড়া শাকসবজি ও মাছের উৎপাদন আগের তুলনায় বেড়েছে, তবু বিপুলসংখ্যক মানুষ এখনো প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর খাবার থেকে বঞ্চিত। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর শিশুদের মধ্যে এখনো অপুষ্টিজনিত খর্বতা ও কৃশতা প্রত্যাশিত মাত্রায় হ্রাস পায়নি। আমাদের পুষ্টি পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে বটে, তবে তা দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় ধীরগতিতে ঘটছে।
এই গতি ত্বরান্বিত করতে হলে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পুষ্টিকর খাদ্য পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। এ জন্য তাদের সারা বছরের কর্মসংস্থান ও আয় বৃদ্ধির মাধ্যমে সার্বিক জীবনমান বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে।