জনমনে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা

৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায়কে সামনে রেখে রাজনৈতিক অঙ্গনে যে উত্তেজনা ও উৎকণ্ঠা রয়েছে, সরকারের সর্বশেষ পদক্ষেপে তা বাড়বে বই কমবে না। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) থেকে বলা হয়, মামলার রায় ঘোষণার দিন ঢাকায় সভা, মিছিল এবং ছুরি-লাঠির মতো অস্ত্র বহন নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ওই দিন ভোর চারটা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞা থাকবে বলে জানানো হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ কবে আসবে?
জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দেওয়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্ব। কিন্তু কোনো মামলার রায়কে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে আতঙ্ক ও উত্তেজনা ছড়ানো কোনো কাজের কথা হতে পারে না। আরও উদ্বেগের বিষয় ঢাকায় সভা–সমাবেশ বন্ধের মধ্যেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যক্রম সীমিত নেই। গণমাধ্যমে খবর এসেছে, ওই দিন ঢাকার প্রবেশপথগুলো বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে। এ খবর সত্য হলে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে। চিকিৎসা, ব্যবসাসহ নানা জরুরি কাজে প্রতিদিন লাখ লাখ মানুষ ঢাকায় আসেন। একটি মামলার রায়কে কেন্দ্র করে সবকিছু বন্ধ করে দেওয়া কেবল বেআইনি নয়, অমানবিকও।
সরকার ও সরকারি দলের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে পাইকারি ধরপাকড় চালাচ্ছে না; পুলিশের ওপর যাঁরা হামলা করেছেন কিংবা প্রিজন ভ্যান থেকে আসামি ছিনিয়ে নিয়েছেন, তাঁদেরই ধরা হচ্ছে। সরকারপক্ষের এই দাবি সত্য হলে দেশবাসী আশ্বস্ত হতে পারত। কিন্তু বাস্তবতা হলো পুলিশের ওপর হামলার পর থেকে পুলিশের গ্রেপ্তার অভিযান ও তল্লাশি অব্যাহত আছে। ইতিমধ্যে বিএনপির সহস্রাধিক নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যাঁদের মধ্যে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য এবং কেন্দ্রীয় কমিটির বেশ কয়েকজন নেতা রয়েছেন। পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে ঢাকায় অথচ ঢাকার বাইরে বিএনপির বহু নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। তাহলে কি ঢাকার বাইরে থেকে তাঁরা রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে পুলিশের ওপর হামলা করেছিলেন? সোমবার খালেদা জিয়ার সিলেট যাওয়ার পথে তাঁকে স্বাগত জানাতে গেলে পুলিশ নারায়ণগঞ্জ থেকে জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের মামলার কৌঁসুলি সাখাওয়াত হোসেনসহ অনেকে গ্রেপ্তার হয়েছেন। সাত খুনের আসামিদের বিচারে সাখাওয়াত হোসেন অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন। এসব কিসের আলামত?
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছিলেন, মামলার রায়কে কেন্দ্র করে তাঁরা কোনো কর্মসূচি নেবেন না। কিন্তু আমরা বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ করলাম, খালেদা জিয়ার সিলেট যাওয়ার পথে নরসিংদীতে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা হাতে লাঠি ও জুতা নিয়ে মিছিল করেছেন। স্থানীয় সাংসদের নামে স্লোগান দিয়েছেন। কোনো রাজনৈতিক নেতার কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে এ ধরনের তৎপরতা অবশ্যই নিন্দনীয়।
বর্তমানে সারা দেশে এসএসসি পরীক্ষা চলছে। আদালতের রায় ঘোষণার দিনও এসএসসি পরীক্ষা আছে। সে ক্ষেত্রে কোনো রকম অরাজক অবস্থা তৈরি হলে কিংবা সভা–সমাবেশ বন্ধের নামে জনগণের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হলে পরীক্ষার্থীসহ ঢাকার নাগরিকেরা মারাত্মক বিপদে পড়বে। এ ব্যাপারে ক্ষমতাসীন ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের কাছে সংযত ও সহিষ্ণু আচরণ প্রত্যাশিত।
ডিএমপি ঢাকায় সভা–সমাবেশ নিষিদ্ধ করায় ইতিমধ্যে মানুষ উদ্বিগ্ন। এরপরও ধরপাকড় অব্যাহত থাকলে পরিস্থিতি আরও নাজুক হয়ে পড়তে বাধ্য। তাই তাদের এমন কিছু করা উচিত হবে না, যাতে জনগণের শান্তি, স্বস্তি ও স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়।
শান্তি রক্ষার নামে শান্তি হরণের অধিকার কারও নেই।