দুই পার যোগাযোগবিচ্ছিন্ন

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের দুর্দশার যে চিত্র প্রথম আলোয় প্রকাশিত হয়েছে, তা মোটেই অভিপ্রেত নয়। সিটি করপোরেশনের আওতাধীন এলাকার সব ধরনের নাগরিক সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার কথা। কিন্তু এখানে তার অনেকগুলোই অনুপস্থিত।

বুধবার প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, এই ওয়ার্ডের তিনটি রাস্তা ছাড়া কোনো রাস্তার অবস্থা ভালো নয়। অধিকাংশ সড়ক ভেঙে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। এলাকায় শিশু-কিশোরদের খেলাধুলার পার্ক নেই। আছে বিভিন্ন স্কুলের মাঠ। তবে এসব মাঠ খেলার উপযুক্ত নয়। ময়লা ফেলার কোনো সুনির্দিষ্ট স্থান নেই। ফলে রাস্তার পাশে ফেলা হয় ময়লা-আবর্জনা। সরকারি কমিউনিটি সেন্টার ও সিটি করপোরেশনের কাঁচাবাজার নেই। নেই কোনো কবরস্থান। এমনকি কোনো ক্লিনিক বা চিকিৎসাকেন্দ্রও নেই। নাওজোড় থেকে ইসলামপুর ভাঙাব্রিজ পর্যন্ত সড়কের ওপর দিয়ে গেছে তুরাগের শাখানদী। সেখানে কোনো সেতু নেই। তাই দুই পারের মানুষ যোগাযোগবিচ্ছিন্ন অবস্থায় আছে। এ কারণে ১৪ নম্বর ওয়ার্ডটিও দুই ভাগ হয়ে আছে। এতে এলাকার মানুষের ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। এপার-ওপার করতে করতেই মানুষের সময় নষ্ট হয়ে যায়। স্বাভাবিক কাজকর্ম ঠিকমতো করা যাচ্ছে না।

সিটি করপোরেশনের অধীন একটি এলাকার এ রকম দুর্দশা কী করে হতে পারে? তাহলে কি শুধু কাগজে-কলমেই এই এলাকা সিটি করপোরেশনের আওতাধীন? তা না হলে এই এলাকার কোনো উন্নয়ন হয়নি কেন? আগে এই ১৪ নম্বর ওয়ার্ডটি ছিল বাসন ইউনিয়ন পরিষদ। ইউনিয়ন পরিষদ থাকাকালীন এলাকায় যে উন্নয়ন হয়েছিল, এখনো সেই অবস্থাতেই আছে।

এ ক্ষেত্রে যে অবহেলা করা হচ্ছে তা তো বোঝাই যাচ্ছে। গাজীপুর সিটি করপোরেশন স্থাপিত হয়েছে ২০১৩ সালের ১৬ জানুয়ারি। পাঁচ বছরের বেশি সময় পার হয়েছে। এই পাঁচ বছরে একটি ওয়ার্ডের যদি ন্যূনতম উন্নতি না হয়, তাহলে কাগজে–কলমে সিটি করপোরেশনের আওতায় আনা ও ওয়ার্ড ঘোষণার অর্থ কী। ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর যে তাঁর দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে পারেননি, তা পরিষ্কার।

এ ব্যাপারে ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাবিবুর রহমানের বক্তব্য হচ্ছে করপোরেশন থেকে পাওয়া বরাদ্দ দিয়ে ওয়ার্ডে উন্নয়নকাজ করা হয়েছে। গত পাঁচ বছরে ওয়ার্ডে ১২টি ইটের, ১টি আরসিসির, ২টি পাকা ও ৫টি পিচঢালা রাস্তা করা হয়েছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে এসব রাস্তার বেশির ভাগই এখন ভাঙাচোরা। তার মানে এসব রাস্তা নির্মাণেও ত্রুটি ছিল। যার কারণে অল্প কয়েক বছরেই এগুলো ভেঙে গেছে।

নাগরিক সুযোগ-সুবিধাবঞ্চিত এই ওয়ার্ডটির উন্নয়নে জরুরি ভিত্তিতে নজর দিতে হবে। তবে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাওয়া উচিত তুরাগের শাখানদীর ওপর সেতু তৈরির বিষয়টি। একটি সেতুর অভাবে দুই পারের বাসিন্দারা এভাবে বিচ্ছিন্ন থাকতে পারে না।