কূটনৈতিক তৎপরতায় চীন ও ভারতকে যুক্ত করতে হবে

মেজর জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) অনুপ কুমার চাকমা ২০০৯ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত মিয়ানমারে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ছিলেন। মিয়ানমারে বর্তমান জাতিগত বিরোধ, সেনা অভিযান এবং চার লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীর বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণের প্রেক্ষাপটে সংকট উত্তরণের উপায় নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন সাবেক এই কূটনীতিক–সেনা কর্মকর্তা।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন: সোহরাব হাসানরাহীদ এজাজ

প্রথম আলো l আপনি মিয়ানমারে রাষ্ট্রদূত হিসেবে ছিলেন সাড়ে পাঁচ বছর। বর্তমান সংকট নিয়ে কথা বলার আগে আমরা সেখানে আপনার অভিজ্ঞতা জানতে চাইছি।

অনুপ কুমার চাকমা l ২০০৯ সালের আগস্টে আমি রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব নিয়ে ইয়াঙ্গুন যাই। পরিচয়পত্র জমা দেওয়ার সময়ই বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর আসতে থাকে যে মিয়ানমার বাংলাদেশ সীমান্তে সেনা সমাবেশ ঘটাচ্ছে, যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে। ঢাকা থেকে তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রসচিবও এ সম্পর্কে আমার কাছে জানতে চান। আমি খোঁজখবর নিয়ে তাঁদের জানালাম, খবরটি সত্য নয়। এরপর ২০১২ সালে একজন রাখাইন নারী ধর্ষণের ঘটনার জের ধরে আটজন মুসলিম ( যাঁরা ছিলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত) নিহত হলে সেখানে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। অনেক রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আসার চেষ্টা করে। কিন্তু  বাংলাদেশ সরকার তাদের ঢুকতে দেয়নি। সেটি সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল। ওই ঘটনার পরও সমস্যা সমাধানে আমাদের কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত ছিল। ওই সময় দুই দেশের মধ্যে সামরিক ও রাজনৈতিক পর্যায়ে সবচেয়ে বেশি সফর বিনিময় হয়েছে।

প্রথম আলো l তখন মিয়ানমার সরকারের প্রতিক্রিয়া কী ছিল?

অনুপ কুমার চাকমা l ২০১১ সালে সমুদ্রসীমা নির্ধারণে বাংলাদেশ ইটলসে (ইন্টারন্যাশনাল ট্রাইব্যুনাল ফর দ্য ল অব দ্য সি) গেলে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ আমাকে ডেকে বলল, তোমরা আন্তর্জাতিক আদালতে গেলে কেন? আমরা তো দ্বিপক্ষীয়ভাবে এই সমস্যা সমাধান করতে পারি। আমি বাংলাদেশের যুক্তি তুলে ধরে বললাম, সালিস আদালতে যাওয়া তো দুই দেশের জন্যও ভালো। তারা তা মেনে নিল। তারপর আমাদের প্রধানমন্ত্রী যেদিন রামু গেলেন, সেদিনই খবর এল সিটুতে ৮০০ বছরের পুরোনো একটি মসজিদ রাখাইন ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা জ্বালিয়ে দিয়েছে। পরে দেখা গেল হামলার কোনো ঘটনাই ঘটেনি। ভুল বা অতিরঞ্জিত খবর অনেক সময় সমস্যা তৈরি করে।

প্রথম আলো l আগের অভিজ্ঞতার আলোকে এবারের ঘটনাকে কীভাবে ব্যাখ্যা করাবেন? মাত্র তিন সপ্তাহে চার লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী এসেছে।

অনুপ কুমার চাকমা l এবারের ঘটনার ভয়াবহতার কাছে অতীতের সব ঘটনা ঢাকা পড়ে গেছে। আমি মনে করি সমস্যা সমাধানে কফি আনান কমিশন গঠন একটি বড় অগ্রগতি ছিল। এতে মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চির সদিচ্ছার প্রকাশ পেয়েছিল। কিন্তু যেদিন কমিশন প্রতিবেদন জমা দিল, সেদিনই পুলিশ ও সেনাচৌকিতে সন্ত্রাসী হামলা হলো এবং সঙ্গে সঙ্গে সেনাবাহিনী অভিযান শুরু করল। আনান কমিশন রোহিঙ্গা নাম উচ্চারণ না করলেও আরাকানে বসবাসকারী সংখ্যালঘু মুসলমানদের নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলেছে। এটি এখনো সমস্যা সমাধানের সূত্র হতে পারে।

প্রথম আলো l অভিযোগ আছে, রোহিঙ্গাদের বিতাড়নের পেছনে জাতিগত বিরোধের চেয়েও অনেক দেশের অর্থনৈতিক স্বার্থও রয়েছে। সেখানে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি, তেললাইন, গ্যাসলাইন নির্মাণের জন্যই কি রোহিঙ্গাদের তাড়ানো হচ্ছে?

অনুপ কুমার চাকমা l এ কথা সত্য যে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গারা সংখ্যালঘু হলেও সীমান্ত অঞ্চলে তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ। মংডুর ৯০ শতাংশ বাসিন্দা মুসলমান রোহিঙ্গা। রাখাইন রাজ্যে অনেক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চলছে। কিন্তু রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর নাগরিকত্ব সমস্যার
সমাধান করতে না পারলে মিয়ানমার তা থেকে কতটুকু লাভবান হবে, সে নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। রাখাইন রাজ্যে চীন বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছে, তারা গভীর সমুদ্রবন্দর করছে। এ ছাড়া বিশাল তেল ও পাইপলাইন বসানো হচ্ছে। ভারত কালাদান বহুমুখী প্রকল্প হাতে নিয়েছে।

প্রথম আলো l আনান কমিশনের প্রতিনিধিরা তো এখানে এসেছিলেন। আলোচনায় আপনিও ছিলেন।

অনুপ কুমার চাকমা l মিয়ানমারের মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানসহ বেশ কয়েকজন সদস্য এসে সরকারের নীতিনির্ধারক ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেছেন। এক সভায় আমিও তঁাদের বলেছি, মিয়ানমারে থাকতে অনেক মন্ত্রী ও কর্মকর্তার সঙ্গে রোহিঙ্গাদের সমস্যা নিয়ে আমার কথা হয়েছে। তাঁরা বলেছেন, রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব পাওয়ার সুযোগ আছে। যদি তাই হয়, তাহলে যেন তাঁরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখেন।

প্রথম আলো l মিয়ানমারের নেত্রী ও বর্তমান স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চি সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী? তাঁর ভাষণটিকে কীভাবে দেখছেন?

অনুপ কুমার চাকমা l ২০১০ সালে কারাগার থেকে বেরিয়ে তিনি যে কূটনৈতিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন, সেখানে আমিও ছিলাম। আমার মনে হয়েছে, তিনি প্রগতিশীল চিন্তাভাবনা করেন। মিয়ানমারের সব জাতি ও সম্প্রদায়ের মানুষের কল্যাণ চান। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তঁার বৈঠকের ব্যবস্থাও আমি করেছি। তিনি তখন সে দেশের সংসদের একজন সদস্য মাত্র। আমাদের প্রধানমন্ত্রীর আগ্রহেই সেই বৈঠক হয়েছে। অং সান সু চির ভাষণের পর আমি মিয়ানমারে অবস্থানরত চীন, ভারত ও রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতদের প্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করেছি। তাঁরা সবাই সু চির ভাষণের প্রশংসা করেছেন। সংগত কারণেই বাংলাদেশে সেই ভাষণ ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছে। তারপরও আমি মনে করি, সবটা নাকচ করে দেওয়া ঠিক হবে না। এর মধ্য ইতিবাচক যেসব কথা আছে, আমরা সেটি গ্রহণ করতে পারি। আলোচনার দরজা বন্ধ করা বাংলাদেশ বা মিয়ানমার কারও জন্য ভালো হবে না।

প্রথম আলো l কিন্তু তাঁর হাতে তো বর্তমানে কোনো ক্ষমতাই নেই। সব ক্ষমতা সেনাবাহিনীর হাতে।

অনুপ কুমার চাকমা l সমস্যার গভীরে যেতে হলে মিয়ানমারের রাজনৈতিক কাঠামোটি বুঝতে হবে। সংবিধান অনুযায়ী সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের জন্য দেশটির উচ্চ পরিষদ, নিম্ন পরিষদ ও আঞ্চলিক বা প্রাদেশিক পরিষদের ২৫ শতাংশ নির্দিষ্ট রাখা হয়েছে। সশস্ত্র বাহিনী প্রধান কর্মরত সেনা কর্মকর্তাদের মধ্য থকেই তাঁদের মনোনীত করেন। এ ছাড়া প্রতিরক্ষা, স্বরাষ্ট্র ও সীমান্ত মন্ত্রণালয়ও সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে। জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ কার্যত তারা নিয়ন্ত্রণ করে। ২০১২ সালে অং সান সু চি সংবিধান পরিবর্তনের প্রস্তাব আনলেও তা পাস হয়নি। মিয়ানমারের বর্তমান সংকটেও সেনাবাহিনী ও সীমান্তরক্ষী বাহিনী  যেসব তথ্য সরবরাহ করে, অং সান সু চির দপ্তর সেটাই প্রচার করে। নিজের থেকে কিছু করতে পারে না। তাঁর অনেক সীমাবদ্ধতা আছে, আমাদের বুঝতে হবে।

প্রথম আলো l সামরিক শাসনের কারণে মিয়ানমারের ওপর পশ্চিমা শক্তিগুলো অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করেছিল। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া চালু হওয়ার পর সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছে এবং সেখানে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ছে। তাহলে কি সু চিকে সামনে রেখে আবারও সেনাবাহিনী পুরোনো চেহারায় ফিরে আসছে?

অনুপ কুমার চাকমা l এটি ধারণাপ্রসূত প্রশ্ন। মিয়ানমারের রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা জটিল। সেখানকার সেনাবাহিনী কোকান, কাচিন, শান প্রভৃতি বিদ্রোহী জনগোষ্ঠীর সঙ্গে যুদ্ধ করছে। সেনাবাহিনী মনে করে, তারাই মিয়ানমারকে একত্র রেখেছে।

প্রথম আলো l কোনো বিদ্রোহী বা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অভিযান চালানো আর একটি জনগোষ্ঠীকে নির্মূল করা তো এক নয়। সেনাবাহিনীপ্রধানের বিবৃতিতে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সবাইকে এক হতে বলা হয়েছে।

অনুপ কুমার চাকমা l মিয়ানমারের সেনাবাহিনীপ্রধানের এ ধরনের বিবৃতি দেওয়া উচিত হয়নি। বাগ্‌যুদ্ধ আসল যুদ্ধে রূপ নেবে না বলেই আমার প্রত্যাশা। আবার আমাদেরও সতর্ক থাকতে হবে। আমরা বলেছি আমাদের মাটি অন্য কোনো দেশের সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করতে দেব না, এটি খুবই ভালো সিদ্ধান্ত। কিন্তু অতীতে রোহিঙ্গা সশস্ত্র গ্রুপকে তো নানাভাবে সহায়তা দেওয়া হয়েছে বলে গণমাধ্যমে খবর এসেছে। রোহিঙ্গা সশস্ত্র গ্রুপের সঙ্গে বৈঠক করার কারণে সত্তর দশকের শেষার্ধে আমাদের একজন প্রতিরক্ষা অ্যাটাশেকে মিয়ানমার সরকার অবাঞ্ছিতও ঘোষণা করেছিল। এরপর অবশ্য এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি। আমরা যদি দুই পক্ষ দুই লাইন দিয়ে হাঁটি আর মাঝখানে একটি দেয়াল থাকে, তাহলে কেউ কারও কথা শুনতে পাব না। সে জন্য সবার আগে দেয়ালটি তুলে ফেলতে হবে। অনেক সময় গণমাধ্যম উদ্দেশ্যমূলক খবর প্রকাশ করে থাকে। অনেকে আরাকানকে রোহিঙ্গার রাজ্য বানানোর কথাও বলেন। এসব খবর তো মিয়ানমার সরকারের কাছেও যায়।

প্রথম আলো l ২৫ আগস্টের পর থেকে নির্যাতনের মুখে মিয়ানমার থেকে যে জনস্রোত এসেছে, তাদের আশ্রয় না দিয়ে বাংলাদেশ কী করতে পারত?

অনুপ কুমার চাকমা l আমি বলেছি এবারের ঘটনা অনেক বেশি ভয়াবহ। মিয়ানমার থেকে যে জনস্রোত এসেছে, তা সীমান্তে বাধা দিয়ে ফেরানো যেত না। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ আসছে। বাংলাদেশ মানবিক কারণে তাদের আশ্রয় দিয়েছে। আগেরবার কিন্তু উৎসমুখে কিংবা মাঝপথেই থামানো গেছে। এবারে সেটি হয়নি। আসলে জনস্রোতের উৎসটি বন্ধ করতে হবে। বাংলাদেশের পক্ষে অনেকে বড় বড় কথা বলছেন, বলবেন। কিন্তু বিপদে পড়লে সাহায্য করবে না। আমি মনে করি, মিয়ানমার যুদ্ধ করবে না। প্রথমত সেখানে একটি রাজনৈতিক প্রক্রিয়া চালু হয়েছে, সেটি তারা বন্ধ করতে চাইবে না। দ্বিতীয়ত সেখানে যে বিপুল পরিমাণ বিদেশি বিনিয়োগ আসছে, তা ব্যাহত হোক তাও তাদের কাম্য নয়। তৃতীয়ত বাস্তব কারণে তাদের পক্ষে যুদ্ধ করা সম্ভব হবে না। কেননা, রাখাইন রাজ্যটি হলো দুর্গম, পাহাড় জঙ্গলে আকীর্ণ। রাস্তাঘাট নেই, যানবাহন চলাচল করতে পারে না। একই কারণে বাংলাদেশও যুদ্ধ করবে না।

তাই আমাদের কূটনৈতিকভাবেই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করতে হবে এবং সেটি মিয়ানমারকে নিয়েই। এ ক্ষেত্রে চীন ও ভারতকেও যুক্ত করতে হবে; কেননা সেখানে এই দুটি দেশের প্রচুর বিনিয়োগ আছে। জাপানকে যুক্ত করতে হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বৈত
ভূমিকার কথা আমরা জানি। ২০১২ সালে যখন আমরা সীমান্ত বন্ধ করে দিলাম, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মিয়ানমার সফরকালে আমার সঙ্গে দেখা করে বলেছিলেন, আপনি বললেই বাংলাদেশ সীমান্ত খুলে দেবে। আমি তঁাকে পাল্টা প্রশ্ন করলাম, আপনি কি নিশ্চয়তা দিতে পারবেন যে মিয়ানমার তাদের ফেরত নেবে? তিনি চুপ হয়ে গেলেন। শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য এখন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করছে। অন্যদিকে একজন মার্কিন  সিনেটর মিয়ানমারের সঙ্গে সামরিক সহযোগিতা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে মিয়ানমারের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রভাব নেই। তাদের অবরোধের কারণেই দেশটি চীনের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। রাশিয়া ও ভারতের সঙ্গেও তাদের সম্পর্ক খুব ভালো।

প্রথম আলো l কূটনৈতিকভাবে আমরা কীভাবে এগোতে পারি?

অনুপ কুমার চাকমা l কূটনীতিতে সব সময় নিজের স্বার্থ দেখা হয়। চীন মিয়ানমারে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল করছে, গভীর সমুদ্রবন্দর করছে। তিন বিলিয়ন ডলারের প্রকল্প চালু হচ্ছে। এক সড়ক, এক বেল্ট পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। ভারতে সেখানে ‘অ্যাক্ট ইস্ট’
নীতিতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়াচ্ছে। থাইল্যান্ডও বছরে দুই বিলিয়ন ডলারের তেল নেয় মিয়ানমারের কাছ থেকে। আসিয়ানের অন্যান্য দেশের সঙ্গেও তাদের সদ্ভাব আছে। আমাদের এসব দেশের সহযোগিতা নিতে হবে।

প্রথম আলো l কিন্তু কূটনৈতিক প্রয়াস কীভাবে সফল হবে? মিয়ানমার তো রোহিঙ্গাদের নাগরিক হিসেবেই স্বীকার করছে না।

অনুপ কুমার চাকমা l তারপরও উপায় আছে। মিয়ানমারের বর্তমান নাগরিকত্ব আইনে তিন ধরনের নাগরিকত্ব আছে—নাগরিক, সহযোগী নাগরিক এবং আবাসিক সুবিধাভোগকারী নাগরিক। নাগরিকত্ব আইনটি সূক্ষ্মভাবে পর্যালোচনা করে দেখতে হবে। ১৯৮২ সালের আইনের বিধিনিষেধ সত্ত্বেও যে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব পাওয়ার সুযোগ আছে, সেটি কাজে লাগাতে হবে। ১৮২৩ সালের আগে যেসব জনগোষ্ঠী মিয়ানমারে ছিল, তাদেরই জাতি বা সম্প্রদায় হিসেবে স্বীকার করে নিয়েছে দেশটি। এদের মধ্যে রোহিঙ্গা নেই। তবে জাতিগোষ্ঠীর পরিচয় ছাড়াই তাদের নাগরিক হওয়ার সুযোগ আছে। ২০১০ সালের নির্বাচনে রোহিঙ্গাদের মধ্য থেকে পাঁচজন সাংসদ ছিলেন। আগের নাগরিকত্বের মেয়াদ ১৫ বছরের জন্য ছিল। সেটি শেষ হয়ে গিয়েছে। সে ক্ষেত্রে নতুন করে আবেদন করতে হবে।

প্রথম আলো l কিন্তু মিয়ানমার যে আলোচনায় আসবে তার নিশ্চয়তা কি? তারা তো রোহিঙ্গাদের বিতাড়িত করে চলেছে?

অনুপ কুমার চাকমা l এ অঞ্চলে শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য মিয়ানমারের যেমন বাংলাদেশকে লাগবে, তেমনি বাংলাদেশেরও মিয়ানমারকে লাগবে। যুদ্ধ বা সংঘাতে সমস্যার সমাধান হবে না। এ জন্য আলোচনার দরজা খোলা রাখতে হবে। যদি চীন ও ভারত সহযোগিতা করে তাহলে সমস্যার সমাধান সম্ভব। কিন্তু চীন বা রাশিয়া যদি নিরাপত্তা পরিষদে ভেটো দেয়, কোনো উদ্যোগই সফল হবে না। এ কারণে আমাদের কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়াতে হবে।

প্রথম আলো l খুব দ্রুত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের যদি ফেরত পাঠানো না যায়, তাহলে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর কোনো প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করেন?

অনুপ কুমার চাকমা l একসঙ্গে এত বিপুলসংখ্যক শরণার্থীর অবস্থান আমাদের পরিবেশ, অর্থনীতি ও সামাজিক জীবনে বিরূপ প্রভাব ফেলবে। তাদের কেন্দ্র করে নানা স্বার্থান্বেষী মহল সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে। আবার এখানকার সংখ্যালঘুদের ওপরও মনস্তাত্ত্বিক চাপ বাড়বে, যা সামাজিক সংহতি নষ্ট করতে পারে।

প্রথম আলো l আপনাকে ধন্যবাদ।

অনুপ কুমার চাকমা l আপনাদেরও ধন্যবাদ।